somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা সাহিত্যের চিরায়ত 'লুল' নায়কেরা : 'কুবের মাঝি' পর্ব । ;) :P

০৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই পর্বে আমি বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান লেখক মানিক বন্দোপাধ্যায়ের একটি জনপ্রিয় এবং কালজয়ী উপন্যাসের অবিনশ্বর চরিত্রের 'লুলমর্টেম' করিবো । তবে 'লুল' শব্দটাকে 'রসিক প্রেমিক' 'রসিক মানুষ' কিংবা কিন্চিত 'আলু-দোষ পূর্ণ প্রেমিক' জাতীয় ধনাত্মক অর্থবোধে গ্রহন করিবার জন্য অনুরোধ করিবো । প্রিয় 'মানিক দা'র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা পূর্বক আমি ইহা শুরু করিলাম ।

কুবের মাঝি : পদ্মা নদীর মাঝি

আমরা জানি মানিক বন্দোপাধ্যায় মার্কসবাদের শিষ্যত্ব গ্রহন করেছিলেন । কিন্তু তিনি তার আদি গুরু ফ্রয়েড সাহেবের কথা কখনও ভূলিতে পারিতেন না । 'কমিউনিজম' তার স্বপন-জাগরন-চিন্তা-চেতনায় শিকড় গাড়িলেও তিনি কখনোই উপেক্ষা করিতে পারেন নি ফ্রয়েডীয় দর্শনের মূল চেতনা- যৌন-জৈব চাহিদার কথা । 'পদ্মা নদীর মাঝি' উপন্যাসে তাই আমরা দেখি, মসৃন ত্বকের পঙ্গুবধু মালা কুবের মাঝিকে আকর্ষন করিলেও যৌবনাবতী শ্যালিকা কপিলার প্রতি অবৈধ ভালোবাসা আর সম্পর্ককে সে কিছুতেই অগ্রাহ্য করিতে পারেনা । ;) =p~

পদ্মার মতোই রহস্যময়ী কপিলা কখনো অবাধ্য বাঁশের কন্চির মতো নুয়ে পড়েছে কুবেরের দিকে । আবার কখনো সোজা হইয়া কুবেরের কাছ হইতে সরিয়া গিয়াছে তার নিজের স্বামীর দিকে । পদ্মার গভীরতার মতোই কপিলার মন আর দেহের তল পাওয়া কুবেরের মতো পাকা মাঝিরও অসাধ্য হইয়া যায় । :P :P

প্রিয় লুল ভ্রাতা-ভগিনিরা আমরা এখন উপন্যাসের চতুর্থ পর্বে প্রবেশ করিবো, যেখানে অকাল বানের পানির লাহান যৌবনাবতী কপিলার আগমন । কুবেরের শ্বশুড়ের গ্রাম আকষ্মিক বন্যায় তলিয়া যায় । তাহাদের সৌজন্য খোজ-খবর নিতে গিয়ে সদ্য স্বামী-খেদানো সদা হাস্য-লাস্য শ্যালিকা কপিলার উপর নজর পড়ে কুবেরের । প্রথমে নির্দোষ চিরকালীন শ্যালিকা-দুলাভাইয়ের ঠাট্টা-মশকারা, ইশারা-ইংগিতেই ব্যাপারটা সীমিত ছিলো । কিন্তু কুবের কাঁচা বয়সী কপিলার "হাসছো কেনো মাঝি?" প্রশ্নের যুৎসই উত্তর কুলকিনারা করিতে পারিলোনা । এই বিভ্রান্তির মাঝেই যৌবনাবতী কপিলাকে নিয়ে কুবের স্বগৃহে প্রত্যার্পন করিলো । কিন্তু কি সর্বনাশ সংগী করিয়া নিয়া আসিলো তাহা কিছু বাদেই টের পাইবেন । :P :P

কুবের পদ্মার তীরে নিরালায় একাকী মৎস্য আহরনে ব্যস্ত । তখনই কপিলা তাহার পিছু পিছু আসিয়া এমনই অট্টহাসিতে ফাটিয়া পড়ে, কুবের ভয়ে আধমরা হইয়া যায় । তারপরেও কপিলা খুঁচানোর সুযোগ ছাড়েনা, "ডরাইছিলা হ ?? আরে পুরুষ" !! :-0 :!>

"আমারে নিবা মাঝি লগে" ? এই বলিয়া কুবেরের হাত ধরিয়া টানাটানি করিয়া ইশারায় দুরে কোথায় যেন লইয়া যাইতে বলে । পুরুষালীর আঁতে ঘা লাগা কুবের এইবার জ্বলিয়া উঠে । কপিলাকে জড়াইয়া ধরিয়া বাঁশের কন্চির মতো এদিক-ওদিক হেলাইয়া-দুলাইয়া কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে বলে, 'বজ্জাতি করস যদি, নদীতে চুবান দিমু কপিলা' । কপিলা কুবেরের পৌরুষের বাত্তি দপ করে পুরোপুরি জ্বালিয়া দিতে আবার বলে, 'আরে পুরুষ' !!
('পদ্মা নদীর মাঝি' সিনেমায় কুবের সত্য সত্য ব্লাউজলেস কপিলাকে পানিতে অনেকক্ষন ধরে চুবায় :P :P )

কপিলা শুধু লীলাখেলা আর মউজ-মস্তিতেই পটু নয়, কুবেরের ভাগ্যে অশেষ সেবাও জুটিতে থাকে । সেই সেবার সহিত সুযোগমত ঢলাঢলি-মাখামাখি, চিমটি কাটা, চুল-গোঁফে টান আর রহস্যময় হাস্য-পরিহাসের পর্ব চলিতেই থাকে । ;) B-))

এইরকম সুখে-আহলাদে দিন কাটিতে কাটিতে একদিন একখান বিষম ঝড় আসিয়া সারা গ্রাম লন্ডভন্ড করিয়া দিলো । সেই ঝড়ে কুবেরের মাইয়া গোপী পায়ে ব্যথা পাইলো । পায়ের ব্যাথা যখন চরমে উঠিলো তখন তাহাকে লইয়া একদিন কপিলা সমেত কুবের মহুকুমা হাসপাতালে রওয়ানা হইলো । এই পর্যন্ত পড়িয়া যাহারা বিরক্ত হইয়া ক্লান্ত চোখে-মুখে হাই তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাহাদের বলি, কাহিনিতো মাত্র শুরু হইলো । :P :P

গোপীকে হাসপাতালে ভর্তি করিতেই সন্ধ্যা ঘনাইয়া আসিলো । নানান ঘটনা শেষে কুবের তাহার মেয়েকে হাসপাতালে একা ফেলিয়া যাইবেনা বলিয়া মনস্থির করিলো । কপিলাও তাহার সাথে জেদ ধরিলো এই রাত্রি থাকিয়া যাইবে বলিয়া । কুবের তাহাতে রাজি না হইলে কপিলা তাহার মোক্ষম অস্ত্র প্রয়োগ করিলো, আরে পুরুষ !! কপিলার জেদের কাছে পরাভূত হইয়া অবশেষে কুবের তাহাকে রাখিতে রাজি হইলো । কিন্তু এই যৌবনাবতী অগ্নিকন্যার সাথে কুবের কোথায় রাত্রিযাপন করিবে ?? পরিশেষে অনেক ভাবিয়া কুবের একটা ঝুপড়ি হোটেলের রুম বুকিং করিলো । সেই রুমের পুরো মেঝে জুড়িয়া মাত্র একখান পাটি পাতা আছে । সেই পাটিতেই তাহারা একত্রে রাত্রিযাপন করিলো । ;) :#>

কুবের-কপিলা সারারাত ঝুপড়ি ঘরের এক পাটিতে কি কি করিয়াছিলো, তাহা আমি জানিনা । আমাকে এই প্রশ্ন করা নিতান্তই অমূলক এবং অবান্তর । মানিক বন্দোপাধ্যায় ইহা জানিয়া থাকিতে পারেন । আপনারা বরং মানিক দাদাকেই জিজ্ঞেস করে দেখুন । :P :P

************************************

অট:১- উদ্ভীন্ন যৌবনা কপিলার রুপ বর্ননায় মানিক তাহাকে বারংবার বেগুনী শাড়িতে দেখিয়েছেন । বেগুনী কি তাহলে 'লুল' দের প্রিয় রঙ ??

অট:২- মানিক বন্দোপাধ্যায় নিজেই গুরুচন্ডালীতে দুষ্ট ছিলেন । আর এই নগন্য পোস্ট লেখক কোন ছাড় :P =p~

************************************

এই সিরিজের আগের 'লুলমর্টেম'

বাংলা সাহিত্যের চিরায়ত লুল নায়কেরা : শ্রীকান্ত-দেবদাস পর্ব । ;) :P

ক্যুইজ: কে অধিক 'লুল' ?? শ্রীকান্ত, দেবদাস না কুবের মাঝি ???
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:০৬
৪৬টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×