somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্যান ফিকশনঃ আমি হিমু নই (প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদ সৃষ্ট চরিত্র নিয়ে লেখা, অসমাপ্ত)

২৪ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






"হিমু!  এই হিমু!!"
"হিমু...এই হিমু!!! "

কেউ একজন আমাকে ডাকছে। গলার স্বরটা আমার পরিচিত কিন্তু ঠিক ধরতে পারছি না।
আমি একবার চোখ মেলে তাকালাম।
ঘুটঘুটে অন্ধকার। এখনও ভোর হয়নি। আমি এদিক ওদিক ফিরে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।

-হিমু সাহেব...হিমু সাহেব ঘুমাচ্ছেন নাকি?

আমি চোখ খুললাম। দরজা জানালার ফাঁক দিয়ে একটু একটু করে আলো আসার চেষ্টা করছে। সকাল হয়ে গেছে তাহলে।

-হিমু সাহেব এই হিমু সাহেব, দরজা খুলুন।

আমি আরেকদফা ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছি। যার প্রয়োজন সে দাঁড়িয়ে থাকবে আর না হলে চলে যাবে।তাই বলে আমি ঘুম নষ্ট করবো না।
আমি চোখ বন্ধ করলাম।এরপর  গায়ে কাথা জড়ালাম।কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ ফিরলাম। নাহ ঘুম আর আসছেই না। সকালের কাঁচা ঘুম একবার ভেঙে গেলে সহজে আসতে চায় না। আর এই না আসতে চাওয়া ঘুমকে আর আনার চেষ্টা করে প্রশ্রয় দিতে নেই। তাহলে ঘুম মাথায় উঠবে। যখন ঘুম দরকার তখন আর পাওয়া যাবে না। আমি উঠে পড়লাম।

বাইরে দরজা খুলে বের হলাম। খোলার সাথে সাথেই শীত জেঁকে ধরেছে হঠাৎ করে।
বজলুর সাহেব দাঁড়ানো।
-হিমু সাহেব ভাল আছেন?
-জ্বি ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন বজলু সাহেব?
-জ্বি আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভাল আছি। আপনার ঘুম ভাঙানোর জন্য দুঃখিত হিমু সাহেব। আপনার জন্য একটা খুব ভাল জিনিস নিয়ে এসেছি। এই নিন সকালে খালি পেটে খেজুরের রস খান।
-এই সাত সকালে খেজুরের রস কোথায় পেলেন?
-জ্বি এক লোক কেরানীগঞ্জ এ থাকে আমার পরিচিত, তাকে বলে দিয়েছিলাম গতকাল। নিজের গাছ থেকে তাজা খেজুর রস আনলেন। ভাবলাম আপনার জন্য নিয়ে আসি। এটা খুব উপকারী।  খালিপেটে খেলে শরীরের নানা রকম রোগ চলে যায়। খেজুর আল্লাহর রাসুলের দেশের খাবার। এর উপর আল্লাহ তায়ালার বিশেষ রহমত আছে।
-দিন খেয়ে দেখি।

বজলু সাহেব গ্লাসে ঢেলে দিলেন আর আমি গ্লাস মুখে দিলাম।
যাচ্ছেতাই স্বাদ! মুখটা মনে হয় নষ্ট হয়ে গেল। রসটা এরকম কেন বুঝলাম না।

- কেমন লেগেছে হিমু সাহেব?
- অনেক সুন্দর স্বাদ। যেন অমৃত। 
- আপনার ভাল লেগেছে?
- জ্বি অনেক ভাল।
- আরেক গ্লাস দেই?
- জ্বি দিন।
আমি আরেক গ্লাস ভরে এই অখাদ্য খেলাম। মুখ তিতা হয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছে করোল্লার তিতা রস খেয়েছি। জিহ্বায় কেমন যেন একটা জড়তা এসেছে। নাড়াতে পারছি না।

বজলু সাহেবের দিকে ফিরে মনে হল তিনি বেশ পরিতৃপ্ত হয়েছেন আমার খাওয়া দেখে। ভালই লাগছে তিতা খেজুরের রস খেয়ে কাউকে খুশি করতে পেরে। বেচারা এত মানুষ থাকতে আমার জন্য নিয়ে এলেন যখন তখন তার মনে দুঃখ দেওয়ার ইচ্ছে করছিল না। খুব সম্ভবতঃ রসটা একটু পঁচে গেছে মনে হচ্ছে।
- হিমু ভাই আপনি চাইলে এই জগটা রেখে দিতে পারেন।  সকালে যতক্ষণ থাকবেন খেজুরের রস খাবেন।
- জ্বি আচ্ছা খাব। কথাটা বলতে গিয়ে কি বলেছি আমি নিজেই বুঝতে পারি নি। মুখ,গলা জিহ্বা সব অবশ হয়ে আছে। হা সূচক মাথা নাড়ানোতে বজলু সাহেব আমার হাতে জগটা তুলে দিলেন। চোখে মুখে প্রশান্তির ছাপ স্পষ্ট।

এমন সময় বজলু সাহেবের কাজের ছেলে দোতলা থেকে নেমে এল। তার হাতেও একই রকম একটা খেজুর রস ভর্তি জগ। আজ মনে হয় বজলু সাহেব "খেজুর রস দিবস" পালন করছেন। বাড়ি বাড়ি খেজুর রস সাপ্লাই দিচ্ছেন।

বজলু সাহেব ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেলেন। কি যেন কথাবার্তা হল তাদের মধ্যে। আমি জগ হাতে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
বজলু সাহেব আমার দিকে এগিয়ে এলেন অন্য জগটা নিয়ে।
- ইয়ে মানে হিমু সাহেব একটা ভুল হয়ে গিয়েছে।
- কি হয়েছে বজলু সাহেব?
- হিমু সাহেব আমি আপনাকে ভুল করে আমার বাবার জন্য রাখা ত্রিফলা আর চিরতা ভেজানো পানি ছিল যে জগে সেটা দিয়েছি। পাশাপাশি দুটো জগ থাকায় আমি বুঝতে পারি নি কোনটা কি। আপনার জগটা আমাকে দিন আর আমারটা নিন। এটার মধ্যে আসল খেজুর রস ছিল। আমি দুঃখিত হিমু সাহেব।

আমি হাসিমুখে আমার হাতের জগ তাকে দিলাম ও তার হাতেরটা নিলাম।

- হিমু সাহেব আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন?
- জ্বি না রাগ কেন করব?
- না মানে আপনাকে আমি খেজুরের রস বলে ভুলে তিতা চিরতার রস খাইয়েছি এজন্য?
- না কোন সমস্যা নেই। এটাও অনেক বড় বড় অসুখের মহৌষধ।এখন দিন এক গ্লাস খেজুর রস খেয়ে নেই।
আমি এক গ্লাস খেজুর রস খেলাম  সামনে বসেই। মুখের জড়তা কেটে গেল। তিতা স্বাদটা চলে গেল মিষ্টি রস খেয়ে।
-আহহ!!! কি চমৎকার স্বাদ। বাহ!! আলহামদুলিল্লাহ্‌!!!
তারপরও বজলু সাহেবের চেহারা দেখে মনে হল তিনি খুশি হলেন না। একটা অপরাধবোধের ছাপ পড়ে আছে। আমি জানি এর একটা প্রায়শ্চিত্ত করার চেষ্টা করবেন তিনি।
- হিমু সাহেব।
- বলুন।
- আজ বিকেলে আমার বাসায় আপনার দাওয়াত। আপনার ভাবি পিঠা বানাবে। খেজুর রসে ভেজানো পিঠা। আপনি আসবেন অবশ্যই।
- জ্বি আসবো।
বজলু সাহেব মুখে সামান্য হাসি ফুটিয়ে চলে গেলেন।  তবে চেহারা থেকে তখনও অপরাধবোধের ছায়া যায়নি। মনে মনে হয়ত আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছেন।

আমি জগ নিয়ে রুমে ফিরলাম। সকালে অনেক মিথ্যা বলা হয়ে গেছে। এগুলো হচ্ছে উপকারী মিথ্যা। বজলু সাহেবের মনে যে প্রশান্তি নেমেছিল তার পুণ্যে আমার মিথ্যের পাপ কেটে গেছে। তবে বিকেলের দাওয়াত নেওয়ার ব্যাপারে আমি মিথ্যে বলেছি। বিকেলে আমি থাকব না। একটা বিশেষ কাজ আছে আজকে।  তবে বজলু সাহেব আমাকে না খাওয়া পর্যন্ত ছাড়বেন না। হয়ত রাতে ফিরলে বাসায় ধরে নিয়ে যাবেন। তিনি মানুষটা খুবই ভাল। আমি যে মেস এ থাকি তার মালিক তিনি।
বাপ মা বউ নিয়ে সুন্দর সংসার তার।
তার জীবনযাপন অন্য রকম। নিয়মিত সকালে ফজরের নামাজ পড়ে হাঁটতে বের হন। তার মতে এসময় যে বাতাস হয় সেই বাতাস নাকি বেহেস্তি বাতাস। এটা গায়ে লাগলে নাকি মানুষের আয়ু বাড়ে। আমাকেও একদিন আসতে বলেছিলেন। কিন্তু ঘুমের কারণে যাওয়া হয়নি। একদিন না ঘুমিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আছে।
এরপর ফিরে আসার সময় বাড়ির সামনের সেলিম এর চায়ের দোকানের রঙ চা খেয়ে আসবেন। এটা নাকি ক্লান্তি একেবারেই দূর করে তার।
বজলু সাহেব একজন সুখী মানুষ। সকল মানুষের সাথে তার ব্যবহার অত্যন্ত অমায়িক। তার ভেতরে ও বাইরে একই রকম। এমন মানুষকে সবাইই ভালবাসে। কিন্তু এরা ক্ষণজন্মা হন। সাধারণ মানুষ কখনই এদের কদর করতে জানে না।



[যদি লেখা ভাল।লাগে তবে পরের পার্ট লিখব। আর নাহলে লিখব না।ধন্যবাদ]
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×