আজানের মূল উদ্দেশ্য আহবান করা/অবগত করানো ! চন্দ্রনাথ পাহাড়ে আজান দিয়ে সেই লোক কাকে কি আহবান করেছে? যদি তারা নিজেরা নামাজ পড়ার জন্যে আজান দিয়ে থাকে তাহলে এতো জোরে দেওয়ার তো দরকার হতো না, কারন আশেপাশের সবাই অন্য ধর্মাবলম্বীর ! তো ? সে আজান দিয়ে আসলে বোঝাতে চেয়েছে কি?
পাহাড়েও ধর্ম প্রচার? আজান দিয়ে ধর্মপ্রচার নবীজি করেছেন ? বিশ্বনবীর জীবনী/আর রাহীকুল মাখতুমের কোথাও পাই নি যে নবীজি অন্য ধর্ম অধ্যুষিত এলাকায় গিয়ে উচ্চস্বরে আজান দিয়ে সেই এলাকার ধর্মালম্বীদের তোপের কারন হয়েছে এমনকি ইসলামের প্রচন্ড দাপটীয় স্বর্নযুগেও হয় নি, তাহলে ওই লোক চন্দ্রনাথ পাহাড়ে আজান দেওয়ার আদেশ কই পাইছে যা নবীজি নিজেই করেনি ! সেলেব হওয়া? তা তো হইসেই মোটামুটি ! কিছু অতি ধর্মান্ধের আবেগে !
ধরেন, ভারত হিন্দুপ্রধান দেশ ! সেখানে মুসলিমের চেয়ে হিন্দুর সংখ্যা অতি বেশী ! সেখানে মন্দিরও বেশী ! এবার ধরেন, কোনো একজন হিন্দু নামাজেট সময়ে এসে মসজিদের সামনে উচ্চস্বরে ঢাকঢোল আর 'কীর্তন' শুরু করলো আর ফেসবুকে এসে স্ট্যাটাস দিলো এভাবেই ভারতের প্রতিটি কোনা সনাতন ধর্মে ছেয়ে যাক ! সহ্য হবে আপনার?
তাহলে সে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে গিয়ে আজান দিয়ে কি বোঝাতে চাইছে ?
আমার মনে হয়, তাকে রিমান্ডে নিয়ে ধর্ম শেখানো হোক, জেলখানায় বসিয়ে 'আর রাহীকুল মাখতুম' পড়ানো হোক, জেলখানায় তাকে 'সীরাতে মোস্তফা' পড়তে দেওয়া হোক, জেলের মেয়াদ আরো বাড়িয়ে তাকে 'আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া' পড়তে দেওয়া হোক ! যতদিন পর্যন্ত না স্বীকার করবে যে, আসলেই সে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে আজান দেওয়ার জন্যে অনুতপ্ত ততদিন তাকে জেলখানায় রাখা হোক !
দেশটা পাকিস্তান নয়, হিন্দুস্তানও নয় ! এই দেশে প্রতিটি হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-উপজাতি পাশপাশি বসবাস করবে, করতে হবে, এটাই বাংলাদেশ নামকরনের যথার্থতা, শুধু মুসলিমরাই এখানে বাস করবে এই চাওয়া অযৌক্তিক, সেটা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই প্রমান হয়েছে ! যদি দেশের 'প্রতিটি মানুষ' শুধু নিজেদের মুসলিম-মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করতো, তাহলে আমরা পাকিস্তানের সাথে থাকলেই পারতাম, ৩০ লক্ষ শহীদ-মা/বোনের ইজ্জতের দামে বাঙলাদেশকে আলাদা করে প্রতিষ্ঠিত করে অসাম্প্রদায়িকতার বীজ রোপন করতে হতো না !
পাহাড়ের সেই নওমুসলিমকে হত্যা যেমন মহাঅপরাধ, তেমনি চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠে অন্য ধর্মের প্রতি অসম্মান দেখিয়ে নিজ ধর্মকে শ্রেষ্ঠ প্রমান করতে যাওয়াও অপরাধ (যদিনা সেটা খাতামুন নবিয়্যিন, রাসুল (সঃ) এর দেখানো পথে না হয়) !
ঠিক একইভাবে অপরাধ হতো যদি কোনো মসজিদের সামনে কোনো হিন্দু ঢাক/ঢোল বাজিয়ে বাঙলাদেশে হিন্দুত্ব প্রচার করতে চাইতো ! একটা অপরাধকে আরেকটা অপরাধ দিয়ে জাস্টিফাই করতে যাইয়েন না, অমুক লোক বলেছে, অমুক হুজুর প্রতিবাদ করেছে...ব্লা ব্লা ব্লা এগলা না শুনে নিজে একটু নিজের ধর্মটা নিয়ে পড়ে দেখেন ! ইসলাম কি বলেছে সেটা খুলে দেখেন, তাহলে আর চন্দ্রনাথের 'স্বঘোষিত ঈমানী'কে সাপোর্ট করতে হবে না !
অনেকে এটার সাথে পাহাড়ের নওমুসলিম ফারুক হত্যাকে রিলেট করছেন ! একটা অন্যায়কে আরেকটা অন্যায় দিয়ে কমপেয়ার করাটা শুধু বোকামীই না, একটা অপরাধও ! নওমুসলিমকে খুন করে অবশ্যই অপরাধ হইসে কিন্তু চন্দ্রনাথ পাহাড়ে আজান দিয়েও সে এমন কোনো ঈমানী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় নি, না হাদীস দ্বারা না কোরআন দ্বারা !
আজান দেওয়ার অনেক জায়গা এদেশে আছে, মুসলিম অধ্যুষিত যে কোন এলাকায় আপনি গিয়ে উচ্চস্বরে আজান দেন কেউ মানা করবে না, পুলিশেও ধরবে না কিন্তু আপনি চন্দ্রনাথ পাহাড়ে আজান দিয়ে আজানকে অসম্মানই করেছেন, মুসলিমদেরকে খাটো করেছেন, ইসলামকে দুধাপ নিচে নামিয়েছেন !
চন্দ্রনাথ পাহাড়ে আজান ইসলামের শিক্ষা না !
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৩৯