নাসীর মাহমূদ
চোরের ফেরত দিয়ে যাওয়া নতুন জুতাগুলো দেখে মামা ভাগিনা বেশ কিছুক্ষণ হেসে নিলাম। মনের ভেতর ফুরফুরে ওই কাশফুল নিয়েই রওনা হলাম কাস্পিয়ান সৈকতের উদ্দেশে। সপরিবারে। পরিবারের সঙ্গে দুজন স্বজনও যোগ হয়েছে-ভাগিনারা। একমাত্র বোনের তিন ছেলের বড় দুইজন। জুতো ফেরত দিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা নিয়েই গল্প হচ্ছিল গাড়িতে যেতে যেতে। তাদের বললাম: আমার এইচটিসি উইন্ডোজ ফোন সেটটাও চোরে নিয়ে গিয়ে ফেরত দিয়েছিল। ওরা তো শুনে অবাক। বাক বাক বকবক তাই বেড়েই যাচ্ছিল। শুভ্র ভোরে তেহরান ছেড়েছি আমরা। এখন সূর্যের শুভ্র আভা শেষের দিকে। রোদ ওঠার আগে পথে পাটি বিছিয়ে নাশতা সেরে নেবো-এরকমই ভেবেছি। রোদ উঠতে বাংলাদেশের চেয়ে কিছুটা সময় বেশি লাগে পাহাড়ের কারণে। পাহাড়ের পর পাহাড়। যেন পাহাড়ের মেলা। দূর থেকে সারি সারি তাঁবুর মতো মনে হয়। কত রঙের, কত ঢঙের, কত যে রহস্যের কে বলবে সেকথা। আমার কেন যেন মনে হয় ফেরেশতারা সমুদ্র কেটে কেটে মাটিগুলো স্তুপ করে রেখেছে। সেই স্তপীকৃত মাটিই কালের বিবর্তনে পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। কালো পাহাড়, সাদা পাহাড়, নীল পাহাড়, সবুজ পাহাড়, ফিরোজা পাহাড়, হলুদ পাহাড়-আরও কতো রঙের পাহাড় যে আছে না দেখলে বোঝানো কঠিন। এই পাহাড়ের উচ্চতায় তৈরি করা রাস্তা ধরেই যেতে হয় গিলানের দিকে,কাস্পিয়ানের তীরে। এতো উঁচুতে রাস্তার ওপর মেঘেরা যদি উচ্ছ্বাস বিলিয়ে দেয় তাতে কি অবাক হবার কিছু আছে? আমরা অবাক হই নি মোটেও। কুহিন পেরিয়ে সামনে যেতেই মেঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গাড়ি পার্ক করলাম। রেস্টুরেন্টে নাশতা সেরে নিয়ে মেঘের ভেতর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গরম চা খেলাম। পাটি আর বিছানো হলো না। মেঘের শিকর গায়ে মেখে নিলাম। আর্দ্র সে আদর চাদরের মতো জড়িয়ে গায় এগিয়ে গেলাম সামনের দিকে। আরও কতো যে বিস্ময় অপেক্ষা করছে সামনে সেকথা আজ নাই বা বললাম।*
www.kobitaabbritti.com