somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নজর দিন

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৬ রাত ১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশের স্বার্থ রক্ষায় সবাইকে এক হতে হবে


আ তি উ র র হ মা ন

সমপ্রতি একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় ধরা পড়েছে যে, দেশের 86 শতাংশ মানুষ দ্রব্যমূল্যের ঊধর্্বগতির কারণে বিরক্ত। তারা সবাই মনে করে, এর পেছনে দুনর্ীতির হাত রয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊধর্্বগতি ও দুনর্ীতিই নীতি_ এই দুই দুর্দশার কারণে এদেশের সাধারণ মানুষ কী পরিমাণে যে ক্ষিপ্ত তা মনে হয় ক্ষমতাসীনরা অনুমানও করতে পারছে না। বিরোধী দলের কেউ কেউ নিশ্চয় এই দুইয়ের সংযোগটি অাঁচ-অনুমান করতে পারছেন। কিন' মনে হয়, তাদেরও সবাই এখনও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারছেন না যে, মূলত এ দুটি কারণে জনমনে ক্ষোভ কতটা তীব্র। যদি জানতেন তাহলে নিশ্চয় এ দুটি ইসু্যকেই প্রাক-নির্বাচনী এই সময়ে একেবারে সামনে নিয়ে আসতেন। অবশ্য সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী সুযোগ পেলেই এ দুটি ইসু্যকে সামনে তুলে আনেন। তবে তাকে আরও অনেক বিষয়েই কথা বলতে হয়। সে কারণে হয়তো শুধুই এ দুটি বিষয় নিয়ে আলাদা করে কথা বলা তার হয়ে ওঠে না। তারপরও মূল্য সন্ত্রাস করে লক্ষ-কোটি টাকা ক্ষমতাসীনদের হাতিয়ে নেয়া এবং দুনর্ীতিকে নীতি করার বিষয়কে বারবার তিনি জনগণের সামনে উপস্থাপন করেছেন। তার দলের ও জোটের অন্য নেতৃবৃন্দ এ বিষয় দুটিকে আরও তির্যকভাবে তুলে আনলে হয়তো জনমনে এর প্রভাব আরও গভীরতর হবে। বিশেষ করে 'দশ টাকার চাল কী করে বিশ টাকা হল' সে প্রশ্নটি ঠিকভাবে এখনও তোলা হয় না। তোলার সময় এসেছে। একইভাবে প্রশ্ন করার সময় এসেছে 8 টাকার আলু কেন 5 বছরের ব্যবধানে 18 টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 26 টাকার সয়াবিন কেন ভোক্তাকে 62 টাকায় কিনতে হচ্ছে।
একজন রিকশাওয়ালার 80 টাকার টায়ার পাঁচ বছরে কেন 240 টাকা হল_ সে প্রশ্নটিও এখন পর্যন- সেভাবে উঠে আসেনি। তবে এসব প্রশ্ন তোলার প্রকৃষ্ট সময় কিন' উপস্থিত। ক্ষমতাসীনদের ভেতরেও কেউ কেউ আছেন যারা এ দুটি অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতা কর্নেল অলি যে ভাষায় দ্রব্যমূল্য ও দুনর্ীতির প্রসঙ্গ তুলে আনছেন, তাতে মনে হয় দুনর্ীতির বাইরে থাকা তার দলের বিপুলসংখ্যক নেতাকমর্ীও শেষ পর্যন- বিপর্যস- জনতার মনের খবর কিছুটা হলেও পেতে শুরু করেছেন।
আমার ধারণা, যারা সরাসরি দল করেন না, কিন' মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে ভালবাসেন (মোট ভোটারের প্রায় এক-চতুর্থাংশ) তারা দেশের এই দুর্দিনে নিশ্চয় সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব পেছনে ফেলে দুঃখী মানুষের পাশে এসে দাঁড়াবেন। সেই দিক থেকে বিচার করলে মনে হয় দেশ আজ যেন একাত্তরের আগক্ষণের ক্রান-িলগ্নে উপস্থিত। সে সময় যেমন রাজনীতির বাইরে থাকা অসংখ্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শক্তি দেশমাতৃকার সম্মান রক্ষার জন্য সম্মিলিত হয়েছিল, আবারও ইতিহাসের চাকা ঘুরতে ঘুরতে অচিরেই মনে হয় তেমনি এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মুখোমুখি আমরা হতে যাচ্ছি। জনগণের নামে দেয়া স্বাধীনতার ঘোষণাসহ মৌল সব বিষয় হরণের যে অশনি সংকেত পাওয়া যাচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের গল্পকার, আপাদমস-ক দেশপ্রেমিক, তরুণ প্রজন্মের কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ জাফর ইকবালের জিহ্বা কেটে নেয়ার যে হুমকি দেয়া হচ্ছে, এ সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক, প্রগতিশীল চিন-া ও চেতনার অগ্রসৈনিক হাসান আজিজুল হককে কেটে টুকরো টুকরো করে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়ার যে আস্ফালন শোনা যাচ্ছে তারপরও এ দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ চুপ করে বসে থাকবেন সে রকমটি আশা করা যায় না। জনগণ যে চুপচাপ সব অন্যায় মেনে নেয় না তার অসংখ্য প্রমাণ তারা রেখে চলেছে। স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ গড়ে তুলে এই জনতাই কানসাট ও শনির আখড়ায় তাদের সম্মিলিত প্রতিবাদের এক নয়া ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ঠিক একইভাবে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে এ দেশের চিরবঞ্চিত, উপেক্ষিত, নির্যাতিত জনগণ ফুঁসে উঠেছে এবং তাদের বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। স্বদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ কতিপয় স্বার্থান্বেষী 'স্বদেশী'র যোগসাজশে বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়ার অপচেষ্টাকে যেভাবে রক্তের বিনিময়ে রুখে দিতে এগিয়ে এসেছে এবং জয়ী হয়েছে এদেশের ভুখানাঙ্গা দুঃখী মানুষ তা সত্যিই বিস্ময়কর। দেশপ্রেমের এমন উজ্জ্বল দৃষ্টান- খুবই বিরল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, জনগণের এই সম্মিলনী শক্তিই আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশের একমাত্র রক্ষাকবচ হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পাবে। খুবই আশার কথা যে, আন্দোলনরত রাজনৈতিক শক্তিও জনগণের মুডকে বুঝতে পেরেছে এবং দেশব্যাপী গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলনই যে গণস্বার্থ রক্ষায় বেশি কার্যকরী সেটিই আবার প্রমাণিত হল। আফ্রিকার অনেক দেশেই জনতার এই সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি বলে অনেক বিদেশী ব্যবসায়ী সংস্থা সেসব দেশের মূল্যবান খনিজ পদার্থ কতিপয় গণস্বার্থবিরোধী স্বদেশীর সহায়তায় দ্রুতই হাতিয়ে নিতে পেরেছে। বিদেশী বিনিয়োগের সূচক হয়তো বেড়েছে, কিন' দেশগুলোর প্রাকৃতিক সম্পদই শুধু উজাড় হয়ে গেছে তাই নয়, সাধারণ মানুষের জীবন-মানের সামান্যও উন্নতি ঘটেনি। বরং অনেক দেশেই শাসন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। কোথাওবা গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়েছে। বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষ তাদের স্বদেশকে অ্যাঙ্গোলা, গিনি বিসাউ, লাইবেরিয়া বা নাইজেরিয়া হতে দিতে চায় না বলেই আজ রক্তের অক্ষরে লিখছে প্রতিবাদের পোস্টার। প্রতিবাদী দেশপ্রেমিক এসব মানুষের আত্মত্যাগ নিশ্চয় বৃথা যাবে না।
প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার আন্দোলনে শামিল হয়ে আমাদের দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি যে ঐক্য ও সহমর্মিতার নিদর্শন গড়ে তুলেছে তাকে ভিত্তি করেই আগামী দিনগুলোতে স্বদেশের সব স্বার্থ সংরক্ষণে দেশবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। দেখে-শুনে মনে হচ্ছে, সামনের দিনগুলো খুবই চ্যালেঞ্জিং হতে যাচ্ছে। এমন সঙ্কটকালে জনতার ঐক্যই হতে পারে একমাত্র ভরসার প্রতীক। স্বদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করা যাবে এমন একটি স্বদেশী উন্নয়ন কৌশলের স্বপ্ন আমরা দীর্ঘদিন ধরেই দেখছি। বাহাত্তরের সংবিধানে সেই স্বপ্নের কথা লেখাও আছে। কিন' তার বাস-বায়ন ঘটেনি। তা সত্ত্বেও ন্যায়বিচারভিত্তিক একটি সমাজ গড়ার জনচাহিদা সৃষ্টি না করা গেলে যে এমন জনকল্যাণধমর্ী রাজনীতি ও অর্থনীতির বিকাশ ঘটবে না সে কথাটি আমাদের বুঝতে হবে। অনুভব করতে হবে। তবে ইতিহাসের এক আশাজাগানিয়া বাঁক মনে হয় সনি্নকটে। এদেশের জনগণ তাদের রায় দেয়ার সময় কখনও ভুল করেনি। তারা যদি জানতে পারে কী ভয়াবহ এক অন্ধকারের গহ্বরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাদের প্রিয় বাংলাদেশকে, তাহলে নিশ্চয় তারা আবার সত্তরের নির্বাচনের সময়ের মতো স্বদেশের পক্ষে শক্তভাবে দাঁড়াবে। নিজেদের বিচার-বুদ্ধি খাটিয়ে দেশপ্রেমের সর্বোচ্চ প্রমাণ নিশ্চয় তারা এবারও রাখবে। কানসাট ও ফুলবাড়ীর সাধারণ নারী-পুরুষের চোখে-মুখের ভাষা দেখেই আমি এমনি আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের নেতানেত্রীরাও নিশ্চয় সে ভাষা বুঝতে পারছেন। যদি পারেন, নিশ্চয়ই তারা জনগণের এই প্রতিবাদকে সৃজনশীল কৌশলে ইতিবাচক পরিবর্তনের চূড়ান- পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারবেন।
জনগণের এই রুদ্ররোষ একদিনেই তৈরি হয়নি। লাগামহীন দুনর্ীতি এবং সে কারণে আকাশছোঁয়া দ্রব্যমূল্যই যে সাধারণ মানুষকে তাতিয়ে তুলেছে সে কথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। দুনর্ীতির মধ্য দিয়েই যে সিন্ডিকেট ব্যবসা গড়ে ওঠে তা আমরা জানি। তাছাড়া রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক চাঁদাবাজি তো আছেই। একদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়হীনতা (যেমন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং, এনবিআরের শুল্কায়ন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক নীতির ভেতর সংযোগ ও সমন্বয়হীনতা) এবং অন্যদিকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কতিপয় ব্যবসায়ী কোম্পানির একচেটিয়া ব্যবসা বা সিন্ডিকেট তৈরির কারণেই যে দেশে চাল, ডাল, চিনি, মশলার দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছে সে কথা খোদ অর্থমন্ত্রী এখন নিজেই বলে বেড়াচ্ছেন। সমপ্রতি তিনি বলেছেন, আমাদের এখানে একটু সুযোগ পেলেই একশ্রেণীর ব্যবসায়ী জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এমনটি হয় না। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের অনেস্টি বলে কিছু নেই। তারা এক প্লেট ভাত খাইয়ে 200 টাকা আদায় করে নেয়। অথচ ইন্ডিয়ায় নেয় 30 টাকা। এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। তাই তিনি স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে যথাযোগ্য ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়ার কথাও তিনি বলেছেন। তাও ভালো, শেষ বেলায় এসে তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যের এই দুনর্ীতির কথা স্বীকার করলেন। এদ্দিন তো তিনি বরং জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কথা শুনলে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠতেন। বলতেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, তাই দাম বাড়ছে। কৃষকের লাভ হচ্ছে। পত্রপত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদদাতাদের ওপর তিনি ভীষণ খাপ্পা ছিলেন। কেন তারা দ্রব্যমূল্যের পাগলামি বিষয়ে এত কথা লেখেন বা বলেন সে কারণে তিনি খুবই রাগান্বিত ছিলেন। শেষ পর্যন- কী কারণে তার এই মনের পরিবর্তন হল তা তিনিই ভালো জানেন। লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের কারণে যে সাধারণ মানুষের খুবই কষ্ট হচ্ছে সে কথাটি যে কোন রাজনীতিকেরই সবার আগে জানার কথা। জনগণের 'ভোটে নির্বাচিত' যারা তাদেরও আরও বেশি করে জানার কথা। বোঝার কথা। কিন' আমাদের বড়ই দুর্ভাগ্য যে, সংসদে দ্রব্যমূল্য নিয়ে কোন বিশেষ আলোচনা হয়নি। বরং বিরোধী দল এ বিষয়ে আলোচনা করতে চাইলে বারবার তাদের তা থেকে বিরত রাখা হয়েছে। তাই সরকারের এই অন-িমক্ষণে মাননীয় অর্থমন্ত্রীর এই সুবচন খানিকটা ব্যতিক্রমী বটে। বিবেকের তাড়নায় নাকি অন্য কোন কারণে তিনি এমন কথা বললেন সে গবেষণায় না গিয়ে বরং তাকে আমরা সাহস করে সত্য কথা বলার জন্য ধন্যবাদ জানাই। কিন' শুধু কথার কথা হিসেবে এই উচ্চারণ করেই তিনি যদি শান- থাকেন তাহলে নিশ্চিতভাবেই জিনিসপত্রের দাম কমবে না। বরং তিনি নিষ্ক্রিয় থাকলে রোজার মাসে জিনিসপত্রের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাজারে চিনি, ডাল, তেলের দাম তার সুবচনের পর আরেক দফা বেড়েছে বলে খবর বের হয়েছে। তাই তার নির্দেশমতো স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে কিনা সে বিষয়টিও তার দেখা উচিত। সম্ভব হলে মন্ত্রিপরিষদে এ বিষয়ে তার কথা বলা উচিত। রাজনীতির এই মারপ্যাঁচে তিনি কী চাল দেবেন সেটি তার বিষয়। শুধু কথায় যে চিঁড়ে ভিজবে না, সে কথাটি তিনিও নিশ্চয় জানেন। তবে তিনি যেভাবে দেদারসে রাজনৈতিক বিবেচনায় উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থছাড় করার ব্যবস্থা করছেন, যে হারে ব্যাংক থেকে সরকারি ঋণের উৎসাহ দিচ্ছেন তাতে দ্রব্যমূল্য যে আরও অস্থির হবে সেটিই স্বাভাবিক। তিনি নিশ্চয় অস্বীকার করবেন না যে, উন্নয়ন প্রকল্পে বিশেষ করে সড়ক ও জনপথ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দফতরে বড় ধরনের দুনর্ীতি হচ্ছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গত অর্থবছরে টার্গেটের চেয়ে 24 শতাংশ বেশি অর্থ খরচ করেছে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অর্থ ছাড়ের পারফরম্যান্স খুবই ভালো। ঠিকাদারবান্ধব এই দুই মন্ত্রণালয় ছাড়াও খাদ্য ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের 'ঝুঁকিমুক্ত' অর্থ ছাড়ের রেকর্ড মন্দ নয়। সরকারি সম্পদ ব্যবহার করে ব্যক্তির ধনী হওয়ার এই প্রক্রিয়ায় তার নিয়ন্ত্রণাধীন উন্নয়ন বাণিজ্যও যে কম দায়ী নয় সে কথা নিশ্চয় তিনিও জানেন। তিনি এও নিশ্চয় জানেন, মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে কী করে কেউ কেউ হাজার কোটি টাকার মালিক হলেন। মাঝেমধ্যে তিনি তার মনের কথা বলেও ফেলেন। কিন' শেষ পর্যন- দুনর্ীতির ওই অগ্রযাত্রা তিনি ঠেকাতে পারেন না কিংবা ঠেকাতে চান না। আর চঞ্চল এই টাকা কারও কারও অঞ্চলে চলে আসার কারণে অর্থনীতিতে বৈষম্যের সূচক শুধু যে দিন দিন বেড়ে চলেছে তাই নয়, সমাজের ভেতরে চাপ ও তাপ দুইই বাড়ছে। উন্নয়নের নামে রাষ্ট্রের এই অবাঞ্ছিত ভূমিকার কারণে প্রকৃত সরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ ও গুণগত মান দিন দিনই কমে যাচ্ছে। আর এর মূল্য গুনতে হচ্ছে এদেশের অগুনতি সাধারণ মানুষকে। দু'ভাবে আমাদের এর মূল্য দিতে হচ্ছে। বিরাট এক বাজেটের যে রাজস্ব সংগ্রহ করা হয় তার শতকরা আশি ভাগই আসে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তোলা ভ্যাট, বিক্রয় করসহ নানা পরোক্ষ কর থেকে। যত বেশি পরোক্ষ কর তোলা হয় তত বেশি জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। তত বেশি গরিবের কষ্টও বাড়ে। গরিব আরও গরিব হয়ে যায়। তারা কম খায়। কম পরে। এত কষ্টের রাজস্ব যদি শেষ পর্যন- ভালো মানের স্কুল, হাসপাতাল, ফ্লাইওভার, রেল কিংবা নিরাপত্তা খাতে খরচ করা হতো তাহলে হয়তো জনগণ একটা সান-্বনা পেত। কিন' যখন তারা দেখে তাদের দেয়া রাজস্ব দিয়ে অদক্ষ, অনৈতিক, অক্ষম এক দুনর্ীতিবাজ প্রশাসন চলে, উন্নয়ন প্রকল্পের নামে দলীয় মদদপুষ্ট ঠিকাদার ও বিশেষ বিশেষ ক্ষমতা কেন্দ্রের অভিপ্রায়ে নানা ধরনের কমিশন এজেন্টদের উদর স্ফীত হয় তখন তাদের ধৈর্যচু্যতি ঘটারই কথা। তদুপরি তারকা চিহ্নিত দুনর্ীতিবাজদের জোটে ভেড়ানোর যে খোলামেলা কসরত চলছে তাতেও জনগণ খুবই বিরক্ত। রাজনীতিকদের এই মূল্যবোধহীন চলা ও বলায় এদেশের মানুষ সত্যি হতাশ। আর সে কারণেই আজকের বাংলাদেশে যখন তখন জনরোষ ফেটে পড়ছে। কিছুদিন আগে গার্মেন্টস খাতে তেমন জনবিস্ফোরণ দেখলাম। এখন দেখলাম ফুলবাড়ীতে। এসব খণ্ড খণ্ড জনরোষ একত্রিত হয়ে যদি গণআন্দোলনে রূপ নেয় তাতে অবাক হওয়ার কোন কারণ থাকবে না। সে কারণেই, নিজেদের স্বার্থেই দেশচালকদের জনগণের মুখের ভাষা, চোখের ভাষা, দেহভঙ্গি ভালো করে বুঝতে অনুরোধ করছি। সামাজিক শান-ি বজায় রাখার জন্য দলমত নির্বিশেষে সব নেতৃস্থানীয় মানুষ সুদূরপ্রসারী ও রাষ্ট্রনায়কোচিত আচরণ করবেন জনগণের সেটিই একান- প্রত্যাশা। এই মুহূর্তে কর্তাব্যক্তিদের আগ্রাসী কথাবার্তা সমাজ ও রাজনীতিকে খুবই অসহিষ্ণু করে তুলছে। সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে দেশের পরিস্থিতি কী হবে, অর্থনীতির অবস্থা কী হবে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ তা ঠিকই বুঝতে পারছেন। কিন' দেশচালকরা কেন তা বুঝতে পারছেন না? এমন ক্রান-িলগ্নে আমাদের নেতানেত্রীরা জনগণের শান-িতে বসবাসের, সুস্থির জীবন চলার এই আকাঙ্ক্ষা কতটা পূরণ করবেন তা অদূর ভবিষ্যতেই জানা যাবে। তবে জনগণই যে মূল শক্তি এবং তাদের যে সরকার ভয় পায় সে বিষয়টি মনে রাখা ভালো। সে ভয় থাকলে তবেই গণতন্ত্র পোক্ত হবে। গণতন্ত্রের বিকাশের বাধা দূর করা যাবে।
নিঃসন্দেহে আমাদের রক্তের দামে কেনা গণতন্ত্র নামের ট্রেনটি খুবই ঢিমেতালে চলছে। বন্ধুর লাইনে নড়বড়ে এই ট্রেনের যাত্রী হিসেবে আমরা মোটেও স্বস-িতে নেই। সন'ষ্টও নই। তা সত্ত্বেও এই ভাঙা ট্রেনটি ছেড়ে আমরা কিন' নেমে পড়তে রাজি নই। আমাদের আশা, এই ট্রেনের চালকরা এমন করে তা চালাবেন না যাতে বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা এখনও আশা করছি যে, নির্বিঘ্নেই আমরা আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত স্টেশনে পেঁৗছতে পারব। কিন' সেজন্য আমাদের প্রত্যেককেই উদ্যোগী হতে হবে। স্বদেশের স্বার্থ রক্ষায় আরও বেশি তৎপর হতে হবে। সংগঠিত হতে হবে।
ঊ-সধরষ : ধঃরঁৎ_ংফহনফ.ড়ৎম
আতিউর রহমান : বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাবি
জুগান্তর 03-09-2006
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×