somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্ধ পরিবার কাঁদালো সবাইকে কাঁদলেন হানিফ সংকেতও

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একসময় বলা হতো টেলিভিশন একটি শক্তিশালী মাধ্যম। পরে মোস্তফা মনোয়ার সেই ধারণা ভেঙে দেন। তিনি বলেন, ‘টেলিভিশন নয় ব্যক্তি যদি শক্তিশালী হয় তবে প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী হয়’। কথাটা যে বড় সত্যি তার প্রমাণ তিন দশক ধরে দিয়ে যাচ্ছেন নন্দিত গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেত তার দর্শকধন্য অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে। একে একে ২৬টি বছর পার করে গত ২৯শে জানুয়ারি প্রচারিত পর্বের মাধ্যমে ‘ইত্যাদি’ পা রেখেছে সাফল্যের ২৭ বছরে। এবার পল্লীকবির জন্মদিনকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরে তার বাড়ির সামনে আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠান ধারণের। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল ফরিদপুর ও পল্লীকবি জসীমউদ্‌দীনের ওপর তথ্যবহুল প্রতিবেদন। অনুষ্ঠান শুরু করা হয়েছিল পল্লীকবির সেই বিখ্যাত ‘তুমি যাবে ভাই-যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়’ কবিতাটি দিয়ে। অনেকেই এই কবিতাটি শুনে নস্টালজিয়ায় আচ্ছন্ন হয়েছেন। হানিফ সংকেত স্বল্প পরিসরে পল্লীকবির যে গানগুলো শোনালেন, মনে হয় এ প্রজন্মই শুধু নয়-অনেক শিল্পীই এ গানগুলো যে পল্লীকবির তা জানেন না। পান্থ কানাইয়ের কণ্ঠে অসাধারণ লেগেছে জসীমউদ্‌দীনের লেখা বহুশ্রুত ‘আমায় ভাসাইলিরে, আমায় ডুবাইলিরে...’ গানটি। জসীমউদদীনের তিনটি গানের সমন্বয়ে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় নাচটি ছিল এককথায় অনবদ্য। অনুষ্ঠানের নতুন সংযোজন এলাকাভিত্তিক নাচের ফলে ঢাকা শহরের কিছু চেনামুখের বাইরেও যে গ্রামেগঞ্জে প্রতিভাবান শিল্পী রয়েছে তা যেমন জানা যায়, তেমনি ইত্যাদির মতো বিশাল একটি অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে পেরে স্থানীয় শিল্পীরাও হন আনন্দিত। এবারের দর্শক পর্ব সাজানো হয়েছিল জসীমউদদীনের লেখা, ‘নিশিতে যাইও ফুলবনে...’, ‘নদীর কূল নাই কিনার নাই রে...’, ‘ও বন্ধু রঙিলা রঙিলা রঙিলারে...’, ‘আমার হাড় কালা করলাম রে...’, এই গানগুলো দিয়ে। আর এতে অতিথি ছিলেন ফরিদপুরের সন্তান প্রখ্যাত গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর এবং জসীমউদদীনের গানের অমর শিল্পী আবদুুল আলীমের পুত্র জহীর আলীম। তাদের অংশগ্রহণে দর্শক পর্বটি উপভোগ্য হয়েছে। ইত্যাদিতে আবারও বিদেশি পর্ব সংযুক্ত করায় হানিফ সংকেতকে ধন্যবাদ। এবারে বিদেশি পর্ব ছিল বিশ্বের দীর্ঘসময় ধরে চলমান নির্মাণ প্রকল্প সাগরাদা ফ্যামিলিয়ার ওপর। ১৩৪ বছর ধরে এর নির্মাণকাজ চলছে, শেষ হবে ২০২৭ সালে। স্পেনের বার্সোলোনায় অবস্থিত চার্চ বা গির্জা সাগরাদা ফ্যামিলিয়া হচ্ছে পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান এবং ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ। আমরা অনেক আলোকিত মানুষের কথা বলি কিন্তু ইত্যাদিতে আলোকচিত্রী আবু তাহেরের প্রতিবেদন দেখে বোঝা গেল আলোকিত মানুষদের কাছেও আলোকিত মানুষ তিনি। ভালোবাসা দিয়ে তিনি তাদের কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছেন স্ন্নেহ। এতগুলো গুণী মানুষের স্নেহধন্য হওয়া মানুষটি এতদিন পর্দার আড়ালেই ছিলেন। আর ‘ইত্যাদি’ সেই আড়ালে থাকা মানুষটিকেই আমাদের সামনে উপস্থাপন করলো। আবু তাহেরকে দেখে নিঃসঙ্গ বা একাকী থাকা বৃদ্ধ মানুষদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠতে অনুপ্রাণিত হবেন অনেকেই। অনুষ্ঠানের প্রতিটি নাট্যাংশই ছিল সময়োপযোগী। আসলে একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠান যে মানুষকে কতভাবে আন্দোলিত করতে পারে ‘ইত্যাদি’ তার বড় প্রমাণ। বরাবরের মতোই ইত্যাদির এবারের পর্বে সবচেয়ে মানবিক ও হৃদয়ছোঁয়া অংশ ছিল অন্ধ সংগীত পরিবারকে নিয়ে করা প্রতিবেদনটি। একই পরিবারের উপার্জনক্ষম ৫ জন সদস্যসহ একটি মেয়ে এবং একমাত্র নাতনিটিও অন্ধ। পরিবারের প্রধান হেলাল মিয়া। অন্ধত্বের জন্য করুণার পাত্র না হয়ে এই পরিবার বেছে নিয়েছে সংগীতকে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পরিবারের সবাই মিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার টাউন হলের মুক্ত মঞ্চে গান করেন। হেলাল মিয়া বললেন, তাতে যা আয় হয় তাই দিয়ে তাদের সংসার চলে। কারণ তাদের কোনো বাড়তি চাহিদা নেই। হানিফ সংকেতের অনুরোধে হেলাল মিয়ার পরিবারের সদস্যরা মিলে যখন ‘আমায় এত রাতে কেন ডাক দিলি...’ গানটি পরিবেশন করলেন-অনেক দর্শকই তখন চোখে পানি ধরে রাখতে পারেননি। কেঁদেছেন দর্শক-কেঁদেছেন হানিফ সংকেত নিজেও। ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের সম্মান জানিয়ে শুভেচ্ছা উপহার হিসাবে দুলাখ টাকাও দেয়া হয়। একটি টিভি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ উপহার, দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এমনি প্রতিবেদন-ব্যাপক প্রশংসনীয় একটি বিষয়। অনুষ্ঠানের শেষে হানিফ সংকেত বললেন, ‘ভিক্ষা নয়, চুরি নয়, দুর্নীতি নয়, কোনো অসৎ পথেও না এরা যে সম্মানবোধ থেকে ভিক্ষা না করে পরিশ্রম ও নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন তাকে সম্মান জানাতেই হয়।’ তার কথায় প্রতিধ্বনি তুলে আমরাও বলি- ধন্যবাদ হানিফ সংকেত, স্যালুট সেই অন্ধ পরিবারকে, ধন্যবাদ কেয়া কসমেটিকসকে ইত্যাদির এ সামাজিক আন্দোলনকে চলমান রাখতে সহযোগিতা করে যাওয়ার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৩৩
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×