somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসি বনাম মসি

১৮ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রবাদে আছে অসির চেয়ে মসির শক্তি বেশি। বাস্তব বলে অন্য কথা। অস্ত্রের চেয়ে শক্তিশালী আর কী হতে পারে। যার হাতে অস্ত্র সে-ই ক্ষমতাবান। অস্ত্রের কাছে সবাই অসহায়। ছাত্রের হাতে অস্ত্র থাকলে শিক্ষক অসহায়। খবরটা শনিবারের সমকালের । রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রলীগ নেতা পরীক্ষার হলে গেছেন অস্ত্র নিয়ে। অস্ত্রের দাপটে তিনি তার নির্দিষ্ট আসনে বসেননি। দায়িত্বরত শিক্ষক তাকে নিজ আসনে বসতে বললেও শিক্ষকের কথা শোনেননি। উল্টো এ নেতা ক্ষিপ্ত হয়ে তার অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দিয়ে শিক্ষককে বলেছেন, 'আমি যেভাবে পরীক্ষা দিতে চাই সেভাবেই পরীক্ষা দেব, আমাকে বাধা দিলে আমি পরীক্ষা বন্ধ করে দেব।' একজন ছাত্রনেতার এত ক্ষমতা! পরীক্ষা বন্ধের ক্ষমতা রাখেন তিনি। তার কাছে দায়িত্বরত শিক্ষক যে কত অসহায় সেটা বোঝা গেল এই প্রতিবেদন থেকেই। ওই শিক্ষক এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ করেননি। এমনকি ১৪ তারিখ ঘটনাটি ঘটলেও তার প্রতিকার হয়েছে বলে কোনো সংবাদমাধ্যম খবর দেয়নি।
এ রকম অসহায়ত্বের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই আসে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন তাদের ইচ্ছেমতো সবই করে। প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের ওপর হামলা, হল দখল, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি, শিক্ষকদের অপমানসহ এ রকম নানা অপকর্ম তারা করেই যান। কিন্তু এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনা ঘটল তার ব্যাখ্যা কীভাবে দেওয়া যেতে পারে। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে তার প্রধান দায়িত্ব নিয়মিত ক্লাস করা, পরীক্ষায় অংশ নেওয়া। এসব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটা মানতে প্রত্যেক শিক্ষার্থী বাধ্য। এটা তো স্বতঃসিদ্ধ যে, প্রত্যেক শিক্ষার্থী পরীক্ষার হলে প্রবেশ করবে প্রবেশপত্র, কলম ও পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে। সেখানে অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ। অথচ এ নেতা অস্ত্র নিয়ে গেছেন। যেখানে পরীক্ষার হলে অনেক সময় সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর নিয়েও প্রবেশ করা যায় না সেখানে তিনি অস্ত্র নিয়ে ঢুকলেন কীভাবে? এমনিতেই বড় অপরাধের কাজ করেছেন তিনি। এর ওপর তার নির্দিষ্ট আসনে বসেননি। সেটা আরেক অপরাধ। এর চেয়েও বড় অপরাধ হলো, দায়িত্বরত শিক্ষক তাকে তার আসনে বসতে বলার পরও আদেশ মানেননি। আর তিনি যে চরম অপরাধটি করেছেন তাহলো, ওই শিক্ষককে হুমকি দিয়েছেন। আর পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়ার যে হুমকি দিয়েছেন সেটার বর্ণনা বলাই বাহুল্য।
আরও অবাক করার বিষয় হলো, দায়িত্বরত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে হুমকি দেওয়ার পরও ছাত্রনেতার কিছু হয়নি। শিক্ষকও কোথাও অভিযোগ করেননি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, অসহায় শিক্ষকের চেয়েও ক্ষমতাবান ছাত্রনেতা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগবে তার ক্ষমতার উৎস কি? ঘটনাদৃষ্টে একটা উৎস হয়তো আমরা দেখছি তার অস্ত্র। কিন্তু এটাই কি চূড়ান্ত? কোন সাহসে এ নেতা পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়ার মতো হুমকি দিতে পারেন। তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বড় কারও যে যোগসাজশ রয়েছে সহজেই তা বলা যায়। আর একটা বিশ্ববিদ্যালয় দলীয়করণের কোন পর্যায়ে গেলে দলীয় ছাত্রসংগঠনের নেতারা শিক্ষকদের সঙ্গে এ রকম ব্যবহার করতে পারেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর ছাত্র সংগঠন কতটা কলুষিত হলে একজন ছাত্রনেতা এ রকম কাজ করতে পারেন তারও ব্যাখ্যার দরকার পড়ে না। এভাবে যতদিন ছাত্রনেতাদের হাতে কলমের পরিবর্তে অস্ত্র থাকবে; পরীক্ষার হলে শিক্ষা সামগ্রীর পরিবর্তে অস্ত্র নিয়ে ঢুকবে; প্রশাসনের নিয়মকে নিজেদের সুবিধায় ভেঙে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করবে; পড়াশোনা না করে অন্য উপায়ে পাস করতে চাইবে; ততদিন পর্যন্ত এদের দিয়ে জাতি ভালো কিছু আশা করতে পারে না।
কলমের চেয়ে অস্ত্র শক্তিশালী হয়ে উঠলে সেটা ভয়ঙ্কর হতে বাধ্য। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা এভাবে চলতে থাকলে আর এগুলোকে প্রশ্রয় দিলে সেটা কোনো দলের জন্যই ভালো ফল এনে দেবে না।

প্রকাশিত
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×