মেয়ের পরীক্ষা আগামী কাল। কঠিন পরীক্ষা । ইংরেজী ডিকটেশন। তাই মেয়ের মা খুবই ব্যস্ত পরীক্ষার লেখাপড়া নিয়ে। এসময়ে মেয়ের এক বন্ধুর মা এলেন তার মেয়েকে নিয়ে। উদ্দেশ্য আগামীকালের পরীক্ষার পড়া বুঝে নেয়া। কারণ তার ছেলে গত তিনদিন স্কুলে যায়নি। তিনি যখন এলেন তখন সন্ধ্যা ৭:৩০টা, যখন গেলেন তখন প্রায় ৯টা। আমাদের মেয়ের মা অতিব্যস্ত হয়ে পড়লেন মেয়ের পরীক্ষার পড়া নিয়ে। ১০টার দিকে নির্ঘাত বিদ্যুৎহীনতা দেখা দেবে রোজকারমতো। এমন একটি অবস্থায় আমার স্ত্রী বললো, 'এ্যই শুনছো, ভাতটা একটু বসিয়ে দাওনা'।
আমি ব্যস্ত আমার পড়াশোনা নিয়ে। প্রথম আলো পড়ছিলাম মনোযোগ দিয়ে ১ম খন্ড। এপর্যায়ে 'ভরত দেখা করতে গেল বঙ্কিমচন্ত্রের সঙ্গে তার বন্ধু দ্বারিকা-কে নিয়ে'। আমার কানে ঢুকলেও মরমে পশিল না এ আহবান।
কিছুক্ষণ পরেই মেয়ের মায়ের আর্তনাদ 'হায় হায়, এখনও ভাত বসানো হয়নি। আমার মেয়েরা আজ কি খাবে, কখন খাবে! ওপাশ থেকে মেয়ে টিপ্পনী কাটলো, 'কেন মা তুমি না বাবাকে বলেছো ভাত বসিয়ে দিতে!'। সাথে সাথে মায়ের ঝাঁঝালো উত্তর 'হ্যাঁ, তা হলেই হয়েছে, তোমার বাবা হলো পুরুষ, উনি যদি ভাত রাঁধেন তাহলে নারী হয়ে যাবেননা!
সাথে সাথে আমার বই বন্ধ। রাত প্রায় ৯:৩০টা । দ্রুত রান্নাঘরে যাই ভাত রান্না করতে। মনে হয় চিৎকার করে বলি,
'মনটা যদি খোলা হইতো ব্রিফকেসেরই মতো
দেখাই দিতাম তোরে আমি ভালবাসি কতো!'
কথা বলিনা, ভাত রান্না করতে থাকি। প্রথমে চাল নিতে হবে এক পট (কনডেন্সড দুধের খালি কৌটার মাপে) লাল রংয়ের প্লাষ্টিকের পেয়ালায় (অন্য রংয়ের হলে হবেনা)। তারপর, তিনবার ধুতে হবে সিংকে পানির নীচে। প্রতিবার পানি ফেলতে হবে হাতের আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে (নইলে চাল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা)। এরপর চালগুলি দিতে হবে রাইস কুকারের বাটিতে। এরপর হাতের তর্জনীর প্রথম দু কর পরিমান পানি (মেপে দেখতে হবে আঙ্গুল ডুবিয়ে। পানি নষ্ট হোক, কিন্তু সিদ্ধ চালে দোষ থাকবেনা) দিতে হবে। এরপর আর কি, উপরে ঢাকনা দিয়ে দিলেই কম্ম শেষ। রাইসকুকারের কানেকশন সুইচটা অন করে দিলাম।
'পরানের বান্ধব রে,
নারী হইলাম তোর কারণে!!!'
রাত ৯:৫০ মিনিট। বিদ্যুৎ নাই।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০০৯ সকাল ১১:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




