একটা খুন হয়েছে। আমি যে পাড়ায় থাকি সে পাড়ার পূর্ব মাথায়। আমাদের পাড়ার নাম কলেজ এভেনিউ।
দেখলাম একটা মোটাসোটা লোক রাস্তায় পড়ে আছেন। রাস্তা রক্তে তলিয়ে গেছে। উপুর হয়ে পড়ে ছিল লোকটা। আমরা ফজরের নামাজ পড়ে ফিরে আসার সময় লাশটা দেখি। গতকাল রাতে ঘটনাটা ঘটেছে সম্ভবত। কেননা রাতে আমি আমার বন্ধুর বাসা থেকে একটার দিকে এই রাস্তা থেকেই ফিরেছি। তখন তো কিছুই দেখলাম না। তার মানে ঘটনা এর পরে হয়েছে।
আমি একটু দুর্বল চিত্তের মানুষ। তাই বেশিক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। কে, কোথায় বাসা সেটা পরে জানা যাবে রেনুর বাপ বা মোস্তফার বাপের কাছ থেকে। এরা আমাদের পাড়ার বিবিসি কিংবা সিএনএন কর্তৃক চাকরিপ্রাপ্ত। ব্যাপন প্রক্রিয়ায় সমস্ত পাড়ায় খবর পৌছে যায় এদের মাধ্যমে। তাই এখন লাশ নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে কৌতুহল চেপে রেখে প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর যে কাজটা করি সেটা করতে বের হয়ে গেলাম মানে হাঁটতে বের হয়ে গেলাম। মনে মনে চিন্তাও হচ্ছে এই ভেবে যে মানুষের জীবনে নিরাপত্তা কোথায়?
সমস্ত বরিশাল শহর ঘুরলাম আজকে। বিএম কলেজের সামনে একটা বাসার দরজায় দাঁড়িয়ে রইলাম অনেকক্ষণ। এক লোকের সাথে আজকে দেখা করার কথা। লোকটা পেশায় উকিল। কোর্টে একটা খুনের সাক্ষী দিতে যেতে হবে। এজন্য আমাকে আজ আসতে বলেছিলেন।
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ডাকাডাকি করলাম কেউ বের হলো না বাসা থেকে। মোবাইলটাও সাথে নেই যে ফোন দিব। কি আর করা। ভাবলাম বাসায় যেয়ে ফ্রেস হয়ে নেই। এরপর তার সাথে দেখা করব। বাসার কেউ হয়ত ঘুম থেকেই ওঠেনি এই বাসার। তাই এরপর চলে গেলাম।
বাসায় পৌছে তো হুলস্থুল অবস্থা। পাশের বাসার গেটের সামনে এত মানুষ! আমাদের পাশের বাসায় নেতা থাকেন। মাঝে মাঝে এরকম মানুষ ভীড় করে। আজকেও কি যেন হয়েছে। সম্ভবত ওই লাশ নিয়ে কিছু হবে।
মেইন গেট থেকে ভেতরে ঢুকলাম। ঢুকেই দেখি লাশটা রাখা মাটির উপর। চেহারার দিকে তাকিয়েই ভয় পেয়ে গেলাম।
আরে!!!
এ তো আমি!!!
গতরাতের ঘটনা মনে পড়ে গেল। রাতে অসুস্থ বন্ধুর বাসা থেকে ফিরছিলাম। মুখ ঢাকা কয়েকজন রাস্তার মাথায় আমাকে আটকায়। এরপর এলোপাথাড়ি ছুরি মারতে থাকে। আমার আর কিছু মনে নেই।
নিজের লাশকে সামনে দাঁড়িয়ে দেখার অভিজ্ঞতা অন্যরকম। বুঝছিনা আমার গন্তব্য এখন কোথায়?
চিত্রঃ 'The Man Without a Shadow' by Joyce Carol Oates
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:০৯