somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নের ঢাকা!

২৫ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চিরচেনা ঢাকার চিত্র এটা নয়। রাস্তায় জ্যাম নেই, নগরে মানুষ নেই; কোথাও প্রয়োজনীয় যান নেই। আবার কোথায়ও ভূরি ভূরি যান দাঁড়িয়ে আছে অথচ যাত্রী নেই, ট্রাফিক সিগন্যাল নেই, শব্দদূষণ নেই। দোকানে-মার্কেটে ভিড় নেই, গুলিস্তান ফাঁকা, ফার্মগেট ফাঁকা। ফাঁকা এরকম প্রধান স্পটগুলো। যাদের ব্যক্তিগত যান আছে তারা কয়েক মিনিটেই ঢাকার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে দাপিয়ে বেড়াতে পারছেন। কোলাহলমুক্ত এক শান্ত ঢাকা। ফাঁকা ঢাকা। ঈদের বন্ধেই সাধারণত ঢাকার এই চিত্র দেখা যায়। এ সময় যারা ঢাকায় থাকেন, তাদের কাছে এটাই স্বপ্নের ঢাকা, প্রত্যাশিত ঢাকা। এ সময় অনেকে বলেন, 'সারা বছর যদি ঢাকা এমন থাকত'! আবার অনেকে লেখেন, 'ঢাকা যদি এমন হতো'!
ঈদের ষষ্ঠ দিন হিসেবে আজও হয়তো এ চিত্র দেখা যাবে। কিন্তু কাল থেকে কে ঠেকাবে ঢাকাকে? মানুষের কোলাহল বাড়বে, যানজট বাড়বে; অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে। ঢাকা ফিরে পাবে তার আপন পরিচিতি। এই তো ঢাকা। এটাই তার চিরন্তন চেহারা। যে চেহারা দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা শহরগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে থেকে ফোর্বস ম্যাগাজিনে স্থান করে নিয়েছে। যে চেহারা ঘুম কেড়ে নিয়েছে নগরবিদদের। যে চেহারায় শ্রান্তি নেই ট্রাফিক পুলিশের। সরকারেরও তো মাথাব্যথার অন্ত নেই। ইতিমধ্যে নগর দ্বিখণ্ডিত হয়েছে। আরও কত পদক্ষেপ যে রয়েছে তার অন্ত নেই! আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকা নগরবাসীর কথা তো বলার অপেক্ষাই নেই। এখানে চোর আছে, ডাকাত আছে; ফুটপাতে মানুষ আছে। এখানে ছিনতাই হয়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়। নিজ বাসায় মানুষ খুন হয়। এসব মিলিয়েই ঢাকা। গবেষকরা হিসাব করেন, প্রতিদিন দুই হাজারেরও বেশি মানুষ নতুন করে ঢাকায় আসেন। আরও হিসাব করেন, প্রতি বছর ঢাকার পানির স্তর নামছে তিন মিটার হারে। ঢাকার বিষাক্ত নদীগুলো নিয়েও তো আলোচনার কমতি নেই। উইকিপিডিয়া দেখাচ্ছে, পৃথিবীর ২৭টি মেগাসিটির মধ্যে ঢাকার অবস্থান ২০, যেখানে বাস করে এক কোটি ৪০ লাখ মানুষ। ঢাকা নিয়ে এরকম হিসাব আর গবেষণার সংখ্যা যে কত তারও ইয়ত্তা নেই!
ঠিক এর বাইরে এসে ঈদের চিত্রটা কেমন যেন বেখাপ্পা। ঈদের ছুটিতে কত মানুষ বাড়ি যায় তার একটা আনুমানিক হিসাব করে ১৫ আগস্ট বিবিসি বাংলা দেখিয়েছে_ ৫০ লাখ। অনেকে ধারণা করেন, অর্ধেক মানুষই গ্রামে যায়। সে হিসাবে ৭০ লাখ। সংখ্যায় যা-ই হোক, এ বিপুল সংখ্যক নগরবাসী ঢাকা ছাড়লেই বোঝা যায় ঢাকার চাপ কতটা কমেছে। ফলে এ সময় যারা ঢাকা থাকেন, একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। একটা স্বপ্নের ঢাকার নমুনা হিসেবে উপস্থাপন করেন এবং ঈদের সময়ের মতো যেন সারা বছর ঢাকা থাকে, তার প্রত্যাশা করেন।
তাদের প্রত্যাশিত এই ঢাকাই কি সত্যিকার স্বপ্নের ঢাকা? যেখানে কোলাহল নেই, প্রাণচাঞ্চল্য নেই। এ তো যেন ঘুমের নগরী, মৃত নগরী। এটা বাস করার জন্য স্বপ্নের শহর হয় কীভাবে। একদিকে যেমন এর স্থায়িত্ব কম, মানে মাত্র সপ্তাহখানেক সময়ের জন্য এটি আসে। অন্যদিকে এ সময় নেই কোনো অফিসিয়াল কর্মকাণ্ড। ব্যাংক বন্ধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, অফিস-আদালত বন্ধ। এ অবস্থা আসলে চলতে পারে না। ঢাকায় প্রত্যেক মানুষ কোনো না কোনো ধান্দায় আসেন এবং প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে কাজ পাচ্ছেন, থাকছেন। প্রত্যেকের বাস করার মাধ্যমেই এই ঢাকার উৎফুল্লতা। প্রাণহীন কোনো নগরী নয়। তাহলে স্বপ্নের নগরী কি অধরাই থাকছে? উত্তর হলো_ না। ঢাকার বর্তমান সব অবকাঠামো, জনসম্পদ এবং পারিপার্শ্বিকতা চিন্তা করেই স্বপ্নের ঢাকার কথা ভাবতে হবে। যেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে না হোক, মোটামুটি সবাই থাকতে পারবে। তার দৈনন্দিন জীবন যাপন করতে পারবে। এ জন্য যথাযথ পরিকল্পনা দরকার। সেটা এখানকার বিষয় নয়, সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই এ নিয়ে মাথা ঘামাবেন।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×