সামুতে প্রায়ই বিভিন্ন খ্যাত-অখ্যাত মুভি রিভিউ দেখি। যা দেখে আমি অনুপ্রানিত হয়ে সেসব নাম না জানা মুভিগুলো দেখেছি। যারা রিভিউগুলা করেন অবশ্যই তারা সেসব মুভিগুলো ভাল লেগেছে বলেই করেন। ব্যাক্তিগত ভাললাগা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেবার মধ্যে আনন্দ আছে। অনেক ভেবে দেখলাম আমিই বা সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে যাব কেন। তাই সেই আনন্দ নিতে (কিংবা দিতে ) আমিও কি-বোর্ড হাতের নিচে রাখলাম আর আমার আঙ্গুলের খোচায় জর্জরিত করে রচিত করার চেষ্টা করলাম একটি মুভির রিভিউ। আজ যে মুভিটি নিয়ে লিখছি তার নাম দ্য ব্যাংগ ব্যাংগ ক্লাব (The Bang Bang Club)।
(সামুতে এই মুভিটি নিয়ে কেউ রিভিউ করেছে কিনা জানিনা। অন্তত আমার চোখে পড়েনি। তাই এই মুভিটি নিয়ে লিখছি। এটি সামুতে আমার প্রথম মুভি রিভিউ। বেশি ত্যান পেচায়া ফেললে মাফ কইরা দিয়েন)
দ্য ব্যাংগ ব্যাংগ ক্লাব মুভিটি সত্যি ঘটনা অবলম্বনে নির্মান করা হয়েছে। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ সাল সময়কালিন দক্ষিন আফ্রিকাতে ৪ জন আলোকচিত্রি নিয়ে নির্মিত আনঅফিসিয়াল এই ক্লাবকে কেন্দ্র করে এই মুভি। কেভিন কার্টার, গ্রেগ মরিনোভিচ, কেন ওষ্টারব্রোক ও জোয়া সিলভা এই চারজনকে নিয়ে গঠিত এই ক্লাবটির প্রথম দুজন যথাক্রমে ১৯৯৪ ও ১৯৯১ সালে পুলিৎজার পুরষ্কার অর্জন করে। আপনাদের নিশ্চই দ্যা চাইল্ড এন্ড ভালচার ফটোগ্রাফটির কথা মনে আছে। ১৯৯৩ সালে তোলা কেভিনের এই ফটোগ্রাফটি একই সাথে আলোচিত ও সামালোচিত হয়েছিল। স্টিভেন সিলভার পরিচালিত এই মুভিটি গ্রেগ মরিনোভিচ ও জোয়া সিলভা রচিত অটোবায়োগ্রাফী দ্য ব্যাংগ ব্যাংগ ক্লাব: স্নাপশট ফ্রম এ হিডেন ওয়ার অবলম্বনে নির্মান করা হয়েছে।
কেভিন কার্টারের তোলা ছবিটি
যাই হোক এবার মূল প্রসঙ্গ অর্থাৎ মুভি প্রসঙ্গে আসি। মুভিটি শুরু হয় ১৮ এপ্রিল, ১৯৯৪ সালে (দক্ষিন আফ্রিকার প্রথম অবর্নবাদী নির্বাচনের এর এক সপ্তাহ আগে) এক রেডিও ষ্টেশনে কেভিন কার্টারের ইন্টারভিউর মাধ্যেমে যেখানে কার্টার তাদের ব্যাংগ ব্যাংগ ক্লাবটির কথা বলতে থাকে। সেখান থেকে ফ্ল্যাশব্যাকে চলে যায় ৪ বছর আগে যেখানে দেখানো হয় গ্রেগ নামের এক ফ্রিল্যান্সার ফটোগ্রাফার দক্ষিন আফ্রিকায় বর্নবাদের দাঙ্গার ছবি তুলতে গিয়ে পরিচিত হয় কেভিন, কেন ও জোয়া-র সাথে। তারপর নানা ঘটানার মাধ্যমে তৈরী তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও ব্যাংগ ব্যংাগ ক্লাব। গ্রেগের তোলা ছবিগুলোর মাধ্যেমে তৎকালীন দক্ষিন আফ্রিকার বিভৎস দাঙ্গার চিত্র ফুটে ওঠে। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৯১ সালে গ্রেগ পুলিৎজার পুরষ্কার অর্জন করে। গ্রেগ, কেভিন, কেন ও জোয়া দক্ষিন আফ্রিকার বর্নবাদী দাঙ্গার ভয়ংকর সব ফটোগ্রাফ তোলে যা বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতে থাকে। দ্রুত তারা বিখ্যাত হয়ে ওঠে সেই সাথে বিখ্যাত হয়ে ওঠে তাদের তথাকথিত ব্যাংগ ব্যাংগ ক্লাব। এর মধ্যে অতিরিক্ত মাদকাসক্ত হয়ে পরার কারনে কেভিনের চাকরি চলে যায়। সে হয়ে পরে কপর্দকহীন। অবশেষে তার বন্ধুদের সহযোগীতায় সে ও তার বন্ধুরা (গ্রেগ ছাড়া) সুদানে চলে যায় সেখানকার দুর্ভীক্ষের ছবি তুলতে। আর সেখানেই কেভিন তোলে তার ঐতিহাসিক ছবি চাইল্ড এন্ড ভালচার। ছবিটি পুলিৎজার পুরষ্কার পাওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে তার ছবিটি নিয়ে সমালোচনা হয়। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় ছবিটির মেয়েটির কথা। তার পরিনতি কি হয়েছিল? কেভিন সে কথার কোন জবাব দিতে পারে না। ইতোমধ্যে দক্ষিন আফ্রিকার বর্নবাদ দাঙ্গার অবস্থা কিছুটা শান্ত হয় কারণ দেশটির সরকার প্রথম অবর্নবাদী নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং নেলসন মেন্ডেলা জেল থেকে ছাড়া পায়। নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে যখন কেভিন রেডিওতে ইন্টারভিউ দিচ্ছিল তখন গ্রেগ, কেন ও জোয়া এক এ্যাসাইনমেন্টে থোকোজা টাউনশিপ যায় যেখানে হঠাৎ করে দাঙ্গা শুরু হয়। এই এ্যাসাইমেন্টে ছবি তুলতে গিয়ে কেন মারা যায় ও গ্রেগ গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়। এই ঘটনার মাস তিনেক পর কেভিন কার্বোন-মনোঅক্সাইড পয়জনিংয়ের মাধ্যমে আত্নহত্যা করে।
মুভিটি আমার কাছে ভালো লেগেছে কয়েকটি কারনে তার তা হলো, এই মুভিটির মাধ্যমে ফটোগ্রাফারদের চ্যালেঞ্জিং জীবন তুলে ধরা হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে তখনকার দক্ষিন আফ্রিকার দাঙ্গার ভয়ংকর অবস্থা। কি ভয়ংকর সব পরিস্থিতির মধ্যে তারা ছবিগুলো তুলেছেন। অনেকটা নিচের জান হাতে নিয়ে যাবার মত। ছবির একটা সংলাপ আমার বেশ ভাল লেগেছে, যখন কেভিন বলে, “আমাদের কাজ হল সেখানে বসে থাকা, আর মানুষের মৃত্যু দেখা” ।
আইএমডিবি রেটিং: ৬.৭/১০
আমার রেটিং: ৮/১০
আইএমডিবি লিঙ্ক
BRRip Download
DVDRip Download

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




