খুব ক্লান্ত, তাই একটু আগে ভাগেই ঘুমিয়ে পড়লেন । শেষ রাতের দিকে এসে মাহবুব সাহেবের ঘুম ভেংগে গেল । চোখ না খুলেই তিনি অভ্যাসবশত বাঁ দিকে কাৎ হয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরলেন । খানিক বাদেই বুঝলেন জড়িয়ে ধরা বস্তুটা নরম তুলতুলে, কিন্তু নিষ্প্রাণ । ঘুম জড়ানো কন্ঠেই বললেন, 'স্বপ্না, কোথায় গেলে' ? কোন জবাব না পেয়ে চোখ খুললেন, দেখলেন স্বপ্নার বালিশটা তিনি জড়িয়ে ধরে আছেন, বিছানায় স্বপ্না নেই । চকিতেই তিনি সম্ভিত ফিরে পেলেন । স্বপ্নাতো আজ বাসায় নেই, আদমহাটি গেছে ।
আদমহাটি মাহবুব সাহেবের শ্বশুড় বাড়ি । শ্যালকের বিয়ের আলাপ চলছে, পাত্রীপক্ষ তাকে দেখতে আসবে । মাহবুব সাহেবের সম্মতি নিয়েই তারিখ ঠিক হয়েছিল । কিন্তু হঠাৎ করে অফিসে জরুরি কাজ পড়ে যাওয়ায় তার যাওয়া হয়নি । স্বপ্না একাই গেছে, দুদিন পরে মাহবুব সাহেব আদমহাটি গিয়ে তাকে নিয়ে আসবে ।
টিভিটা তখনো চলছে, কি একটা যেন মুভি দেখাচ্ছে হরর টাইপের । লোকজনের বিকট শোরগোল, ভয়ার্ত চিৎকার আর কড়া ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের উঠানামা । ঘুমানোর আগে টিভিটা বন্ধ করতে ভূলে গিয়েছিলেন হয়ত । বালিশের পাশ থেকে রিমোট নিয়ে টিভিটা বন্ধ করলেন । ফ্যান চলছে, তবু যেন বেশ গরম লাগছে । মোবাইলটা হাতে নিয়ে সময় দেখে নিলেন, রাত ৪টা ১৭ বাজে । মাহবুব সাহেব বিছানা থেকে নেমে ফ্যানের স্পীড বাড়িয়ে দিলেন । ভীষন তেষ্টা পেয়েছে, তাই কিচেনে গিয়ে ফ্রীজ খুলে বোতল থেকে ঠান্ডা পানি খেলেন । বাসার সব গুলো রুমের বাতি তখনও জ্বলছে, এক এক করে সবগুলোর সূইচ অফ করে দিলেন ।
শোবার ঘরে এসে বাথরুমে ঢুকে হালকা হয়ে এলেন । তারপর টিভি'র প্লাগ সূইচ অফ করতে গেলেন । সূইচটা ধরা মাত্রই একটা শক খেলেন । মনে হলো মুহুর্তের মাঝে একটা বৈদ্যুতিক ঢেউ বয়ে গেলো সারা শরীরে । ডান হাতের তর্জনীতে ব্যাথা লাগছে, সামনে এনে দেখলেন আংগুল লাল হয়ে গেছে । খুব বিরক্ত হলেন, কালকেই ইলেকট্রিক মিস্ত্রী এনে পুরো বাসার লাইন চেক করাতে হবে । তারপর শোবার ঘরের বাতি নিভিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লেন ।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই আবার টিভি'র প্লাগ সূইচটা দেখে নিলেন, অনেকটা পুড়ে যাওয়ার মত কালচে হয়ে গেছে । বাথরুমে ঢুকতে গিয়ে দেখলেন ইলেকট্রিসিটি নেই । ভাবলেন, গত রাতের শক সর্কিটের জন্য কোন সমস্যা হলোনা তো আবার । তখনই মোবাইলটা নিয়ে পাড়ার পরিচিত ইলেকট্রিক মিস্ত্রী কাদের মিয়া কে ফোন দিলেন । কাদের মিয়া বললো, 'স্যার এখনতো কারেন্ট নাই, রাতে বাসায় ফিরার সময় আমারে ফোন দিয়েন । ঠিক করে দিয়া যামুনে' । মাহবুব সাহেব বললেন, 'কাদের মিয়া, ইলেকট্রিসিটি কখন আসবে জানো নাকি' ? কাদের মিয়া বললো, 'স্যার কালকে রাতে ট্রান্সফরমারে আগুন লাগার পরই লাইন বন্ধ করে দিছে । রাত সাড়ে বারোটার দিকে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন এসে ট্রান্সফরমার খুলে নিয়ে গেছে । আজকে দুপুরের আগে কারেন্ট আইবো বইলা মনে হয়না' ।
কাদের মিয়ার কথা শুনতে শুনতেই মাহবুব সাহেবের শরীরে গতকাল রাতের মতই বিদ্যুৎ খেলে গেল । ফোন কেটে দিয়ে তিনি বিছানায় বসলেন । শরীর বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝরতে লাগল । রাত বারোটায় ট্রান্সফরমার পুড়ে গিয়ে ইলেকট্রিসিটি বন্ধ হলে শেষ রাত চারটায় তিনি শক খেলেন কিভাবে ? লাইট ফ্যান টিভি সবই তো চলছিল । হঠাৎ করে গত কাল রাতে ঘুম ভাংগার পর টিভিতে চলতে থাকা হরর মুভি'র দৃশ্যটার কথা মনে হল । তিনি হাতের তর্জনী আঙুলের দিকে তাকালেন, তখনো লাল হয়ে আছে ।
মাহবুব সাহেব আর কিছু ভাবতে পারছেন না । মোবাইল নিয়ে আবার ফোন দিলেন, ওপাশ থেকে স্বপ্না রিপ্লাই দিলো । মাহবুব সাহেব ইতস্তত ভাবে বললেন, 'হ্যালো স্বপ্না শোন, তুমি আজকেই চলে আস । আমার শরীরটা ভাল লাগছেনা' । এই কথা বলে তিনি কল না কেটেই মোবাইলটা রেখে দিলেন । মোবাইলে তখনও স্বপ্নার কন্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে, 'হ্যালো হ্যালো মাহবুব.. হ্যালো কথা বলছনা কেন, হ্যালো... ।
***********************************************
ছবি : গুগল মামা ।