ইট ভাঙ্গার শব্দ। আবিরের অবচেতন মন তার চোখ দুটিকে নিয়ে যায় শব্দের উৎসের দিকে। উৎসের দৃশ্যটি মনে করিয়ে দেয় গত রাতের একটি দৃশ্যের কথা। মিলার চোখ দুটো আটকে ছিল টিভির পর্দায়। আদুরে চেহারার একটি শিশু ইট ভাঙছিল রক্তাক্ত হাতে। দৃশ্যটি কঠিন ভাবে স্পর্শ করেছিল মিলাকে, চোখ ভিজে আসছিল মিলার বার বার।
জটলা কাটিয়ে তাদের রিক্সাটি এগিয়ে গেলে, ইটের স্তুুপের উপরে বসা মলিন বসনা শুকনো শিশুটির অবয়ব আরো ষ্পষ্ট হয়ে উঠে। ক্লান্ত বিধ্বস্ত শরীরে যত্নের সাথে অনবরত ইট ভেঙে চলেছে শিশুটি। কিছু সময়ের জন্য মিলার চোখেও আকর্ষিত হয় দৃশ্যটি। কোন ভাবান্তর নেই।মিলার চেহারায়। একসময় শব্দ আর দৃশ্যটি অপসৃত হয়, জটলার মাঝে।
ঋণ করে হলেও আমাদের একটা গাড়ি কেনা উচিত।
রোদে তাপে রিক্সায় বসা থাকাটা অস্বস্তিকর হলেও, মিলার মন্তব্যে নিরাশ হয় আবির।
মধ্যরাতে দূর্বোধ্য স্বপ্ন দেখে জেগে উঠে আবির।
অন্ধকার মত একটি সুরংগের মাঝখান দিয়ে নতুন একটি গাড়ি হাকিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আবির, পাশে বসা মিলা খিল খিল করে হেসেই চলেছে অনবরত। সুরংগ জুড়ে মানুষের লাশ আর আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। হঠাৎ একটি শিশু আছড়ে পড়ে গাড়ি উপর, রক্তাক্ত দুহাতে আঁকড়ে ধরে গাড়ির সামনের জানালা। শিশুটির চেহারা সকালে দেখা ইটের স্তুুপের উপরে বসা মলিন বসনা শুকনো শিশুটির মত।
বারান্দায় এসে দাড়ায় আবির। অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে চোখের সামনে ঝুলে আছে পূর্ণিমার চাদ। সতেজ বাতাসে গা জুড়িয়ে আসে।
নিজেদের জগতটাকে ক্রমাগত সংকীর্ণ করে তুলছি আমরা। শুধু চার দেয়ালে নয়, আমাদের বিশাল জগতটা আটকে পড়েছে, চারকোনা বাক্স আর ছোট একটা যন্ত্রে।
মেকি রঙ্গিন জগতের মেকি চরিত্রগুলোকে এখন আমাদের খুব বেশি আপন মনে হয়। তারা আমাদের হাসায় আমাদের কাদায়। মিথ্যে জগতটিকে ঘিরে আবর্তিত হয় আমাদের জীবন। চোখের সামনের দু:খ কষ্টগুলো আমাদেরকে ষ্পর্শ করে না। আমাদের আবেগগুলো এখন বন্দী অপার্থিব জগতে, যার কর্তৃত্ব এখন অমানবিক মানুষগুলোের হাতে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:২৭