somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত : সাঈদীর বিরুদ্ধে সাজানো সাক্ষীদের বানোয়াট সাক্ষ্য নেয়ার অভিযোগ

২২ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি ও জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি মামলায় প্রথম দফায় দুইদিনের তদন্ত করেছে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের ৩ সদস্যের টিম। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার পিরোজপুরের চিথলিয়া গ্রামের মানিক পশারী এবং জিয়ানগর থানার টেংরাখালী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল আলমের দায়ের করা দুটি মামলার সরেজমিন তদন্ত কাজ শেষে শুক্রবার সকালে তদন্ত টিম ঢাকায় ফিরেছে। তবে মামলার বেশিরভাগ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ বাকি থাকায় ঈদের আগে ও পরে আরও দুইদিন সরেজমিন তদন্ত করা হবে বলে টিমের প্রধান ও সিআইডির এএসপি হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
এদিকে দুইদিনের তদন্তকালে মামলার বাদীসহ ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকায় সাধারণ মানুষ তদন্তকারী দলের কাছে যেতে পারেনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত দলের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করলে কেউ কেউ আওয়ামী ক্যাডার ও পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। ক্যাডারদের লাঞ্ছনার হাত থেকে রেহাই পাননি কয়েকজন সাংবাদিকও। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে এসব মামলা ও তদন্তকে সাজানো নাটক বলে আখ্যায়িত করেছেন স্থানীয় লোকজন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুালের তদন্তকারী দল বুধবার সকালে পিরোজপুরের চিথলিয়া গ্রামের মানিক পশারীর বাড়ি পরিদর্শন করেন। তদন্তকারী দলের প্রধান এএসপি হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের টিমে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন পুলিশ ইন্সপেক্টর নূর হোসেন এবং ওবায়দুল্লাহ। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগে গত বছরের ১২ আগস্ট দায়েরকৃত মামলার তদন্ত করার জন্য তদন্ত দলটি পাড়েরহাট হয়ে চিথলিয়ায় মানিক পশারীর (বাদী) বাড়ি যায়। এ সময় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, ক্ষমতাসীন দলের পূর্ব নির্ধারিত লোক এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের সামনে স্থানীয় সমাজসেবী বাবুল মল্লিক বলেন, মানিক পশারীর ঘর ’৭১ সালে পাকবাহিনী বা রাজাকার-আলবদররা পোড়ায়নি। ১৯৬৮ সালে আগুন লেগে পুড়ে যায়। ক্ষমতাসীনদের পরামর্শে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে সাঈদীর মতো একজন প্রখ্যাত আলেমের বিরুদ্ধে এই মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। তাছাড়া সৈজদ্দিন পশারীর কোনো ছেলের নাম ইব্রাহিম ছিল না এবং এই গ্রামেও ইব্রাহিম, বাবা সৈজদ্দিন বলে কেউ নেই। অথচ সাঈদীকে এরূপ একটি হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে।
অভিযোগ মতে সাক্ষ্য গ্রহণকালে পাড়েরহাট, বাদুরা, চিথলিয়ায় যুবলীগ, ছাত্রলীগের ক্যাডাররা তাদের পূর্ব পরিকল্পিত লোক ছাড়া অন্য কোনো লোককে তদন্তকারী দলের সামনে যেতে দেয়নি। পাড়েরহাট বন্দরে শত শত লোক মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকলেও সরকারদলীয় ক্যাডার বাহিনী ও পুলিশ তাদের হটিয়ে দেয়। মানিক পশারীর বাড়ি যাওয়ার পথেও যুবলীগের ক্যাডাররা তাদের লোক ছাড়া কাউকে যেতে দেয়নি। এ সময় দৈনিক সংগ্রামের পিরোজপুর জেলা সংবাদদাতা আওয়াল তদন্তকারী দলের সঙ্গে বাদী মানিক পশারীর বাড়িতে গেলে যুবলীগের ক্যাডাররা তাকে ধাক্কা দেয় এবং দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে বলে। না হলে পরিণাম ভালো হবে না বলে হুমকি দেয়। এ সময় তিনি কৌশলে স্থান ত্যাগ করেন। এছাড়া মানিক পশারীর বাড়িতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে তদন্তকারী দল স্থান ত্যাগ করার পর পাড়েরহাট শেখ হাসিনা একাডেমির সামনে সাক্ষ্য দিতে আসা নূরুল হক ও মাওলানা এনামুল হককে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা কিল, ঘুষি ও লাথি মারে এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পাড়েরহাটে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকাররম হোসাইন কবীর মেম্বারের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় গণ্যমান্য মুরব্বীরা তদন্তকারী দলকে একটি স্মারকলিপি দেয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও সরকারি দলের ক্যাডার বাহিনীর কারণে তা দিতে পারেননি। স্মারকলিপিতে লেখা ছিল ১৯৭১ সালে মাওলানা সাঈদী রাজাকার, আলবদর ছিলেন না এবং তিনি মানবতাবিরোধী বা স্বাধীনতাবিরোধী কোনো কাজ করেননি। মাওলানা সাঈদীর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ক্ষমতাসীনরা মানিক পশারীকে দিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে। বীর মুক্তিযোদ্ধারা স্মারকলিপিতে মাওলানা সাঈদীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন। স্মারকলিপি সাংবাদিকদের সরবরাহ করা হয়।
তদন্তকারী দলের প্রধান এএসপি হেলাল উদ্দিন প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, মাওলানা সাঈদী ও অন্যদের বিরুদ্ধে মামলার ২৪ জন সাক্ষীর মধ্যে বাদী মানিক পশারী ও অন্য ১২ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এ ব্যাপারে কিছুই বলা যাবে না।
দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালের তদন্ত টিম পিরোজপুরের পাড়েরহাট বন্দরে তদন্তে যায়। এ সময় মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মিথ্যা মামলা দায়েরকারী টেংরাখালী গ্রামের মাহবুবুল আলমসহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা সঙ্গে ছিল। তদন্তকারী দল সকাল ১০টায় পাড়েরহাট বন্দরে ঢুকে ক্ষমতাসীনদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত দোকানদারদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তাদের বক্তব্য রেকর্ড করে। যুবলীগের ক্যাডাররা উপস্থিত থাকার কারণে সাঈদীর পক্ষে সরাসরি কেউ সাক্ষ্য দিতে পারেননি। প্রথম দিন সাংবাদিক এবং সাক্ষ্য দিতে আসা ধর্মভীরু মুরব্বীরা লাঞ্ছিত হওয়ায় বৃহস্পতিবার উত্সুক জনতার তেমন ভিড় ছিল না। তবে এদিন তদন্ত টিমের পাশাপাশি সাক্ষীদের প্রশ্ন করায় চ্যানেল আইয়ের এক সাংবদিক লাঞ্ছিত হন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় আশরাফ আলী নামের এক দোকানদার সাংবাদিকদের বলেন, জীবনে অনেক কিছু দেখেছি কিন্তু এমন নির্লজ্জ মিথ্যাচার দেখিনি। মাওলানা সাঈদীকে বাল্যকাল থেকেই চিনি। ১৯৭১ সালে তিনি রাজাকার বা স্বাধীনতাবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড বা মানবতাবিরোধী কোনো কাজ করেননি। তার জীবন সম্পূর্ণ পরিষ্কার। তিনি তদন্তকারী দলের কাছে কয়েকটি কথা বলার চেষ্টা করলেও যুবলীগ ক্যাডারদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাননি বলে জানান। এদিকে ইব্রাহিম হত্যা মামলার বাদী মানিক পশারীর ভাই আবদুল জলিল পশারী সাংবাদিকদের বলেছেন, আমাদের ঘর ১৯৬৮ সালে আগুনে পুড়ে গেছে। ১৯৭১ সালে কেউ পোড়ায়নি। ক্ষমতাসীনদের তাণ্ডবে কথাগুলো তদন্তকারী দল রেকর্ড করেছে কিনা জানা যায়নি, তবে জনৈক সাংবাদিক তা রেকর্ড করেন। তদন্তকারী দল পাড়েরহাট বন্দরে কয়েকজন দোকানদারের সাক্ষ্য গ্রহণের পর স্থানীয় রাজলক্ষ্মী হাইস্কুলে বসে সাক্ষ্য গ্রহণ করে। তবে বাজারের রাধেশ্বাম বাবু, নারায়ণ মাস্টার ও অনীল মণ্ডল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে নিরপেক্ষ সাক্ষ্য দেন।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব আলম মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ওই মামলাটি দায়ের করেন।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও ট্রাইব্যুনালের তদন্ত টিমের তদন্তকে সাজানো নাটক হিসেবে আখ্যায়িত করে জিয়ানগরের এক ব্যবসায়ী বলেন, মানুষ যে এভাবে অপদস্ত হন তা জীবনেও দেখিনি। সাঈদী কারও কোনো ক্ষতি করেছেন এ কথা বাজারের কেউ বলতে পারবেন না। তার মতো ভালো মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়ায় আল্লাহর গজব নামবে। স্থানীয় একজন শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত টিমের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা মহড়া দেয়। টিমের কাছে জামায়াত-বিএনপি সমর্থক কাউকে ভিড়তে দেয়নি তারা। তাদের সাজানো লোকদের সাক্ষ্য নেয়া হচ্ছে। হিন্দু-মুসলমান কেউই সাঈদীর বিরুদ্ধে কিছু বলছেন না। এলাকার আওয়ামী লীগেরও অনেক লোক সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা করায় সন্তুষ্ট নন বলেও তিনি জানান।
View this link
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×