somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনা ভাইরাসঃ ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি করে গণজমায়েত

০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যেখানে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ এড়াতে একাধিক মুসলিম দেশে জুমার নামাজ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। যেখানে পবিত্র মক্কা নগরীর মসজিদ আল-হারাম এবং মদিনার মসজিদে নববীতে জুমা নামাজসহ নফল উমরা স্থগিত করেছে সৌদি সরকার। সেখানে উল্টো চিত্র আমাদের ধর্মপ্রাণ বাঙালি মুসলিমদের।


সারাবছর যারা নামাযে যেত না তারাও আজ ঈমানি শক্তিতে বলীয়ান হয়ে দলে দলে মসজিদে জামাতের সাথে নামায আদায় করতে যাচ্ছে! মূল সমস্যাটা নামায পড়াতে নয়, গনজমায়েতে।

লন্ডনের আলহুদা একাডেমি এন্ড ইসলামিক সেন্টারের খতীব ও চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল কাদির সালেহ বলেন, “গবেষকরা দেখিয়েছেন, প্রবেশের সময় থেকে নামাজ পড়া পর্যন্ত ঊনিশটা স্থানে মসজিদে আগত একজন মুসল্লির স্পর্শ লাগে। ওই সমস্ত স্থান অন্যরাও ব্যবহার করেন। মুসল্লিদের দুটি অবস্থা থাকে। হয় অন্যের সংস্পর্শ থেকে আক্রান্ত হতে পারে অথবা সে না জেনেই অন্যকেও সংক্রমিত করতে পারে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে সংস্পর্শের দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি।

এমন জরুরি অবস্থায় রাসুলের (সা.) এর জামানায় এবং সাহাবীগণের সময়ে ঘরে নামাজ আদায়ের কথা বলা হয়েছে। আজানেও ‘হাইয়া আলাসসালাহ’ এর পরিবর্তে ‘সাল্লু ফির রিহাল বা সাল্লু ফী বুয়ুতিকুম’ বলে আহবান করা হয়েছে। সুতরাং, এই বিশেষ পরিস্থিতিতে মসজিদে জামাতে বা জুমআয় না এসে ঘরে নামাজ আদায় করাই উত্তম এবং শরীয়তসম্মত। এটাই উলামায়ে কেরামের অভিমত। যদিও কোন কোন আলেমের মতামত এর বিপরীতে আছে।’

তিনি আরো বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে বা এহেন দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় মসজিদে নামাজ পড়া বিষয়ে ইসলামের স্পষ্ট বিধান রয়েছে।

এমতাবস্থায় হাদীস বলছে : ‘তুমি নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এবং কাউকে ক্ষতিগ্রস্থ করবেও না’— এটিই এক্ষেত্রে এই মূলনীতি প্রযোজ্য হবে বলে বিশ্বের অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম মতপ্রকাশ করেছেন।”

অন্যদিকে আমাদের দেশের কিছু মানুষ বলে যাচ্ছেন, ‘এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে কাফিরদের উপর গজব৷ এই গজব থেকে মুক্তি পেতে সম্মিলিতভাবে দু’আ করতে হবে, যার ফলে মুসলমানদের কোন ক্ষতিই হবে না!’

একটা কথা মাথায় রাখা দরকার হাদীস শরীফে আমরা পাই, ‘মহামারী (প্লেগ) কাফিরদের জন্য আযাব, মুমিনদের জন্য রহমত।’[সহীহ বুখারীঃ ৩৪৭৪]

তারমানে এটা না যে, মুমিনরা মহামারীতে আক্রান্ত হবে না, মারা যাবে না।

জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া সাহাবী আবু উবাইদাহ (রাঃ) এবং আলেম সাহাবী মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ) এর প্লেগাক্রান্ত হয়ে শহীদ হওয়ার নজিরও রয়েছে।

সুতরাং, খোদার উপর ভরসা রেখে আমরা গা ভাসিয়ে দিয়ে চলবো- এমনটা নয়।

আমাদের দেশে একটা বিষয় লক্ষনীয় যে, অনেক মানুষের ‘তকদির’ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই। তাদের বিশ্বাস এরূপ- আল্লাহর উপর ভরসা করলে বুঝি সব কিছু এমনিতেই হয়ে যাবে! তাদের ধারণা ভুল।

এই ব্যাপারটা পরিস্কার করার জন্য একটা হাসিদ উল্লেখ করা যায়- ‘একদিন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) লক্ষ্য করলেন, এক বেদুইন পুরুষ তার উটকে না বেঁধে উন্মুক্ত অবস্থায় রেখে দিয়েছেন। তিনি বেদুইনকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি তোমার উটকে বাঁধলে না কেন? তখন বেদুইন উত্তর দিলেন, আমি সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস রেখেছি এবং সৃষ্টিকর্তাই আমার উটকে রক্ষা করবেন। তখন নবী মুহাম্মদ (সা.) বললেন, প্রথমে তোমার উট বাঁধো, তারপর সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করো।’ [তিরমিজি]

অর্থাৎ, কোন কিছু অর্জন কিংবা কোন কিছু থেকে পরিত্রাণ পেতে সর্বপ্রথম আমাদের নিজেদের কাজ করতে হবে এবং পরে ফলফলের উপর মহান আল্লাহ’র উপর ভরসা রাখতে হবে।

পরিশেষে বলা যায়, মহামারির সময় নিজ নিজ স্থানে অবস্থানের ব্যাপারে স্পষ্ট প্রমাণ হাদিস শরীফে পাওয়া যায়৷ মহানবী (সা.) তাঁর সময়ে এরূপ নির্দেশই দিয়েছেন।

সুতরাং, এই দূর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র আবেগের বশবর্তী হয়ে নিজের এবং অন্যান্যদের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে নিজের বিবেককে কাজে লাগিয়ে ধর্মীয় বিধি মোতাবেক আমাদের জীবন পরিচালনা করা উচিৎ।


তথ্যসূত্রঃ

view this link

view this link
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১:১৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×