somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

:-& :-& গত কাল রাতে ইলেকট্রিসিটি ছিল না :-& :-& :-&

১৭ ই নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



খুব ক্লান্ত, তাই একটু আগে ভাগেই ঘুমিয়ে পড়লেন । শেষ রাতের দিকে এসে মাহবুব সাহেবের ঘুম ভেংগে গেল । চোখ না খুলেই তিনি অভ্যাসবশত বাঁ দিকে কাৎ হয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরলেন । খানিক বাদেই বুঝলেন জড়িয়ে ধরা বস্তুটা নরম তুলতুলে, কিন্তু নিষ্প্রাণ । ঘুম জড়ানো কন্ঠেই বললেন, 'স্বপ্না, কোথায় গেলে' ? কোন জবাব না পেয়ে চোখ খুললেন, দেখলেন স্বপ্নার বালিশটা তিনি জড়িয়ে ধরে আছেন, বিছানায় স্বপ্না নেই । চকিতেই তিনি সম্ভিত ফিরে পেলেন । স্বপ্নাতো আজ বাসায় নেই, আদমহাটি গেছে ।

আদমহাটি মাহবুব সাহেবের শ্বশুড় বাড়ি । শ্যালকের বিয়ের আলাপ চলছে, পাত্রীপক্ষ তাকে দেখতে আসবে । মাহবুব সাহেবের সম্মতি নিয়েই তারিখ ঠিক হয়েছিল । কিন্তু হঠাৎ করে অফিসে জরুরি কাজ পড়ে যাওয়ায় তার যাওয়া হয়নি । স্বপ্না একাই গেছে, দুদিন পরে মাহবুব সাহেব আদমহাটি গিয়ে তাকে নিয়ে আসবে ।

টিভিটা তখনো চলছে, কি একটা যেন মুভি দেখাচ্ছে হরর টাইপের । লোকজনের বিকট শোরগোল, ভয়ার্ত চিৎকার আর কড়া ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের উঠানামা । ঘুমানোর আগে টিভিটা বন্ধ করতে ভূলে গিয়েছিলেন হয়ত । বালিশের পাশ থেকে রিমোট নিয়ে টিভিটা বন্ধ করলেন । ফ্যান চলছে, তবু যেন বেশ গরম লাগছে । মোবাইলটা হাতে নিয়ে সময় দেখে নিলেন, রাত ৪টা ১৭ বাজে । মাহবুব সাহেব বিছানা থেকে নেমে ফ্যানের স্পীড বাড়িয়ে দিলেন । ভীষন তেষ্টা পেয়েছে, তাই কিচেনে গিয়ে ফ্রীজ খুলে বোতল থেকে ঠান্ডা পানি খেলেন । বাসার সব গুলো রুমের বাতি তখনও জ্বলছে, এক এক করে সবগুলোর সূইচ অফ করে দিলেন ।

শোবার ঘরে এসে বাথরুমে ঢুকে হালকা হয়ে এলেন । তারপর টিভি'র প্লাগ সূইচ অফ করতে গেলেন । সূইচটা ধরা মাত্রই একটা শক খেলেন । মনে হলো মুহুর্তের মাঝে একটা বৈদ্যুতিক ঢেউ বয়ে গেলো সারা শরীরে । ডান হাতের তর্জনীতে ব্যাথা লাগছে, সামনে এনে দেখলেন আংগুল লাল হয়ে গেছে । খুব বিরক্ত হলেন, কালকেই ইলেকট্রিক মিস্ত্রী এনে পুরো বাসার লাইন চেক করাতে হবে । তারপর শোবার ঘরের বাতি নিভিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লেন ।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই আবার টিভি'র প্লাগ সূইচটা দেখে নিলেন, অনেকটা পুড়ে যাওয়ার মত কালচে হয়ে গেছে । বাথরুমে ঢুকতে গিয়ে দেখলেন ইলেকট্রিসিটি নেই । ভাবলেন, গত রাতের শক সর্কিটের জন্য কোন সমস্যা হলোনা তো আবার । তখনই মোবাইলটা নিয়ে পাড়ার পরিচিত ইলেকট্রিক মিস্ত্রী কাদের মিয়া কে ফোন দিলেন । কাদের মিয়া বললো, 'স্যার এখনতো কারেন্ট নাই, রাতে বাসায় ফিরার সময় আমারে ফোন দিয়েন । ঠিক করে দিয়া যামুনে' । মাহবুব সাহেব বললেন, 'কাদের মিয়া, ইলেকট্রিসিটি কখন আসবে জানো নাকি' ? কাদের মিয়া বললো, 'স্যার কালকে রাতে ট্রান্সফরমারে আগুন লাগার পরই লাইন বন্ধ করে দিছে । রাত সাড়ে বারোটার দিকে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন এসে ট্রান্সফরমার খুলে নিয়ে গেছে । আজকে দুপুরের আগে কারেন্ট আইবো বইলা মনে হয়না' ।

কাদের মিয়ার কথা শুনতে শুনতেই মাহবুব সাহেবের শরীরে গতকাল রাতের মতই বিদ্যুৎ খেলে গেল । ফোন কেটে দিয়ে তিনি বিছানায় বসলেন । শরীর বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝরতে লাগল । রাত বারোটায় ট্রান্সফরমার পুড়ে গিয়ে ইলেকট্রিসিটি বন্ধ হলে শেষ রাত চারটায় তিনি শক খেলেন কিভাবে ? লাইট ফ্যান টিভি সবই তো চলছিল । হঠাৎ করে গত কাল রাতে ঘুম ভাংগার পর টিভিতে চলতে থাকা হরর মুভি'র দৃশ্যটার কথা মনে হল । তিনি হাতের তর্জনী আঙুলের দিকে তাকালেন, তখনো লাল হয়ে আছে ।

মাহবুব সাহেব আর কিছু ভাবতে পারছেন না । মোবাইল নিয়ে আবার ফোন দিলেন, ওপাশ থেকে স্বপ্না রিপ্লাই দিলো । মাহবুব সাহেব ইতস্তত ভাবে বললেন, 'হ্যালো স্বপ্না শোন, তুমি আজকেই চলে আস । আমার শরীরটা ভাল লাগছেনা' । এই কথা বলে তিনি কল না কেটেই মোবাইলটা রেখে দিলেন । মোবাইলে তখনও স্বপ্নার কন্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে, 'হ্যালো হ্যালো মাহবুব.. হ্যালো কথা বলছনা কেন, হ্যালো... ।

***********************************************

ছবি : গুগল মামা ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:২২
৩০টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×