ভূমিকা
মানুষ জন্মগত ভাবেই সৃষ্টিশীল।
একটা জেনারেল পারপাস কম্পিউটার যখন আমরা কিনি তখন এর ভিতর তেমন কোন সফটওয়্যার থাকে না। একে আমরা সফটওয়্যার ইনস্টল করি আর কম্পিটার তখন একেক বিশেষ কাজে পারদর্শী হয়ে উঠে। অথচ বিভিন্ন ক্যামেরা, ডিজিটাল পণ্যের সাথে যেমস্ত ক্ষুদে মাইক্রোকম্পিউটার আসে সেগুলোর সফটওয়্যার নিতান্তই একঘেয়ে আর অন্যান্য কাজে পারদর্শী হয়ে উঠতে অক্ষম।
একটা মানুষের বাচ্চা যখন জন্ম গ্রহন করে তখন একটি খালি কম্পিউটারের মতোই তার মধ্যে বিশেষ কিছু থাকেনা। সময়ে সে বিভিন্ন বিষয়ে বু্ৎপত্তি লাভ করে এবং সৃষ্টি করতে থাকে অমর সব র্কীতি। অথচ ডিফল্ট কিছু জ্ঞান নিয়ে জন্ম নেয়া বিভিন্ন প্রানীর বাচ্চারা জন্মের পর পরই দৌড়াতে পারলেও সৃষ্টিশীল না।
মানুষ স্বভাবগত ভাবে সৃষ্টিশীল হলেও সবাই কিন্তু সমান মাপের স্রষ্টা নন। মোনালিসা একজন মানুষেরই সৃষ্টি আবার অনেক কুৎসিত গণহত্যাও একজন মানুষেরই হাতে সংঘটিত হয়। তাহলে কোন বিষয়টি একজন সাধারন মাপের মানুষকে অসাধারন মাপের স্রষ্টা বানায়?
আমরা ধরেই নেই যে কিছু কিছু মানুষ ওই জিনিসটা সঙ্গে নিয়ে জন্মায়। কিন্তু তাহলে বাকিদের কি হবে? কেন আমরা সৃষ্টিশীলতা অর্জন করতে পারব না? ব্যাপারটা কি তাহলে গায়ের রঙয়ের মতো হয়ে গেল না, যেখানে মনে করা হয় কিছু নির্দিষ্ট গায়ের রংয়ের মানুষ সেরা অথচ সৃষ্টিশীল মানুষের মতো গায়ের রংও অর্জন করা যায় না?
এই ব্যাপার নিয়ে প্রচুর গবেষনা হয়েছে। মনস্তত্ত্ব, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইনের মতো বিষয়গুলোতে এব্যপারে প্রচুর আলোচনা রয়েছে। এ বিষয়ে দুটো পর্বে যে বিষয়গুলো তুলে ধরব ঠিক করেছি সেগুলো হল: ১। কেমন হয় সৃষ্টিশীল মানুষ, ২। কিভাবে সৃষ্টিশীলতা চর্চা করা যায়। যদি আপনি সৃষ্টিশীল মানুষ হন তাহলে আপনি হয়ত নিজের সাথে প্রথম পর্বের বিষয়গুলো মেলাতে পারবেন। তবে সৃষ্টিশীল হন বা না হন সৃষ্টিশীলতার চর্চা আপনাকে নতুন কিছু তৈরীর ক্ষেত্রে সাহায্য করবে নির্ঘাৎ।
“তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী?”
এটা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করে থাকবেন গড়পড়তা সৃষ্টিশীল মানুষ পোষাক আশাকের দিকদিয়ে বেশীরভাগক্ষেত্র আমার আপনার মতো স্বাভাবিক সাধারন মানুষ। সত্যিকার একজন সৃষ্টিশীল আমার আপনার থেকে আলাদা হয় তার মানসিক বোধ, ব্যবহার আর অভ্যেসের প্রয়োগে, জন্মগত কোন বিশেষত্বের কারনে না। নিয়ম করে অভ্যেস করলে এইধরনের গুণের অধিকারী হতে পারেন আপনিও।
একটা সৃষ্টিশীল মানুষ জানে মন হচ্ছে অফুরন্ত সম্ভাবনার কারখানা। তাতে অনবরত আইডিয়া, চিন্তা এবং জ্ঞানের যোগান দেয়া চাই যাতে করে মন নতুনতর আইডিয়া তৈরী এবং বিভিন্ন বিষয়ের ভিতর যোগসুত্র গড়ে তুলতে পারে। এই ধরনের একজন মানুষ সযত্নে পরিষ্কার কিছু লক্ষ্য গড়ে রেখেছেন। যেহেতু তিনি জানেন মাথা নিংড়ালেই রস বের হয়, প্রতিদিন তিনি তিনটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করতেই থাকেন: নিজেকে নিয়ে, তার নিজের মূল্য নিয়ে এবং তার আশেপাশের মানুষ নিয়ে। এভাবে এই তিন বিষয়ে চিন্তা করাতে করতে তিনি ক্রমশ অফুরন্ত সম্ভাবনার রত্নভান্ডারের কাছাকাছি চলে আসতে থাকেন।
এধরনের লোক আইডিয়ার জন্য যেকারো কাছে হাত পাততে পারেন, অন্যের বুদ্ধিমত্তাকে তাই সম্মান করতে জানেন এবং অন্যকে তার প্রাপ্য কৃতিত্বটুক দিতে দ্বিধা করেন না। আসলে অনেক মানুষের কাছেই টুকটাক আইডিয়া আছে যেগুলো সৃষ্টিশীল মানুষ মুফতে যোগাড় করতে পারেন, তার অনেকগুলোই কিন্তু আইডিয়া হিসেবে অসাধারন। সৃষ্টিশীল মানুষ অনেক সময়েই এই আইডিয়াগুলো জোগাড় করেন, পরিবর্তীত, পরিমার্জিত করেন এবং মূল আইডিয়াকারীকে যথাযোগ্য সম্মান প্রর্দশন পূর্বক কাজে লাগান।
আবার আইডিয়াগুলো কিন্তু বান মাছের মতো পিচ্ছিল। তারা বিশেষ দক্ষতায় পিছলে যায় যদি ঘ্যাঁৎ করে পেন্সিলের আগা দিয়ে তাদের গেঁথে না ফেলতে পারেন। সৃষ্টিশীল মানুষদের দেখবেন আইডিয়া পেলে তাকে বেঁধে রাখতে ভুল করেন না। একবার এক বই লেখককে দেখা গেছে বিষয় ভিত্তিক বাক্স সামনে রাখতে। তার যখন কোন আইডিয়া আসতো তখনই তিনি একটা কাগজে লিখে সঠিক বাক্সের মধ্যে ফেলতেন। এভাবে খুব অল্প সময়ে তার হাতে একটা অসাধারন বই লেখার প্রয়োজনীয় মসলা জুটে যায়।
সৃষ্টিশীল মানুষের আরেকটা ভালো গুণ হচ্ছে আশেপাশের জিনিস সে খুব ভালো করে লক্ষ্য করে। কে কি বলল, করল ভাল করে লক্ষ্য করা বা নিজের চিন্তার মধ্যে ডুবে থাকা সে খুব ভালো পারে। সে সব সময় নিজের কাজটা আরো ভাল করে কি করে করা যায় কিংবা নিজের জীবনটা কিভাবে আরো ভাল করে উপভোগ করা যায় তা খুঁজতে থাকে।
সৃষ্টিশীল মানুষ আন্দাজ করতে পারে সে কি অর্জন করতে যাচ্ছে। সে অনেক সময় ধরে ফেলতে পারে যে জয় তার হবেই। আশেপাশের মানুষ অনেক সময় তার এই ক্ষমতায় অনুপ্রানিত হয়। যারা তাকে চেনে তাদের কাছে সে একটা অনুপ্রেরনার প্রতীক।
সৃষ্টিশীল মানুষের কাছে একেকটা সমস্যা হচ্ছে একেকটা চ্যালেঞ্জের মতো। যেহেতু সৃষ্টিশীল মানুষ সারাক্ষন চিন্তা করতে থাকে, ভাবনার খোরাকের জন্য তাই তাদের চ্যালেঞ্জ চাই। সমস্যাকে জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য এবং অপ্রতিরোধ্য অংশ হিসেব তারা ধরে নেয়। তাই সমস্যায় পড়লে তার জন্য দুশ্চিন্তা করে কান্না কাটি করার চেয়ে তার সমাধানে বেশী মনোযোগী হয় তারা।
সৃষ্টিশীল মানুষ খুব গুছিয়ে সমস্যার সমাধানে আগায়। অনেক সময় আগেভাগে সমস্যা সর্ম্পকে আন্দাজ করে সমাধান করেই রাখে।
যেহেতু সৃষ্টিশীল মানুষ জানে কিভাবে নিজের আইডিয়াগুলো অন্যের সাথে শেয়ার করতে হয়। সে যেমন অন্যের আইডিয়া নেয় তেমনিই অন্যদেরকে দেয়ও। কেননা দিন শেষে ওই হাত গুলোই আইডিয়া খুঁজে পাবে যারা আইডিয়া দেবে।
সৃষ্টিশীল মানুষ কোন নতুন আইডিয়া পেলে সুনিদির্ষ্ট ধাপে ধাপে সেটাকে আরো ভালো করার চেষ্টা করে। সে ছোটছোট আইডিয়া জুড়ে তৈরী করে নতুন আইডিয়া, পুরোনো আইডিয়া ভেঙ্গে তৈরী করে নতুন কিছু। সে আইডিয়াকে ক্রমাগত প্রশ্নের মুখোমুকি দাঁড় করায়। কেননা প্রশ্ন হচ্ছে বুদ্ধিমান মনের সৃষ্টিশীল কাজ।
নিজের অতিরিক্ত সময়টাকে সৃষ্টিশীল মানুষ খুব ভালভাবে ব্যবহার করে। কেননা সে জানে পৃথিবীর অনেক কল্যাণকর কাজই তৈরী হয়েছে অবসরের সময়টাতে। বেন ফ্রান্কলিন বলেছেন, ‘সৃষ্টিশীল ভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা রহিত হয়ে গেলে, বেঁচে থেকে কোন লাভই নেই।’
তাই নিজের কল্পনাকে ব্যবহার করে জীবনের বাঁধা অতিক্রম করা আমাদের পক্ষে অবশ্যই সম্ভব। লর্ড ম্যাককলে বলেছেন, ‘কল্পনা অস্ট্রীচ পাখির ডানার মতো, সেগুলো আমাদের উড়তে হয়ত সাহায্য করতে পারে না কিন্তু দৌড়াতে সাহায্য অবশ্যই করে; অথচ আমাদের অনেকে হাটতেও পারে না।’
গুস্তাফ ফ্লাউবার্টের একটি উক্তি দিয়ে শেষ করি। ‘সৃজনশীলতা হচ্ছে পরকীয়া প্রেমের মতো। অব্যবহারে আমরা একে দমিয়ে ফেলতে পারি, আবার সৃষ্টিশীলতা, সমস্যা সমাধানের অভ্যেস, অবসর সময়ের ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা এর উৎকর্ষ সাধন করতে পারি; যতক্ষণ না আমরা সুখী, গুরুত্বপূর্ণ এবং বুদ্ধিমান মানুষ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারছি।’
(পরের পর্বে থাকছে সৃষ্টিশীল মানুষের এই যোগ্যতাগুলো অনুসরন করে আইডিয়া তৈরীর পদ্ধতি)
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।