মনে পরে যায় সেই দিন গুলোতে বৃষ্টিতে ভিজার কথা, হঠাৎ বজ্রপাতে আমার বুকে তোমার আশ্রয় নেওয়ার কথা, পূর্ণিমারাতে তোমার কোলে মাথা রেখে চাঁদ দেখার কথা। মনে পরে তোমাকে নিয়ে রাত বিরাতে ঘুরতে বের হবার কথা। অফিসে থাকলে মিথ্যা অসুস্থতার কথা বলে আমাকে বাড়িতে আনার কথা। মনে পরে এখনো তোমার পাগলামি গুলো, তখন নিজে নিজে হাসতে থাকি
। তোমার পাগলামির মাঝে কত না বলা ভালবাসা লুকিয়ে ছিল সেটা আমি জানি। কি করে তোমায় ভুলবো? তুমি যে আমার প্রথম ও শেষ ভালবাসা। মাত্র দুই বছর একত্রে থাকা আমাদের, তারপর তুমি আমায় ফেলে ঐ পারে চলে গেলে। আর রেখে গেছ তোমার শেষ সম্বল। যাকে ঘিরে আমি বেঁচে আছি এখনো। যার আগমনের কথা আমাকে বলা মাত্র তুমি আমার বুকে লজ্জা পেয়ে মাথা গুজিয়ে দিয়ে ছিলে। সেদিন আমার পাগলামি দেখে মা বাবা অবাক হয়ে ছিলেন। এরপর দুজনের কত প্ল্যান আমাদের নবাগত সন্তান কে নিয়ে? তুমি প্রতিদিন ঝগড়া করতে আমাদের সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে সেটা নিয়ে? আমি বলতাম মেয়ে তুমি বলতে ছেলে। প্রতিদান নিত্য নতুন নাম ঠিক করতে। ফাইনালি দুটি নাম ঠিক করেছিলে, ছেলে হলে নিহান মেয়ে হলে নিহা। হ্যাঁ তোমার মেয়ে হয়েছে, কিন্তু স্রষ্টার কী নির্মম পরিহাস দেখ তুমি নিহা কে চুখেও দেখলে না তার আগেই পৃথিবী ছেড়েছ। তোমার কত চিন্তা ছিল বাবুটা আগে কার নাম ধরে ডাকবে তোমাকে না আমাকে? ও দেখতে কার মতত হবে তোমার না আমার । আরো কত শত ভাবনা ছিল তোমার মনে। হ্যাঁ নিহা বাবুনী টা আগে তোমায় ডেকে ছিল আম্মা বলে। যে ডাক শুনে আমার সাড়া শরীর ধুমরে মুছরে উঠেছিল। চুখের কোণে এক পসলা পানি ভিড় করে ছিল। আজ নিহা আমায় প্রথম বাবা বলে ডেকেছে। তুমি বলে ছিলে আমাকে যেদিন প্রথম বাবা ডাকবে সেদিন বাবুনির জন্য বড় বড় পুতুল নিয়ে আসতে হবে আমাকে। আজ তাই এনেছি অনেক বড়বড় পুতুল দিয়ে সারা ঘর ভরে দিয়েছি। এত প্রাপ্তির মাঝেও তোমার মেয়েটা মা মা করে কেঁদেই যাচ্ছে। আমি কিছুতেই কান্না থামাতে পারছিনা। এমন কি মা বাবাও না। তাই আজ অনেকে বলছে আমাকে বিয়ে করতে । কিন্তু তুমি বল এর কোন গ্যারান্টি আছে যে সৎ মা ওকে ভালবাসবে? তখন ওর কষ্ট আর বাড়বে, আমি চাইনা আমাদের মেয়েটা আরও কষ্ট পাক সেটা। আমি ওকে বাবা মার সব আদর ভালবাসায় বড় করবো। তুমি শুধু তাঁরা হয়ে দেখে যাও। তুমি বলেছিলে আমি যেন বাবুনী আসার পর হতে ধুমপান না করি, করলে আমার কাছে ওকে তুমি দিবেনা। কিন্তু দেখ আমি সত্যিই করিনা এখন ধুমপান আর। তুমি বলেছিলে বাবুনী যেদিন আমাকে বাবা বলে ডাকবে সেদিন যেন অনেক বড় বড় পুতুল নিয়ে আসি। আমি এনেছি পুতুল সাড়া ঘর জুড়ে পুতুল আর পুতুল। তবুও কেন জানি নিহা আজ খুব কাঁদছে,এত প্রাপ্তির মাঝেও আজ নিহা মা মা করে কান্না। বলোনা আমি কিভাবে নিজেকে শক্ত করবো? কিভাবে মুছে রাখবো নিহার মা হারানোর কষ্ট টা। যখন নিহা বড় হবে তখন নিশ্চয়ই মেয়েটি আমার থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে তোমার জন্য কাঁদবে। স্কুলে ভর্তি হলেও তোমাই খুজবে। কারণ ওর বয়সী সবাই তখন মার হাত ধরে স্কুলে আসবে। আমি আর পারছিনা ভাবতে। কি করে সামলাবো মেয়েটি কে। কিভাবে আমি নিজেকে ঘুছিয়ে রাখবো। বলে দাও তুমি, বলে দাও আমায়। এখনো নিহা চারপাশে তাকিয়ে কি যেন খুঁজে । নিশ্চয় তোমাকে, যদি এই অবস্থায় এইভাবে খুঁজতে থাকে তবে বড় হলে হয়তো মরিয়া হয়ে উঠবে। আমার মা আর কতদিন বাঁচবে? ? কতদিন আর তোমার মেয়েকে আগলে রাখবে??? জানিনা আমি কিছু জানি না। রাতের আকাশে যখন তাঁরা উঠে তখন তোমাকে খুঁজি তাঁরার মধ্যে। গভীর রাতেও আচমকা স্বপ্ন দেখে জেগে যায়। শূণ্যের মাঝেও তোমাকে দেখতে পাই।
বিঃদ্র- এটি আমার লেখা ২য় গল্প। কিছু ভুল ত্রুটি থাকলে বলবেন। ভাল লাগলে লাইক দিবেন। আর দোআ করবেন আমি যেন চট্টগ্রামের যে কোন একটি সরকারী কলেজে এডমিশন নিতে পারি। যেন ভবিষ্যৎে আরো ভাল কিছু লিখতে পারি।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৪ রাত ৯:০০