অনুবাদ ঃ নাসীর মাহমূদ
-‘গাছের আগায় বসে গোড়ায় কুঠার মারা’
গ) প্রবাদটি কোত্থেকে এসেছে?
ক) বলছি শোনো, একদিন এক চোরের নজরে পড়লো একটা ফলের বাগান।
খ) ফলের বাগান..
ক) হ্যাঁ! ফলের বাগান। সে এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলো আশেপাশে কেউ নেই। এই সুযোগে চোরটা ঢুকে পড়লো বাগানের ভেতর। বাগানে ঢুকেই সে ঝটপট উঠে গেল একটা গাছে। উঠেই ফলে ভরা ডাল থেকে সে ফল ছিঁড়তে শুরু করে দিলো।
গ) বাগানের কোনো পাহারাদার ছিলো না...
ক) কেন ছিল তো..শোনোই না। চোর যখন ফল ছিঁড়তে শুরু করলো তখনই বাগানের মালি বাগানে ঢুকলো। মালি গাছের ডালের নড়াচড়া দেখে উপরে তাকাতেই দেখলো চোখ ফল ছিঁড়ছে। মালি আস্তে আস্তে গাছের তলায় গিয়ে চিৎকার করে বললোঃ ঐ বদমাইশ, গাছের ডালে উঠে কী করছো...? চোর জানতো না এই বাগানের মালিক সে.., তাই চোর জবাব দিলোঃ কেন দেখতে পাচ্ছো না কাজ করছি.!
এটা আমার বাগান..তাই গাছে উঠে ফল ছিঁড়ছি...
বাগানের মালিক এ কথা শুনে একটা লাঠি হাতে নিলো। চোরের পা ঝুলছিলো ডাল থেকে। মালিক লাঠি দিয়ে চোরের পায়ে পেটাতে পেটাতে বললোঃ কবে থেকে তুই এই বাগানের মালিক হয়েছিস..?
চোরের এবার টনক নড়লো। মনে মনে ভাবলো..না জানি এই লোকই বাগানের মালিক...!! কে জানে হয়তো পাশের বাগানটিও তার...! এইসব ভেবে চোর পা গুটিয়ে নিলো যাতে পেটাতে না পারে। এরপর চোর তার পকেট থেকে একটা ছুরি বের করে ডাল কাটতে শুরু করলো। যেই ডালে সে বসেছিলো...ঐ ডালটাই..। ডাল কাটতে কাটতে চোর বললোঃ ‘আমার কাজের ক্ষতি করো না..। বাগানের মালিক বলেছে গাছের বাড়তি ডালগুলো কেটে নিতে।’
চোরের কথা শুনে মালিকের হাঁসি পেলো। চোরের বললোঃ ওরে নির্লজ্জ বেহায়া! অ্যাতো মিথ্যা কথা বলিস না। এই বাগানের মালিক আমি। আমি তোকে কখন বললাম যে গাছের বাড়তি ডালপালা কেটে ফেল..!
বেচারা চোর তো এবার ফাঁদে আটকা পড়ে গেল। এবার সে আরেকটা মিথ্যা কথা বলতে চাইলো। বাগানের মালিক তাকে বললোঃ নীচে নেমে আয়! তুই তো দেখছি মারাত্মক চালাক...যেই ডালে বসেছিস ঐ ডালই কাটতে শুরু করেছিস। আরেকটু কাটলে তো ডাল ভেঙ্গে নীচে পড়ে হাড়গোড় ভেঙ্গে ফেলতিস..! তুই যদি এই কাজেরই লোক হইতি তাহলে গাছের বাড়তি ডাল কীভাবে কাটতে হয়, জানতি। চোর এবার নিজের ভুল বুঝতে পেরে লজ্জা পেয়ে গেল। গাছ থেকে নীচে নেমে এলো। মনে মনে ভাবতে লাগলো বাগানের মালিক না জানি তাকে কী শাস্তি দেয়। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো মালিক চোরটাকে কিচ্ছু বলে নি। চোরও লজ্জায় মাথানীচু করে চলে গেল। এই ঘটনার পর থেকে যখনই কেউ এমন কোনো কাজ করে যার ফলে সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখনই মানুষ বলতে শুরু করলো -‘গাছের আগায় বসে গোড়ায় কুঠার মারছে’। ইরানের কালজয়ী কবি সাদি বলেছেনঃ
‘যে নিজেকে খুব জ্ঞানী বলে ভাব দেখানোর জন্যে প্রকৃত জ্ঞানীর সাথে তর্ক করে, সে আসলে মূর্খ।’
খ) বাহ বাহ! এতোক্ষণে বুঝলাম।
গ) ছোট্ট একটি প্রবাদের পেছনে আস্ত একটা গল্প লুকিয়ে আছে। *