somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি প্র্যক্টিক্যাল জোক!!!

০৫ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাদা মাথায় কালো চুল,
আজ আমাদের 'এপ্রিল ফুল'।


ছোটবেলায় কতযে এ খেলাটি ভাই-বোন বা বন্ধুদের সাথে খেলেছি তার ইয়ত্তা নাই। কিন্তু আমাদের জীবনে এমন একটা ‘এপ্রিল ফুল’ ঘটে যাবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি।

আমাদের নয় ভাই-বোন এবং আব্বা, আম্মাসহ পুরো একটি ফুটবল টিম। পরিবারে অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে আমার খালাতো ভাই, চাচাতো ভাই-বোনরাও থাকতেন। তবে একজন ছাড়া অন্যেরা হায়ারে খেলতে আসতেন অর্থ্যাৎ কাজে আসতো এবং কাজ ফুরুলে চলে যেতো এই আরকি। এ নিয়ে আমরা নিজেরাই অনেক মজা করতাম। আম্মা ছিলেন আমাদের গোলকীপার অর্থ্যাৎ ঝড়-ঝাপটা যাই আসুক টিমকে তিনি আগলে রাখতেন। আম্মা আমার চেয়ে বেশী বড় ছিলেননা। অংকের মতো করে বললে বলতে হয়, মাতা ও পুত্রের বয়সের পার্থক্য এই ধরেন ৩৫ বছর মতো। আমি তার সর্বকনিষ্ঠ সন্তান তাই এরকমটা হতেই পারে তাইনা। যাই হোক এবার মায়ের কথা কিছু বলা দরকার।

আমার মায়ের যখন বিয়ে হয় তখন তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর ১০ মাস (আমার আম্মার মুখে শোনা)। মায়ের বিয়ে নিয়েও মজার কথা আছে। তাঁকে নাকি আমাদের দাদী পছন্দ করেছিলেন 'পা' দেখে। আমার দাদী গিয়েছিলেন তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সেখানে কে যেন তাঁকে বলেছিলেন, এখানে একটা মেয়ে আছে, তোমার পছন্দ হলে ছেলের বউ করতে পারো। দাদী মেয়ে দেখতে গেলেন। মেয়ে চাদর মুড়ে বিছানায় ঘুমন্ত। দাদী চাদরের একটা দিক তুলে ধরলেন। তাঁর সামনে উম্মুক্ত হলো এ বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সুন্দরী মেয়েটির একজোড়া পা। আমার মায়ের 'পা'। দাদী আর কিছু দেখলেননা। তিনি তখনই নাকি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এ মেয়েকেই তার ছেলেকে বিয়ে করাবেন। মায়ের তো বিয়ে হয়ে গেল। আমার আব্বার মুখভর্তি চাপদাড়ি। মাকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, আম্মা আপনি আব্বার দাড়ি কখন থেকে দেখেছেন! আম্মার সাফ জবাব, বিয়ের দিন থেকেই দেখছি তোর বাপের লম্বা লম্বা দাড়ি। আমরা হাসি, আম্মা হাসেন, জগৎ হাসে আর আব্বা মুখ ফিরিয়ে থাকেন। হয়তো হাসেন আমরা দেখিনা।

আমার মায়ের স্বামী সওদাগর পুত্র। নিজেও সওদাগর। অঢেল রোজগার। হঠাৎ একসময় ভাঁটার টান আসলো। অতি অকস্মাৎ। ফিরে আসা হলো নিজের গ্রামের ভিটায়। কিন্তু এখানে যে লেখাপড়া করার জন্য বিশেষ করে মেয়েদের জন্য ব্যবস্থা ভালোনা। তাছাড়া গ্রামীন সমাজ মেয়েদের লেখাপড়ার চাইতে বিয়ে দেয়ার পক্ষেই বেশ্। কিন্তু এরকম হলে তো আমরা মায়ের চলবেনা। তার মেয়েদের পড়াশোনা করাতেই হবে। তাই একদিন সবার মতের বিপক্ষে (এমনকি কিছুটা আমার আব্বারও) তার শহরে চলে আসা। এবার তার মেয়েরা পড়তে পারবে ভাল স্কুলে। আত্মীয়দের কথার হুল সর্বণই ছিল। কিন্তু কঠিন প্রত্যয়ে অটল অবিচল আমার আম্মা। মানুষ করতে হবে সন্তানদের।

প্রথমে ভাড়া বাসায়, পরে নিজের বাসায়। দিন চলে যায়। ছেলেমেয়েরা কেউ স্কুলে, কেউ কলেজে। ওমা একি! আস্তে আস্তে আত্মীয়দের আত্মজরাও আসে দেখি। কেউ পরীক্ষা দেবে, কেউ কলেজে পড়বে, থাকবে এখানে। প্রচুর অতিরিক্ত খেলোয়াড় এখন কাবে। তাদের থাকা-খাওয়া সবই করতে হবে আপন সন্তানদের সাথে সাথে। তবুও লক্ষীর ভাঁড়ারওতো অফুরান নয়। কখনো কখনো ঘাটতি যদি পড়েও কেউ তা জানতে পারেনি। নিজে তার একক ভাগীদার। বেকার সওদাগর পুত্র স্বামীর আয় বলতে শহরের ঘরভাড়া ও গ্রামের জমির আয়। সংসারে গৃহলক্ষীর নিজের আর্থিক অবদানও কম নয় তার নিজের পিতৃপ্রদত্ত জমির আয় থেকে। এত কাজ, তারপরও সবার সঙ্গে একটু দুপুরের ভাতঘুম শেষে অথবা না ঘুমিয়েও, বাচ্চারা স্কুলে বা কলেজে বা হয়তো খেলতে গেছে, সাদা বা সাদার কাছাকাছি হালকা রংয়ের শাড়িতে নিজেকে ঢেকে, চুলে এক হাতা তেল আর পানি মেখে, চুল আঁচড়ে পড়ন্ত বিকেলে বারান্দায় এসে পিঁড়িতে বসেছেন হাসিমুখে। সারাদিনের ক্লান্তির কোন চিহ্ন যেন নেই।

মায়ের কাছে আমার হাতেখড়ি। মনে আছে, কালো শ্লেটে, কালো পেন্সিল দিয়ে লিখতে হতো। সাদা সাদা অক্ষরে অ-আ ইত্যাদি। আম্মা লিখে দিতেন আমি মকশো করতাম। আর ছিলো রামসুন্দর বসাকের বাল্যশিক্ষা। আম্মার শেখানো সেই ফলের নাম, ফুলের নাম, এখনো মনে আছে। আম্মাকে ভয় পেতোনা এমন সদস্য আমাদের বাসায় ছিলনা। সে নিয়মিত খেলোয়াড় কিংবা অতিরিক্ত। আমাদের আত্মীয়-স্বজনরাও মাকে অগাধ শ্রদ্ধা করতেন পরবর্তীতে। তাঁরা হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর অবদানের কথা। পড়ালেখার বিষয়ে আপোষহীন নেত্রী আমাদের মা। চিরকাল লজিং টিচাররা আমাদের পড়িয়েছেন। প্রাত্যহিক সিডিউলটা ছিল অনেকটা এরকম- সকালে আরবী পড়া, এরপর নাস্তা, এরপর স্কুলের পড়া, এরপর গোসল সেরে ভাত খাওয়া, এরপর স্কুলে যাওয়া, বিকেলে বাসায় ফেরা, হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা বা ভাত খাওয়া, এরপর খেলতে যাও। মাগরিবের আগে ঘরে ফিরতে হবে , হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা করা, পড়তে বসা এবং রাত ৯টার মধ্যে খাওয়া ও ঘুমুতে যাওয়া। সময়ের কিছুটা তারতম্য কলেজ পড়ুয়াদের জন্য থাকলেও রাত ১০টার পর হ্যারিকেন বন্ধ। সবার জন্য, এমনকি যারা অতিরিক্ত খেলোয়াড় তাদের জন্যও একই সিলেবাস। আমার কলেজ জীবনে আমার মা কিছুটা বয়স্ক হয়ে গিয়েছিলেন তাই অতটা কড়াকড়ি আমার জন্য ছিলনা আর তাছাড়া সারাজীবনই আমি একটু 'প্রিভিলেজড' যা আমার অন্য ভাইবোনদের চক্ষুশুল ছিল (ঠাট্টা করছি ভাই ও বোনেরা)। তবে আমার সম্পর্কে এটুকু বলতে পারি, সবচাইতে বেশি মার এবং গালিগালাজ সম্ভবত আমার কপালেই জুটেছিল। আমার ইমিডিয়েট বড় দু'ভাইবোনও বেশ কিছু প্রসাদ পেয়েছেন। একবারতো ছাগলের মতো গাদাগাদি করে বেঁধে রেখেছিলেন তিনজনকে চৌকির পায়ার সাথে। কেন সে উত্তর নাইবা দিলাম। কারণ তার জন্য একটা আলাদা মহাকাব্য লিখতে হবে। একটা ঘটনা বলি তাহলেই ব্যাপার কিছুটা খোলাসা হবে। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর প্রায় প্রতি রাতে ৯:০০- ১২:০০টার শো না দেখলে আমার চলতোনা। এব্যাপারে বেশকিছু সহায়ক শক্তি ছিল ঘরে এবং বাইরে। প্রতি রাতেই আমি নেই এব্যাপারটা প্রথমে আমার মায়ের চোখে পড়েনি তাঁর গৃহশত্রুদের (আমার বোনরা) ষড়যন্ত্র ও কুটিলতার কারণে। কিন্তু চোরের দশদিন আর গৃহস্থের একদিন। সেই একদিন আমার জন্য যিনি দরজা খুলে অপেক্ষা করছিলেন তিনি আমার নিজের মা (!)। তার সেই মূর্তি ! মা কালীকে হাতে খাঁড়াসহ যারা দেখেছেন তারা ব্যাপারটা এভাবে বুঝতে পারেন, 'সাদা কালীর হাতে দা'। আপাত নরম, প্রয়োজনে চরম কঠোর হতে জানতেন আমার মা।

আম্মা শহরে এসে থাকলেও গ্রামকে কখনও ভুলে যাননি। নিয়মিত তাঁর যাওয়া আসা ছিল। তার শ্বশুরবাড়ি এবং বাপের বাড়ি দুটোতেই। আর স্কুল কলেজ বন্ধ থাকলে আমরাও নিয়মিত তাঁর সঙ্গী। এরকম ছুটির দিনে আমরা যারা ছোটরা ছিলাম তারা সারাদিন টৈ টৈ করতাম। আশেপাশে সন্তানরা না থাকলে মায়ের কেমন লাগতো সেটাতো তখন আর বুঝতামনা। আম্মা হয়তো এটা সেটা খেতে ডাকতেন। আমরা তখন কোথায় হারিয়েছি! আমাদের ঘরের পাশে একটা পাখি ডাকতো টিট টিট করে। কখনো কখনো মা বলতেন, 'তোমরা আমার কথা যে শোনোনা, ঐ পাখি এসেছে, আমি তার সাথে চলে যাবো।' এটা কেমন কথা! আমরা ভীত পয়ে পড়তাম। আম্মাকে সারাক্ষণ জড়িয়ে থাকতাম।'আম্মা আপনি যাবেননা। আমরা আর দুষ্টুমি করবোনা।' কিন্তু আম্মা যাবেনই, আর আমরাও ছাড়বোনা। অবশেষে রফা হতো- আমরা আর দুষ্টুমি করবোনা। খেলবো, কিন্তু কাছাকাছি থাকবো যাতে আম্মা ডাকলেই শুনি। অগাধ ভালোবাসার এই আমার মা।

আস্তে আস্তে আমার মায়ের জীবন অন্যরকম হয়ে যায়। ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে যায়। তাদের ছেলেমেয়েরাও বড় হয়ে যায় কেউ কেউ। কেউ বড় হচ্ছে। সবচেয়ে ছোট যে সন্তান আমি তারও বিয়ে হয়েছে, একটি মেয়েও আছে আমাদের। চারিদিকে সন্তান, নাতি-নাতনী, পুতি-পুতনী সব মিলিয়ে জীবনের এটাই সুখ কিনা জানিনা। তবে এ সুখ কিনতে আমার মাকে অনেক দাম দিতে হয়েছে।

সারাজীবন এতরকম পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে আমার মাকে, আর তাই রোগ তাকে ভালবেসেই আঁকড়ে ধরেছিল বিভিন্ন প্রকারে। উচ্চ রক্তচাপতো ছিলই, এর প্রভাবে দুবার বাথরুমে ও খাট থেকে পড়ে গিয়ে দু'হাতের কব্জি ও শোল্ডার ব্লেডের কাছে ভেঙ্গে ফেলেছিলেন। একবার দাঁতের ব্যথায় তার ব্লাডপ্রেশার এমন জায়গায় উঠেছিল যে, আমরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। পরে দাঁত তুলে ফেলার পর সব ফিটফাট। ইউটেরাসেও কিছু একটা সমস্যা বাঁধিয়ে ফেলেছিলেন যার জন্য সত্তুরোর্ধ বয়সে তাকে একবার সার্জনের ছুরির নিচে যেতে হয়েছিল। বিষয়টা আমার কাছে এখনো খুব জটিল মনে হয়। আম্মাকে নিয়ে আমার ভাই বোনেরা অন্তত ৪ জন স্পেশালিস্টকে দেখিয়েছেন কিন্তু তারা কেউ অপারেশনে রাজি হননি সম্ভবত তার বয়েস বিবেচনা করে। তবে অপারেশন প্রয়োজন তারা সেটা বলেছেন। শেষমেষ, পঞ্চম একজন বললেন তিনি অপারেশন করবেন। যাই হোক, হাসপাতালে ভর্তি হলেন। আমি এবং আমার বোনের মেয়ে রক্ত দিলাম। অপারেশন শুরু হয়েছে, হঠাৎ ডাক্তার বেরিয়ে এসে বললেন, আপনার দোয়া করুন ওনার একটা এট্যাক হয়েছে। পরিস্থিতির বর্ণনা আমার পক্ষে অসম্ভব। যাই হোক, আম্মার অপারেশন শেষ হলো। ক্রমেই আম্মা ভাল হয়ে উঠলেন। কিন্তু তার কিছুটা নিউরো সমস্যা দেখা দিয়েছিল।

হয়তো ৭/৮ মাস পর, আম্মা তখন আমার মেঝ বোনের বাসায়, ফেনীতে। হঠাৎ খবর এলো আম্মা খুবই অসুস্থ। আমি রওনা হলাম। হাতে প্রচুর কাজ। নির্বাচন পর্যবেণ চলছে। বোনের বাসায় এসে দেখি আম্মা সত্যিই খুব অসুস্থ, তবে কথাবার্তা বলছেন কিন্তু কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। হাঁটাচলাও করতে পারছেননা। প্রেসারও অনেক বেশি। ডাক্তার একটা ঔষধ দিয়েছেন কড়া সিডেটিভ টাইপ। কোথাও পাওয়া যায়না। দিকে দিকে খবর গেল ঔষধের জন্য। আমিও ঢাকায় আসবো ঔষধ কিনতে আর হাতের কিছু কাজ শেষ করতে। আমাকে গলা জড়িয়ে ধরে বললেন, 'যাও, ভালো থাকো' । ঔষধ কিনে পাঠিয়ে দিয়েছি কুরিয়ারে। আরো অনেকে পাঠিয়েছে। ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে। নিয়মিত মোবাইলে খবর রাখছি আম্মার অবস্থা সম্পর্কে। আমার ছোট আপা সেও তখন ফেনীতে ছিল পরদিন এসেছে ঢাকায় আম্মার জন্য কিছু কাপড় কিনবে কারণ আম্মা শাড়ি পড়তে পারেননা। সকালে জেনেছি আম্মা ভালো আছেন, ছোটআপার সাথে কথা হলো আমরা আজ আবার ফেনী যাবো। দুপুর ঠিক দু'টায় আবার টেলিফোন করলাম। মেঝ বোন জানালেন, আম্মা ঘুমুচ্ছেন। ভালো আছেন। মনটা কিছুটা ঠান্ডা হলো। বিকেল ৪টার কিছু বেশি। বেরিয়ে পড়বো, ফেনী যেতে হবে। বড় ভাইয়ের বড় ছেলেটার টেলিফোন, 'ছোটচাচু আপনি কেমন আছেন? দাদুর খবর কিছু জানেন?' আমি বলি, 'তোমার ফুফির সাথে কথা হয়েছে, দাদু ভালো আছেন।' কিছুটা চুপ থেকে আমার ভাতিজা তখন ভাঙ্গা গলায় বললো 'চাচু, দাদু নেই'।

কাছেপিঠেই কোথাও একটা বজ্রপাত হয়েছে কি? আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম কেন! এটা কেমন করে হয়, কথা নেই বার্তা নেই দুপুর ২টায় বলে, ভাল আছি, বিকেল ৪টায় বলে, আমি নেই । এটা কি? 'এপ্রিল ফুল' পেয়েছো সবাই। বোনকে টেলিফোন করলাম। বোন কাঁদছে আর বলছে- 'ওভাই, আমি তো দেখছি আমার মা ঘুমুচ্ছে। আমি তো বুঝিনি আমার মা নেই।' আর কোন সংশয় নেই। আজ ২০০৩ সালের ১লা এপ্রিল। আমাদের মা তার অতি আদরের ছেলে-মেয়েদের সাথে শেষ খেলাটা খেলে গেলেন। সেই আগের দিনের লুকোচুরি খেলার মতই। এক অসাধারণ দক্ষতায় আম্মা আমাদের সবাইকে বুঝিয়ে গেলেন-আমিও তোমাদের বোকা বানাতে পারি।

আম্মা চলে গেছেন টিটি পাখির সাথে, আমরা তার পাশে থাকিনি বলে। এত অভিমান আমার মায়ের, আমরা কত কষ্ট করে তার সবগুলো ছেলে মেয়ে, নাতি নাতনীকে নিয়ে ঢাকা থেকে ফেনীতে গেছি তাকে দেখতে, সে চোখ খুলেনি একবারের জন্যও। আমার ছোটদা যে মাত্র আগেরদিন ঝালকাঠি বদলী হয়ে গিয়েছিল সপরিবারে সে এসেছে। কত কেঁদেছি সারা রাত সবগুলো ভাইবোন মিলে। আগের দিনে যখনই কেঁদেছি তখনই কত মাথায় হাত বুলোতো কোলে তুলে নিতো. মজার মজার কবিতা শোনাতো। আজ একবারও হাত বাড়ায়নি। যে সবসময় ভালবাসতো ছেলে মেয়েরা তার চারপাশে ঘিরে থাক, আজ সত্যি সত্যি স্বামী, সন্তান, নাতি-নাতনী সবাই তাকে ঘিরে আছে। কিন্তু সে কেন আজ স্থির, অচঞ্চল, শুন্যদৃষ্টি। এতটা অমিল! একটাই শুধু মিল তার পরণের কাপড়ে। আগেও ছিল শুভ্র, এখন তা আরও শুভ্র।

সাত বছর পর। এখন মায়ের ছবিটা আঁকতে গিয়ে দেখি কেন যেন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে আশপাশটা। বড় সাধ হয়, আম্মা যদি আবার ফিরে আসতেন!

ও তোতা পাখিরে,
শিকল খুলে উড়িয়ে দেবো-
মা'কে যদি এনে দাও
আমার মা'কে যদি এনে দাও.....
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×