মানুষকে অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে ব্যস্ত বা মনোযোগী করার লক্ষ্যে সাজানো নাটক নয়তো কী এগুলো? দ্রব্যমূল্য লাগামহীন ছুটছে। মধ্য আয়ের, নিম্ন আয়ের মানুষরা হিমসিম খাচ্ছে নিত্যদিনের খরচ যোগাতে। ভোটের নামে চারিদিকে প্রহসন, মাদকে মাদকে সয়লাব টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, শিক্ষাব্যবস্থার মেরুদণ্ড গুড়িয়ে যাচ্ছে, বিচারব্যবস্থা প্রতিনিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, ক্ষমতার অপব্যবহার চলছে দেশের প্রতিটা ইঞ্চিতে। এইসব তো আড়াল হচ্ছেই এমনকি দেশের একাধিক সময়ের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর অসুস্থতা ও চিকিৎসা বিষয়ক আলাপাআলোচনা পর্যন্ত পাকিস্তান ভার্সেস বাংলাদেশ সিরিজের ইস্যুতে ধামাচাপা পরে গেছে। ভাবা যায়!! সবকিছু উপেক্ষা করে হট ইস্যু হয়ে আছে পাকিস্তান সমর্থন ও সমর্থক।
দেশপ্রেমের নিদর্শন দেখানোর একান্ত প্রয়োজন বা সত্যিকার অর্থেই বুকে দেশপ্রেম থাকলে বাংলাদেশে #পাকিস্তানি সমর্থকদের আইনের আওতায় আনা হোক বা প্রয়োজনে পাকিস্তানের সকল স্পোর্টস টিম বা স্পোর্টস ম্যানদের বাংলাদেশে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করে দেয়া হোক। এতে আন্তর্জাতিকভাবে মনে হয় না কোনো সমস্যা হবে কারণ #১৯৭১ সালের ইতিহাস কারো অজানা নয়৷ সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বরাতে #পাকিস্তানিদের নিষিদ্ধ করে দিলে কেউ এসে সেখানে নাক গলাবে বলে আমি অন্তত ভাবি না। তাছাড়া পাকিস্তানেরও এমন মহা কোনো ক্ষতি হবে না যে তারা এসে নিষেধাজ্ঞা তুলতে হাতেপায়ে ধরে অনুরোধ করবে। ক্ষতি হলে আমাদেরই হবে আর্থিকভাবে। যাইহোক সেসব কিছু না করে এই পাকিস্তান সমর্থনের ইস্যুটাকে কেয়ামত পর্যন্ত জিইয়ে রাখা হবে সন্দেহ নেই। দেশের ভেতরে সময়ে সময়ে কোন্দল তৈরীর অপেক্ষায় থাকবে স্বার্থান্বেষী মহল এটাই বাস্তবতা।
দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ খবরাখবর ছাপিয়ে মিডিয়া কিংবা সোশ্যাল সাইটের সর্বত্র হাইলাইট করে দেয়া হচ্ছে পাকিস্তান বাংলাদেশের খেলায় পাকিস্তানপ্রীতি দেখানো একদল আধা উন্মাদ মানুষদের। যাদের সমর্থনে কারো কিছুই আসে যায় না। এরা সমর্থন করলে দেশ তো পাকিস্তান হয়ে যাচ্ছে না কিংবা যারা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক তাদের দেশপ্রেমেও ভাটা পড়ছে না। খুব প্রয়োজন হলে এই সমর্থকদের আইনের আওতায় আনা হোক, জরিমানা করা হোক কে বাধা দিচ্ছে? আন্তর্জাতিক চাপ বা বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে যেখানে নানা বিতর্ক আর প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়েও যুদ্ধাপরাধীদের ফাসি দিতে কোনো সমস্যা হলো না সেখানে এইসব সাধারণ খেলার দর্শকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিলে কার কি আসে যায়? তাহলে এইসব নাটক কিংবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ঘটনা না তো কী? পাগলছাগলেও বুঝবে এই পাকিস্তান সমর্থন/সমর্থক ইস্যুটা গরমের দিনে কম্বলের মতোই অপ্রয়োজনীয়। তবুও মিডিয়া আর সোশ্যাল সাইট ব্যবহার করে যেন গরমের দিনেও ভারী কম্বলটা শরীরে চাপিয়ে রাখা হয়েছে।
আসলে এই দেশটা ইস্যুর দেশে পরিণত হচ্ছে। ইস্যু দিয়ে ইস্যু ঢাকার এক অভাবনীয় উদাহরণ হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। আমরা হুজুগে পাবলিকও বেকুবের মতো ইস্যুতে নাকমুখ ডুবিয়ে বিবেকবুদ্ধি গিলে খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছি। জন্মমৃত্যু, দুর্যোগ, দুর্নীতি সর্বত্র বিনোদন/সময় কাটানোর উপাদান খুজছি।
(সৈয়দ মাহফুজ আহমেদ)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০২১ ভোর ৫:২৪