somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ মা ও শাশুড়ি মা

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“তোর শাশুড়ি কী পেয়েছে? যখন যা বলবে, তাই করতে হবে নাকি? একদম করবি না। একবার করবি তো মাথায় উঠে যাবে। তখন আর মাথা থেকে নামাতে পারবি না। সারাদিন শুধু দৌড়ের উপর রাখবে। তাই শুরুতেই সাবধান হয়ে যা”। রাহেলা বেগম মোবাইলে একটানা ঝাঁজালো কন্ঠে কথাগুলো বলে হাঁপাতে লাগলেন।
তার মেয়েটা হয়েছে একদম হাবাগোবা টাইপ। দুমাস হয়নি বিয়ে হয়েছে, এখনই শ্বশুরবাড়িতে এতো কাজ করতে হবে? শাশুড়িকে পানি দাও, চা দাও, ঔষধটা খুলে দাও, জানালার পর্দাটা গুটিয়ে দাও, বিছানাটা ঝেড়ে দাও, মশারীটা টানিয়ে দাও আরো কত কী!

হারুণ সাহেব শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিলেন। রাতে ঘুমানোর আগে হাতে একটা বই থাকলে ঘুমটা তাড়াতাড়ি আসে। বই পড়তে থাকলে এলইডি টিউব লাইটের ফকফকা আলোতেও শব্দগুলো একসময় হারিয়ে যায়। তখন আপনাআপনি বইটি হাত থেকে পড়ে যায়। পরে তার বউমা এসে বইটি উঠিয়ে রেখে মশারি টানিয়ে দিয়ে যায়। আজ ঘটনা সে পর্যন্ত গড়ানোর আগেই স্ত্রীর ফোনালাপে তার পড়ার মনঃসংযোগে নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি শান্তিপ্রিয় মানুষ। তাই সহসা স্ত্রীর কথার অমতে কোন কথা বলতে চান না। কিন্তু এখন আর তিনি চুপ থাকতে পারলেন না। তাই তিনি তার কন্ঠকে যথা সম্ভব মোলায়েম করে বললেন, “তুমি তো দেখি কুমন্ত্রণা দিয়ে দিয়ে মেয়ের সংসারে আগুন লাগাবে। ওকে ওর মতো থাকতে দাও। নিজের বুদ্ধি দিয়ে সব ধরণের সিচুয়েশন হ্যন্ডেল করতে দাও”।

এ কথা শুনে রাহেলা বেগমের রাগ মাথায় চড়ে গেলো। তিনি ফোঁস ফোঁস করতে লাগলেন। তারপর মুখের চোয়ালকে সিক্সটি গ্রেডের রডের মতো শক্ত করে, চোখকে লোহিত বর্ণ করে, গলার স্বরকে ভোকাল কর্ডের সর্বোচ্চ সীমায় নিয়ে তিনি বললেন, “কী বললে তুমি? আমি কুটনামি করি? আমি কুমন্ত্রণা দেই? আমি মেয়ের সংসার ভাঙতে চাই? সংসারের তুমি কী বোঝা? তোমার কিসের অভিজ্ঞতা যে এমন কথা বলছো”?

হারুণ সাহেব উত্তেজিত না হয়ে আরো শান্তভাবে বললেন, “আমি তো তোমার সাথেই সংসার পেতেছি। তাই সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত অভিজ্ঞতা হিসেব করলে তোমার আর আমার সাংসারিক অভিজ্ঞতা সমানই হওয়ার কথা। এখন তুমি যদি বল, তোমার অভিজ্ঞতা বেশি, তাহলে তো ভাবনার বিষয়। আমার সাথে বিয়ে হওয়ার আগে তোমার কী আরেকটা সংসার ছিল? কই, আগে বলনি তো”!
- একদম কথা ঘোরাবার চেষ্টা করবা না। মেয়েটা আমার খাটতে খাটতে জীবন শেষ করে দিচ্ছে, সেদিকে তোমার কোন খেয়াল নেই। তুমি জান, গতকাল কী হয়েছে? আমার মেয়েকে ওরা মাছ কাটতে দিয়েছে। কেন, মাছ বাজার থেকে কাটিয়ে আনতে পারে না? আমার মেয়ে কী কোনদিন মাছ কেটেছে?
- মেয়েকে মাছ কাটা শেখাওনি কেন? এটা তো তোমার দোষ। সবকাজই শিখতে হয়। কখন কোনটা কাজে লাগে বলা যায় না।

এ কথা শুনে রাহেলা বেগম আরো উত্তেজিত হয়ে গেলেন। স্বামীর সাথে কথা বলে কোন আরাম নেই। সে হয়েছে একটা গাড়ল। কিচ্ছু বোঝে না। তিনি উচ্চ স্বরে তার ছেলের বউকে ডাকতে লাগলেন, “বউমা, এই বউমা, এদিকে এসোতো”।

পাশের রুম থেকে তার ছেলের বউ ছুটে আসলো। উদ্বিগ্ন স্বরে বললো, “কী হয়েছে মা? আপনি এমন হাঁপাচ্ছেন কেন? শরীর খারাপ করেছে নাকি?
- তোমার শ্বশুরের সাথে থাকলে, কেউ ভালো থাকতে পারে নাকি? আমার জীবনটা তো ত্যানা ত্যানা করেছেই, এখন মেয়ের জীবনও তেমন করতে চাইছে। আমার মাথা ঘুরছে। তুমি একটু ফ্যানটা বাড়িয়ে দাও আর আমাকে এক গ্লাস পানি দাও।

শিউলি তার শাশুড়ির কথা মতো ফ্যানটি একটু বাড়িয়ে দিল। খাটের পাশে ছোট্ট টেবিলে কিছুক্ষণ আগে রেখে যাওয়া মামপট থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে শ্বাশুড়ির হাতে দিলো। তারপর জানতে চাইলো, “আর কিছু লাগবে মা”?
- আমার ঔষধটা?
- একটু আগে না আপনাকে ঔষধ খাইয়ে গেলাম?
- ও, তাই তো। কিচ্ছু মনে থাকে না।
- মশারি কি এখন টানিয়ে দেবো?
- না আরেকটু পরে।
- আচ্ছা ঠিক আছে, মা।

এই বলে শিউলি চলে গেলো। হারুণ সাহেব কিছু না বলে এতক্ষণ রাহেলা বেগমকে লক্ষ্য করছিলেন। এবার তিনি বললেন, “তুমি বউমাকে এতো অর্ডার করো কেন? এ কাজগুলো তো তুমি নিজেই করতে পার। বেচারি সারাদিন খাটাখাটনির পর এখন একটু আরাম করবে, তা না। তুমি একটার পর একটা অর্ডার দিয়েই যাও, দিয়েই যাও”।
রাহেলা বেগম অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে তাকালেন।
- কী বললে তুমি? তোমার মাথা ঠিক আছে? ও এগুলো করবে না? ও ঘরের বউ না?

হারুণ সাহেব স্ত্রীর দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধু বললেন, “ও আচ্ছা, তাই তো”। এরপর তিনি আর কথা বাড়ানোর সাহস করলেন না। হাতের বইটিতে মনযোগ দেয়াই একখন আত্মরক্ষার সর্বোত্তম উপায়। বইটি যদিও উল্টে রেখেছিলেন কিন্তু কোন পর্যন্ত পড়েছিলেন তা এখন ভুলে গেছেন। এখন আবার পৃষ্ঠার শুরু থেকেই পড়া শুরু করতে হবে।।

আবদুল্লাহ আল মামুন
রচনাকাল- ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:২৬
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×