পরম দয়ালু ও অসীম করুনাময় আল্লাহ এর নামে শুরু করছি।
আজ আমি আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ বর্ণনা করব। দুই বছর আগে থেকে আমার মধ্যে অনেক কিছু পরিবর্তিত হতে থাকে। আমার মনে হয় প্রত্যেক মানুষের জীবনেই একটা সময় আসে যখন সে তার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করে। সে চিন্তা করে সে কেন এই পৃথিবীতে আছে। তার জীবনের উদ্দেশ্য কি? নিজের সৃষ্টি সম্পর্কে, সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে। একজন কি কি বিষয়ের উপর প্রশ্ন করা শুরু করে, এটা খুব সম্ভবত নির্ভর করে তার জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ইত্যাদির উপর। আমার মধ্যে এই প্রশ্নগুলো আসা শুরু করে ২০০৬ সালের প্রথম দিকে। তারও আগে থেকে আমার মধ্যে ইসলামের বেশ কিছু বিষয়ে সন্দেহ ছিল। এর মধ্যে অন্যতম একটা ছিল তাকদীর বা ভাগ্য নিয়ে। আমি কোথা থেকে জেনেছিলাম যে, আল্লাহ আমাদের সবকিছু ঠিক করে রেখেছেন। আমার মধ্যে তখন সন্দেহ তৈরি হওয়া শুরু হল যে, তাহলে কেউ বেহেশতে যাবে, কেউ দোযখে যাবে, এটা কিভাবে সুবিচার হবে মানুষের প্রতি। আস্তাগফিরুল্লাহ। আবার আমি এটাও জানতাম যে, আল্লাহ সব বিচারকের মহাবিচারক। আবার আমি শুনেছিলাম যে, আল্লাহ যা করে তা আমাদের ভালোর জন্যই করে। যদি তাই হয়, তাহলে আমি যখন একটা খারাপ কাজ করি বা গুনাহ করি, সেটা কিভাবে আমার জন্য ভাল হয়। আমি তখন নামায পরতাম না। এই যে আমি নামায পরছি না, এটা কিভাবে আমার ভালো হয়। ২০০৬ সালের মার্চে, আমি তখন Oita তে থাকি, তাবলীগ জামাতের কয়েকজন আমার কাছে আসে। তারা আমাকে তাদের সাথে যেতে বলে, কয়েকদিন সময় দেবার জন্য বলে। তাদের মধ্যে একজন ছিল আমার বন্ধু। আমি তখন চিন্তা করলাম যে, দেখি তাদের সাথে গিয়ে যদি আমার প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর পাওয়া যায়। আমি তাদের সাথে ৩ দিনের মত ছিলাম। এর মধ্যে আমি একবার আমার ওই বন্ধুকে আমার প্রশ্নগুলো করলাম। কিন্তু সন্তুষ্ট হবার মত কোন উত্তর পেলাম না। যাই হোক, আমি চেষ্টা করলাম নামাযের ব্যাপারে সিরিয়াস হতে। হয়তো আমার মধ্যে শান্তি আসবে বা এই ধরনের প্রশ্নগুলো আর আমার মনের মধ্যে আসবে না। কিন্তু বেশিদিন সিরিয়াস থাকতে পারি নি। তখন আমার অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হচ্ছিল। আমি আমার পড়াশোনায় সিরিয়াস হয়ে গেলাম। দিনরাত পড়াশোনা করতাম। আপাতত পরীক্ষা পর্যন্ত আমার আর কোন সমস্যা হয় নি। পরীক্ষা ছিল আগস্ট এর ৪ তারিখে।
সেপ্টেম্বর এর দিকে হবে হয়তো। আমি বেপ্পুতে আমার এক বন্ধুর বাসায় বেড়াতে গিয়েছি। ওরা ৩ জন একসাথে থাকত। একদিন রাতে আমি, আমার বন্ধু এবং আমাদের ছোট এক ভাই এর সঙ্গে গল্প করতে বসি। গল্প করতে করতে এক পর্যায়ে সৃষ্টিকর্তার বিষয় চলে আসে। একজন বলল যে, আল্লাহ কাউকে কাউকে সবকিছু দেন। সুন্দর চেহারা, টাকা-পয়সা, মর্যাদা, সম্মান ইত্যাদি। তখন আমরা একেক জন বিভিন্ন রকম ভাবে ব্যাপারটাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলাম। ওই আলোচনার মধ্যেই চলে আসল আমাদের নিজেদের বেশ কিছু সমস্যার কথা। আমাদের মনের ভিতরের কিছু কষ্টের কথা। অথবা অনেকটা এরকম যে, কেন আল্লাহ আমাকে এটা দিলেন, না দিলেও তো পারতেন। সূক্ষ্য ক্ষোভ বা এই ধরনের কিছু কি? যাই হোক, কথা প্রসঙ্গে আমার শারীরিক কিছু দূর্বলতার কথা আসল। তখন ছোট ভাইটা আমাকে বলল যে, আল্লাহ এর কাছে দোয়া করেন, দেখবেন যে একদিন সকালে আপনার সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। আমি তখন তাকে যে উত্তর দিলাম, সেটা নিয়ে আজও চিন্তা করি। আমি তাকে উত্তর দিলাম, যদি একদিন সকালে উঠে দেখি যে সত্যি সত্যি আমার সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে গেছে, তাহলে তো আমি নিশ্চিত হয়ে যাব যে আল্লাহ আছেন। আমার উত্তর শুনে তারা দুইজনই খুবি অবাক হয়ে গেল। ওইদিনের ওই আলোচনা থেকে আমি বুঝতে পারলাম যে, আমি আসলে সৃষ্টকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে নিশ্চিত না। আর এটাই হচ্ছে আমার সব ধরনের অশান্তির কারন। যে কারনে, কেউ আমাকে নামায পড়ার কথা বললে, আমার ভিতরে কোন অনুভূতি তৈরি হত না।
আমি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তা করা শুরু করলাম। চিন্তা করতে পারেন, আমি ২২-২৩ বছর মুসলমান (তথাকথিত মুসলমান) হিসেবে জীবন অতিবাহিত করার পর এখন আমি আল্লাহ এর অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তা করা শুরু করেছি। একেবার শূন্য থেকে আমার যাত্রা শুরু। আলহামদুলিল্লাহ। আমি বিভিন্নভাবে এর উত্তর পাবার চেষ্টা করলাম। আল্লাহ কি আদৌ আছেন? থাকলে আমি কিভাবে নিশ্চিত হব? আমি অনেককে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। সরাসরি প্রশ্ন করতাম আল্লাহ যে আছেন এটা প্রমাণ করতে। আমি কোন এক সময় একটা হাদিস পড়েছিলাম যে, আল্লাহ এর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করা ৭০ বছরের ইবাদাত অপেক্ষা উত্তম। হাদিসটা প্রকৃত না অপ্রকৃত সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্ত হাদিসটা আমার মধ্যে একটা বিরাট প্রভাব ফেলল আমার ক্রান্তিকালীন সময়ে। আমি তখন চিন্তা করলাম যে, কেন সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করাকে এত মর্যাদাসম্পূর্ণ করা হয়েছে। আমি চিন্তা করলাম যে, হয়তো আল্লাহ এর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করলে আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পাব। আমি তখন আশেপাশের সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করা শুরু করলাম। তখন আমার পড়াশোনার চাপও অনেক কম ছিল। আমি কিভাবে নিশ্চিত হব যে, আল্লাহ আছেন? কেউ আমাকে বলল যে, এই যে মহাবিশ্ব, পৃথিবী এই সবকিছুর পিছনে নিশ্চয়ই একজন প্রোগ্রামার আছেন। না হলে, এগুলো কোথা থেকে আসল বা কিভাবে এত সুন্দরভাবে সাজানো-গোছানো হল। খুবি শক্তিশালী যুক্তি। আমি যে ডর্মিটরিতে থাকতাম সেটা ছিল পাহাড়ের উপর। ডর্মিটরির পিছনে ছিল পাহাড়ের ঢাল। তার পিছনে ছিল সমু্দ্র। আমি ডর্মিটরির পিছনে গিয়ে দূর সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকতাম, পাহাড় দেখতাম, গাছপালা দেখতাম, পাখি দেখতাম। সবকিছু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করতে থাকলাম। একটা পাখি, তার জীবন, সে কেন একটা পাখি, বা তার ব্যবহার কেন এরকম, সে এই খাচ্ছে, আবার উড়ে যাচ্ছে, তার ব্যবহার সবকিছু থেকে কি শিক্ষা পেতে পারি। এই সমস্ত সৃষ্টির পিছনে একজন প্রোগ্রামারের কাজটা কিরকম সেটা খুজার চেষ্টা করতাম। কিভাবে সবকিছু চালিত হচ্ছে? আমি চিন্তা করতাম। কখনও মনে হত যে, হ্যা এই সবকিছুর পিছনে অবশ্যই একজানের হাত আছে। আবার কখনও মেন হত যে, আসলেই কি তাই, হ্যা মোটামুটি বুঝা যাচ্ছে যে, সবকিছু পরিকল্পিত, একজন সৃষ্টকর্তা আছেন। কিন্তু আমি কিভাবে প্রমাণ করব যে, সৃষ্টিকর্তা আছেন? সুবহানাল্লাহ।
এই অবস্থায় সময় যেতে থাকে। আমি মোটামুটি বুঝতে পারা শুরু করেছি যে, হ্যাঁ একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন যিনি সবকিছু পরিচালনা করছেন। কিন্তু আমি ইসলামের বেশ কিছু বিষয় বুঝতে পারছিলাম না। আমার ভিতরে অনেক প্রশ্ন, অনেক সন্দেহ ছিল। কেন এটা, কেন ওটা, কেন এটা করতে হবে, কেন ওটা করতে হবে? আমার জীবনের উদ্দেশ্য কি? আল্লাহ কেন আমাকে সৃষ্টি করলেন? এই ধরনের বিভিন্ন প্রশ্ন। আমি আমার বেপ্পুর সেই বন্ধুর বাসায় আবার বেড়াতে যাই। তখন নভেম্বর বা ডিসেম্বর হবে। ওর বাসায় এক ছোট ভাই আমাকে বলে যে, Yusuf Estes নামের একজন আমেরিকান মুসলমান আছেন, যিনি খ্রিস্টান থেকে মুসলমান হয়েছেন। সে খুব সহজ ভাষায় সুন্দর করে অনেক কিছু ব্যাখ্যা করতে পারেন। তার বেশ কিছু লেকচার ইন্টারনেটে আছে। সে আমাকে Yusuf Estes এর লেকচার থেকে বেশ কিছু জিনিস আমাকে বলল। এর মধ্যে একটা ছিল দাড়ি রাখা বিষয়ে। Yusuf Estes কে একজন প্রশ্ন করেছিল যে, দাড়ি রাখা ফর্য (অবশ্যই কর্তব্য) কিনা। তার উত্তর ছিল এরকম যে, না দাড়ি রাখা ফর্য না। কারন কেউই দাড়ি রাখতে পারবে না বা অন্য ভাষায় বললে কেউই তার দাড়ি গজাতে পারে না। এটা শুধুমাত্র আল্লাহ পারেন। অনেক পুরুষ আছে যাদের দাড়ি নাই। কাজেই প্রশ্নটা হবে এরকম যে, একজন পুরুষের তার দাড়ি কাটা উচিত কিনা বা ফর্য কিনা। তার উত্তর হবে যে, না। দাড়ি কাটা উচিত হবে না। আমরা নিজেরাই নিজেদের উপর দাড়ি কাটাকে ফর্য বানিয়ে নিয়েছি। এই কথাগুলো আমার উপর খুব প্রভাব ফেলল। আমি চিন্তা করে দেখলাম যে, দাড়ি রাখা ব্যাপারটাকে ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে কত সহজ মনে হয়। আমি চিন্তা করে দেখলাম যে, আমার চিন্তাভাবনা এত বেশি একঘেষে বা ইংরেজিতে যাকে বলে biased যে আমি সহজ-সাধারনভাবেও কোন কিছু চিন্তা করতে পারিনা। আমি ভাবলাম যে, আমি সারা জীবন যে জ্ঞান অর্জন করলাম তা যে সঠিক তার নিশ্চয়তা কি। আমি কি নিয়ে এত গর্ব করি? সত্যি কথা বলতে কি আমার ভিতরে এক ধরনের গর্ব ও অহংকার ছিল। আমি দেশের সেরা ছাত্রদের একজন, জাপানে এসেছি। আমি তো অনেককিছু জানি। কিন্তু ওইদিনের পর আমি বুঝতে পারলাম যে, জ্ঞান বলে কোন কিছু আমার নেই। আমাকে শিখতে হবে, জানতে হবে, বুঝতে হবে।
আমি Yusuf Estes এর লেকচার কিছু শুনলাম। আমার বন্ধুর বাসাতেই। আলহামদুলিল্লাহ, ওই লেকচারগুলোতে আমি আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর খুজে পেয়েছি। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, আমি চিন্তা করার অনেক কিছু পেয়েছি। আমি তার খ্রিস্টান থেকে ইসলাম এ আসার কাহিনী শুনলাম। ওই কাহিনী একটা অংশ আমাকে খুব আকর্ষণ করে। সেটা হল, Yusuf Estes এক সকালে বাগানের মাঝে মাটিতে সিজদা দিয়ে বলে যে, ”O God, if You are there, then guide me“। তারপর ঘটে আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং আনন্দময় ঘটনা। ইন্টারনেটে সুরা আর-রহমানের একটা ভিডিও চালু করি। তেলাওয়াতকারীর নাম ছিল ইবরাহীম আল-জিবরীন। সে এত মধুর সুরে, এত চমৎকার ভাবে তেলাওয়াত করতে থাকল যে, শুনার পর আমার ভিতরে কি যেন একটা শুরু হয়ে গেল। আমি বলতে থাকলাম যে, আমি এটা কি শুনতেছি। অবশ্য তখন এটা বলার মত অবস্থা আমার ছিল না। আর আমি তখন ছিলাম একা। আমার অনুভূতিটা ছিল ওরকম। আমাকে মনের ভিতের কি যেন শুরু হয়ে গেল। আমি আর স্থির থাকতে পারছিলাম না। আমি কাঁদা শুরু করে দিলাম। আমার বুক যেন ফেটে যাচ্ছে। এমন এক অনুভূতি। আমি মনে মনে চিৎকার করে বলতে থাকলাম যে, হে আল্লাহ তুমি কোথায়, আমি আমার জীবনে কিছু চাই না, শুধু তোমাকে চাই। হে আল্লাহ আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও। তুমি আমাকে যা কর আমি তাতেই খুশি, আমার কোন অভিযোগ নাই। আমি দোযখে গেলেও খুশি, বেহেশতে গেলেও খুশি। এইগুলো আমার কাছে খুবি তুচ্ছ বিষয়। আমার কাছে তুমিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তেলাওয়াতকারী একেকবার একটা করে টান দিচ্ছে আর আমার কান্নার পরিমান বেড়ে যাচ্ছে। আমি পুরো নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে, এই কুরআন মানুষের তৈরি হতে পারে না। সুরা আর-রহমান, এটা কোন মানুষের তৈরি হতে পারে না। একবার তেলাওয়াত শেষ হল। আমি আবার ভিডিওটা ছাড়লাম। আবার কাঁদতে থাকলাম। আবার ছাড়লাম, আবার কাঁদতে থাকলাম। আমার মনে হচ্ছিল যে, আমি যদি এভাবেই সুরা আর-রহমান শুনতে থাকতাম সবসময়। আমি সুরা আর-রহমান শুনতে থাকলাম আর কাঁদতে থাকলাম। আমার মনে হয় যে, আমি এক ঘন্টার উপরে এভাবে কেঁদেছি। তখন কারা যেন ঘরে ঢুকল। আমি সাথে সাথে কম্বলের ভিতরে ঢুকে গেলাম। কারন আমি তখন কাঁদতে ছিলাম। আমি শুধু কাঁদতে ছিলাম। আল্লাহু আকবার।
এই ধরনের অনুভূতি সবসময় মানুষের থাকে না। আমি স্বাভাবিক হলাম। আমার ডর্মিটরিতে চলে আসলাম। আমার ভিতের সৃষ্টিকর্তা নিয়ে যে সন্দেহ ছিল তা দূর হল। আমি তখন দিনরাত ধরে ইন্টারনেটে বিভিন্ন scholarদের লেকচার দেখা শুরু করলাম। কিন্তু কিছু কিছু বিষয় আমি ঠিক করতে পারছিলাম না। যেমন নামায পড়া। আমি তখন বুঝতে পারলাম আমাকে আল্লাহ এর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। আমি নামায শুরু করে সিজদাতে গিয়ে, আল্লাহ এর কাছে চাইলাম যে, হে আল্লাহ! আমি দূর্বল, আমি শক্তিহীন, আমার কোন জ্ঞান নাই, আমাকে তুমি সাহায্য কর, আমাকে জ্ঞান দাও, আমাকে তুমি হেদায়াত কর, আমাকে তুমি গাইড কর। তারপর আমি আস্তে আস্তে অনেক কিছু শুরু করলাম। আমি কুরআন শুনতাম বেশি বেশি করে, বিশেষ করে ইন্টারনেটে কুরআনের ইংরেজি অর্থসহ যেসব ভিডিও আছে সেগুলো দেখতাম। আমার জীবনের একটা অংশ হয়ে গেল কুরআন শুনা। আমহামদুলিল্লাহ, আমি যেসব বিষয়ে চিন্তা করা শুরু করেছি, আমি সেগুলোর উত্তরও পাওয়া শুরু করেছি। আমি যত ইসলাম নিয়ে জানা শুরু করলাম, যত কুরআন জানলাম তত অবাক হতে থাকলাম। কি চমৎকার এক জীবন ব্যাবস্থা এই ইসলাম! আর কুরআন হচ্ছে এক মিরাকল। কুরআনে যে কত কিছু আছে, মানুষের চিন্তা করার কত উপকরন যে আছে এখানে তা বলার বাইরে। আমার জীবনের অন্যতম একটা লক্ষ্য এখন হল নিজে কুরআন শিখা এবং অন্যকে তা শিখানো।
আমি আমার পড়াশোনা শুধু ইসলামেই সীমাবদ্ধ রাখি নি। আমি সবার যুক্তি শুনতাম। যে সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করে না, যে খ্রিস্টান, যাদের ভিডিও আমি পাই ইনটারনেট এ, তাদের সবার ভিডিও আমি দেখতাম। আমি আমার জ্ঞান বাড়ানোর চেষ্টা করি নিয়মিত। মানুষের সাথে কথা বলা এখন আমার কাছে খুবি আনন্দময় একটা ব্যাপার। এর মাধ্যমে অনেক কিছু শিখা যায়। মানুষের চিন্তাভাবনা, মানুষের আচার ব্যবহার, কাজ কিসের দ্বারা প্রভাবিত হয়, কুরআনে আল্লাহ কি বলছেন, ওগুলোকে বাস্তবে মিলিয়ে দেখা। এইসব অনেক কিছু আছে। হ্যাঁ, এটা ঠিক, এর মাঝেও আমি অনেক খারাপ কাজ করেছি। কিন্তু আমি এখন সত্যকে বুঝতে পেরেছি। আল্লাহ আমাকে সঠিক পথটাকে দেখিয়েছেন। সেটা হল, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। এর অর্থ ব্যাখ্যা করতে গেলে আরো কয়েক পৃষ্টা লেগে যাবে। এর অর্থ যে উপলব্ধি করতে পেরেছে, সে হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানটা অর্জন করল। আমাকে একজন প্রশ্ন করেছিল যে, আচ্ছা তোমার আগের আর এখনকার অবস্থার মধ্যে পার্থক্য কি? মানে, তুমি তো আগেও ভাল ছিলে, তুমি কি বলবে যে তুমি আগে অসুখী ছিলে। তার প্রশ্ন ছিল যে, এত সিরিয়াস হবার দরকার কি? আমি এই উত্তরে বলতে চাই যে, নিজের সৃষ্টিকর্তাকে জানার যে আনন্দ, নিজের জীবনের অর্থ ও উদ্দেশ্য জানার যে একটা তৃপ্তি এর কোন তুলনা নেই। আল্লাহ কে সবকিছুর থেকে বেশি ভালবাসার যে আনন্দ, যে সুখ, এটা শুধু সেই উপলব্ধি করতে পারবে যে, যে আল্লাহকে ভালবেসেছে। আর আল্লাহর জন্য সবকিছুকে ভালবাসা, এই ভালবাসা যে কত ব্যাপক, কত বড় তা যারা চিন্তা করতে পারে তার বুঝবে। কুরআনে আল্লাহ যেভাবে বলেছেন, একজন বিশ্বাসী এবং একজন অবিশ্বাসীর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে ঠিক এরকম যে, একজন জীবিত আর একজন মৃত। আর আমি যখন জানতে পারব, বুঝতে পারব যে, এটা সত্য তখন আমি কেন সেটা করব না। সারা পৃথিবীর মানুষ যদি তার উল্টো পথে থাকে তাও আমি সত্যকে আকড়ে ধরে রাখব, কারন আমি জানি যে এটা সত্য। আমি কেন অন্ধভাবে সবাইকে অনুসরন করব? আমি এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। কারন আমি জানি যে, আমার সাথে সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী আছেন।
এই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। শুধু লিখে নিজের মনের ভিতরের অনু্ভূতির অনেক কিছুই বোঝানো যায় না। আরো অনেক কিছু ছিল এসবকিছুর মাঝখানে। কিন্তু সব বলতে গেলে অনেক বড় হয়ে যাবে, আর সবকিছুকে গুছিয়ে সাজানোও বেশ কষ্টকর। আমার এই কাহিনী যদি কাউকে উৎসাহিত করে তাহলে আমি মনে করব যে, আমার এই লেখা সার্থক। আসলে শুধুমাত্র এই উদ্দেশ্যেই আমি লেখার সিদ্ধান্ত নেই। আল্লাহ আপনাকে এবং আমাকে গাইড করুন। আসসালামু আলাইকুম।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




