somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপরুপ লাক্কাতুড়া!!

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সিলেট শহরকে তিন দিক দিয়ে ঘিরে রয়েছে সবুজ পাহাড়ী উপত্যকা । এই উপত্যকায় রয়েছে উঁচুনিচু পাহাড়, নয়টি চা বাগান, খাদিমনগর রিজার্ভ ফরেস্ট, টিলাগড় ইকোপার্ক, হরিপুর গ্যাসফিল্ড এবং শেভরনের গ্যাস প্রজেক্ট ।


মুলত ১৮৫৪ সালে সিলেটের পাহাড়ী জঙ্গলাকৃত স্থানে প্রথম বন্য চা গাছ আবিষ্কৃত হয় । চা চাষের ব্যাপারে ব্রিটিশরা ছিল খুবই উৎসাহী । তাদের উদ্যোগে সিলেটের প্রথম চা-বাগান স্থাপিত হয় এই উপত্যকার মালনীছড়ায়, ১৮৫৭ সালে । এর পর ব্রিটিশদের পাশাপাশি স্থানীয় চা-কর (চা বাগানী) রা এগিয়ে আসেন । ১৮৮৫'র মধ্যে সিলেট বিভাগজুড়ে চা চাষের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে । এই সময়েই লাক্কাতুড়া চা বাগানের পত্তন হয় ।


সিলেট শহরের উত্তর প্রান্ত ঘিরে রাখা সবুজ বনানীই হলো লাক্ষাতুড়া চা বাগান । এটি ন্যাশনাল টি বোর্ড অধীনস্ত একটি সরকারী চা বাগান । ১২৯৩ হেক্টর বা প্রায় ৩২০০ একর জুড়ে এর অবস্থান । সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে এয়ারপোর্টের দিকে ১.৫ কিলো এগিয়ে শহরের প্রান্ত ছুঁলেই আপনার চোখে পড়বে লাক্ষাতুড়া চা বাগানের সাইনবোর্ড । নাগরিক সভ্যতা ছেড়ে হঠাৎ সবুজ পাহাড়ে এসে আপনি বিস্মায়ভূত হয়ে বলবেন, বাহ!


হযরত শাহজালালের মৃত্যবরণের পর থেকে ওরশের সময় একটা নির্দিষ্ট দিনে শিরনী রান্নার জন্য এই পাহাড়ী জঙ্গল থেকে কাঠ আহরণ করা হত । এখনো এই ধারার প্রচলন আছে । ওরশের তিনদিন আগে রঙিন কাপড় পড়ে শোভাযাত্রার মাধ্যমে এই পাহাড় থেকে রান্নার কাঠ আহরণ করা হয় । এটাকে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় 'লাকড়ি তুড়া' উৎসব (লাকড়ি মানে জ্বালানী কাঠ, তুড়া মানে কুড়িয়ে আনা)। ধারণা করা হয়, এর থেকেই এই বাগানের নাম হয়েছে লাক্কাতুড়া ।


এয়ারপোর্ট রোড থেকে ডানদিকে বাগানের মুল ফটক । ফটক দিয়ে ঢুকেই বাম দিকে পড়বে চা ফ্যাক্টরি এবং রাবার ফ্যাক্টরি । এখানে বলে নেই, লাক্ষাতুড়া চা বাগান হলেও এর দুটি আউটপোস্ট দলদলি আর কেওয়াছড়ায় রাবার বাগান সৃজিত হয়েছে । ফ্যাক্টরি ফেলে সামনে এগিয়ে গেলে দেখবেন কিছুক্ষণ পরপর উঁচু টিলার উপর দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা উঠে গেছে । এগুলি বাগানের ম্যানেজার এবং সহকারী ম্যানেজারদের বাংলো । ফ্যাক্টরি এবং বাংলোতে যেতে চাইলে কর্তৃপক্ষ থেকে আগেই অনুমতি নিতে হবে । আর শুধু বাগানে ঘুরতে চাইলে মুল ফটকে গার্ডকে একটু অনুরোধ করলেই ভেতরে যেতে দেয় ।


একেতো সরকারী বাগান, তারপর শহর ঘেষা হওয়ায় এর উপরে বিভিন্ন সময়ে দখলদারী কায়েম হয়েছে । বাগানের ভেতরে শেভরনের বিশাল গ্যাস প্রজেক্ট, এবং জায়গাটা সংরক্ষিত । গলফ মাঠ, সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, কোরবানীর গরুর হাট সহ আরও অনেক সরকারী-বেসরকারী স্থাপনা গড়ে উঠেছে । চা বাগানের বিশাল অংশ দখল করে গড়ে উঠেছে খেলার মাঠ, স্কুল, হাসপাতাল, ব্যক্তিগত ঘরবাড়ি এবং ডুপ্লেক্স আবাসিক এলাকা । দখল কার্যক্রম চলছে এখনো । এমনকি আমি যে বাসায় থাকি, সেটাও একসময় ছিল এই বাগানের অংশ । নিচের ছবিতে দেখেন শহর কিভাবে চা বাগান গ্রাস করছে ক্রমশ,


বাগানের ভেতরে চমৎকার একটা গেস্ট হাউস আছে । মনুষ্যশূন্য নিরিবিলি এই গেস্টহাউসে রাত্রিযাপন অনেকটা অন্যগ্রহে থাকার মতোই এডভেঞ্চারাস । এখানে তিনটা রুম, কিচেন এবং গেস্টরুম আছে । বারবিকিউ এবং ক্যাম্পফায়ারের জন্য একটি আদর্শ জায়গা । যারা আসতে চান, ঢাকায় ন্যাশনাল টি বোর্ডের হেড অফিস থেকে আগেই অনুমতিপত্র যোগার করে আনবেন ।



গেস্ট হাউসের চারপাশে চমৎকার বাগান । কমলাবাগানও আছে ।




পুরো বাগানজুড়ে এইরকম অগনিত বনফুলের ডালি,


শহর লাগোয়া হওয়ায় এখানকার চা শ্রমিকেরা অন্য বাগানগুলোর তুলনায় বেশ সচেতন । ১৮৮০ দশকে ভারতের নাগপুর, ঝাড়খন্ড, উড়িষ্যা, মাদ্রাজ থেকে আসা এই শ্রমিকেরা জাতিগতভাবে সাঁওতাল, মুন্ডা, ওঁরাও এবং কৈরি । তারা নিজেদের ভাষা, ধর্ম এবং সংস্কৃতি সযত্নে লালন করে । বাগানের ভেতরে তাদের সাথে অযাচিতভাবে কথা বলা বা কটাক্ষপূর্ণ কোন মন্তব্য করবেন না । আর ভুলেও তাদের 'কুলি' বলে সম্বোধন করবেন না । তাহলে ওরা দলবেঁধে আপনাকে আক্রমন করতে পারে । তারা নিজেদের চা-শ্রমিক বা ওয়ার্কার পরিচয় দিতে ভালোবাসে ।


সিলেটে যারা বেড়াতে আসেন, হাতে দুই এক ঘন্টা সময় থাকলে এখানে বেরিয়ে যেতে পারেন । আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে আসতে দশ মিনিট সময় লাগবে । পাবলিক সিএনজিতে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৫ টাকা, আর রিক্সায় ১০-১২ টাকা ।
শেষের ছবিটা নেট থেকে ধার করা । লাক্কাতুড়া বাগানের ভেতরে তৈরী করা সিলেট আন্তর্জাতি ক্রিকেট স্টেডিয়াম ।



আজকে এ পর্যন্তই :)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৪
৬৯টি মন্তব্য ৬৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারত সোনার ডিম পাড়া হাঁস হারিয়েছে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৫২



শেখ হাসিনা ভারতে বসে ষড়যন্ত্র-অপপ্রচার করছেন। ভারত চাচ্ছে বাংলাদেশে একটি অশান্তি হোক। কারণ ভারত একটি মসনদ হারিয়েছে। সোনার ডিম পাড়া হাঁস হারিয়েছে।

আওয়ামী লীগ প্রতিদিন একটি সোনার ডিম পেড়ে নরেন্দ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক রহমানের এখনই সময়।

লিখেছেন শাহিন-৯৯, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৮




দেশ এখন বেশ বহুমুখী চ্যালেন্জ মুখাবেলা করছে বিশেষ করে ভারতের মিডিয়াগুলোর সর্বদা মিথ্যচার বেশ অস্বস্থিকর অবস্থা তৈরি হচ্ছে।
বর্তমান সরকার অবশ্য বেশ শান্ত মেজাজে সব কিছু চমৎকারভাবে হ্যান্ডেল করছে তবুও জনপ্রতিনিধির... ...বাকিটুকু পড়ুন

পত্রিকায় শেখ মুজিবের শাসন-আমল ১৯৭২,১৯৭৪

লিখেছেন রাকু হাসান, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:০২



ইতিহাস বহমান নদীর মত। তাকে তার মত চলতে দেওয়াই শ্রেয়। সে নদীতে কেউ পূর্ণার্থে
স্নান কিংবা সে পানি পান করবে না ,সেটা একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার । যে বই,ইতিহাস উগ্রবাদ,জঙ্গিবাদ কিংবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনধিকার চর্চা নয়, শান্তিরক্ষি ভারতে প্রয়োজন

লিখেছেন মোহাম্মদ সজল রহমান, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৫৫

বাংলাদেশে একজন রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় অভিযুক্ত এবং ইসকন সংগঠন থেকে বহিঃস্কৃত ধর্ম প্রচারক বিতর্কিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাস, তার মুক্তির জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতের এক শ্রেণীর জনগণ যেভাবে ক্ষেপে উঠেছে, তাতে মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমরা উকিলরা কেউ চিন্ময়ের পক্ষে দাঁড়াবো না , না এবং না

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২




সাবাস বাংলাদেশের উকিল । ...বাকিটুকু পড়ুন

×