somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

প্রজ্জলিত মেশকাত
ব্যক্তিজীবনে অহিংসায় বিশ্বাস করি। বুদ্ধের দর্শন গভীরভাবে ভাবায় আমায়। “আসক্তিই সকল দুঃখের কারণ, অধিকারবোধ থেকেই দুঃখের সৃষ্টি।” এই দুটো বাক্যের উপর অগাধ বিশ্বাস। কারো চিন্তা-চেতনাকেই ছোট করে দেখিনা। আমি বিশ্বাস করি যে মতবাদই হোক, তার গভীরে না ঢ

আমার কেটামিন জার্নি

০৭ ই মে, ২০২৩ সকাল ১১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




দিন চলে যাচ্ছে। কখনো এমনিতেই কেটে যায় আবার কখনোবা রক্তক্ষরণও হয়। দিন যতো যাচ্ছে বাইপোলার ডিপ্রেশন বেড়েই চলছে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিসে যেতে লিপ্ত হতে হয় এক অসম যুদ্ধে। যে যুদ্ধে কখনো কখনো সর্বাধিক প্রচেষ্টা করেও হেরে যেতে হয়। তখন ঘন্টাখানেক দেরিতে অফিস যেতে হয়। প্রচন্ড ডিপ্রেশনের জন্যে এইবারও লিখিত পরীক্ষা দেওয়া স্বত্ত্বেও ভাইবা আর ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা দিতে পারিনি। পরীক্ষার হল থেকে ঘুরে এসেছি। জুলাইতে পরীক্ষায় ভালোভাবে বসতে হবে। কিন্তু বাইপোলার ডিসর্ডার আমাকে যেভাবে প্যারালাইজড করে দেয়, তাতে সন্দেহ জাগে আদৌ পারবো কিনা। তাই আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি জীবনে কিছুটা ভারসাম্য আানার। এরজন্যে একটা সামগ্রিক পরিবর্তনের চিন্তা করছি। তখনই একটা এক্সপেরিমেন্টাল ট্রিটমেন্ট প্রটোকল পেলাম, যেটা ট্রিটমেন্ট রেসিসট্যান্ট ডিপ্রেশনে ৬০-৭০ ভাগ সফল বলে কিছু লিমিটেঢ স্টাডি আছে। এখানেই আমার ভ্রমণ শুরু।

কেটামিন সম্পর্কে কিছু কথা বলে নেই। এটা ১৯৭০ সালে এনেসথেটিক এজেন্ট হিসেবে ইউএসএফডিএ'র অনুমোদন পায়। তারপর ৩০-৪০ মিনিটের অপারেশনের জন্যে জেনারেল এনেসথেটিক হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। এটা খুব ভালো একটা শর্ট অ্যাক্টিং এনেসথেটিক এজেন্ট যেটা কোন ধরণের কার্ডিও- রেসপিরেটরি ডিপ্রেশন করেনা, উল্টো স্টিমুলেট করে। তাই এটা ব্যবহারে অক্সিজেন বা অন্যকোন সাপোর্ট প্রয়োজন হয়না। যুদ্ধক্ষেত্রে বা দুর্গম এলাকাতেও ঝুঁকিহীনভাবে ব্যবহার করা যায়।

কিন্তু বিপত্তি বাজে অন্যজায়গায়। মাদকসেবীরা এটা নেওয়া শুরু করে। আর এটা স্ট্রিট ড্রাগ নামে পরিচিতি লাভ করে। তারপর এটার উপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। কিভাবে কেটামিন কাজ করে সেটার মেকানিজম অফ অ্যাকশন আলোচনা করছিনা। এগুলো মেডিকেল সাইন্সের ব্যপার। আমাকে যেমন সার্কিট বা কোডিং বুঝিয়ে লাভ নেই, ঠিক তেমনি উল্টোটা।

এখন মূল আলোচনায় আসি। ৯০ এর দশকে ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের জন্যে সাব- এনেসথেটিক মাত্রায় কেটামিন ইনফিউশান ট্রিটমেন্ট পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়। প্রথম থেকেই ট্রিটমেন্ট রেসিসট্যান্ট ডিপ্রেশনে ভালো ফল পাওয়া যায়। কিন্তু ঝুঁকি থাকায় আর অ্যাবিডস পটেনশিয়াল থাকায় শুধুমাত্র সাইকিয়াট্রিস্ট আর রেজিস্টার্ড নার্সের তত্ত্বাবধানে দেওয়ার অনুমোদন আছে।

কেটামিনের ট্রিটমেন্ট প্রটোকল হলো তিন সপ্তাহে দুইটা করে ছয়টা ইনফিউশান। এটা লোডিং ডোজ। এরপর ২-৬ মাস পর পর একটা করে বুস্টার ডোজ। এ পর্যন্ত আমি দুই সপ্তাহে দুইটা ইনফিউশান নিয়েছি। মনে হয় কিছুটা কাজ হচ্ছে।

বলে রাখা ভালো যে আমি ধুমপানও করিনা , অন্যকিছু দূরের ব্যপার। কেটামিনের থেরাপির অভিজ্ঞতা অন্যরকম। একটা আউট অফ বডি এক্সপেরিয়েন্স আছে। কিছুটা হ্যালুসিনেশন হয়। নিজের প্রত্যাশা আর দুঃখগুলো গভীর থেকে বেরিয়ে আসে। শারীরিক অনুভূতি থাকেনা। মনে হয় সোল যেন ভাসছে।
নিজের গভীরে প্রোথিত দুঃখ, কষ্ট, কান্না আর স্বপ্নগুলো ডানা মেলে। সবকিছুকে অবজেক্টিভলি দেখা যায়। নিজের মনের বাইরে গিয়ে সব চিন্তাকে দেখা যায়। আত্মার প্রজেকশন সব জায়গায় বিচরণ করতে পারে। ৪০ মিনিট ইনফিউশনের পর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই অভিজ্ঞতা কেটে যায়। ওইদিনটা স্বাভাবিকভাবেই দূর্বল লাগ। স্মৃতি কিছুটা স্কিপ করতে থাকে। পরেরদিন থেকে বিষণ্নতা কমতে থাকে।

তবে আপনারা কখনোই এটা ট্রাই করবেননা। এর অ্যাবিডস পটেনশিয়াল অনেক বেশি। আমার সুপারভিশনের ব্যবস্থা আছে। আমি নিজেও এই থেরাপির আদ্যোপান্ত জানি। দোয়া করবেন আর সবাই ভালো থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০২৩ সকাল ১১:৩৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×