ফরিদউদ্দিন আত্তারের কথার ভেতর কেমন একটা ডাক ছিল। অনুভব করছিলাম তিনি হয়তো কোনো আহবান বা আমন্ত্রণ জানাতে চেয়েছেন। তার ওই ভঙ্গিটার কারণে আমি বারবার তাকে মনে করার চেষ্টা করছিলাম। 2004-এর 14 অক্টোবর দুপুর বেলা ঠিক কী করছিলাম এটাই সবচেয়ে বেশি ভাববার চেষ্টা করছিলাম। 2004-এ আমার জীবনে খুব উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটেনি। দৈনিক পত্রিকায় কাজ করার অভ্যাস করছিলাম। ওই সময় কালবেলা নামে ক্ষণস্থায়ী একটা কাগজ বের হতো। কাগজটির এডিটরিয়াল পেজে কাজ করতাম আমি। প্রতিদিন এডিটরিয়াল লিখতে হতো। আর সমকালীন ঘটনা নিয়ে কমেন্ট নিতে হতো সংশ্লিষ্ট লোকদের কাছ থেকে। ডায়েরি লিখি না বলে, ডায়েরি খুজে লাভ নেই। বরং ওই তারিখের কালবেলা বের করলে হয়তো কোনো ক্লু পাওয়া যাবে, ভেবে কালবেলার 2004-এর সংখ্যাগুলো খোঁজা শুরু করলাম।
2004 থেকে বাসা পালটিয়েছি মোটে একবার। ফলে ওই বছরের পেপারগুলো একটা বস্তাতেই থাকার কথা। আর বস্তাটা রান্নাঘরের ওপরের তাকমতো স্পেসে থাকার কথা। কিন্তু না সেখানে নেই। বস্তাটাই গায়েব। আমার স্মৃতি যতদূর সাহায্য করছে তাতে রান্না ঘরের তাকের কথাই বারবার মনে পড়ছে। কোনো কারণে নামিয়ে থাকতে পারি। যেমন সমকালে কাজ করার আগে তারা আমার আগের কিছু লেখা দেখতে চেয়েছিল সেকারণে বস্তা নামিয়ে থাকতে পারি। যায়যায়দিনে কাজ নেয়ার সময় আর বস্তা খুলিনি। এটা আমার স্পষ্ট মনে আছে। ফলে, বিকল্প জায়গা হিসাবে বাসার সবচেয়ে কম ব্যবহৃত স্থান মানে বারান্দার দঙ্গলের মধ্যে হানা দিলাম। অনেক কাগজপত্র, কাঠ, ভাঙ্গা চেয়ার। বস্তা। এই ময়লাগুলো সহজেই ফেলে দেয়া যেত। কিন্তু কেন যে দেই না। কেন পুরাতন জিনিশপত্র ফেলতে ইচ্ছা করে না বুঝি না। এই ভাবে পুরো বাসাটাই পুরাতন জিনিশপত্রের গুদামে পরিণত হয়েছে। না বস্তাটা খোয়া যায়নি। নিজের অস্তিত্ব নিয়ে বেশ ভালভাবেই টিকে আছে। ইঁদুর ছোট একটা ফুটো করেছে। কাগজপত্রের মধ্যেই একটা পাখির বাসা মতো জায়গা বানিয়ে সেখানে পাঁচটা বাচ্চাও ফুটিয়েছে। ইঁদুরের বাচ্চাগুলো বেশ ফুটফুটে। ইঁদুর মনে হয় না। এগুলো বড় হলে একেকটা সুদর্শন পাখি হবে মনে হয়। আর তাদের নাজুক ভাবটাও বেশ ভাল লাগে। কিন্তু এরা তো ইঁদুরই হবে। জ্বালাযন্ত্রণায় টেকা যাবে না। কষ্ট হলেও বাচ্চাগুলোকে বারান্দা দিয়ে ফেলে দিলাম। শুরু হলো কাগজপত্র খোঁজার আয়োজন।অনেক পাতাই হলুদাভ হয়ে গেছে। হালকা কালিতে করা ফটোকপিগুলো প্রায় পড়াই যায় না আর। এই একটা বস্তার মধ্যেই দেখছি আস্ত 2004 সালটাই এঁটে গেছে। খবরের কাগজ পত্রিকা, ফটোকপি, লিফলেট, পোস্টার, ভিজিটিং কার্ডের মধ্যে ওভিদের মেটামরফসিসের ফটোকপিটি দেখছি। কতোদিন খুঁজেছি। আর এ বেটা কিনা এইখানে! মেটামরফসিসের কপিটাকে ধমক দিলাম। রংপুরে তুপার কাছে পেয়েছিলাম বইটা। তুপা তো ফটোকপি করতেই দেবে না। বলে ওর বাবা বকবে। তো কী আর করা। তুপাকে প্রায় ব্লাকমেইল করে ফটোকপি করেছিলাম। আহারে তুমি এই খানে!
বেশ তুকতাক জিনিশের পর একগাদা নিউজ পেপার। 12, 13, 14 তারিখ পর পর আছে। এরপরই 18 তারিখের। 17, 16 এইভাবে উলটা করে রাখা। 14 তারিখের পেপার উলটিয়ে হতাশ হলাম। নাহ কিছু নেই। ফরিদউদ্দিন আত্তার কেন সুফিজমের টিকিটিও কোথাও পেলাম না। বারন্দার ধুলার মধ্যেই বসে পড়লাম। ভদ্রলোক বলেছেন 14 তারিখ দুপুরের কথা। যদি 14 তারিখ দুপুরের অ্যাসাইনমেন্ট হয় তবে সেটি ছাপা হওয়ার কথা 15 বা 16 তারিখে। 15 ও 16 তারিখের পেপার খুঁজলাম। আছে। খুব আনন্দ হলো। পেয়েছি এবার ফরিদউদ্দিন আত্তারকে। 15 তারিখের কালবেলায়।
2004এর 13 অক্টোবর রাতে তখনকার অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান টাটা প্রুপের চেয়ারম্যান রতন টাটার সঙ্গে একটা চুক্তি সাক্ষর করেছিলেন। ঘটনাটা ঘটেছিল বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে। বিষয় ছিল বাংলাদেশে বিশাল আকারে টাটার বিনিয়োগ। এ বিষয়ে কমেন্ট নেয়ার চেষ্টা করছিলাম আমরা। কমেন্ট নিতে গিয়েই ফরিদউদ্দিন আত্তারের কাছে যেতে হয়েছিল আমাকে। একে একে 14 অক্টোবর দুপুরের কথা আমার স্পষ্ট মনে পড়লো। কেন এই ঘটনাটা এত বিস্তারিত লিখছি তা জানার জন্য 14 অক্টোবরের ঘটনাটা জানা খুব জরুরি। আর এটাও জানা জরুরি, কেন এই ব্যাপারটা আমি ভুলে গিয়েছিলাম। কেন ভুলে গিয়েছিলাম সেটা পরে বলবো। আপাতত বলছি 14 অক্টোবরের কাহিনী।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



