somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিসিএস কথন

০৬ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

##
-ভাই আজ কি বার?
-বিসিএস বার।

##

তিন দিন ধরে একটাই প্রশ্ন- সীট কোথায় পড়ছে? বলে দিলাম- নারায়নগঞ্জ শামীম ওসমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
বলেন কি? এত দূর?
কাছে আনার চেষ্টা করছি। নারায়নগঞ্জের উপর অনাস্থা জানিয়ে পি.এস.সি বরাবর আবেদন করেছি। দেখা যাক। দোয়া করিস ভাই।
দিন যেতেই আবার প্রশ্ন, ভাই কী হলো? সীট কোথায়?
নরসিংদী বেলানগর ডিগ্রি কলেজ।
বলেন কি!এত দূর!!
আরেকটু দূরে নেয়ার চেষ্টা করছি। পি.এস.সি বরাবর অনাস্থা আবেদন করেছি। দেখি, নরসিংদী ছাড়িয়ে হবিগঞ্জ নেওয়া যায় কি না। বাড়িতে বসে পরীক্ষা দিতে পারলে ভালই হবে। দোয়া করিস ভাই।

এরপর যে-ই সীট কোথায় জানতে চায় তাকেই একটা গল্প বলি। বলি, প্রথমে সীট পড়ল নারায়নগঞ্জ। পছন্দ হল না। রিফ্রেশ বাটন টিপলাম। এবার দেখি নরসিংদী। হবিগঞ্জ যেতে মাঝখানে শুধু ভৈরব। বড় আশা নিয়ে আবার রিফ্রেশ দিলাম। দেখি আমিনবাজার। ভাবলাম ভূল হয়েছে। আবার রিফ্রেশ দিলাম। দেখি জাবি স্কুল এন্ড কলেজ। এর পর আর রিফ্রেশ দেই নি। বোঝলাম, এখন রোড চেঞ্জ করেছে। আরেকবার রিফ্রেশ দিলে হয়তো পাটুরিয়া চলে যাবে।

##

আমার ফেসবুকে আসক্তি আছে। সেলফিতে মারাত্নক দুর্বলতা। বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢোকেই একটা সেলফি পোস্ট দিতে হবে। ফিলিংস জানাতে হবে। সমস্যা হলো আমার মোবাইল নাই।
রুমমেটের মোবাইল চাইলাম। সে দশ হাজার টাকা জামানত চায়। বলে, যদি মোবাইল আটক করে নিয়ে যায় তার জন্য জামানত। রুমমেট বলে সে এক হাজার ছাড় দিয়েছে। ১১ হাজার টাকার মোবাইল ১০ হাজার টাকা!
৭ হাজার মেনেজ করেছি। আর ৩ হাজার টাকার জন্য দৌড়ের উপর আছিরে ভাই!

##

ক্যালকুলেটর, মোবাইল না নিলেও সমস্যা নাই। এনড্রয়েট ফোন নিতে দেয়া উচিত! অন্তত ফেসবুকিং-এর জন্য।

আচ্ছা, নিতে দিলে কেমন হতো?
• হলে ঢোকেইঃ ফিলিং- এক্সাইটেড!! পাশে সুন্দরী এক মেয়ে বসেছে।
• ১০ মিনিট পরঃ পুরো প্রশ্নটা পড়লাম। বেশ সহজইতো মনে হচ্ছে!
আচ্ছা, নিকারাগোয়ার রাজধানি কি? অপশন আছে-ক. ব্রাসেলস খ. মানাগোয়া গ. ভোদাপেষ্ট ঘ. কাঠমুন্ডু।
আমারতো মনে হচ্ছে কাঠমুন্ডু। নিকারাগোয়া কি কোন দেশ? প্রশ্নটা ভূল নাতো! আপনাদের কি মনে হচ্ছে?
• ১ ঘন্টা পরঃ মাত্র ৪১ টা প্রশ্ন দাগালাম। সময় আছে আর এক ঘন্টা। আরো ১৫৯ টা দাগাতে হবে। দ্রুত করতে হবে। লাইক দিয়ে দোয়া করবেন ভাই।

##

৩৩৭ খ্রিস্টাব্দ। বর্তমান উগান্ডায় একটা ছোট্ট স্বাধীন দেশ ছিল। নাম মিরিন্ডা। জ্ঞানে বিজ্ঞানে, সাহিত্য সংস্কৃতিতে খুবই সমৃদ্ধ এক নগর ছিল মিরিন্ডা। যুবকেরা ছিল স্বাধীনেচেতা। সৃষ্টিশীলতার চর্চা ছিল সমগ্র রাষ্ট্র ব্যাপি। এতটাই যে, আশেপাশের রাষ্ট্রগুলো মিরিন্ডার সমৃদ্ধি দেখে হিংসায় জ্বলে মরত।

পাশের শত্রু রাষ্ট্র ফ্যান্টা মিরিন্ডার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধিতে খুবই চিন্তিত। ফ্যান্টা রাজা ক্রেসিনা ছিল খুবই কুটকূশলী। সে ষঢ়যন্ত্র করে তার বিচক্ষণ গুপ্তচর অহিলোকে মিরিন্ডা রাজ্যে পাঠালো। উদ্দেশ্য, যে করেই হোক মিরিন্ডার সৃষ্টিশীল যুবকদের থামাতে হবে।

অহিলো মিরিন্ডার রাজার খুব বিশ্বস্থতা অর্জন করে। সে মিরিন্ডার রাজাকে বুদ্ধি দেয়- হাজার হাজার যুবকদের অহেতুক জ্ঞানার্জন বাদ দেয়াতে হবে। এমন জ্ঞান তাদের দিতে হবে যেন রাষ্ট্রের মঙ্গল হয়। সে একটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তাব করে। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই কেবল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগ পাবে। রাজা তার প্ররোচনায় এক পর্যায়ে রাজি হন।

বিপত্তিটা বাধে পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে। এমন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার প্রশ্ন কী হবে? অহিলো রাজাকে পরামর্শ দেয় একটি সিলেবাস প্রণয়ণের। যেখানে একটা প্যাটার্ণ থাকবে। বিজ্ঞান থেকে ১০ টি, অর্থনীতি থেকে ১০ টি, গণিত থেকে ১০ টি...এভাবে ১০০ টি প্রশ্ন থাকবে। যারা বেশি পারবে তারাই যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

১০ বছরের ভেতর দেখা গেল, মিরিন্ডা রাজ্যের সকল যুবক একই ধরনের বই নিয়ে ব্যস্ত। সবাই এখন নির্দিষ্ট এক-দুইটা বই নিয়ে মাথা নিচু করে মুখস্ত করেই যাচ্ছে। যে যত আগে সিলেবাস মুখস্ত করবে, সে তত আগে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পেশায় যেতে পারবে।

মিরিন্ডা রাজ্যে এখন আর সৃষ্টিশীলতা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে কেউ আলোচনা করে না। যুবকেরা আর মাথা তোলে হাটে না। তারা আর আকাশ দেখে না। সবাই একই ধরণের বই নিয়ে মাথা নিচু করে পড়েই চলছে। ফলে মিরিন্ডার সকল যুবকের মেরুদন্ড দিন দিন বাঁকা হতে থাকলো।

এসব দেখে দেখে ফ্যান্টা রাজা হাসে। কারন সে জানে, মিরিন্ডার পতন এখন সময়ের ব্যাপার। হ্যা, মিরিন্ডা রাজ্যের সম্পূর্ণ পতন হতে লেগেছিল মাত্র ৭৩ বছর।
(গল্প ইতিহাস হবে কেন?)

##

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রিয় গ্রন্থাগার। কয়েক লক্ষ বইয়ের স্তুপ। ধুলো বালিতে আস্তরণ পড়ে গেছে। পৃথিবীর সকল ধরণের জ্ঞান এখানে রক্ষিত।

সকাল ৬ টা থেকে গ্রন্থাগারের সামনে বিশাল লাইন। হুড়োহুড়ি, ধস্তাধস্তি। কে কার আগে ভিতরে যেতে পারে। একটু পিছিয়ে পরলেই বসার সীট পাওয়া যাবে না।

সবার সাথেই একটি করে ব্যাগ। ব্যাগে বই। নিজেদের কেনা বই। লাইব্রেরির লক্ষ বই ছুয়ে দেখাতো বহু দূর, ওরা তাকিয়েও দেখে না। এমপি থ্রি, ওরাকল বা কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স এদের সঙ্গী। বই যাই হোক, বিষয় এক। সবাই মাথা নিচু করে, চোখ আধবুঁজে দ্রুত লয়ে ঠোট চালাচ্ছে। এ যেন এক অদ্ভুত মুখস্তবিদ্যার প্রতিযোগিতা। কে কার আগে কত মুখস্ত করতে পারে!

লাইব্রেরির লক্ষ বই কি এসব দেখে মিটি মিটি হাসে, না রাগে দুঃখে চোখ ফেটে জল ফেলে!!

##

আপনি বাংলা সহিত্য পড়ছেন। প্রাচিন, মধ্য, আধুনিক সকল যুগ আপনার মুখস্ত। আপনি জানেন, কোন বই কে লিখেছে, কবে লিখেছে। এমনকি চরিত্রগুলোও আপনার মূখস্ত। শুধু কী লেখা আছে সেটাই আপনি জানেন না। কারন, গল্প বিসিএস এ আসে না!

ধরুন প্রশ্ন এলো- সখি, প্রান্তিকেতে ধরেছিনো তোর হাত
হেটে হেটে এখন সুইমিং পুলে
পৃথিবীতে নেমেছে নিকষ কালো রাত
বসেই আছি দু’জন, সময়কে ভূলে!
লাইনগুলোর কবি কে? ক. আল মাহবুব খ. মাহবুব গ. এ. মাহি ঘ. এ.এ.মাহবুব।

উত্তরটা আপনার জানা থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। জানা থাকলে একটিতে ঠিক দিয়ে আসবেন। আর জানা না থাকলে ভাববেন, চারজনের একজনকেও চিনলাম না। ইস, আরেকটু বেশি পড়া দরকার ছিল!!

অথচ আপনি কিন্তু জানেন না, এ চারজন মূলত একজনই!!

##

অনেক নীতিকথা ঝড়ল। এখন আসা যাক আসল কথায়! বিসিএস এ্যাপলাই না করা মারাত্নক ভূল সিদ্ধান্ত ছিল! সে ভূলকে ঢাকার জন্যেই মূলত এত প্যাচাল।
বন্ধুরা, যারা বিসিএস দিচ্ছ সবার জন্য রইলো শুভ কামনা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×