মন
নদীর কাছে যারা থাকে মন খারাপ হলে তারা ঢেউয়ের কাছে যায়। নদীতো নারীর মত। নারীতো রাতেই মধুর। মাঝির বেটারা রাত করে ঘরে ফেরে। তারা তো কুমার, নদীতো তাদের।
মেঘনা নদী কালো যুবকদের মুগ্ধ করে আষাঢ় শ্রাবণ এলে।
আমরা যারা বড়লোক আছি। মানে অবৈধ টাকা খেয়ে বাঁচি। তারা মন খারাপ হলে ছাদে যাই। আমাদের মেয়েরা বাথরুমে গিয়ে কাঁদে। আশি পাসেন্ট ধনীর বাড়ি কালো টাকা আছে।
গরীবেরা কোথায় যায়।
চাষীর মন খারাপ হলে বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে সন্ধ্যায় হাটের দিকে যায়। কিন্তু বধূরা কোথায় কাঁদে। পাতিল মাঝার ফাঁকে আঁচল ভিজে ওঠে পিতার কথা ভেবে।
মাওলানারা মন খারাপ হলে মসজিদে যায়। কিন্তু তার পুত্র যে নাস্তিক, সে কোথায় ভালো করে মন। সে কী করে তখন।
প্রাণীর মন খারাপ কেন হয়। কখনো মানুষের মন যদি না হত খারাপ, আমার মন ভালো হত খুব।
দেহ
আমি জানি ইতোমধ্যে আমাকে কিছুটা পঁচিয়ে দিয়েছে জ্ঞান। পঁচে গন্ধ বের হওয়ার আগেই শিড়দাঁড়া সোজা করে দাঁড়িয়েছি আর সারিয়ে নিচ্ছি আমার ক্ষত। আমি জানি আমার পঁচা থেকেও জন্ম নেবে কোন কীট। যার খবর পাবেনা বিজ্ঞান। যার খবর পাবে না ধর্ম। শুধু একজন কৃষক আমার পঁচা দিয়ে তৈরী করুক সার অন্তত এইটাই আমি চাই।
ধান
নতুন ধান উঠলে আমি তোমার বাড়ি যাবো।
চিতই পিঠা তৈরী করে মিঠাই দিয়ে খাবো।।
নিজের জমির পাকা ধান আলে দাঁড়িয়ে দেখার একটা হলুদ সুখ আছে। আবার কাস্তে নিয়ে ক্ষেতে নেমে যাওয়ার মধ্যে একটা লাল সুখ। কিষাণদের তাড়া দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় সবুজ আর গান গেয়ে ধান কাটায় একটা ম্যাজেন্টার ভালোবাসা আছে।
আশি পার্সেন্ট কৃষক আজো ভূমিহীনই আছে।
ধান বোঝা করে নিজের ছোট উঠোনে ফেলার মধ্যে নীল সুখ। আর পরের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার মধ্যে একটা গেরুয়া জ্বালা আছে।
কৃষকের মেয়েরা আজও ছড়া কুড়ায় আর ছেলেরা কামলা খাটে অথবা মাছের নৌকায় যায়।
নিজের গরু দিয়ে ধান মাড়াইয়ের একটা আকাশী বেহেস্ত আছে। ছোট নাড়ার ঘর...উঠানে বরই গাছ...বিচ্ছেদী গান গেয়ে বরই খাওয়া দেখার মধ্যে শীতের কাঁথার আরাম আছে।
নব্বই পার্সেন্ট গ্রামে নেইকো চকি। আছে শুধু শীতের মোটা কাঁথা আর হোগলার নিচে নতুন ধানের নাড়া।
ধান ঘরে তুলে মটকী বা ডোলার মধ্যে রাখা অথবা বড় একটা নাড়ার চাউলি দিয়ে দেওয়ার মধ্যে একটা জমিদারী শান্তি আছে। শান্তিটা রংধনুর আর নদীর মতো সুন্দর।
ঘাম নদী ও অশ্রু সমুদ্র
মাঝি যখন বৈঠায় টান দেয় তখন তার হাতের পেশি ”নাও চাই নাও চাই” বলে চিৎকার করে। নৌকা চালিয়ে দেখেছি আমার পেশিও ভাটিয়ালী গান গায়, যে গান দিয়েছে সুর কোন গাঙচিল পাখি।
নদীর জলের সঙ্গে মিশে যায় ঘাম। আবার জেলেনির চোখের জলে বেরে ওঠে নদীর শরীর। এমন হলে এই দুই জল একদিন হবে জলোচ্ছ্বাস আর ভেসে যাবে সমস্ত শহর-নগর- বাংলাদেশ। সে নদীতে মাঝি হবো আর মাল্লা হবে সেই জেলে আর জেলেনি আমার।
জল তো নোনা হয় মাঝিদের ঘামে। প্রতি বছর কত ট্রলার যে ইলিশ মৌসুমে ডুবে যায়; সাথে যায় হাজার হাজার জেলে। জেলের শরীরে বেড়ে ওঠে মাছ আর সে মাছ কারা খায়!
জীবিকা
শুকনো ঢেলার মত ছুঁড়ে দিল জীবিকার মাঠে।
চেয়ে দেখি চারদিকে বেলুনেরা এলোমেলো ওড়ে। যে তৃতীয় চোখে নদীর কিনারে বসে দেখেছি মুক্ত পাখিরা ডাকাতি করছে জেলের বলিষ্ঠ ফাঁদ থেকে মাছ বাঁশের বাঁশির মত, যে বাঁশি বেঁজেছে আমন ধানের ক্ষেতে চতুর্থ মামাতো বোনের আশায়।
আমি বিদেশের জেলে দীর্ঘ কয়েদি হলাম।
কান্না আসে অথচ তোমাকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। শিশু বন্ধু দূরে যাই। কারণ কখনও ঘনিষ্ঠ স্বজনও হয় বিপদজনক পশু।
এখন আমার ঢেলার সামনে ধ্যানে আছি যোগ্য পুরোহিত। কারণ জানতে হয় বস্তুর ভেতরেও শক্তি পরিবর্তিত করা যায় মানসিক।
যদি দেবী হয়ে উঠি। আর কথা বলি বিষন্ন খাঁচায়,বন্দি পাখি। শিশু কৃষকের সাথে কাটাই উড়ন্ত— শীতের দুপুর তবে ডানা হলুদ থাকুক জবাই করার পূর্বে গরুর শরীরে দেয়া সিলের মতন।
কেঁপে কেঁপে যোগ্য হই, যেভাবে বালিকা গৃহিনী হয় পাতার বাসরে।
নাম
রাস্তায় কখনও কোথাও আমার নামটা দেখলেই কেমন যেন অন্যরকম হয়ে যাই। তখন রি্ক্সাচালককে বড় আত্মীয় মনে হয়। মনে হয় ওই বাড়ির সদস্য আমি, যার সামনে টিনের সাইনবোর্ডে লেখা , ইমরান ভিলা। তখন তিন পায়ের রিক্সাটাকে শরীর আর লেখাটাকে মনে হয় আমার মুখ।
আমার বাড়ি পাশে অসুস্থ একটা ছেলের নাম ইমরান । তার জন্য তুলেছি চাঁদা।
কোন মেয়ের নাম যদি ইমরান হতো তাকে মনে হয় আমি বাসতাম সবচেয়ে ভালো বেশি ।
আমার নামে আরও অনেক বাঙালির নাম আছে। এই থেকে প্রমানিত হয় যে, পৃথিবিতে নামের চেয়ে মানুষ বেশি।
আমার পিতা অনেক গাছ লাগিয়েছে বাড়ি। একটা বৃক্ষের নাম রেখেছি ইমরান। এখন ভাবছি শালিক পাখি যেমন কথা বলে ; সে যদি একদিন বলে ওঠে ও পথিক , জালো! আমার নাম ইমরান মাঝি।
আমার নামের অক্ষরগুলো দিয়ে এলোমেলো আরও কয়েকটা মানুষের নাম আছে। সেই ব্যক্তিসমুহকেও আমার আপন মনে হয়।
বাসর রাতে পতি মরলো গলায় ফাঁসি দিয়া
নতুন, নকল, ছোট
পুথি
মোদের সাহেবী ভূষণের মাঝে আছে চাষার মন।
সেই অতৃপ্ত হৃদয়ের জন্য এই না আয়োজন।
বাসর রাতে পতি মরলো গলায় ফাঁসি দিয়া
এমন লক্ষী মেয়ে
এমন লক্ষী মেয়ে বক্ষ বেয়ে পড়ে জলের ঢেউ
এই ঘটনার আসল সত্য জানলো না তো কেউ।
হবে কেমনে বিচার
হবে কেমনে বিচার নুরুর মাচার উপর বসলো সবে
বাসর ঘরে বধূ ছিল মরলো কেমনে তবে।
বলবে নতুন বধূ
বলবে নতুন বধূ যদ-মধু ভাবছে গালে হাত
সকল লোকের দৃষ্টি সেথা মিনিট গেল সাত।
বধূর ঠোঁট নড়িল
বধূর ঠোঁট নড়িল হেয় মরিল তার আমি কি জানি
আমার মনে কষ্ট কেমনে স্বামীর মরণ মানি।
আমায় ক্ষমা করবেন
আমায় ক্ষমা করবেন মনে ধরবেন আমি চাঁদের হাসি
বাসর ঘরে গিয়ে দেখি স্বামীর গলায় ফাঁসি।
সবাই মিথ্যে ভাবে
সবাই মিথ্যে ভাবে বিচার হবে বধূর হবে জেল
পুলিশ আসলে নিয়ে যাবে দেখলে পাকা বেল।
জলদি শিকার কর
জলদি স্বীকার কর পায়ে ধরো মোল্লা- মাঝি সবার
তবে কিছু আশা থাকে অল্প শাস্তি হবার।
মেম্বর গর্জে ওঠে
মেম্বর গর্জে ওঠে গত ভোটে করছে তিনি ফেল
চিৎকার দিয়া বললো- বেটি হইবে শেষে জেল।
বধূ চুপচাপ থাকে
বধূ চুপচাপ থাকে ফাঁকে ফাঁকে মোছে চোখের জল
জলের বদল পরে যেন দেশি খেজুর ফল।
হঠাৎ কি ঘটিল
হঠাৎ কি ঘটিল প্রৌঢ় এলো শীর্ন আসর মাঝে
সকল লোকের চোখ পড়িল ফকির বেটার সাজে।
তাহার লম্বা দাড়ি
তাহার লম্বা দাড়ি অঙ্গে শাড়ি দেখতে লাগে ডর
বললো পাগল চাঁদের দেশে তাহার আসল ঘর।
সবাই বিশ্বাস করে
সবাই বিশ্বাস করে বাসর ঘরে মরলো কেমনে স্বামী
এই ঘটনার আসল সত্য বলতে পারি আমি।
তোমরা ধৈর্য ধরো
তোমরা ধৈর্য ধরো বন্দী করো জাহান্নামী নারী
স্বামীকে সে মারছে রাতে গলায় দিয়া শাড়ি।
ফকির চলে গেল
ফকির চলে গেল মেম্বর পেল নিশিত এক ছেনি
কার্য দেখে যাচ্ছে খুলে লক্ষ মাথার বেণী।
হইলো বিচার শুরু
হইলো বিচার শুরু বাঁধলো নূরু বেটির হাতে পায়
নতুন বধূর কোমল পরাণ আল্লার কাছে যায়।
মতিন কাটলো গলা
মতিন কাটলো গলা মহিষ বলা যেতে পারে ভাই
বৃক্ষরাজী শূন্য এখন পাখি পত্র নাই।
আসলো অনেক কুকুর
আসলো অনেক কুকুর মধ্য দুপুর ছিল তখন দেশে
টুকরো টুকরো বধূর মাংশ খাইলো সর্বশেষে।
সবাই মর্মাহত
সবাই মর্মাহত আছেন যতো দর্শনার্থী ভাই
একটা কিন্তু দুরে ছিল কাছে আসে নাই।
সেটা স্বামী ছিল।