somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হেমায়েত, মুক্তিযুদ্ধ এবং জীবন যুদ্ধের গল্প

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২ ভোর ৫:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শুনশান নিরবতা এখন বনের মাঝে। কোন সাড়া শব্দ নেই এই জঙ্গলে। পাখির কিচির মিচির শব্দও নেই বনে। মনে হচ্ছে পাখিরাও বিষয়টি খুব বুঝে গেছে। শব্দ করলেই বিপদ হলে পারে এই সঙ্কায় বোধ হয় পাখিরা বেশ চুপ হয়ে আছে সুবোধ বালকের মতো। পিনপতন নিরবতা এখন বনে। হঠাৎ শুকনো পাতার আওয়াজ। কিছু একটা নড়েচড়ে উঠল। অবিরাম গুলির আওয়াজ। কিছু একটা দৌড়ে পালাতে গিয়েও যেন শেষ রক্ষা সম্ভব হলো না। অনেকগুলো রাইফেল থেকে অসংখ্য গুলি বেরুল। মুষলধারে বৃষ্টির মতো গুলি বেরুলো রাইফেল থেকে। লক্ষ্য ভ্রষ্ট যাতে না হয় রিস্ক নিতে রাজি নয় বিশেষভাবে পারদর্ষী এই বাহিনী। গুলির সাথে একটা হ্যান্ড গ্রেনেড মেরে দিলো। লক্ষ্য ফসকে গেলে উর্ধŸতন কর্মকর্তা রক্ষা করবে না। কারন পাকিস্তান সরকার দীর্ঘদিন এমনি এমনি তাদের পুষছে না। বিজয় ছিনিয়ে নিতে হবে। অপারেশন শেষ। গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে হানাদার বাহিনীর সদস্যরা। বুটের টাক টাক শব্দ থেমে গেছে। হানাদাররা চলে গেছে ক্যাম্পে। ঘন জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসল হেমায়েত। আপাদমস্তক শরীর মোড়া লতাপাতায়। বনে নড়াচড়া বিহীন অবস্থায় দাড়িয়ে থাকলে বোঝার উপায় নেই মানুষ না গাছ। এর ব্যাখা আছে। হানাদারদের ধাওয়া খেয়ে তাদের হাত থেকে রক্ষার জন্যই এ চালাকি করেছে হেমায়েত।
হানাদাররা কাকে হত্যা করলো তা দেখা দরকার, কিছুটা সামনে অগ্রসর হলো, মানুষের কোন চিহ্ন নেই। তবে কি হত্যা করলো তা খুজতে শুরু করে হেমায়েত। কুকুরের একটা পা ঝুলে আছে ছোট্ট আম গাছটায়। বর্বর হানাদারের হাত থেকে রক্ষা পায়নি এই অবুঝ প্রাণীটি।

০২
ক্যাম্পে ফিরেছে হেমায়েত। প্রচণ্ড খিতে পেটে। খাবরের সন্ধান করে ফেরে সে। কোথাও কোন খাবার নেই। একে অন্যের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। কারো মুখে শব্দ নেই। দু’দিন ধরে ক্যাম্পে খাবার আসে না। উপায়ান্তর না পেয়ে জঙ্গলে নেমে যায় কয়েক জন। পশু পাখীর খাবার সংগ্রহ করছে তারা। এছাড়া কোন উপায়ও নেই। এসব খেয়ে কাটাতে হবে দিন। আরো কত দিন এভাবে কাটাতে হয় তা জানা নেই এই ক্যাম্পের সৈনিকদের। স্বপ্ন একটাই, একটু কষ্ট করে দেশটা স্বাধীন করতে পারলে এসব কষ্ঠ উড়ে যাবে শুকনো তুলার মতো। দেশ স্বাধীন হলে, আসবে সমৃদ্ধি আসবে মুক্তি। গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু থাকবে সবার। পেট পুরো খাবে সবাই। অন্যের গোলামি করা লাগবে না। অনেক স্বপ্ন হেমায়েতের চোখে মুখে।

০৩
দেশ স্বাধীন হয়েছে অনেক দিন। দু’হাতের আঙ্গুলের গননার কড় শেষ হয়ে চলি¬শের কোটায় দাঁড়িয়েছে স্বাধীনতার বয়স। দেশের এবং দেশের মানুষের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তন হয়েছে হেমায়েতেরও। কালো চুল সাদা হয়েছে। দাড়িতে পাকন ধরেছে। সোজা শরীরটা বয়সের ভারে কিছুটা বাকা হয়ে নুয়ে গেছে। চশমা ছাড়া সবকিছু ঝাপসা লাগে। বাস স্ট্যান্ডে বসে পত্রিকা দেখছে সে। পত্রিকায় বড় করে শিরোনাম ’ স্বাধীনতার চলি¬শ বছর উপলক্ষে এক সাথে জ্বলে উঠল চলি¬শ হাজার মোমবাতি। প্রদীপ প্র্জ্জলনের মাধ্যমে সম্মান জানানো হলে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি। পত্রিকার এই শিরোনাম দেখে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে হেমায়েত। কারন যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে সে স্বপ্ন তার স্বপ্নই রয়ে গেছে। মধ্যখান থেকে ফায়দা লুটেছে বিভিন্ন মহল, রাজনৈতিকরা। অবহেলিত রয়ে গেছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা। তার ভাবনার অবসান ঘটে, যাত্রী চলে এসেছে। গাড়ী ছাড়তে হবে। সুপারভাইজার বলে হেমায়েত ভাই জলদি গাড়ী স্টার্ট দেও, পত্রিকা পইরা কি হইব। তোমার আমার কথাতো আর পত্রিকায় লিখবনা। যারা দেশের সর্বনাশ করে তাগো কথা লিখে পত্রিকায়। আর একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে গাড়ীতে উঠে হেমায়েত।

০৪
হেমায়েত গাড়ীর হুইল ধরে বসে আছে। ঠিক যেভাবে বসে থাকতো ১৯৭১ সালে মেশিনগান নিয়ে। শত্র“দের ঘায়েল করার নেশায়। স্টিয়ারিং এ হাত দিচ্ছে না। কেন যেন সে আজ অনমনা। অন্যমনষ্ক হয়ে গাড়ি চালানো ঠিক নয়। দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। এতে করে অনেকগুলো মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে। নিজে মরে গেলে দুঃখ নেই তার। আজ জীবনের শেষ বেলাতে এসে হিসেব মিলেনা তার। বাড়িতে অসুস্থ ছেলে, মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে ঝামেলা। নিজের সংসারে টানাটানি। সব মিলিয়ে বড় যন্ত্রনায় আছে হেমায়েত। একের পর এক দ্রব্যমূল্যের উধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠার উপক্রম তার।
বাসের মধ্যে কয়েকজন তরুন একটি বিষয় নিয়ে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ। মুক্তিযোদ্ধারা দেশটার সর্বনাশ করেছে বলে একটি কথা ভেসে এলো হেমায়েতের কানে। প্রতিবাদ করতে গিয়েও কেন যেন থেমে যায় সে। বয়সের ভারে অনেকটা নেতিয়ে গেছে। মাথাটা গরম হতে গিয়েও ঠাণ্ডা হতে শুরু করে পরের কথাগুলো শুনে। দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো সব বিষয়ে অবিরাম রাজনীতি করে চলেছে। যার থেকে বাদ যায়নি মুক্তিযোদ্ধারা। আজ মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের পুজি করে চলে রাজনীতি। অথচ যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে তারা কত অবহেলিত। দু’বেলা ঠিক মতো খেতে পায় না। আর তাদের নিয়ে চলে নোংড়া পলিটিক্স। হায় বাংলাদেশ, হায় মুক্তিযোদ্ধা। সময়ের প্রয়োজনে সরকার পরিবর্তন হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পূনর্বাসন, সন্তানদের চাকরিসহ প্রলোভনের শেষ নেই তাদের মুখে। এসব আষাঢ়ে গল্পের সাথে বাস্তবতার কতটুকু মিল। সে প্রশ্নের জবাব কার কাছে? নেই, কারো কাছে। কথাগুলো শুনে ড্রাইভার হেমায়েতের চুখে জল এসে যায়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×