পল্লীকবি জসিম উদ্দিন-র 'কবর' কবিতার লাইনটা মাঝে মাঝেই আমার খুব মনে পড়ে।
'যখন যাহারে জড়ায়ে ধরেছি, সে চলে গেছে ছাড়ি.........'
ছোটবেলার কঠিন কিছু বন্ধু বান্ধব ছিল। এর মধ্যে চারজন 'বেস্ট ফ্রেন্ড' । সারাদিন তাদের সাথে স্কুলে, অবসরে, খেলাধুলায় কেটেছে অনেকটা সময়। একসময়ে মনে হতো বন্ধুবিচ্ছেদ হলে বোধহয় বাঁচবোনা। সেই ছোটবেলার বন্ধুরা এখন কেউ আর যোগাযোগ রাখেনা। শুধু একজন ছাড়া।
অনেকগুলো ভাইবোন আমরা। পরম আদরে ভালবাসায় লতাপাতার মতো থাকতাম। সবার যে ছোট আমি। আদরের আর আবদারের শেষ ছিলনা। আজ প্রতিটি ভাই-বোন বিচ্ছিন্ন। সবার বড় যে ভাই ছিল। অসাধারণ একজন মানুষ। প্রায় আমার বাবার প্রতিকৃতি। হঠাৎ করে চলে গেলেন ২ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ সাল।
বড় বোন ছিলেন। যে প্রতিটি কথায় হাসতো। তার রাগের কথাতেও হাসি এসে যেত। এত হাসিখুশি মানুষটা কথা নেই বার্তা নেই এক রাতে দুম করে চলে গেলেন নভেম্বর, ২০০৫ সালে। চাপিয়ে গেলেন বাবার উপর দুনিয়ার সবচেয়ে ভারী কষ্টকর বোঝা- পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ।
আম্মা ছিলেন আমাদের অন্তরাত্মা। কখনও মা হারা হবো কল্পনাতেও ছিলনা। আম্মাও চলে গেলেন। অনেকটা বোধহয় অভিমান করেই। শেষদিকে খুব অস্বস্তিতে ছিলেন। একটা অপারেশনও হয়েছিল। আমরা ছেলেরা এত ব্যস্ত যে মাকে বোধহয় অমর ভেবেছিলাম। শেষ সময়টুকুতে আমার বোনরা, মেঝভাবী, আর আব্বা ছাড়া ছেলেরা কেউ ছিলনা। মৃত্যুর ২ দিন আগে দেখতে গিয়েছিলাম। যখন চলে আসি জড়িয়ে ধরেছিলাম। বলেছিলেন ’ভালো থেকো’। গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন। সেই শেষ ছোঁয়া। দিনটা ছিল এপ্রিল ফুল-র ২০০৩ সালে।
আব্বা সম্পর্কে কিছুদিন আগে লিখেছিলাম। আমাদের ছোটবেলায় আব্বা 'কবর' কবিতা পড়তেন আর কেন যেন কেঁদে ভাসাতেন। আমরা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। আমরা সবগুলো ভাইবোন আব্বার কোলের কাছে জড়াজড়ি করে থাকতাম। আর কোনদিন সেই কোলে বসা হবেনা। আব্বাও চলে গেলেন গত বছরের জুলাই মাসে।
পৃথীবি থেকে থাকেনা। সময়ও তাই। তবুও জীবন চলছে দেখো জীবনের নিয়মে।
একটি সত্য কবিতার কবির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী। জসিম উদ্দিন সেই সত্য কবি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




