somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে খুজুন,, পেলেই ১০০০ কোটি টাকার মালিক হবেন!

২৩ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



‘হাঁস পা’ খোঁজেন। দেড়শ গ্রাম হলে বিক্রি করা যাবে ‘হাজার কোটি’ টাকা। শুধু ‘পকেট মানিই’ দেবে দুইশ কোটি টাকা। এটা হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত। দেশের যেখানেই থাকুক না কেন সেখানই ‘বায়ার’ যাবে। হেলিকপ্টারে গিয়ে নিয়ে আসা হবে।

একটি চায়ের দোকানের বসে এমনটিই বলছিলেন একজন আরেক জনকে। অপরিচিত ওই দুই ব্যক্তির কথা শুনে কৌতূহলী হয়ে এ বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমে জানা যায় অনেক অজানা তথ্য। তারা একটি প্রাণির কথা বলছিলেন। প্রাণিটির নাম ‘তক্ষক’। দেখতে গুই সাপের বাচ্চার মতো। গায়ে লাল সিঁদুরের ও সাদা ফোঁটার মতো রয়েছে। আকারে ছোট। তবে ছোট হলেও অনেক বয়সী। এই প্রাণিটি চড়ামূল্যে বিক্রি হয়। তাই অনেকেই এটির সন্ধানে ঘুরে ঘুরে নিঃস্ব হতে বসেছেন। তবু তারা হতাশ নন; খুঁজেই চলছেন। যেখানে সন্ধান পাচ্ছেন, সেখানেই ছুটে যাচ্ছেন।



তাদের মতে, এই প্রাণির দুই ধরনের পা রয়েছে। কোনটার ‘মুরগী পা’ আর কোনটার ‘হাঁস পা’। ‘হাঁস পা’গুলোর দাম খুব বেশি। সর্বনি¤œ সাড়ে ৯ ইঞ্চি লম্বা ও ৫২ গ্রাম ওজনের ‘হাস পা’ চলে। এর কম ওজন বা লম্বায় সাড়ে ৯ ইঞ্চির ছোট হলে চলবে না। ইঞ্চির মাপ ধরা হয় চোখ থেকে লেজের শেষ পর্যন্ত। ‘মুরগি পা’গুলো ২৫৫ গ্রাম ওজন ও সাড়ে ১৫ ইঞ্চি লম্বা হতে হবে। এ ছাড়া একটা আছে ‘বার্মিজ’। ‘বার্মিজটা’ ওজন সাড়ে তিনশ গ্রামের নিচে হলে বিক্রির অনুপযুক্ত।



জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এটি সরিসৃপ জাতীয় প্রাণি। এরা নিশাচর। গাছের গর্তে বাস করে। বিভিন্ন পোকামাকড়, পাখির ডিম খেয়ে এরা বেঁচে থাকে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম বলেন, ‘সাউথ ইস্ট এশিয়ায় অনেকেই পোষা প্রাণির মতো তক্ষক লালন করে বলে শোনা যায়। তারা মনে করেন, এই প্রাণি বাড়িতে থাকলে তাদের সৌভাগ্য বয়ে আনে। নিঃসন্তানদের সন্তানাদি হয়।’



তিনি আরো জানান, এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘ এঊককঙ মবপশড়’। ইংরেজিতে একে ‘ঞড়শধু এবপশড়’ বলা হয়। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত কিছু কিছু দ্বীপাঞ্চলে এই প্রাণি রয়েছে।
উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, ভারত ও বাংলাদেশসহ মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস, কাম্পুচিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন ও ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৬০০ প্রজাতির তক্ষকের বাস।
বণ্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণের খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বলেন, তক্ষকের বিষয়টি আমরা এখনো পরিষ্কার হতে পারিনি। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে জানা গেছে, পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে এই প্রাণি চড়ামূল্যে বিক্রি হয়। তক্ষকের ওষুধি গুণ রয়েছে বলে শোনা যায়। কোনো কোনো দেশে এ দিয়ে ওষুধ তৈরি করে থাকতে পারে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই প্রাণি বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দর-দাম হয় দুইভাবে। একটা থোক। আরেকটা স্ক্যান করে প্রাণির শরীরে থাকা ‘দানা’ হিসেব করে। তবে বেশির ভাগ বিক্রেতা স্ক্যানের বিপক্ষে। তারা থোক দরদাম করেন।
তক্ষক দিয়ে কী করা হয়- জানতে চাইলে কেউ বলেন, প্রাণিটা পুরো গলিয়ে ক্যান্সারসহ দূরারোগ্য ব্যাধির ওষুধ তৈরি করা হয়। এই প্রাণি কাউকে কামড় দেওয়ার পর তার ঘাঁ শুকিয়ে গেলে ওই ব্যক্তির শরীরে কোনো ধরনের রোগ-জীবাণু থাকবে না। আবার কেউ কেউ বলেন, এটার শরীরে থাকা দানা এক করে ড্রোন তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কেউ নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।
এই প্রাণির সন্ধানে ঘোরা মানুষদের সঙ্গে আরেক শ্রেণির মানুষ প্রতারণা করছেন। ঢাকা থেকে গিয়ে প্রতারণার শিকারও হন তারা।

বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার আব্বাস নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি অধিক লাভবান হওয়ার জন্য এর পিছনে অনেক টাকা খরচ করেছেন। পিরোজপুরের নাজিরপুরে একটা কিনতে গিয়ে ৫ লাখ টাকা ধরা খেয়েছেন। তারা যেটা দেখিয়েছিল বাক্সে দেওয়ার সময় আরেকটা দিয়ে দেয়। বাসায় এসে দেখেন যেটা দিয়েছে তা অনেক ছোট। তিনি জানান, তার দুটি গাড়ি ছিল। এর পিছনে ঘুরে গাড়ি দুটিও বিক্রি করে দিতে হয়েছে।
একই এলাকার ইলিয়াচ জানান, তিনি চট্টগ্রাম থেকে চারটি তক্ষক ধরে এনেছিলেন। বিক্রির জন্য তার এক পরিচিত লোকের কাছে দিয়েছিলেন। সে তাকে মাত্র ৬০ হাজার টাকা দেয়। এর দাম অনেক শুনে তিনি পরে আবার রাঙ্গামাটি যান এই প্রাণির সন্ধানে। সেখানে যাওয়ার পর ওখানকার সিন্ডিকেটের লোকজন তাকে ধরে মারধর করে। তার টাকা পয়সা মোবাইল সব কিছু রেখে দেয়। বেঁচে ফিরতে পেরেছেন তাই আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া।
‘হাঁস পা’য়ের দাম বেশি শুনে কেউ কেউ আবার সার্জারি করে ‘হাঁস পা’ লাগিয়ে নেয়। বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার জিহির নামের এক ব্যক্তি সার্জারিতে পারদর্শী। তিনি বাদুরের ডানা দিয়ে সার্জারি করেন। তাই প্রতারণার জন্য অনেকে তার ধরনা দেন। তবে বায়ারের ক্যামিস্টরাও সতর্ক। তারা এটা ধরে ফেলতে পারেন।
সারা দেশেই এখন এই প্রাণিটি বেচাকেনার সিন্ডিকেট আছে। ঢাকা থেকে যারা কিনতে চান, তারা প্রথমে জেলা শহরের সিন্ডিকেটের কাছে প্রাণির ছবি চান। পরে সদ্য করা ভিডিও। এটা কোনো পত্রিকার উপরে ডেটলাইনের পাশে রেখে করতে হয়। এই ভিডিও বিশ্নেষণ করার পর ঢাকা থেকে লোক যায়।


সম্প্রতি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের টিবোটে ২২ ইঞ্চি লম্বা এই তক্ষকের সন্ধান পাওয়া এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, ওখানকার চা বাগান থেকে চা-শ্রমিকরা প্রাণিটা ধরেছে। আমরা দুইদিন গিয়ে হোটেলে অবস্থান করি। তারা আমাদের প্রতি বিশ্বাস আনতে না পারায় প্রাণিটা আর দেখায় নি। তবে আমরা যাওয়ার আগে তারা ভিডিও পাঠিয়েছিল।
আপনার কি এখন পর্যন্ত দুই-একটা বিক্রি করতে পেরেছেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কিনতেও পারিনি, বিক্রিও করতে পারিনি। মূলত এই ব্যবসায় যারা জড়িত তারা কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। এ কারণেই কেনাবেচা হয় না। এক সময় হয় প্রশাসনের হাতে ধরা পড়ে, না হয় না খেতে পেরে প্রাণিটি মারা যায়।
এই ব্যক্তি ১২ বছর ধরে এর পিছনে ছুটছেন। আর কতদিন ঘুরবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখি! আশা করি আজ হোক, কাল হোক ব্যাটে-বলে মিলবে।
ধরুন, বিক্রি করে হাজার কোটি টাকা পেলেন। কিন্তু টাকার লেনদেন কীভাবে করবেন। তিনি জানান, আমরা তো অনেক লোক। ইউরো নেবো। তাছাড়া অন্য ব্যবস্থাও করা যাবে।
এতো টাকা পেলে কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি একটা টেলিভিশন চ্যানেল করবো’।
এমন অনেক আশা নিয়ে ঘুরছে এই সিন্ডিকেটের লোকজন। কিন্তু কবে তাদের আশা পূরণ হবে তা কেউই জানে না।
জানা যায়, এ পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনের হাতে এই তক্ষকসহ অনেকে ধরা পড়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রাণিটির মূল্য অনেক।


তথ্যসুত্র
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:০৭
১০টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×