
খালে বিলে এক সময় ছোট মাছ গুলো যে মাছের দাপটে দৌঁড়ের উপর থাকত তাদের একটি হল গজার মাছ। সেই গজার মাছ কিনা আজ অস্তিত্ব টেকানোর জন্য নিজেই দৌঁড়ের উপর আছে। কথাটা একটু মজা করে বললাম, তবে ওদের যে কি বিপদ সে ওরাই জানে। সত্যিই আজ গজার মাছের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। IUCN-এর তথ্য মতে এ মাছ আজ বিপন্ন প্রজাতির তালিকায়।
গজার মাছকে অঞ্চলভেদে কেউ কেউ গজাল, গাজরি, সাল ইত্যাদি নামে ডাকে। এর ইংরেজি নাম Great snakehead ও বৈজ্ঞানিক নাম Channa marulia. দৈর্ঘ্যে ৫-৬ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। ঘাসের মধ্যে বাসা করে ডিম পাড়ে। ডিম গুলো পানির উপর একটির সাথে একটি লেগে ভেসে থাকে। ডিম ফোঁটার কিছুদিন পর ছানারা ঝাঁক বেধে চলাফেরা করে, মা আর বাবা পাহারা দিয়ে রাখে ছানাদের। ছোট বেলায় বিলে দেখেছি গজার মাছের পোনার ঝাঁক। বাচ্চারা বেশ বড় (বড় সাইজের টাকি মাছের মত)হলেও ঝাঁক ধরে চলতে দেখা যায়। ঝাঁকের মধ্য বড়শি ফেললে টুপ টাপ গিলে ফেলে, ঝাঁক থেকে বড়শি দিয়ে ছোট বেলায় কতবার যে ধরেছি। যেখান দিয়ে গজারের পোনার ঝাঁক যায় সেখানে পানির উপর প্রচুর বুদ বুদ দেখা যায়। কাজেই এরকম বুদ বুদ দেখলে বোঝা যায় আশে পাশে গজারের পোনার ঝাঁক আছে। শোল বা টাকি মাছের পোনার ঝাঁক গেলেও একই রকম দেখা যায় তবে ওদের বুদবুদের সাইজ আকারে ছোট।
গজার মাছ ধরার গল্প বলি। গজার মাছের বাসার মধ্যে নারকেলের পাতার কয়েকটি শলাকা পুঁতে রেখে শিকারি হাতে কোচ বা জুতি নিয়ে চুপ করে বসে থাক একটু দুরে। যখনই গজার মাছ বাসায় আসে তখন শলাকা গুলো নড়তে থাকে। ওমনি জুতি দিয়ে কোপ বসানো হয় বাসার মাঝ খানে, মাছ গেথে যায় জুতির সাথে। এছাড়া আরেকটি পদ্ধতি হল বাসার চারিদিকের আগাছা পরিস্কার করে রেখে দেওয়া হয়। একই ভাবে বাসার মধ্যে নারকেলের শলাকা পুঁতে রেখে শিকারি ঝাঁকি জাল হাতে দুরে চুপ করে ওৎ পেতে থাকে। শলাকা নড়লেই জাল ফেলা হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে জালের চারিদিকের কিনারা কাদায় পুতে ফেলা হয় পা দিয়ে। তার পর জালের ভেতর হতে আগাছা পরিস্কার করে জালের উপর দিয়ে পাড়াতে থাকলে গজার পায়ের নিচে পড়ে এবং ধরে বের করা হয়। এভাবে ছোট বেলায় অনেক গজার মাছ ধরতে দেখেছি।
গজার মাছ নিয়ে কত যে গল্প প্রচলিত আছে গ্রামে তার হিসেব নেই। অনেকে একে ভুত মনে করে। নৌকায় মাছধরা অবস্থায় পানির নিচে বিশালাকার গজার মাছ ভেসে উঠতে দেখে অনেকের ভয় পাওয়ার গল্প শুনেছি। এদের চোখ দুটো সত্যিই ভয় পাওয়ার মত। পানির নিচে বড় সাইজের গজার মাছ ভেসে উঠে যদি চোখ পাকায় তবে যে কেউই ভয় পাবে। এর কদাকার চেহারার জন্য অনেকেই একে অপছন্দ করে, খেতে চায় না। আবার ভুত মনে করেই অনেকে এ মাছ খায় না। তবে সেই দিন আর নেই। ভয় দেয়ার মত সাইজের গজার আর দেখা যায় না। দেশের অনেক অঞ্চলে তো পাওয়াই যায় না। হাওর অঞ্চলে এখনো কিছু টিকে আছে। তবে সেটাও কতদিন থাকে সেটাই অশংকার। যেভাবে পরিবেশের উপর অত্যাচার চলছে তাতে হয়ত একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে গজার মাছ।
ছবি-লেখক।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১১ রাত ৯:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




