somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প - সাকিন

১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


উৎসর্গ - কথা দিয়েছিলাম পরবর্তী গল্পটি তাকে উৎসর্গ করব । উনিও বলেছিলেন উৎসর্গ না করলে খেলুম না!! আমি খেলার ব্যবস্থা রাখলাম । তবে মূল কারণ কিন্তু এটা নয় ।
গল্পের প্রতি তার অসামান্য ভালবাসা , নিবেদিত মনোভাব আমাকে খুব , খুব মুগ্ধ করেছে । এমন করে পরিশ্রম করে কজনে ! আমি অনেক আনন্দ অনুভব করছি তাকে উৎসর্গ করতে পেরে । একদিন তার লিখা জয় করুক
পুরো বাংলাদেশ , পুরো বিশ্ব এই কামনা রেখেই উৎসর্গপাঠ - গল্পপ্রেমিক লেজকাটা বান্দর ওরফে সালেহ তিয়াস ।



রাজার শোভা মুকুটে , এলাকার শোভা নাকি পাগলে । আচ্ছা , কোন এলাকায় কোন পাগল কখন আসে , কিভাবে আসে -কখন যায় তা কি কেউ বলতে পারে ? সমাজের কেউ ত কাউকে দায়িত্ব দিয়ে রাখেনি যে এর হিসেব রাখবে !
আমাদের পাড়ার হোসেন পাগলা মারা গেল - সপ্তাও হয়নি এর মধ্যে পাগল আমদানি - কোথা হতে জুটল - এক পাগলি , যুবতী ! বয়স কত হবে ২৫- ২৬ ? কি অদ্ভুত ! আসল আর না জেনেই হোসেন মিয়ার জায়গা নিয়ে নিল ! ( নাকি জানে ?)
স্কুল মাঠের কোনায় সেই জায়গাটায় তাকে প্রথম দেখলাম যেখানে হোসেন মিয়াও প্রায় বসে থাকত । ( হোসেন মিয়ার জায়গা সে চিনল কিভাবে ! )

বসে বসে সে ভেঙচি কাটছে , বাতাসে খামচি মারছে আর স্কুলের কিছু দুষ্টু ছেলে পুলে দূর থেকে তাকে বালু ছিটাচ্ছে ।
আমি দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিলাম ।
' দেখছেন কেমন বাইন মাছের মত ফিগার ! যদি এইটা পাগলি না হইত তাইলে ত ...............
না তাকিয়েই আনাস ভাইয়ের গলা বুঝতে পারলাম । উনি উনার ছেলেকে স্কুল হতে নিতে এসেছেন । ডিশ সংযোগ এর ব্যবসা করেন।এর বাইরেও উনার আরেকটা পরিচয় পাড়ার সবাই জানে ।
মেয়েদের ফিগার বিষয়ে উনি পিএইচডি । চোখের রাডারে ধরা সব মেয়েকেই উনি খুটিয়ে দেখেন ।
আনাস ভাইয়ের কথা শুনে আবার মেয়েটির দিকে তাকালাম ।
ঠিকই , মাথা ঠিক থাকলে এর পিছনে কত ছেলে ঘুরত তার হিসেব থাকত না ।
এই পাগলি কোথা হতে আসল ? - আনাস ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম ।

হাহাহা , আমি কি জানি ! তোমার কি ধারণা পাগলি এটা আমাকে বলেছে ! গতকাল থেকেই দেখছি ওকে এখানে । - আনাস ভাই বললেন ।

আসলেই । পাগলদের কোন ঠিকানা থাকে না । ঠিকানা থাকলেও না । পৃথিবী ও মহাশুন্যের সবকিছু যেমন কোন লক্ষ্য , কোন ঠিকানা ছাড়াই ঘুরছে , খালি ঘুরছে ,ওরা ঘুরছে বলেই আমরা স্থির আছি , আমাদের লক্ষ্য আছে ,আমাদের ভালবাসা , আমাদের হিংসা - বিদ্বেষ - ক্রোধ , আমাদের সবকিছুর লক্ষ্য আছে , ওই পাগল ! সে ত হতচ্ছাড়া পৃথিবীর মতই । তার কিছু নেই , সেও কারো নয় । জীবন আছে বলেই যেমন বুঝতে পারি আমরা মাটিতে আছি , আমরা পৃথিবীতে আছি , তেমনি পাগল দেখলেই আমরা আশ্বস্ত হই আমরা ভাল আছি , আমরা সুস্থ আছি । আমরা ওদের মত নই । ওরা ঠিকানাবিহীন , আর আমাদের , সুস্থ মানুষের ঠিকানা আছে , আমাদের অস্তিত্ব আছে ।



এরপর হতে , পাড়ার এখানে - ওখানে , পাগলিকে দেখি । কখনো আনমনে কখনো উচ্চস্বরে গান গায় , গালি দেয় , হাসে -কাঁদে , হাপায় - ঘুমায় । কখনো ওকে কটকটি , কখনো চটপটি চেটে - পুটে খেতে দেখি ।
গ্রীষ্ম - বর্ষা , শরত - শীতে , যে সময়ের যে ফল - কিছু না কিছু ওর হাতে দেখি । ভাত - বিরানি তাও দেখি । আল্লাহ কাউকে না খাইয়ে রাখেন না , এ অদ্ভুত মিরাকেলে কথাটা কেবল পাগলিকে দেখেই বিশ্বাস হয় । স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চারা আর তাদের মায়েরাও কিছু না কিছু খেতে দেবে । সব পাগলের মত তার ও কোন কোন সময় ' মাথায় গরম ' উঠে , তখন রাস্তা ধরে ভোঁ - দৌড় ! রাস্তার ধারের দোকানিগুলোর চোখ হয় দেখার মত , ভয়ে কারো চোখ বন্ধ , কারো গোল! এই বুঝি পাগলি হামলে পড়ে দোকানের উপর !
একদিন আপাও বলে বসল , তুই পাগলিকে আম কিনে দিস ত !
আমি বললাম , কেন ?
'' আরে পাগলদের দেখলে আল্লাহ ও খুশি হয় ।
হাহাহা , আল্লাহ কাউকে পাগল বানিয়ে খুশি হয় , আবার তাকে দেখলে তাও খুশি হয় ।
আপা ত বলেই খালাস , পাগলদের কিছু দেয়া কি এত সোজা ! যদি কিছু করে বসে ! তারপরও সাহস করে ৩ টা আম কিনে ,মাঝ বরাবর কেটে পাগলির সামনে গেলাম । সেই প্রথম এবং সেই শেষ পাগলির সামনে যাওয়া ।
সেই প্রথম এবং সেই শেষ পাগলির মুখের নকশার দিকে প্রখরভাবে চেয়ে থাকা ।
এলোমেলো , রুক্ষ চুল ও চেহারার ময়লা আবরণের পর্দা সরিয়ে পাগলির মুখের অদ্ভুত অপরূপ যে সৌন্দর্য আমি দেখতে পেলাম তা ভাষায় বর্ণনা করতে পারব না ।
চোখটায় জড়ো হয়ে আছে পৃথিবীর সব মায়া । আমার কেবল একটা কথাই মনে হল , এমন সুন্দর মেয়ে পাগল কেন ! বিধাতার খেয়াল যখন পাগল বানানো তখন কেন মুখের মাঝে রুপের ছটা মেরে দেয়া ? কার জন্য ? কেন পৃথিবীর একঝাক পশুর ভিড়ে রুপের নহর বইয়ে দিয়ে বিপদের সম্ভাবনা চুড়ান্তরুপে বাড়িয়ে দেয়া ? আচ্ছা রাতে ও কোথায় ঘুমায় ? ও কি গোসল করে ? করলে কে করিয়ে দেয় ? ওর শাড়িটা মাঝে মাঝে কে পালটিয়ে দেয় ? জানি না ত !


হঠাৎ সম্বিত ফিরে পেয়ে পাগলিকে বললাম -
- নে আম খা ।
বলামাত্রই কেমন সাবলীলভাবে সব আম আমার কাছ হতে নিয়ে নিল ! ওর পাওনা আম আর কি ! মুড ভাল থাকায় দাঁত বের করে একটা নিস্পাপ সুন্দর হাসি সে আমার দিকে ছুড়ে দিল । খা , খা! - বলে আমি ও একটু হাসলাম ।
এক অদ্ভুত ভাললাগায় আমার মন আচ্ছন্ন হল ।

এভাবেই যাচ্ছিল ক্যালান্ডারের দিন । একদিন পাগলির পেটটা ভয়াবহ উঁচু দেখতে পেলাম । স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে , পেটে বাচ্চা । কে করেছে এমন কাজ ? পুরুষ নামের কোন পশু ? পশুর সাথে কেন তুলনা দিব ?
এমন লোকের চাইতে পশু কি মহৎ ও পবিত্র নয় ?
- দেখছেন , এমন কাজ ও কেউ করতে পারে ! -
আনাস ভাইয়ের চোখটা ভেজা ।

তারপর বুকফাটা প্রখর রোদেলাময় এক দিনে পাগলির কোলে এক ছোট বাচ্চা দেখতে পেলাম । কৌতূহলী অনেকেই বাচ্চাকে দেখার জন্য চেষ্টা করছে। আর তাতে ভয় পেয়ে পাগলি সবার দিকে তাকিয়ে হিস হিস করে
উঠছে , যা ! যা! বলছ্বে , বাচ্চাটাকে হাত দিয়ে চেপে বুকের কাছে ঠেসে ধরছে । বাচ্চাটা কিছুক্ষন পর পর কাদছেও , আমিও সবার মত একপলক বাচ্চাকে দেখে নিলাম । মুখটায় মায়ের আদল , চোখটাও পাগলির মত মায়াময় , মায়াময় জারজ সন্তান ! এতটূকু বাছার কি বুদ্ধি! জারজ বলে বাবার আদল তাই লুকিয়ে ফেলল ! জারজ বাবাকে বাঁচাবার বুদ্ধি শুরুতেই বের করে ফেলল !
মনে একটা প্রশ্ন আসল , আচ্ছা পাগলির ডেলিভারি করাল কে ? জানি না ত !

দুই দিন পর ।

স্কুলের মাঠ টায় জটলা দেখতে পেলাম । কি হল ?

পাগলি তার বাচ্চাকে নিয়ে বসে আছে হোসেন মিয়ার বসার জায়গাটায় ।তাকে ঘিরে আছে একঝাক সুস্থ মানুষ । কিছু মহিলা পাগলির দিকে এগুনোর চেষ্টা করলেই পাগলি বাঘের মত হিংস্র গর্জন ছাড়ছে ।
চোখজোড়া ইটখোলার মত জ্বলছে । আর কোলের বাচ্চাটাকে সযত্নে , মমতায় চেপে ধরে আছে । আজ পাগলিকে মনে হচ্ছে অন্য পৃথিবীর , অন্য কেউ । সে আজ আমাদের নয় ।
ব্যাপারটা কি বুঝতে পারলাম না । পাশের লোককে জিজ্ঞেস করলাম ।
- কি হয়েছে ?
তিনি নিরুত্তর ।
এক মহিলা বলে উঠল , বাচ্চাটা মইরা গেছে ।
ফের বাচ্চাটার দিকে তাকালাম । তাই ত ! বাচ্চাটার মুখের কাছে কয়েকটা মাছি ঘুরঘুর করছে । রুক্ষ চরের মত হয়ে আছে বাচ্চাটার মুখ , এ মুখের কাছে মাছি কি চায় ? কচি ফুলের মত মুখটা কি জারজ বলে পৃথিবীর কাছে হেরে গেল ! কচি মুখটা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে অল্প কিছু চিৎকার করে বিবেকহীন আদালতে নালিশ দিয়ে রায় না নিয়েই চলে গেল ! নাকি জারজের আজন্ম পাপ কড়ায় - ক্রান্তিতে শোধ করে গেল ?

ভালই হল । যে পাগল নয় , যার ঠিকানা ও নেই , তাকে মরতে হয় ।

- পাগল ত , বাচ্চাকে কেমনে দুধ খাওয়াতে হয় জানত না । আহারে ! খুব খারাপ লাগতাছে ! - আরেক মহিলা বলে উঠল ।
পাগলির ভেজা ব্লাউজ দুধের গন্ধ বিলাচ্ছে ।

হায়রে দুধ ! কাজেই যদি না লাগল তবে কেন এই অপ্রয়োজনীয় তরলে স্তন ভরতি হওয়া !
নগ্ন , নির্মম কিছু লেপ্টে গেছে পাগলীর দিকে চেয়ে থাকা অজস্র চোখে । ঝলসানো রোদমাখা তীর প্রখর নিষ্ঠুরতায় বিদ্ধ করে দিচ্ছে চারপাশ ।

এইটারে ত কবর দিতে হইব ! - এক মহিলা বলে উঠল ।

হ্যা , কবর দিতে হবে । এটাকে এটার ঠিকানায় পৌঁছে দিতে হবে ।

স্কুলের ছাঁদে বসে আছে অজস্র কাক , বিরক্তিকর কর্কশ একগেয়ে গলায় ওরা ডেকে যাচ্ছে ।

বিশ্রী , বড্ড বিশ্রী এ আওয়াজ ।









সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৫
৫২টি মন্তব্য ৫৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×