somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুশীলতার আড়ালে সবই মুখোশ।। প্রেক্ষাপট জাতীয় ও ব্লগীয় সুশীল

০৫ ই জুলাই, ২০১২ রাত ৩:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের প্রিয় সামু। এ যেন এক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশের মানুষের সব ধরনের চরিত্রই এই সামু তে আছে। আছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত। আছে আস্তিক-নাস্তিক, পাদা-ভাদা। ইভটিজার-গালিবাজ, মাস্তানও এখানে আছে। কবি, গল্পকার, সিনেমানির্মাতা সহ সবার নাম নিতে না পারলেও মোটামুটি সবধরনের মানুষই এখানে রয়েছে।

গত কয়েক বছর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সব কিছুতে নাক গলানো একধরনের শ্রেণী তৈরি হয়েছে। এই শ্রেণীটা দেশের হেন কোন বিষয় নেই যে বিষয়গুলোতে তাদের অপরিসীম জ্ঞান থেকে জ্ঞানের সামান্য অংশ জনগনের জন্য বিলি করেন না। এই শ্রেণী হল আমাদের দেশের সুশীল সমাজ। এ যেন এক অন্য সমাজ। এরা সাধারন মানুষ না। এরা আমাদের এই সমাজে বেড়ে ওঠেনি। তাদের জন্মই হয়েছে আমাদের জ্ঞান দেবার জন্য। দেশ যখন শান্ত থাকে তখন তারা জ্ঞান দেই এই বলে যে, দেশ এখন শান্ত রয়েছে এই কারনে যে দেশে খুব তাড়াতাড়ি অশান্ত হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যখন অস্থিতিশীল থাকে তখন তারা ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে সোচ্চার হয়। আবার যখন ছাত্ররা দেশের গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন করে তখন ছাত্রদের বিরুদ্ধে গিয়ে সামরিক বাহিনীর পা চাটতেও দ্বিধাবোধ করে না। যিনি দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় নিয়ে জ্ঞান দেন ঠিক তার পরের দিন তিনিই দেশে ঘটে যাওয়া ভুমিকম্পের কারন উদঘাটনে ব্যস্ত। এমনই সর্বজ্ঞানে জ্ঞানী আমাদের এই সুশীল সমাজ। দেশে ঘটে যাওয়া বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সরকার-বিরধীদলের সমালোচনা করে পারলে তাদের রাজনীতি ছাড়া করে দেয় কিন্তু তাদের কখনো দুর্গতদের পাশে দেখা যায় না। ৭১, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ আসলেই তারা নড়েচড়ে বসে। তাদের চোয়াল শক্ত হয়ে যায় পাক হানাদারদের হিংস্রতায় এবং প্রতিশোধের নেশায়। তারা যেন এক একজন স্বয়ং মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু তাদের মুখ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হতে দেখা যায় না। তারা রাজনীতিবিদদের সমালোচনায় মুখর কিন্তু রাজনীতিতে আসবে না। আবার বিকল্প উপায়ে ঠিকই ক্ষমতায় আসতে চায়। আসলে তারা সুশীল নয়। কেবলমাত্র সুশীলতার মুখোশধারী। আসলে সুশীল শব্দটাই একটা মুখোশধারী শব্দ। মানুষ মাত্রই সুশীল নয়। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে ভালো খারাপ বিদ্যমান। যারা ভালো তারা খারাপ দিকগুলো কিছু অবদমন করে রাখতে পারে তাও আবার সবসময়ের জন্য সম্ভব হয় না। কোন না কোন সময় খারাপ দিক বের হয়ে আসে। আর যারা খারাপ তারা তাদের ভালো দিকগুলো আবদমিত অবস্থায় থাকে। কিন্তু খারাপ মানুষগুলোও মাঝে মাঝে খুব ভালো কাজ করে ফেলে কারন একজন মানুষ সবসময় খারাপ হতে পারে না। আসলে মানুষ মানুষের মতো, কেউ সুশীল নয়। কিছু জ্ঞানপাপী মানুষ তাদের জ্ঞান জনগনের কাছে বিক্রি করে সমাজে টিকে থাকার জন্য সুশীলতার মুখোশ পরে। এরা শুধুই জ্ঞান দেয় কিন্তু সমাজের কোন উপকারে আসে না। বিষয় টা এমন, যদি রাস্তায় কোন মানুষ দুর্ঘটনায় পতিত হয় তাহলে সে ঐ মানুষ কে সাহায্য করবে না কিন্তু সাহায্য না করার জন্য বাকী মানুষগুলোর সমালোচনা করবে।

যাই হোক জাতীয় সুশীলদের পিণ্ডি চটকিয়ে আর লাভ নেই। এবার আসি মুল প্রসঙ্গে। অর্থাৎ আমাদের প্রিয় সামু ব্লগের সুশীলদের প্রসঙ্গে। আমাদের ব্লগের সুশীলরাও সব বিষয়ে আমাদের জ্ঞান ডান করেন। তারা বিভিন্ন লেখার সমালোচনা করেন, গালাগালির সমালোচনা করেন, এ করা উচিত না ও করা উচিত না, এরকম বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ দেন। তাদের বিভিন্ন উপদেশমূলক পোস্ট আমাদের চোখের সামনে টাঙিয়ে রাখা হয়। উপদেশ দিতে তারা কার্পণ্য করেন না। কিন্তু কথায় কার্পণ্য করেন জানেন? তারা কার্পণ্য করেন দেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়ে। তারা খুব ভালো লেখে কিন্তু এসব বিষয়ে লিখতে গেলে তাদের কালি ফুরিয়ে যায়। তারা কি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য উদ্যোগ নিয়ে কোন পোস্ট করেছে? তাদের অনেক লিখাই তো স্তিকি হয়। এমন একটা লিখা কি তারা স্তিকি করতে পারতো না? বল্গে তো তাদের একটা ভ্যালু আছে। এমন একটা উদ্যোগ নিলে আমরা সাধারন ব্লগাররা দুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারতাম। কিন্তু তারা তা করেনি। হয়তো তারা মনে করেছে এমন একটা কিছু করলে যদি আমরা কোন কারনে বিতর্কিত হয়ে যাই তাহলে তো ব্লগে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে। আর গ্রহণযোগ্যতা কমে গেলে হিট কমে যাবে। তখন আমার কি হপে? সুতরাং জাতীয় সুশীলদের মতো ব্লগের সুশীলরাও দায়িত্ব নিতে চান না বিতর্কিত বা ইমেজ সংকটে পড়ার ভয়ে। জাতীয় সুশীলরা জনগনের কাছে হিট কামাতে চাই আর ব্লগের সুশীলরা ব্লগিয় হিট কামাতে চাই। সুশীলদের মাঝেও যে ভয়ংকর রূপ আছে তা আমরা গত কয়েক দিনে ব্লগের মাধ্যমে উপলব্ধি করেছি। অনেকেরই সুশীলতার মুখোশ খুলে গেছে। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ব্লগের এই সুশীলদের অনেক অনেক ভালোবাসা। কিন্তু দেশে বর্তমানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে কিন্তু কখনো দেখলাম না এই সব সুশীলরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে পোস্ট দিয়েছে বা সোচ্চার হয়েছে। কিংবা যারা যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি চেয়ে পোস্ট দিয়েছে তাদের প্রতি খড়গহস্ত হয়েছে। কারন তাতে তাদের হিট কমে যাবে। ছাগুদের হিটও যে তাদের লাগবে! তা না হলে ৪/৫ হাজার হিট হবে কিভাবে? আবার যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে ব্লগীয় স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের বিরুদ্ধে লড়াই করছে তাদের কে গালিবাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে এই সুশীলরাই। কিন্তু এই সুশীলরাই যদি স্বাধীনতাবিরোধী পোস্টে গিয়ে ভালো ভাষায় প্রতিবাদ করে তাহলে আর গালাগালির প্রয়োজন হয়না। কিন্তু আমি দেখেছি ব্লগে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রই বেশি গালাগালি করে। অথচ সুশীলরা কৌশলে ছাগু ফাইটারদের গালিবাজ ট্যাগ দিতে ব্যস্ত। এখানেও জাতীয় সুশীলদের সাথে ব্লগীয় সুশীলদের অপূর্ব মিল।

সুশীলদের কাছে অনুরোধ, ভালো-খারাপ সব মানুষের মধ্যেই আছে। নিজের খারাপ দিক গুলো অন্যভাবে প্রকাশ না করে স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ করুন। আপনারা যদি এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন তাহলে হয়তো ব্লগে গালাগালির মাত্রাও কমে আসতে পারে। এটা করতেও যদি আপনাদের কষ্ট হয়, এতে যদি হিট কমে যায় তাহলে আল্লাহ্‌র ওয়াস্তে অন্তত রিপোর্ট করুন। তাহলে কেউ জানবে না আপনাদের হিটও কমবে না।

সবার প্রতি অনুরোধ কেউ ব্যাক্তি গত ক্যাচাল করবেন না। মতামত দিন।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫২
২৭টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×