নবাব সিরাজউদ্দৌলার শাসনকাল তখন!
ইংরেজরা নবাবকে উৎখাতের সমস্ত পরিকল্পনা শেষ করে ভাবলো, একবার নবাবের সাথে দেখা করে আসি !
আসার আগে তারা নবাবের কাজের লোককে জিগ্যেস করলো, আচ্ছা, নবাব কি খেতে ভালোবাসে ? নবাবের জন্যে কি নিয়ে আসলে তিনি সবচেয়ে বেশী খুশি হবেন?
নবাবের কাজের লোক জানালো, লেবু আনলে নবাব বেশী খুশি হবে !
একটা মানুষ আর কতোই বা লেবু খেতে পারবে, তাই ইংরেজরা নবাবের জন্যে একটা ছোট্ট ব্যাগে ভরে বেশ কিছু লেবু এনে নবাবের কাজের লোকের হাতে দিয়ে বললো, এগুলা নবাবের জন্যে উপহার !
কাজের লোকটা চরম বিরক্তি নিয়ে বললো, মাত্র এই কডা লেবু নিয়ে এই সারা ভারতবর্ষের নবাবের সাথে দেখা করতে এসেছো ?
ইংরেজরা বললো, নবাব আর কতোই বা লেবু খাবেন, যতগুলা লেবু এনেছি, আমরা সবাই মিলে খেলেও তো শেষ হবে না !
নবাবের চাকর রেগে গিয়ে বললো, নবাব লেবু খান না, তিনি কেবল লেবুর গন্ধ নেন! নবাবের ভোজনের সময় অজস্র লেবু কেটে তার চারপাশে ছড়িয়ে রাখতে হয়, নবাব সেই লেবুর ঘ্রান নেন আর তার ভোজন সারেন!
ইংরেজরা বুঝলো, এই কারনেই তিনি নবাব!
বগুড়ার স্কুলের ঘটনাটা নিশ্চয়ই জেনে গেছেন সবাই। স্কুলের সবাই রোল অনুযায়ী শ্রেণীকক্ষ ঝাড়ু দেয়, ওই স্কুলের এক বিচারকের মেয়ের যেদিন দায়িত্ব আসলো, সে বললো, এটা আমার কাজ না, আমি কোনো বুয়া না, আমার মা বিচারক, আমি ঘর ঝাড়ু দিতে পারবো না !
এখানেই শেষ নয়, বাসায় এসে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলেছে, "আমি বিচারকের মেয়ে, তোরা হলি বস্তির মেয়ে, তোদেরকে আমার সমান হতে হলে, আগে তোদের মা'কে বিচারক হতে হবে"
তারপর সেখানে তার কয়েকজন সহপাঠি কমেন্ট করছে, সেই কমেন্টের জের ধরে সেই বিচারক মা, স্কুলে এসে কমেন্টকারীদের অভিভাবকদেরকে তার পা ধরে মাফ চাইয়েছে !
এক বিচারকের মেয়ে মাত্র ক্লাস এইটে পড়ে, অথচ এই বয়সেই সে বুঝে গেছে, একজন বিচারকের মেয়ে হিসাবে সে কতোটা উঁচু মানের এবং উঁচু জাতের। তার মা যেহেতু বিচারক তাই তার ঝাড়ু দেওয়া সাজে না, বিচারক মায়ের বোধও একই রকম, তিনি স্কুলে এসে সন্তানেরই সাপোর্ট নিয়েছেন, সন্তানকে বুঝিয়েছেন, তারা সমাজের নবাব, তাদের সাথে অন্যদের তুলনা চলে না, নিজের বিচারটাই তিনি সঠিকভাবে করতে পারেন নি, এজলাসে বসে তিনি এতোদিন কি বিচার করেছেন, আল্লাহ জানেন! সন্তানটাকেও শিক্ষিত করতে পারেন নি, তাকে মানুষ বানানো তো আরো বহুদূরের দায়িত্ব ! অতদূর যাওয়ার মতো ভিত্তি ওই বিচারকের গড়ে ওঠে নাই, এটা শুধু নিশ্চিত নয়, সুনিশ্চিত !
একটা সময় এই উপমহাদেশের জমিদারদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়, কোনো প্রজা সেন্ডেল/চটি/জুতা পায়ে পরে যেতে পারতো না। জমিদারের বাড়ির সামনে জুতা পরলে জমিদারকে অসম্মান করা হবে! জমিদারের বাড়ির সামনে এলেই প্রজাদের সেন্ডেল খুলে সেটা বগলদাবা করে জমিদার বাড়ি অতিক্রম করার পরে আবার সেই সেন্ডেল পরতে হতো ! তাতেই জমিদার বাড়ির সম্মান অক্ষুণ্ণ থাকতো যুগের পর যুগ!
আপনার মনে হতেই পারে, সেই নবাব সেই জমিদার এখন আর নেই, কিন্তু নবাব বা জমিদারদের বিবর্তন আপনি বুঝে উঠতে পারেন নি! ডারউইন তার বিবর্তনবাদে শুধু গায়ে গতরে বিবর্তনের কথা বলেছেন, এই বিচারককে দেখলে তিনি নিশ্চয়ই মানসিক বিবর্তনবাদতত্বও প্রমান করে ফেলতেন।
এই বিচারকরাই এখন সেই যুগের জমিদার, সেই যুগের নবাব! এরকম বহু বিচারক/ম্যাজিস্ট্রেট/পুলিশ...... দিয়ে আমাদের সমাজ পূর্ণ, জাস্ট লেবাস, পেশা আর লিঙ্গভেদে জমিদারির ধরন একেকরকম !
অনেককিছু দেখার বাকী আছে এই নব্য প্রজাদের !
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ১১:১১