somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সব কিছু ভেঙ্গে পড়ে স্নানঘাটের সিঁড়িতে ।

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দরোজা খুলে বাসায় ঢুকেই হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো রাজিয়া । সপ্তাহের শেষ কর্ম দিবসের এই বিকালটায় অফিস থেকে বাসায় ফিরে খুব রিলাক্স লাগছে তার । সারা সপ্তাহ জুড়ে ঝক্বি ঝামেলা কম যায়নি । নতুন চাকরি, নতুন বাসার সবকিছু গুছিয়ে নেয়া সব মিলিয়ে দারুন ব্যস্ত কটা দিন পার হলো । চোখ দুটো বন্ধ করে গভীর একটা নিঃশ্বাস নিলো রাজিয়া । জীবনে প্রথম বারের মতো স্বাধীনতার আনন্দ সে উপভোগ করতে শুরু করেছে । আহ্ স্বাধীনতা, নিজের মত করে বেঁচে থাকার স্বাধীনতা ।

বাবা-মায়ের সবচেয়ে ছোট সবচেয়ে আদরের কন্যা রাজিয়া সুলতানার জীবনের গল্প অতি সরল, আটপৌড়ে । মোটামোটি স্বচ্ছল পারিবারের পাঁচ ভাই-বোনের ছোটটি হিসাবে সবার আদরে কোলে পিঠেই সে মানুষ হয়েছে । কৈশোরে দুরন্ত পনার কোন শেষ ছিলোনা । নিজেদের বাড়িতেতো বটেই, আশেপাশে সব বাড়ির কুলবড়ই পেয়ারার খোজ ছিলো তার নখদর্পনে । কারো বাড়ির গাছ থেকে রাজিয়া ফল পেড়ে নিয়ে এসেছে, এটা তার জন্য কোন ব্যাপার ছিলো না । কারন আশেপাশের প্রতিবেশি সবার কাছেই রাজিয়া ছিলো প্রিয় মুখ । কালো একহারা গড়নের এই দস্যি মেয়েটির মুখটা ছিলো অতি মায়াবী । আর ছিলো সুন্দর চকচকে মুক্তোর মতো দাঁত । রাজিয়ার মা বলতেন যাঁতি'র দাঁত । শক্ত কাচা পেয়ারা, আস্ত সুপারী থেকে কুলবড়ইয়ের বিচি পর্যন্ত নিমিষেই খানখান ।

অষ্টম শ্রেনীতে পড়ার সময় থেকেই তার দস্যিপনা একটু একটু করে কমতে থাকে । বাবা-মা দুজনেই অসুস্থ তখন, আর তাদের সেবা করার পবিত্র দায়িত্ব হাসি মুখেই গ্রহন করে রাজিয়া । কিছুদিনের ভেতরেই বাবা-মা দুজনেই মারা যাবার পর আরো চুপটি মেরে যায় সে । ভাইদের সংসারে রাজিয়া খুব একটা খারাপ থাকেনি, তবুও দিনকে দিন নিজেকে গুটিয়ে রাখে । স্কুল জীবন শেষ করে কলেজে ভর্তি হয়, কোন ঘটনা-দুর্ঘটনা ছাড়াই উচ্চমাধ্যমিকও পাশ করে যায় । কলেজে দু-চারজন বান্ধবী ছাড়া আর কারো সাথে তার তেমন ঘনিষ্টতা ছিলো না । ছেলেগুলোও তার পেছনে খুব একটা লাগেনি । হয়ত কালো বলে কিংবা হয়ত তার চুপচাপ অন্তর্মুখি স্বভাবের জন্য । তবুও ইন্টার পরীক্ষার আগে আগে রাজিয়ার একটি ছেলেকে মনে ধরে যায় । ছেলেটিও রাজিয়ার মতই চুপচাপ শান্ত কিন্তু ছাত্র হিসাবে ডাকসাইটে । ভালো লাগার ব্যাপারটি রাজিয়ার মনেই থেকে যায়, প্রকাশ্যে কখনও ব্যক্ত করেনি ।

ডিগ্রীতে ভর্তি হবার পর ক্লাসের ছেলে-মেয়েরা আগের চেয়ে অনেক ঘনিষ্ট, অনেক বেশি বন্ধুভাবাপন্ন হয়ে উঠে । রাজিয়াও বন্ধুদের আড্ডায় অংশগ্রহন করে । কিন্তু তার মনে দীর্ঘশ্বাস বয়ে যায় ঐ ছেলেটির জন্য, ভালো রেজাল্ট করে ছেলেটি ইতিমধ্যে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে চলে গেছে । ছেলেটি হয়ত কোনদিন জানতেও পারবেনা দুরে থেকে একটি মেয়ে তার জন্য এখনও নিশ্বাস ফেলে । এভাবেই দিন যায়, কিন্তু এই কালো চুপচাপ মেয়েটির জীবনে কোন রোমান্স আসেনা । হ্যাঁ অবশেষে এসেছে, কলেজের বাংলার স্যার একদিন তাকে একাকি পেয়ে বলেছিলেন, "তুমি বনলতা সেন কবিতা পড়েছো ?" রাজিয়া অবাক বিষ্ময়ে স্যারের দিকে তাকিয়ে ছিলো । স্যার তখন আবৃত্তি করছিলেন, "চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তির কারুকার্য.. মনে হয় জীবনানন্দ তোমার কথা ভেবেই এটা লিখেছেন ।" স্যারের কথা শুনে রাজিয়ার সারা শরীরে বয়ে যায় আনন্দের বিদ্যুৎ প্রবাহ । অসম্ভব ভালো লাগে তার, লজ্জায় চোখ দুটো ঢেকে বাকী ক্লাস না করেই বাড়ি চলে আসে । কিন্তু বাড়িতে এসে তার স্যারের উপর খুব রাগ হয় । স্যার হলো বাবার মতো, আর তাছাড়া স্যারের নিজেরো বউ-বাচ্চা আছে । আর সেই স্যার কিনা আমাকে, ছিঃ.. ।

কিন্তু আজ এই সুন্দর বিকেলে স্যারের উপর রাজিয়ার কোন রাগ থাকে না । অনেকটা ঐ দিনের ভালোলাগার অনুভূতি ফিরে আসে তার হৃদয়ে । 'জীবনটা একেবারেই ব্যর্থ হয়নি রাজিয়া, অন্তত একজন পুরুষ তোমাকে কবিতার বনলতা সেনের সাথে তুলনা করেছে' । , "রাজিয়া, তুমি আর কি চাও ? ডিগ্রী পাশ করে আরো দুই বছর তুমি ভাই-ভাবিদের অন্ন ধ্বংশ করেছো । ভাইয়েরা প্রানপনে চেষ্টা করেছে তোমাকে বিয়ে দিতে, কিন্তু তুমি কালো বলে একটা পুরুষও আসেনি তোমাকে বিয়ে করতে । আস্তে আস্তে তোমার নিজেকে মনে হতে থাকে হীন, ভাইদের সংসারে তুমি বোঝা । একটা যেনতেন ছেলের কাছে তোমাকে গছিয়ে দিতে পারলেই তারা বেঁচে যায় । কিন্তু ভাইদের দায়মুক্তি দিতে কোন রাজকুমার এগিয়ে আসেনি । শেষে তুমি নিজেই তোমার মুক্তির ব্যবস্থা নিয়েছো । একটা চাকরি নিয়ে শহরে এসেছো, দুর সম্পর্কের এক মামার বাসায় সিংগেল ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে তোমার নবজীবন শুরু করেছো । রাজিয়া সুলতানা, তুমি জীবনে আর কি চাও ??"

রমিজ মামারা এই শহরের ডাকাবুকা মানুষ । শহরের এক প্রান্তে দেয়াল ঘেরা বিশাল বাড়ি । মুল পাকা বাড়িতে রমিজ মামা তার পরিবার নিয়ে বাস করেন । সামনের আটচালা টিনের বাংলোঘর ছিলো তার বাবার আমলের বৈঠকখানা, এখন দেয়াল পাকা করে দুই অংশে ভাড়া দেয়া হয়েছে । বড় অংশে থাকে একটি পরিবার, স্বামী-স্ত্রী দুজনেই একটা এনজিওতে চাকরি করে । আর এক বেডরুম-রান্নাঘর-স্নানঘর নিয়ে রাজিয়ার সুখের সংসার । মুল বাড়ির পেছনে শান বাঁধানো পুকুর, এক সময় এখানে সবাই গোছল করলেও এখন শুধু মাছ চাষ হয় । স্নানঘর চলে এসেছে মুল ঘরে । এই রমিজ মামা রাজিয়ার মায়ের দুর সম্পর্কের ভাই । এই চাকরিটা হওয়ার পর রাজিয়ার বড়ভাই মামার সাথে যোগাযোগ করে এই ঘর ভাড়া নেন । মামা-মামী দুজনেই রাজিয়ার দেখাশোনা করেন । বিশেষ করে বেদৌরা মামীর কথা না বললেই নয় । রাজিয়ার মায়ের বয়সীই হবেন, এখনও এতো সুন্দর যে চোখ ফেরানো যায় না । ভালোমন্দ যাই রান্না হোক রাজিয়াকে দিয়ে যান । বিকেলে আছরের নামাজের পর প্রতিবেশি মহিলারা তার কাছে আসেন, বেদৌরা মামী সুন্দর করে কোরান-আক্বিদা নিয়ে কথা বলেন । রাজিয়াও বিকালে মামীর মজলিসে যাওয়া শুরু করেছে । মামী এতো সুন্দর করে বিবি আয়েশার পতি ভক্তির গল্প বলেন যেন পুরো ঘটনা চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠে । আর তখন মামীর মুখটা হয়ে উঠে পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল, ঝকঝকে । উপস্থিত মহিলারা সবাই মামীর প্রশংসায় মেতে উঠেন, সেই সাথে দায়িত্ববান স্বামী হিসাবে মামারও প্রশংসা জোটে । প্রশংসা শুনে বেদৌরা মামীর রক্তিম গাল আরো লালাভ হয়ে উঠে ।

আজকে আর রান্না-বান্নার ঝামেলা নেই । এমনিতে বেদৌরা মামীর সাথে মাগরিবের নামাজ পড়ে রাজিয়া নিজের ঘরে চলে আসে । কিন্তু আজকে মামী তাকে রেখে দেন, নিজের হাতে রান্না করে রাজিয়াকে খাইয়ে দেন । তারপর নিজের ঘরে এসে বুঝতে পারে পাশের ঘরের টুনা-টুনি এখনো ফিরেনি । ঘরের দেয়াল পাকা হলেও উপরে টিন, তাই পাশের ঘরের সব কিছুই শুনা যায় । বিশেষ করে অফিস থেকে ফিরেই শুরু হয় তাদের বারোয়ারি আলাপ । রাজিয়া শুনতে না চাইলেও ঐ বাসার প্রতিটা কথাই তার কানে আসে । বেদৌরা মামী বলেন, "হাদিসে আছে যাহারা পরের গোপন কথা শুনিবার উদ্দেশ্যে বেড়ার পাশে কান লাগাইয়া রাখে, কিয়ামতের দিন তাহাদের কানে গরম সীসা ঢালিয়া দেয়া হইবে"।

বেদৌরা মামীর হাদিসের বয়ান মনে আসিতে নিজের অজান্তেই রাজিয়া হাত দিয়ে তার কান দুটো ঢেকে দেয় । আর মনে মনে বলে, আল্লাহ তুমি স্বাক্ষী, গোপন কথা শুনিবার উদ্দেশ্যে আমি বেড়ার কান পাতি নাই, আমি এমনি এমনি শুনি । আর ওরা যখন ঝগড়া করে তখন তিন বাড়ি দুরে থেকেও তা শুনা যায় । ওদের ঝগড়া শুনতে রাজিয়ার মজা লাগে প্রথমদিকে ভদ্রলোকের কথায় তেজ বেশি মাত্রায় থাকলেও আস্তে আস্তে তা ক্রমশ ম্রীয়মান হতে থাকে, আর যুদ্ধক্ষেত্রে ভদ্রমহিলার একক জয় নিশ্চিত । আর এই সিচুয়েশনটাই রাজিয়া বেশি উপভোগ করে ।

এভাবে দিন গিয়ে মাস পার হয় । মামা-মামীর আদর আর পাশের ঘরের দম্পত্তির সাথে খোশগল্প করে রাজিয়ার দিন সুখেই কাটে । সারাদিন অফিসের কাজের চাপ সেড়ে বিকালে বাসায় যাওয়ার জন্য তার মন আকুপাকু করতে থাকে । আজ বিকালেও বেদৌরা মামীর বাসায় মজলিস বসেছে । বেদৌরা মামী তার সুললিত কন্ঠে বয়ান দিচ্ছেন আর উপস্থিত মহিলারা মাথা নেড়ে, কখনও সুবাহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ বলে মামীকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন । মামী বলছেন, " হযরত রাসুলুল্লাহ (দঃ) মাঝে মাঝে তাহার প্রিয়তমা পত্নী হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা (রাঃ) এর সহিত দৌড় প্রতিযোগিতায় নামিতেন । একদা দুইবারের দৌড়ে প্রথমবার হযরত (দঃ) জয়ী হইলেন এবং দ্বিতীয়বার হযরত আয়েশা (রাঃ) জয়ী হইলেন । তখন হযরত আয়েশা (রাঃ) বলিলেন এইবারে প্রথমবারের প্রতিশোধ হইলো ।" মহিলারা সমস্বরে সুবাহানাল্লাহ বলিলেন । এবার বেদৌরা মামী স্বামীর প্রতি স্ত্রী'র কর্তব্য নিয়ে বয়ান দিতে লাগলেন । "হাদিসে আছে যে স্বামী যদি কুষ্ঠরোগগ্রস্তও হয় আর তাহার ক্ষতস্থানসমূহের পূঁজ ইত্যাদি স্ত্রী নিজ জিহবার সাহায্যে চাটিয়া পরিষ্কার করে, তাহাতেও স্ত্রী স্বামীর হক আদায় করিতে পারিবেনা । স্বামী সেবার কাজে যদি স্ত্রী নিজের 'জান কোরবান' করিতেও হয় তাহাতেও তাহার কুন্ঠিত হওয়া উচিৎ নয় ।" এই ক্ষনে অন্যান্য মহিলারাও বেদৌরা মামীর স্বামীভক্তি এবং রমিজ মামার স্ত্রী'র প্রতি গত পঁচিশ বছরের অকৃত্তিম ভালোবাসার চাক্ষুস উদাহরন তুলিয়া ধরিলেন । অতঃপর মোনাজাতের মাধ্যমে আজকের মতো মজলিস সমাপ্ত হলো ।

বেদৌরা মামীর মজলিস থেকে নিজের ঘরে ফিরে রাজিয়ার খুব ক্লান্তি লাগছে । পাশের ঘরের ওরা ওদের দেশের বাড়ি গেছে । একাএকা বিছানায় কিছুক্ষন গড়াগড়ি করার পর একসময় ঘুমিয়ে পড়লো । কতক্ষন ঘুমালো নিজেও জানেনা । হঠাৎ দরোজার বাহির থেকে রাজিয়া রাজিয়া ডাক শুনে তার ঘুম ভেংগে গেলো । তখন রাত কয়টা বাজে তাও বুঝতে পারছেনা, বিছানা থেকে উঠে ঘুমের ঘোরেই দরোজা খুলে দিলো । কিন্তু তার ঘোর নিমিষেই কেটে গেলো যখন আগুন্তক তাকে এক ঝটকায় ঠেলে ঘরে ঢুকে দরোজা বন্ধ করে দিলো । ঘটনার আকষ্মিকতা আর ভয়ে চিৎকার দেয়ার সাথে সাথেই আগুন্তক প্রচন্ড জোড়ে তার মুখ চেপে ধরলো । রাজিয়া সর্বশক্তি দিয়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে যায়, কিন্তু হায়েনা রুপি হিংস্র পশুর পাশবিক শক্তির কাছে সে ক্রমশ পরাজিত হতে থাকে । এক সময় রাজিয়ার সব শক্তি স্থিমিত হয়ে আসে এবং হায়েনা রাজিয়ার উপর পুরো নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেয় । শিকার এতো সহজে বাগে আনতে পারার উল্লাসে হায়েনা দিকবিদিক হারিয়ে ফেলে । স্থিমিত হয়ে পড়া নিরিহ শিকারের উপর কামক্রোব্ধ হায়েনা হামলে পড়তে থাকে, খুবলে নিতে থাকে শিকারের কাপড়, মাংস । প্রচন্ড উল্লাসে বোধহীন হায়েনা খেয়ালই করেনি রাজিয়ার অস্বাভাবিক স্থিমিত হয়ে পড়ার ফাঁদ । সময় সুযোগ মতো রাজিয়া হঠাৎ লাফিয়ে উঠে প্রচন্ড আক্রোশে কামড়ে ধরে হায়েনার উত্তুংগ লিংগ । রাজিয়ার 'যাঁতি'র মতো তীব্র শক্ত দাঁতের এক কামড়ে লুটিয়ে পরে হায়েনার শরীর, সাদা চকচকে দাঁত হায়েনার রক্ত মেখে হয়ে উঠে প্রতিশোধী ভাম্পায়ার । হায়েনা কোন রকম ক্ষতস্থান দুহাতে চেপে ধরে কুঁকাতে কুঁকাতে দৌড়ে পালায় ।

ঝড়ের বেগে আসা হিংস্র আক্রমনটা সামলে নিয়ে দরোজা বন্ধ করে রাজিয়া বিছানার উপর বসে । কতক্ষন এভাবে বসে থাকে তা নিজেও জানেনা । নিজের উপর তীব্র ধিক্বার আর রাগ জমে উঠে । এক সময় ভাবে নিজের জীবনটা নিজেই শেষ করে দেয়, কিন্তু তাও পারেনা । শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখে লেগে থাকা হায়েনার রক্ত মুছে নেয় । এভাবেই বসে বসে এক সময় ভোর হয়ে যায় । গোছল করে পরিষ্কার হয়ে নেয়া উচিৎ, কিন্তু স্নানঘরে যেতে তার মন চায় না । এক সময় বিছানা থেকে নেমে তোয়ালেটা হাতে নিয়ে দরোজা খোলে । সূর্য তখনো পুরোপুরি উঠেনি, কিন্তু পরিষ্কার ভোরের আলো ফোটে উঠেছে । বাইরে বের হয়েই দেখতে পায় বাড়ির নেড়ি কুত্তাটা বারান্দায় ছোপ ছোপ জমে থাকা রক্ত চেটে খেয়ে নিচ্ছে । কোন দিকে না তাকিয়ে রাজিয়া দৃপ্ত পায়ে হেটে যায় পুকুর ঘাটের দিকে । মুল বাড়ির পেছনের বারান্দায় আবছা অন্ধকারে কে যেন দাড়িয়ে আছে, সেদিকে ভ্রুকুটি না করে রাজিয়া স্নানঘাটের বাধানো সিঁড়ি বেয়ে নেমে যায় পুকুরে । পুকুরের পানিতে অনেক্ষন ডুব দিয়ে থাকে । খুব ভালো লাগে রাজিয়ার, মনে হচ্ছে যেন তার উপর বয়ে যাওয়া সমস্ত পাপ ধুয়ে নিচ্ছে পুকুরের স্বচ্ছ জলে । এক সময় পানি থেকে উঠে আসে, শরীরে তোয়ালে পেচিয়ে ভেজা শাড়ি নিয়ে তার ঘরের দিকে হাটতে থাকে । সামনে একটু আগাতেই পরিষ্কার দেখতে পায় বেদৌরা মামী তীক্ষ নজরে তাকিয়ে আছে তার দিকে । রাজিয়া থমকে যায় । এতক্ষনে নিশ্চয়ই বেদৌরা মামী ঘটনা জেনে গেছে । আর তার প্রিয় স্বামীর লিংগ হারানোর কথা তার অজানা থাকার কথা নয় । শেষ রাতে এ্যামব্যুলেন্স আসার শব্দ রাজিয়া নিজেও শুনেছে । রাজিয়া বেদৌরা মামীকে ভালো করে দেখে নেয় । না, বেদৌরা মামীর অবয়বে রাগ বা ক্রোধের কোন চিহ্ন নেই । দেখে মনে হচ্ছে যেন ঝড়ে বিধ্বস্ত একটা মানুষ । পঁচিশ বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তোলা তার ভালোবাসার মোকাম আজ ভেংগে চুরমার হয়ে গেছে । বেদৌরা মামীর বিধ্বস্ত চোখের দিকে তাকিয়ে রাজিয়ার খুব করুনা হয় । আর দাড়িয়ে না থেকে সে নিজের ঘরের দিকে হাটা শুরু করে ।

হাটতে হাটতে রাজিয়ার চোখে বারবার ভেসে উঠে বেদৌরা মামীর করুন চাহনী । হঠাৎ করে রাজিয়া যেন আরো সাহসী হয়ে উঠে । দৃপ্ত প্রত্যয়ে সে এগিয়ে যায় সামনের দিকে । রাজিয়া মনে মনে শপথ নেয়, তাকে বেঁচে থাকতে হবে । সংসারে যুদ্ধ করেই তাকে একটা সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে হবে । হয়ত এই শহর ছেড়ে সে আজই চলে যাবে অন্য কোথাও, অন্য কোন শহরে ।




**************************************************

ব্লগে বেশিদিন হয়নি, তাই ইন্টারেকশনও কম ছিলো । ভেবে রেখেছিলাম যদি কখনও ভালো কোন গল্প লিখতে পারি, তাঁকে উৎসর্গ করে চমকে দিবো। কিন্তু জোছনা রাতে মুগ্ধতা ছড়াতে ব্লগার 'ইমন জুবায়ের' চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে অসীমের পথে । যদি কখনও ভালো কিছু লিখতে পারি, আমার লেখাগুলো খুঁজে ফিরবে সেই মহান মানুষটাকে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১১:২০
৪৬টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×