প্রিয়তমেষু,
ইদানিং খামোকা ডায়েরী আর পেন্সিল নিয়ে বসে পড়ি...নাহ লেখালেখি করি না; এলোমেলো আঁকিবুঁকি করি...তারপর ডায়েরী ছুড়ে ফেলে দেই ঘরের কোণে...ওখানেই পড়ে থাকে, ধুলো জমে...
খুব ছোটবেলায় আমার একটা সাইকেলের খুব শখ ছিল; বাবা কিনে দেয়নি...এক বন্ধুর সাইকেল ছিল...বন্ধুটি একবার অদ্ভুত শর্ত দিল...আমার পায়ের উপর দিয়ে সাইকেলটি চালাবে, যদি ব্যাথা না পাই তবেই আমাকে সাইকেল চালাতে দেবে...আমি রাজি হয়ে গেলাম...আমার আঙ্গুলের উপর দিয়ে সাইকেল চলে গেল, বন্ধু জিজ্ঞেস করল ব্যাথা পেয়েছিস...? আমি মাথা নাড়লাম; কিন্ত বন্ধুটি আমার কথা বিশ্বাস করেনি, তাই সাইকেলও দেয়নি...
পিসতো ভাই একবার সাহস করে প্রীতিকে প্রেমপত্র লিখে বসল, আমিও সাহস করে তা প্রীতির হাতে দিলাম... বোকা মেয়েটা ওর মাকে দেখিয়ে দিল; বাবা বলল দোষ করেছিস…? আমি মাথা নাড়লাম…বাবা আমার কথা বিশ্বাস করেনি; খুব মার খেতে হয়েছিল...
একটা ইন্টারভিউ ডাক এলো...বাবার কাছে শার্ট বানানোর পয়সা চেয়ে পাইনি; বাবা বললেন, কষ্ট পেলি...? আমি মাথা নাড়লাম, তারপর শার্ট বানাতে নিয়ে গেলেন দর্জির কাছে...সেদিন বাবা আমার কথা বিশ্বাস করেনি...
আজ সারাদিন শুয়ে ছিলাম, আমার চিলেকোঠার ঘরে... ছোট বোনটা সন্ধ্যায় ঘরে এলো খাবার নিয়ে...খেতে ইচ্ছে করেনি, অনেকক্ষণ পাশে বসে ছিল... যাবার আগে বলল ভাইয়া আজ তোর প্রিয়তমেষুর জন্মদিন ছিল, তাই তোর খুব কষ্ট হচ্ছে... আমি মাথা নাড়লাম...তারপর চুপ করে রই... বোনটা মৃদু পায়ে চিলেকোঠার ঘর থেকে চলে গেল... ছোট বোন আমার কথা বিশ্বাস করে নি...
আমি ধুলো জমা ডায়েরী খুলে আঁকিবুঁকি করতে লাগলাম...
জানি অন্য চিঠিগুলোর মত এটাও পোস্ট করা হবে না…তাছাড়া তোমার ঠিকানাও আজ আর আমার জানা নেই...আচ্ছা আজ তোমার বয়স বিশ হল… নাকি একুশ…? স্মৃতি বিশ্বাসঘাতকতা করছে…
এই সন্ধ্যাবেলার চিরকুটের উত্তর আসবেনা জেনে ডায়েরীটা আবারো ছুঁড়ে ফেলে দেই স্মৃতির স্তুপে…