somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগিং মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য চর্চাঃ একটি বিশ্লেষণ!

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মাত্র দেড় দশক আগে ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত ডায়েরি লেখার ধারণা থেকে ব্লগের সূচনা হলেও অল্প সময়ের মধ্যে এটি বহুমাত্রিক বিকল্প মিডিয়া হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে নেয়। বিশ্বব্যাপি ব্লগিং মিডিয়ার শক্তি আর প্রভাব আজ পরীক্ষিত। বিভিন্ন মত, পথ, পেশা, বয়স, সমাজ আর ভাষাভাষী মানুষকে একটা কমন প্লাটফর্মে নিয়ে আসার কৃতিত্ব এই ব্লগ মিডিয়ার।

বাংলা ব্লগের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৫ সালে, সামহোয়্যারইন ব্লগের হাত ধরে। ‘ব্যক্তিগত রাফখাতা’ থেকে অচিরেই এটি সমাজ, রাষ্ট্র, সাহিত্য-সংস্কৃতি, রাজনীতি, নাগরিক সাংবাদিকতা আর মানবিক যুথবদ্ধতার এক উৎকৃষ্ট মাধ্যম হিসেবে উত্তীর্ণ এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠে। সেই সাথে বাংলাব্লগ পরিমণ্ডলে একে একে আরো অনেক নতুন ব্লগ যুক্ত হতে থাকে। এত বিচিত্র বিষয় আর ভিন্নমতের সমাহার, ব্যতিক্রমি এবং অংশগ্রহনমূলক উপস্থাপনা, সর্বোপরি দেশ ও সমাজের প্রতি কমিটমেন্ট বা দায়িত্বশীলতা ব্লগকে মূলধারার অন্যান্য গণমাধ্যম থেকে অনবদ্য এবং অধিক কার্যকরী মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

বিশ্বের অন্যপ্রান্তের ব্লগগুলো যেখানে ‘ডিজিটাল ডায়েরি’ আর ‘সিটিজেন জার্নালিজম’ ধারণাকে আঁকড়ে রেখেছে, বাংলা ব্লগের ব্যাপ্তি সেখানে বহুমাত্রিক বৈচিত্রতা নিয়ে বিকশিত হয়েছে। শুরু থেকেই বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চার উৎকর্ষ সাধনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। ২০১৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি একাডেমিক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলা ভাষায় বৃহত্তম ব্লগিং সাইট সামহোয়্যারইন ব্লগের ৩৬% লেখাই ছিল সৃজনশীল সাহিত্যকর্ম। তাই এটা বলাই যায়, সৃজনশীল লেখক এবং পাঠক তৈরিতে বাংলা ব্লগ একটা বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছে।

পূর্বে আমাদের মূলধারার সাহিত্যচর্চা ছিল মূলত কেন্দ্রমুখী। ঢাকাকেন্দ্রিক দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকী, নিয়মিত/অনিয়মিত কিছু সাহিত্য পত্রিকা আর ছোট কাগজই ছিল সাহিত্যচর্চার মূল মাধ্যম। কিন্তু দৈনিক পত্রিকায় স্পেস সংকট, সাহিত্য পত্রিকা/ ছোট কাগজ ভিত্তিক লেখকদের গোষ্ঠীবদ্ধতা এক ধরনের কেন্দ্রীয় মেরুকরণ তৈরি করেছিল। এতে প্রান্তিক এবং অপ্রতিষ্ঠিত লেখকদের আত্মপ্রকাশের সুযোগটা হয়ে পড়েছিল সংকীর্ণ। বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম এই কেন্দ্রমুখিতা আর গোষ্ঠীবদ্ধতার বিপরীতে বাংলাভাষী লেখকদের জন্য একটা সার্বজনীন বিকল্প মাধ্যম গড়ে তুলেছে।

দেশব্যাপী তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে ইন্টারনেটকেন্দ্রিক ব্লগিও সাহিত্যচর্চায় গতি এসেছে। একই সাথে বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম রাজধানী ঢাকা সহ দেশের সকল প্রান্তের এবং প্রবাসের বাংলাভাষী লেখক পাঠকের পারষ্পরিক মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। বাংলাভাষা ও সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রটাও সেই সাথে হয়েছে বিস্তৃত।

বাংলা ব্লগে সৃজনশীল এবং মননশীল দুই সাহিত্যধারায় ব্যাপক লেখালেখি হয়। সৃজনশীল ধারায় গল্প, কবিতা, উপন্যাস, রম্য রচনায় ব্লগের লেখকদের উৎকর্ষতা ইতিমধ্যে মূলধারায় স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ব্লগে সৃজনশীল সাহিত্যচর্চা করে অনেকেই প্রথমসারির লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। আর টেকনিক্যাল কারনেই ব্লগে মননশীল ধারায় স্মৃতিকথা, ভ্রমণকাহিনী, সাহিত্য পর্যালোচনা, মুভি রিভিউ ইত্যাদির লেখার সুযোগ অনেক বেশি।

বাংলাব্লগ সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক, অপ্রতিষ্ঠিত এবং নতুন লেখকদের আত্মপ্রকাশের একটা দারুণ সম্ভাবনাময় মঞ্চ তৈরি করেছে। ব্লগিং মাধ্যমে সাহিত্যচর্চার বড় সুবিধা হলো লেখক পাঠকের সরাসরি মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ থাকা। লেখক তার লেখা নিয়ে পাঠকের সরাসরি পাঠ প্রতিক্রিয়া, অন্য লেখকের পর্যালোচনা জানার সুযোগ পান। কিন্তু মুদ্রণ মাধ্যমের লেখকের এই পাঠ প্রতিক্রিয়া জানার খুব একটা সুযোগ হয়না। আর একজন ব্লগারকে নতুন লেখক হয়ে গড়ে উঠতে ব্লগ সবসময় মেনটরের ভূমিকা পালন করে থাকে।

ব্লগে সাহিত্যচর্চার সীমাবদ্ধতা হলো, আমাদের পাঠকশ্রেনির অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র অংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। আর প্রতিষ্ঠিত লেখকরগণ ব্লগের ব্যাপারে এখনো কিছুটা উদাসীন। প্রযুক্তি বিমুখতা এবং প্রাতিষ্ঠানিকতার শিখরে অবস্থা্ন হয়ত এর কারন। যদিও পৃথিবীর অনেক দেশেই বড় লেখকগণ ব্লগে লেখালেখি করেন। তবে ইদানিং লেখকদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসছে। তাদের অনেকেই এখন ব্লগে লেখালেখি শুরু করেছেন। একই সাথে ব্লগকেন্দ্রিক লেখকদেরও মূলধারায় বিচরণ বাড়ছে। প্রতিবছর একুশে বইমেলায় ব্লগারদের বিপুল সংখ্যায় বই প্রকাশ এবং পাঠকপ্রিয়তা এর বড় প্রমাণ। এমনকি সারাদেশে প্রকাশিত বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকা আর ছোট কাগজেও এখন ব্লগার লেখকদের জয়জয়কার।

বিভিন্ন সামাজিক, মানবিক, রাজনৈতিক ইস্যুতে নিরবচ্ছিন্ন সক্রিয়তা এবং যুথবদ্ধতার পাশাপাশি ব্লগাররা আমাদের প্রিয় মাতৃভাষায় সাহিত্যচর্চার একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। তথ্য প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেট বিকাশের সাথে সাথে বাংলা ব্লগিং পরিমণ্ডল বাংলা সাহিত্যচর্চার প্রধানতম মাধ্যমে পরিণত হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

*****************************************
লেখাটি আজকে দৈনিক ইত্তেফাকে 'দৃষ্টিকোণ' বিভাগে প্রকাশিত হয়েছে ।
ব্লগিং মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য চর্চাঃ একটি বিশ্লেষণ

কৃতজ্ঞতাঃ
জানা
কাল্পনিক_ভালোবাসা

রেফারেন্সঃ
View this link
View this link

ছবিঃ গুগল ।


সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫২
১০২টি মন্তব্য ৯১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×