somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিষ্ণুপ্রিয়া বংশোদ্ভুত সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা কর্তৃক মনগড়া তথ্যে লিখিত “এ ব্রোকেন ড্রিম”

০১ লা অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বহুজাতির বাংলাদেশে ‘মনিপুরি’ একটি শান্তিপ্রিয় ও অত্যন্ত শৃংখল একটি জাতি। ইতিহাসের বিভিন্ন বাঁক পেরিয়ে প্রায় সাড়ে চারশত বছর পূর্বে থেকে এতদঞ্চলে মনিপুরিদের বসতি স্থাপন শুরু। কখনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ, কখনো রাজ্য দখলের-ক্ষমতা দখলের প্রায়ান্ধ প্রয়াসে আক্রান্ত হয়ে নিজ প্রাণ বাঁচানোর তাগিদ থেকে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে দিক-বিদিক ছুটে চলা। অতপর থিতু হওয়া, নতুন সংসার-নতুন পরিবেশ-নতুন দেশ। নিশ্চয় আজকের মতো এমন সুমসৃণ ছিল না সে সময়কালের দিনগুলো। নানা ঘাট-প্রতিঘাট পেরিয়ে মনিপুরিরা আজ চিন্তায়-চেতনায় সামগ্রিক মননে পরিপূর্ণভাবে বাংলাদেশি। বাংলাদেশের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে তারাও শরিক হয়েছেন এদেশের নাগরিক হিসেবে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধেও মনিপুরীদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখ করার মতো। মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসার অকৃত্রিম টানে অনেক মনিপুরী যুবক জীবন বাজি রেখে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, অনেকে আবার স্বাধীনতার বেদিমূলে উৎসর্গ করেছেন নিজেদের জীবন। আমি এখানে মনিপুরি মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সন্নিবেশিত করার আগে আজকের এই মানব বন্ধন কর্মসূচির সূচনাংশে আমি সংক্ষেপে কিছু ঐতিহাসিক তথ্যাবলি সংযোগ করতে চাই যা পরবর্তী আলোচনা ও যুক্তি খন্ডনে সহায়তা করবে। (এ সংক্রান্তে আগ্রহী যে কেউ ইন্টারনেট সহ বিভিন্ন পুস্তক ঘেঁটে বিস্তর জেনে নিতে পারেন।)
.
প্রথমত, মনিপুরি জাতি বলতে কি বুঝায়? কাকে বুঝায়? কারা এর ভাষিক সম্প্রদায়?
.
দ্বিতীয়ত, মীতৈ পাঙল/পাঙন বা মনিপুরি মুসলিম জাতি বলতে কাদের বুঝায়?
.
তৃতীয়ত, বিষ্ণুপ্রিয়া জাতি বলতে কি বুঝায়? বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরি বলতে আদৌ কোনো জাতিগোষ্ঠী আছে?
.
মনিপুরি জাতি বলতে সাধারণত যারা মীতৈ/মৈতৈদেরকে বুঝানো হয়ে থাকে। আর তাদের ভাষার নাম মীতৈ লোন/মৈতৈ লোন। ড. জি এ গ্রিয়ারসনের মতে, ‌'Manipuri are those who called themselves as Meitei'. মনিপুরি ভাষা ভারত সরকার কর্তৃক স্বীকৃত অষ্টম তপশিলভুক্ত ভাষা। বিচারিক দিক থেকে মনিপুরি ভাষা মঙ্গোলীয় মহাপরিবারের টিব্বেটো-বর্মন শ্রেণীর কুকি-চীন শাখার অন্তর্গত একটি ভাষা।
.
মীতৈ পাঙল বা মনিপুরি মুসলিমরা মূলত ধর্মীয় দিক থেকে ইসলাম ধর্মাবলম্বী। কথা বলেন উপরোক্ত মনিপুরি ভাষায় বা মীতৈ লোন-এ। মুসলিম পিতা ও মনিপুরি মেয়ের ঔরসজাত বংশধরেরাই আজকের মীতৈ পাঙল বা মনিপুরি মুসলিম। মীতৈ ও মীতৈ পাঙল--উভয়েরই উৎপত্তি স্থল কংলৈপাক যার বর্তমান নাম মনিপুর। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি রাজ্য।
.
এখানে উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক ভাষার এন্ডোনিম ও এক্সোনিম আছে। মনিপুরি হচ্ছে এক্সোনিম আর মীতৈ/মৈতৈ হলো এন্ডোনিম। সেহেতু মনিপুরি ও মীতৈ যে সমার্থক শব্দ সেটি সর্বমহলে স্বীকৃত ও পরিচিত।
.
বিষ্ণুপ্রিয়া জাতি হলো ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বিষ্ণুপুর নামক গ্রামের বিষ্ণু উপাসক একটি জাতি। যারা স্থানচ্যুত হয়ে একসময় মনিপুরে বসতি গড়ে তোলে। বিষ্ণু উপাসক বলে এদের নাম বিষ্ণুপুরিয়া বা বিষ্ণুপ্রিয়া বলা হয়। তাদের ভাষার নাম বিষ্ণুপ্রিয়া ভাষা। যা আর্য-আরিয়ান গ্রুপের একটি ভাষা। কিন্তু ১৯৭০ সালের দিকে নিখিল বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরি মহাসভা নামের একটি সংগঠন প্রথম বিষ্ণুপ্রিয়া জাতিকে মনিপুরি জাতির একটি অংশ দাবি করে কুচক্রান্ত শুরু করে। যা ঐতিহাসিক ভাবেই ভুল এবং কখনো হবার নয়। কারণ বিষ্ণুপ্রিয়া একটি পৃথক জাতি। মনিপুরিও একটি পৃথক জাতি। দুটো জাতির নাম নিয়ে একটি জাতির নামকরণের ইতিহাস পৃথিবীর কোথাও নেই। সেহেতু বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরি শব্দযুগলটি ভুল তথ্যের ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
.
অপরদিকে বাংলাদেশে বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরি বলে নিজেদের দাবি করা বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা এখনো নিজেদের জাতিসত্তা নিয়ে হীনমন্যতাই ভুগছেন। তারা শুধুমাত্র বিষ্ণুপ্রিয়া না বলে নিজেদের বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরি বলে জাহির করে থাকেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাও এই বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়ের লোক। যে নিজের জাতিসত্তারও সঠিক দাবি জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হীনমন্যতা দেখিয়েছেন। এবার প্রসঙ্গে আসি-
.
.
:: এ ব্রোকেন ড্রিম-এর যুক্তি খন্ডন ও সত্যনিরূপণ ::
.
এস কে সিনহা প্রথম জীবন (আর্লি লাইফ) অংশে লিখেছেন, “ইতোমধ্যে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শমশের নগর বিমান বন্দরে তাদের শিবির স্থাপন করে এবং থানা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় শান্তি কমিটি গঠনের মাধ্যমে। আর শান্তি কমিটির মাধ্যমে রাজাকার নিয়োগে শুরু করে দেয়। সেনাবাহিনী গ্রামবাসীদেরকে শান্তি কমিটির সহায়তায় রাস্তা চলাচলের উপযোগী করে তৈরীর নির্দেশ দেয়। কিছু মৌলবাদী মনিপুরি ইম্পালা, ভারত থেকে এসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সমর্থন দেয় যাদের নেতা ছিল মৈতৈ মনিপুরি সুধীর। তারা হোমেরজান গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি মনিপুরি মৈতৈদের মধ্য থেকে রাজাকার নিয়োগের কাজ শুরু করেন। রাস্তার মেরামত করতে গ্রামবাসীদের উপর চাপ দেয়া হচ্ছিল, কিন্তু রাস্তার গর্তগুলি ভরাট করার জন্য শুকনো মাটি ছিল না কারণ তখন ছিল বৃষ্টির সময়। ”
.
বাস্তবতা হলো- মনিপুর ভারতের একটি প্রদেশ যা বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া কোন অঞ্চল নয় যে সেখান থেকে হুট করে কেউ এসে যুদ্ধে সহায়তা করবে। কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থার অনুন্নতি, কৃষি নির্ভর সমাজ ব্যবস্থা ও অভ্যন্তরীন কোন্দলে জর্জর মনিপুর তখনকার দিনে আফ্রিকা সমান দূরত্ব বলা যায় নি:সন্দেহে। অতএব, যে সুধীর-এর নাম উল্লেখ করেছেন তা বিচারপতির কল্পনা প্রসূত। কারণ মনিপুরে নয়ই, সমগ্র ভারতেও ‘ইম্পালা’ বলে কোন জায়গা নেই।
.
বিচারপতি লিখেছেন, “সীমান্তবর্তী পুরো এলাকাতেই জনসংখ্যার অধিকাংশই হিন্দু ও মুসলিম মৈতৈ সম্প্রদায় থেকে। আমি যে মনিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্গত, তার চেয়ে ওদের ভাষা ছিল পাকিস্তানিদের জন্য সহজ। এই মৈতৈ হিন্দু ও মৈতৈ মুসলিমরা পাকিস্তানের সমর্থক। ”
.
বাস্তবতা হলো, “যুদ্ধকালীন সময়ে তো অবশ্যই, এমনকি বর্তমানেও মনিপুরি ও মনিপুরি মুসলিমদের কোনো গ্রামই সীমান্তবর্তী নয়। বাংলাদেশের ম্যাপটি দেখলেই আপনারা অবগত হতে পারবেন আদমপুরের সীমান্ত এলাকার প্রায় পুরোটিই চা-বাগান। একদিকে ধলই চা-বাগান, অপরদিকে কুরমা ও পাত্রখোলা চা-বাগান। অতএব, উনার এই সীমান্ত এলাকার ধারণাটি বিভ্রান্তিমূলক ও অসত্যের বানোয়াট কাহিনি।
.
অপরদিকে মীতৈ ও মীতৈ পাঙল (মনিপুরি মুসলিম) এর ভাষা হলো মনিপুরি ভাষা বা মীতৈ লোন যা মঙ্গোলীয় মহাপরিবারের টিব্বেতো-বর্মন কুকি-চীন শাখার অন্তর্গত। অপরদিকে উর্দু ভাষা হলো ইন্দো-আরিয়ান ভাষা গ্রুপের একটি ভাষা। উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, According to the linguistic historian Tariq Rahman, however, the oldest name of what is now called Urdu is Hindustani or Hindvi and it existed in some form at least from the 14th century if not earlier (Rahman 2011). It was probably the Indo-Aryan language of the area around Delhi that absorbed words of Persian, Arabic, and Chagatai (a Turkic language)—in a process like the one that created modern English. This language, according to Rahman, is the ancestor of both modern Hindi and Urdu. (m~Î: Click This Link)।
.
এবার প্রসঙ্গে আসি, যে বিষ্ণুপ্রিয়া ভাষায় বিচারপতি কথা বলেন সেটিও একটি ইন্দো-আরিয়ান ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত একটি ভাষা। সেহেতু, ইন্দো-আরিয়ান ভাষা গোষ্ঠীর মধ্যে মিল থাকা ও কথা বলা, শোনা ও জানার সাযুজ্য থাকা স্বাভাবিক। কারণ ইন্দো-আরিয়ান ভাষার সাথে মঙ্গোলীয় মহাপরিবারের টিব্বেতো-বর্মন শ্রেণীর কুকি-চীন শাখার ভাষার সাযুজ্যতা যোজন যোজন দূরত্বে অবস্থান। তাই ‘পাকিস্তানিরা মঙ্গোলীয় ভাষা তথা মীতৈ ভাষা সহজে বুঝে’ বলে যে ধারণা পোষণ করেছেন তা স্পষ্টত মহাজাগতিক ভ্রমের দুনিয়ায় বসে বিলাপ করছেন বলা যায়।
.
তিনি লিখেছেন, “তিনদিন পর আমি বাড়ি ফিরে যাই, কিন্তু গৌরমোহন মাধবপুরে তার বোনের বাড়িতে থাকলেন। পরে আমি জানতে পারলাম তিনি পনের দিন পর সীমান্ত অতিক্রম করতে পেরেছিলেন।”
.
বাস্তবতা হলো, সিনহার কোনরূপ সীমান্ত অতিক্রমণের ইচ্ছা ছিল না কারণ সেসময় আদমপুর অনেকটা বিচ্ছিন্ন গঞ্জ বা হাটবাজার মাত্র। যেখানে যুদ্ধের দামামা অনেক পরে বেজেছিল। যুদ্ধ শুরু হয়েছিল মূলত আদমপুরের পূর্বদিকে শমসেরনগর, উত্তরে ভানুগাছ বাজার ও পশ্চিমে শ্রীমঙ্গলে এবং সর্বশেষে পশ্চিম-দক্ষিণে ধলই চা বাগানের সীমান্তে। সেহেতু তিনি ইচ্ছা করলেই সীমান্ত অতিক্রম করতে পারতেন। উনার বন্ধুসহ মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত অতিক্রম করে গেলেও তিনি ফেরত আসেন পরিবারের কাছে।
.
সিনহা লিখেছেন, “সেনারা নদী পার হয়ে মেশিনগান দিয়ে ব্রাশফায়ার শুরু করে আর আমাদের গ্রামে আক্রমণ করে। আমরা সবাই পূর্ব দিকে পালিয়ে গেলাম। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ মঙ্গলপুরে আশ্রয় নিয়েছিলেন আর আমি তিন কিলোমিটার পূর্বে চিতলিয়াতে ফাল্গুনি সিনহার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। যিনি বয়সে আমার কাছাকাছিই এবং মৈতৈ সম্প্রদায়ের ছিলেন। মৈতৈ সম্প্রদায়ের হলেও যেহেতু তিনি আমার বাবার ছাত্র ছিলেন, তাই আমাকে তিনি দুই দিন আশ্রয় দিলেন। যেহেতু আমার কাছে শীত কাপড় ছিল না তাই তিনি আমাকে মনিপুরিদের কাপড়-চোপড় দিলেন। আমি দুই দিন পর দেশ ফিরে আসি।”
.
বাস্তবতা হলো, তিনি নিজের প্রাণ বাঁচাতে একটি মনিপুরি বাড়িতে আশ্রয় নিলেন। মনিপুরি পরিধেয় কাপড় নিলেন। খাওয়া-দাওয়া করলেন। অথচ এই লেখাটির এক প্যারা পূর্বেই তিনি লিখেছেন মনিপুরিরা রাজাকার ও পাকিস্তান পন্থী। একেই কি বলে, দু-মুখো সাপ!
.
তিনি আরো লিখেছেন যে, শীতকালীন কাপড়চোপ নিয়েছেন। বাস্তবতা হলো শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জে মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গরম কাল। আর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকাল। তাহলে যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে তিনি শীতকাল কোথায় পেলেন? শীতকাল কি উনার জন্য আলাদা? এটি জগাখিচুড়ি গোঁজামিল ছাড়া আর কিছু নয় বলা যায়।
.
সেই ফাল্গুনি সিনহা যার বাড়িতে তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক ও সমাজকর্মী। বর্তমানে অবসর প্রাপ্ত ও শারিরীকভাবে অসুস্থ। ফাল্গুনি সিনহার মতে, বিচারপতি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন বা তথ্যদাতা ছিলেন বলে কোনো তথ্য তার জানা নেই বা সেসময় এমন কোনো কথাও তিনি শুনেননি। অতএব, বিচারপতির মুক্তিযোদ্ধা সাজার এই ঘটনাটি সম্পূর্ণ বানোয়াট।
.
তিনি লিখেছেন, আব্দুল মান্নানকে হত্যা করতে গেলে সে টিটিয়াগাঁও এর একটি মুসলিম মৈতৈ গ্রামে আশ্রয় নিলো। তখন আমরা জানতে পারলাম যে এলাকার এক মুক্তিযোদ্ধা নেতা যিনি ছিলেন আমার বন্ধুÑ তার বাড়িতে আব্দুল মান্নানকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তার নাম উল্লেখ করে আমি তাকে বিব্রত করতে চাই না। আমি এমন আচরণের জন্য তাকে অভিযুক্ত করেছিলাম, বন্ধু আমাকে বলেছিলেন যে মান্নান সিও (বিভাগীয়) অফিসের ক্লার্ক এবং তার কাছ থেকে সে অনেক সাহায্য গ্রহণ করেছিল। ... স্বাধীনতার পর আমার সকল বন্ধু মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন। কিন্তু সেই একটি কারণেই আমি তা সংগ্রহ করার কোন চেষ্টাও করিনি।”
.
বাস্তবতা হলো, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যে কোন প্রকারের সাহায্য সহযোগীতাকারীও মুক্তিযোদ্ধা। সেহেতু বিচারপতির স্বীকারোক্তি মতে, মুক্তিযোদ্ধা নেতা আব্দুল মান্নান এর কাছ থেকে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা গ্রহণ করেছেন সেহেতু তিনি কিভাবে রাজাকার হয়? তিনিও তো মুক্তিযোদ্ধা।
.
সিনহা কি তবে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা জানেন না?
.
এমন আজগুবি গল্প ফাঁদার কারণ মূলত তিনি মনিপুরি মুসলিম সম্প্রদায়ের একমাত্র সিও অফিসের ক্লার্ক ছিলেন যা উনার আঁতে ঘা লাগে বলেই জাতিগত হেয়প্রতিপন্ন করতেই এই গল্পের সূত্রপাত তা নি:সন্দেহে বলা যায়।
.
আর যেহেতু ১৯৭০ সালেই তিনি মদনমোহন কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন সেহেতু তিনি যথেষ্ট সচেতন ও প্রাজ্ঞসর নাগরিক বলা যায়। একজন প্রাজ্ঞসর ও সচেতন নাগরিক হয়েও মুক্তিযোদ্ধার সনদ গ্রহণ করেননিÑ এটি নিছক একটি গল্প ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে না। কারণ তার সহকর্মী মুক্তিযোদ্ধা কারোরই তিনি নাম-ধাম উল্লেখ করেননি। কার অধীনে কোথায় কোথায় যুদ্ধ করেছেন সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র কথাবার্তা নেই। ঐ অধ্যায়েই শেষ তার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি! তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে- মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে উনার কর্মকা- সম্পর্কে।
.
বিষয়টি হালকাভাবে না নিয়ে কমলগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং সরকারের আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীকে আমরা বিনীতভাবে অনুরোধ করবো- মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এস কে সিনহার অবস্থান ও কর্মকা- খুজে বের করার জন্য। এতেই থলের বেড়াল বেরিয়ে আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
.
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে মণিপুরী জনগোষ্ঠীর অনেকেই সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে আহত ও নিহত হয়েছেন। কিন্তু সচেতনতার অভাবে বা দেশমাতৃকার জন্যে লড়াই করেছেন বলেই অনেকে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করেননি। তবু অল্প কিছু মুক্তিযোদ্ধা যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজের নাম অন্তভুক্ত করিয়েছেন তাদের তালিকা নিম্নে দেয়া হল;
.
১. নীলমনি সিংহ
২. আদিত্য শর্মা (কংকর)
৩. অবনী কুমার সিংহ
৪. কে. দিলীপ সিংহ
৫. এস. প্রদীপ কুমার সিংহ (কিরণ)
৬. থাংজম জীতেন সিংহ
৭. এম. মনমোহন সিংহ
৮. কারাম নীলবাবু সিংহ
৯. কে. এইচ. নীলবাবু সিংহ
১০. মাইবম প্রমোদ সিংহ
১১. খোমদ্রাম প্রতাপ চন্দ্র সিংহ
১২. ঙৈরাংবম লৈরিজাউ সিংহ
১৩. য়ুমখাম ললিত সিংহ
১৪. হেনাম সানাতন সিংহ
১৫. ঙৈরাংবম দেবেন্দ্র সিংহ
১৬. হেনাম প্রহলাদ সিংহ
১৭. এল. হরেন্দ্র সিংহ
১৮. থোঙাম ধীরেন্দ্র সিনহা
১৯. পুতুল সিনহা
২০. কান্তমনি সিংহ
.
.
নীতিবর্জিত মনোভাব ও সাম্প্রদায়িক উস্কানি
.
অধ্যায় দুই-এ তিনি বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়কে ‘অত্যন্ত নীচু জাতের’ বলে উল্লেখ করে নিজের জাতি সম্প্রদায়কেও নীতিবর্জিতভাবে অবজ্ঞা করেছেন।
.
এছাড়া তিনি খুবই সুক্ষ্মভাবে মনিপুরিদের হিন্দু মৈতৈ বলে আখ্যায়িত করেছেন। বাস্তবতা হলো, মনিপুরিদের মধ্যে চিরায়ত অপোকপা ধর্মাবলম্বী আছেন, তেমনি খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী আছেন, আছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীও। যেমন: প্রায় সকল আধুনিক রাষ্ট্রসমূহে আমরা দেখতে পাই, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর কিন্তু তারা জাতিতে এক। অর্থাৎ একজন জাপানি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীও হতে পারে আবার খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীও হতে পারে। কিন্তু বিচারপতি কেন এই ধর্মভেদরেখা টানতে চাইলেন?
.
বইটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বিশেষ ভাবে আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি মিডিয়াকর্মী ও সচেতন নাগরিকদের বিভ্রান্ত না হতে বিনীত অনুরোধ করছি।


মনিপুরি সম্প্রদায়কে রাজাকার ও পাকিস্তানপন্থী বানানোর অপপ্রয়াসের প্রতিবাদে মানব বন্ধন
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:০২
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×