somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~মজিনার কথায় মজলে চলবে না, সতর্ক থাকতে হবে বাংলাদেশকে~

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ দৈনিক প্রথম আলোতে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা “বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ” শিরোনামে এক খান কলাম লিখে অনেক পাঠকের মন জয় করেছেন, অন্তত প্রথম আলোর কমেন্ট সেকশনে তাই পেলাম। তো বাংলাদেশ কেন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ ব্যাপারে জনাব মজিনার মত হচ্ছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের একই স্বার্থ ও একই মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা অনেক বছরের পুরোনো বন্ধুত্ব রয়েছে, বাংলাদেশের প্রাণবন্ত নাগরিক সমাজ, এর উন্নয়নমূলক অর্জন, নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এর সাফল্য বিশ্বের জন্য মডেলে পরিণত হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বন্ধু এবং এ দেশের স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র একই লক্ষ্য পোষণ করে। মজিনা চান বাংলাদেশ এশিয়ার ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক টাইগার হয়ে উঠুক। কিন্তু চলমান সহিংস রাজনীতি বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, এজন্য দুই বিবদমান জোট এর কাছে মজিনার দাবি তারা যেন অবিলম্বে সহিংসতা পরিহার করে একটা শান্তিপূর্ণ অবাধ নির্বাচন এর মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে সচেষ্ট হন।
ব্যক্তি মজিনা বাংলাদেশের উনয়ন ও সমৃদ্ধি চাইতেই পারেন, এজন্য তাঁকে ধন্যবাদ দিতে আমরা কসুর করব না। কিন্তু কূটনৈতিক মজিনা সম্পর্কে আমাদের সজাগ থাকা চাই, বাংলাদেশ ও দক্ষিন এশিয়া নিয়ে মার্কিন পলিসি সম্পর্কে যদি আমাদের বিন্দু মাত্র ধারণা থাকে তাহলে “বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ” কেন এ ব্যাপারে মজিনা যা বলেছেন তা সুগার কোটেড বয়ান ছাড়া আর কিছুই মনে হবে না আমাদের।

আমাদের মতে আম্রিকার বাংলাদেশ নিয়ে এত আগ্রহের কারণ হচ্ছে-
১। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত এই বেল্টে মার্কিন আধিপত্য বিস্তারের জন্য বাংলাদেশের ভু-রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক, ফলে এদেশের উপর নিরঙ্কুশ আধিপত্য বজায় রাখার জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের এই তৎপরতা । আমেরিকার সামরিক প্রতিরক্ষা নীতিতে পরিবর্তনের ফলে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরিও অঞ্চলে কর্তৃত্ব নিয়ে শক্তিধর দেশসমুহের মধ্যে প্রতিযোগিতা কেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব নতুন রুপ পেয়েছে । আমেরিকার সামরিক নীতিতে এই পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের উপর কর্তৃত্ব নিয়ে ভারত-মার্কিন-চীন দ্বন্দ্ব নতুন রুপ পেয়েছে ।

পরাশক্তি হিসেবে চীনের অগ্রগতি ঠেকানো, এ অঞ্চলের গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বিপুল জ্বালানি সম্পদ এর উপর মার্কিন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে একটি সন্ত্রাসবিরোধী মোর্চা গঠন করে এই অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থ বিরোধী শক্তির রাজনৈতিক এবং সামরিক উত্থান প্রতিরোধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তার ওয়ার অন টেরর প্রকল্পে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে অনেক আগেই। এজন্য ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের সাথে হানা (হিউম্যানেটারিয়ান এসিস্ট্যান্ট নিডস এগ্রিমেন্ট) চুক্তি, সোফা চুক্তি (Status of Forces Agreement /US Serviceman Protection Agreement) ও টিকফা চুক্তি স্বাক্ষর করে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র। সামনে স্বাক্ষর হবে আকসা চুক্তি এবং এফটিএ । যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশনায় ও চাপে সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ পাস করা হয়েছে এবং তা সংশোধন করে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০১৩ প্রবর্তন করা হয়েছে এবং গত বছর স্বাক্ষর করা হয়েছে দ্বিপাক্ষিক সন্ত্রাস বিরোধী সহযোগিতা চুক্তি। এই সব কিছুর মূল লক্ষ্য সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার নাম করে, আর বাংলাদেশের নিরাপত্তার নাম করে, এদেশকে ওয়ার অন টেরর এর পরবর্তী যুদ্ধ ক্ষেত্র বানানো! অর্থাৎ বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সামরিক খাতকে পুরাপুরি মার্কিন বলয়ে নিয়ে এসে বাংলাদেশসহ সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার উপর চলমান সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা আরও জোরদার করা।

ফলে বাংলাদেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে কোন রেডিক্যাল রাজনীতির উত্থান ঠেকানোই মার্কিন উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের চলমান অস্থির রাজনীতির কারনে যেন কোন রকম নতুন গণশক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেটা সুনিশ্চিত করাই পরাশক্তির কূটনীতির লক্ষ্য। কারন চলমান শাসকগোষ্ঠী গত কয়েক দশক যেভাবে পরাশক্তির কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে বাংলাদেশকে গ্লোবাল ক্যাপিটালিজম ও ইম্পেরিয়ালিজমের প্রান্তিক বাজারে পরিণত করেছে তা বাধাগ্রস্ত হবে যে কোন বিপ্লবী রাজনীতির উত্থান হলে। লিবারেল রাজনীতির স্কোপ না থাকলে দেশে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির অবসান হতে পারে এই আশঙ্কা থেকে বিপ্লবী রাজনীতি ঠেকানোর জন্য মজেনারা তৎপর, রাজনীতি যেন লিবারেল বুর্জোয়াদের হাতেই থাকে সেজন্যই এতো এতো মার্কিনী আর জাতিসঙ্ঘীয় তৎপরতা।

সো, মজিনার কথায় মজলে চলবে না, হুঁশিয়ার থাকতে হবে বাংলাদেশকে!

জনগণের তরফ থেকে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতির অভিমুখ হবে দুইটি। প্রথমত দুই বিবদমান পক্ষকে অবিলম্বে নিজেরাই দেশের অভ্যন্তরেই একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসতে বাধ্য করা যেন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবপর হয়। দ্বিতীয়ত রাজনৈতিক দলগুলোর বিবাদের সুযোগে বাংলাদেশের উপর পরাশক্তির নিরঙ্কুশ আধিপত্য বিস্তারের যে কোন প্রচেষ্টা প্রতিহত করা। পরাশক্তির আধিপত্য বাংলাদেশকে এতো বেশি গ্রাস করার মূল কারণ হচ্ছে একটা রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে আমরা এখনো নিজেদের তৈরি করতে পারি নাই। ফলে এখনও একদিকে চলছে গণরাজনীতি বিবর্জিত কূটনৈতিক রাজনীতি যার ভিত্তিতে দুই প্রধান রাজনৈতিক জোট পরাশক্তির কৃপা লাভ করে ক্ষমতায় আসার স্বপ্নে বিভোর। অন্যদিকে এই নতজানু রাজনীতির বাইরে গণশক্তির বিকাশও সম্ভবপর হয় নাই যে রাজনৈতিক শক্তি পরাশক্তির হস্তক্ষেপ এবং আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সাথে নিয়ে প্রতিরোধ করতে পারত। ফলে পলিটিক্যাল কমিউনিটি আকারে নিজেদের পুনর্গঠন করাই এই মুহূর্তের গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×