এই গল্পের শুরু দুই কাপ চা থেকে। হতে পারে সেটা টিএসসির কোন চায়ের দোকানের চা। অনেক মানুষের মধ্যে দুজন পাশাপাশি চা এর কাপ হাতে বসে আছে অথবা হতে পারে অপরিচিত কোন নাম ধামহীন একটা জায়গায় একটা ছাউনির নিচে একটা আধভাঙা, ঘুনে ধরা বেঞ্চের উপর কাপ হাতে বসে আছে দুজন। চুলো থেকে নামানো চা থেকে এখনও ধুয়া বের হচ্ছে। বলা যায় দুই কাপ ধুমায়িত চা হাতে দুজন বসে আছে।
গল্পের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য লেখক এবার পাত্র পাত্রীর দিকে মনোযোগ দিলেন। এই কাপ হাতে পাশাপাশি বসে থাকা মানুষ দুজনের মধ্যে একজন হচ্ছে ছেলে আর অন্যজন মেয়ে। হতে পারে তারা একে অন্যের বহুদিন থেকে পরিচিত। অথবা হতে পারে তাদের কেবলমাত্র দেখা হয়েছে। অথবা এমনও হতে পারে তারা পাশাপাশি বসে আছে ঠিকই কিন্তু তারা কেউ কারও দিকে খেয়ালই করছে না। তারা হয়ত তাকিয়ে আছে চায়ের কাপের দিকে কিন্তু সেদিকে তাদের কোন খেয়াল নেই। নেই আশেপাশের মানুষের জীবনযাত্রার দিকে। সামনের রাস্তায় হাজার হাজার যানবাহন চলে যাচ্ছে, একটা ভিক্ষুক এসে দুজনের কাছে টাকা চেয়ে তাদের ওই চায়ের দোকানেই চা খেয়ে আবার ভিক্ষা করতে নেমে গেছে, রাস্তার অন্যপাশে এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তা পাড় হওয়ার জন্য অথবা দুই বন্ধু নতুন কেনা দামী মোবাইলটা নিয়ে গল্পের ঝড় তুলছে অথবা দুই ট্রাফিক পুলিশ একটা মালবাহী ট্রাক থামিয়েছে রাস্তার পাশে... এরকম একটার পর একটা ঘটনা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এই গল্পের পাত্রপাত্রীর সেদিকে খেয়াল নেই। লেখক এই উদাসীন ছেলে ও মেয়ে চরিত্রের দিকে এবার খেয়াল দিলেন।
হতে পারে ছেলেটার সাথে এই বছর পহেলা বৈশাখের মেলায় শাড়ি পড়া এক মেয়ে ছিল। হাতে লাল শাড়ি। ভীড়ের মধ্যে না যেয়ে এক পাশে বসে গল্প করছিল দুজন। জীবনের গল্প। একের পর এক রঙীন জীবনের গল্প। অনেক গুলো এলোমেলো স্বপ্ন গুছিয়ে ফেলার গল্প।
ধরা যাক চায়ের কাপ হাতে পাশে বসা মেয়েটারও এরকম গল্প আছে। জীবন জয়ের গল্প। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসার কোন সাহসী গল্প। অথবা বৃষ্টিভেজা কোন এক আধভেজা দিনে গোলাপ ফুল হাতে নিয়মিত অপেক্ষায় থাকা ছেলেটাকে ভালবাসার গল্প।
লেখক জানে যেখানে ভালবাসার গল্প আছে সেখানেই হারিয়ে যাওয়ার গল্পও আছে। তারা দুজনেই পাশাপাশি বসে থাকে। এই ছেলেটা ও মেয়েটার মতই। ট্রাজেডিপ্রিয় পাঠকেরা এই গল্প বেশ পছন্দ করে।
হয়ত সেই দিনও ছেলেটা ও মেয়েটার হাতেও এভাবেই দুইকাপ চা ছিল। সদ্য নামানো দুই কাপ ধুমায়িত চা; অনেক গল্পের সাক্ষী হয়ে।
গল্পের মেয়েটার সাথে ছেলেটার এর আগেও বহুবার দেখা হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার সময় মেয়েটার তিন বেঞ্চ পেছনেই ছিল ছেলেটা। অন্য একদিন নিউমার্কেটে বইয়ের দোকানে বই কিনতে গিয়ে পাশাপাশিই দাঁড়িয়ে ছিল দুজন কিন্তু কেউই খেয়াল করেনি অন্যজনকে। সেবার বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়ার সময় বাসের পাশের সারির সিটে যে মেয়েকে নিয়ে অন্য এক বন্ধুকে বোকা বানাচ্ছিল এই মেয়েটাই সেই মেয়ে।
লেখক একের পর এক এভাবেই গল্প লিখে যান। প্রতিটা গল্পের শেষে একটা অদ্ভুত টুইস্ট অপেক্ষা করে যেন। যদিও পাত্রপাত্রীরা সেটা কখনই আগে থেকে বুঝতে পারে না।
হয়ত গল্পের শেষটাতেও এভাবেই দুজন পাশাপাশি বসে থাকবে। কোন এক বাড়ির ছাদে শেষ বিকেলে। তাদের হাতে সেদিনও হয়ত থাকবে এরকম দুই চাপ ধুমায়িত চা। লেখকই ভাল জানেন তিনি কি গল্প লিখে চলেছেন। তিনি কেউকে নিরাশ করেন না।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০১