এরপর আমি ব্যস্ত হয়ে পড়লাম তোমার জন্মদিনটা নিয়ে। একটা বছর, শুধুই একটা বছরের প্রতিটি স্মরণীয় দিন আজীবন অবিস্মরণীয় হয়ে থাকুক তোমার জীবনে, এমনটাই চাওয়া ছিলো আমার ।তোমার জন্মদিনে তোমাকে কি দেবো, কি কি করবো সেদিনটায়, আমি পুরোটা মাস জুড়ে প্ল্যান করলাম সেসব। তারপর একে একে সে সব পরিকল্পনার বাস্তবায়ন।
পরিকল্পনাগুলো ছিলো এমন..........
তোমার জন্য সারা ঢাকা শহর চষে একটা মনের মত কার্ড খুজে বের করা।নিউমার্কেট থেকে গুলশান কোথায় বাকী রাখিনি, ঠিক ঠিক মনের মত একটা কার্ড খুঁজে পেতে।শেষ পর্যন্ত বনানী আরচিস এ পেলাম ঠিক আমার মনের মত একটা কার্ড । ঠিক যেন আমার জন্য বানানো হয়েছে। আমার মনের কথা গুলোই লেখা ছিলো সেখানে।কার্ড খুঁজে পাবার পরে আর একটা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছিলাম। সেকথাটা বলতে চাচ্ছিনা এখানে।
তারপর এক আন্টির কাছে কেক বানানো প্রাকটিস করা। আমি চেয়েছিলাম তোমার জন্মদিনে আমি তোমাকে নিজে হাতেই কেক বানিয়ে দেবো।কোনো বিখ্যাত দোকানের কেক হলেও চলবেনা। তোমাকে খেতে হবে আমার নিজ হাতে বানানো কেক। সেই উদ্দেশ্যে কেক বানানো শিখলাম এক সপ্তাহ তার বাসায় ঘুরে । তবুও কি হয় আর মনের মত?? তাতে কিছুই যায় আসেনা অবশ্য। আমার বাবুসোনাটার জন্য আমি নিজে হাতে বানাবো, সেই সই।
কেক বানানো শেখা হল এখন মনের মত ডেকোরেশন কই পাই। আমি তো নুশেরা আপুর মত ক্রিম দিয়ে ডেকোরেট করতে জানিনা। কাজেই কতগুলো রেডিমেড ডেকোরেশন খুজে বের করলাম। একটা কান্ডি পেলাম একদিন। পিন্ক সিটি এর পিকিউএস এ।হাসিখুশী এক টেডিবিয়ার সাথে লাভ লেখা ।সেটাই কিনে ফেল্লাম আর কিছু ডেকোরেশন।
তারপর অনেক খুঁজে পেতে মনের মত একটা ফতুয়া পেলাম। নিজে হাতে সেলাই করে দিতে পারলেই খুশী হতাম বেশী। কিন্তু সে চিন্তা বাদ দিয়ে ভাবলাম ফতুয়াটা রেডিমেড হোক, আমি তাতে ডিজাইন করবো রং তুলিতে।যেই ভাবা সেই কাজ। এখন কি ডিজাইন করা যায়? ভেবে ভেবে বের করলাম রবীন্দ্রনাথের গান ও কবিতায় ভরিয়ে দেবো ফতুয়াটা। সেটাই হবে আমার ডিজাইন। যখনই সুযোগ পাই একটু অবসর তখনই বসে যাই গীতবিতান নিয়ে। সারাক্ষণ খুঁজি খুব খুব প্রিয় কিছু গান যেসব লিখে দেওয়া যায় ঐ জামাটার বুকে। খুঁজে খুঁজে বের করলাম কয়েকটা খুব প্রিয় গান।
তারপর খুব খুজে খুজে খুব পছন্দ করে লাল টকটকে একটা র্যাপিং পেপার কিনলাম। কার্ডটা আর ঐ ফতুয়াটা জড়িয়ে দিলাম অনেক ভালোবাসায়!!!!!!!!
র্যাপিং করা আর ফতুয়া আঁকা দুটোই করতে হয়েছিলো খুব গোপনে, লুকিয়ে। কারন এমন একটা দশাশই ফতুয়া কার জন্য বানাই বাসায় এটার কোনো সদুত্তর দেওয়া কোনো ভাবেই সম্ভব ছিলোনা আমার পক্ষে।
তারপর আসলো সেই আকাংখীতক্ষণ। সেদিন বিকেলে আমি পিন্ক সিটিএর নীচ তলায় ফুলের দোকানটাকেই বেঁছে নিলাম সেফ একটা প্লেস হিসেবে।দোকানী মেয়েটাকে বললাম ঐ ফুলের বুকে টা আর আমার এই গিফটগুলো আমি এখানে রেখে যেতে চাই। যার জন্য এসব সে এসে নিয়ে যাবে।মেয়েটা রাজী হল খুব সহজেই।
এসব রেখে এসে আমার তর সইছিলোনা। আমি ফোন দিলাম তোমাকে । যত তাড়াতাড়ি পারো নিয়ে এসো ওসব। প্রতিফলন , আমি জানি আমার কেক, বানানো ফতুয়া মোটেই উল্লেখযোগ্য কিছুই না। তবু তার মূল্য আমার কাছে অনেক ছিলো। আমি আমার বুকের সব টুকু মমতা দিয়ে বানিয়েছিলাম সেদিন ঐ পঁচা ঘচা কেকটা। ঐ জামায় লিখে দিয়েছিলাম আমার ভালোবাসার কবিতা গানগুলি।
জানো কেকটা বানাতে ঐ হার্ট সেপ বাটিটা খুঁজে বের করতে কি ঝক্কি না পোহাতে হয়েছিলো আমার!!!!!!তুমি কি খেয়াল করেছিলে ? আমি যে কেকটা হার্ট সেপ একটা হৃদয় বানাতে চেয়েছিলাম?
আর একটা জিনিশ খেয়াল করেছিলে পরতিফলন? ফতুয়াটার একদম হৃদয়ের কাছে লিখেছিলাম। আমি নিশিদিন তোমায় ভালোবাসি গানটা।
তুমি আমার ভালোবাসায় মোড়া জিনিসগুলো কালেক্ট করে আমাকে জানালে। "কেকটা খেয়েছি, শেয়ারিং উইথ ফ্রেন্ডস।ফতুয়াটা আলমারীতে ( আমি জানি তুমি কখনও আমাকে না বললেও জানি ওটা তুমি পরতে পারোনি। ভুল সাইজের জন্যে।)আর লিখেছিলে কার্ডটা আমার ড্রয়ারে। হাহাহাহা পরতিফলন কার্ডটা সেদিন তোমার বাসার একজনও দেখলে তোমার খবর ছিলো।
তুমি বলেছিলে এমন কিছু দিতে তোমার জন্মদিনে যেন সারাটাজীবন সেটা ভাবলেই তোমার কান্না পায়। কিন্তু আমি দিলাম এমন সব কিছু যেসবের কথা ভাবলে সারাজীবন তুমি হাসবে।
অনেক ভালোবাসি তোমাকে প্রতিফলন!!!!!!
সে সময় চাঁদকন্যা থেকে দেওয়া দুটি পোস্ট
Click This Link
Click This Link
এই লেখাটা পোস্ট করতে যাবার ঠিক আর্গ মুর্হুতে মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেলো । এইমাত্র একটা মেইল পেলাম। আপুনিটা চুপি চুপি লিখেছে আমাকে কিছু কথা। তার লেখনীতে যা ছিলো তাতে আমাদের জন্য তার ভালোবাসার বহিপ্রকাশ আর আমাদের জন্য অনুভুতিটা যা ছিলো তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবোনা।
খুব ইচ্ছে করছিলো মেইলটা এখানে পেস্ট করে দিতে । কিন্তু আপুটা যদি মাইন্ড করে তাই সাত পাঁচ ভেবে আর দিলাম না। আপুনি এই লেখাটা তোমাকে দিলাম। একটুও কষ্ট পাবেনা। আমরা তো যা পেলাম এই নিয়েই ভালোই আছি। এই টুকুই ক"জন পায় বলো?
তাজিন আপুর সন্মতিক্রমে মেইলটা এখানে দিলাম।
তুই কে আমি জানিনা। ব্লগের নিকগুলোর আড়ালে যে মানুষ সেটা থেকেই তোদেরকে, তোদের ভালোবাসাকে জানি। আমার অসম্ভব ভালোলাগা জানাতেই আলাদাভাবে মেইল করতে ইচ্ছে হলো। তোদের আবেগীয় কথাগুলো পড়ে আমি কতটা আপ্লুত হয়েছি, হই তা লিখতে পারবো একদিন আশা করি। তুই বিশ্বাস করবি কিনা জানিনা, আমি কেঁদেছি একটা পর্ব পড়ে। তোদের বিচ্ছেদের পর মানসিক অবস্থার কথা আছে যেটাতে। আর সাথে সাথে প্রার্থনা করেছি আমার কোন শুভ-র বিনিময়ে হলেও সৃষ্টিকর্তা যাতে তোদের ভালোবাসার পূর্ণতা দেন। নাহলে এই মানবজীবন, স্নেহ-মমতা সব অর্থহীন হয়ে যাবে।
তোর মানুষটাকে শুভেচ্ছা জানাস। ভালো থাক দু'জনে।