আমার এক ছোটভাই তন্ময় খুব কষ্ট নিয়ে আজ ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেয়....
http://www.facebook.com/drishsho
Today one of my favrt chotovai & vokto SAGOR was siriously injured by chatrashibir. Plz pray 4 him."
খুব কষ্ট পাই ঘটনাটা শুনে। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র। সাতটি বছর কাটিয়েছি এর আলো-বাতাসে। প্রতিটি মুখই আমার খুব প্রিয়। দলমত নির্বিশেষে খাতির ছিল আমার। কি শিবির, কি ছাত্রদল আর কি ছাত্রলীগ...থাকতাম এক ছাতার তলে...একসাথে চা খাইতাম আসাদের দোকানে অথবা খোড়াচাচার দোকানে...ঘুরে বেড়াতাম শৈলকুপা, হরিনারায়ণপুর শান্তিডাঙা...
এখনও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনও বিষয়ে অন্যরকম এক ভালোলাগা আমার। তন্ময়ের একটা প্রিয় ছোটভাই আহত হয়েছে শুনে কষ্ট পেয়েছি...ঠিক মনে হয়েছে আমার কোন ছোটভাই যদি ক্যাম্পাসে পড়তে গিয়ে এভাবে আহত হয়...কিংবা...(অমন কথা মুখে আনতেও ভয় পাই)... ...এরপর পড়লাম সাঙবাদিক বন্ধু মনিরের এই ব্লগ...
সত্যিই কি সেই জান্নাতি পরিবেশ আর নেই?....
আসুন আমরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের রক্ষায় তাদের পাশে দাড়াই।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে লালন শাহ হলে ড্রাইনিং ম্যানেজারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করে আবাসিক হল তল্লাশি করা হয়েছে।
প্রত্যদর্শী সূত্রে জানা গেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ্ হলে দুপুর দেড়টায় ডাইনিং ম্যানেজারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও শিবিরের নেতাকর্মীরা লালনশাহ হলের প্রভোষ্টের রুমে মিটিংয়ে বসে। বর্তমান ড্রাইনিং ম্যানজোরকে সরিয়ে দিয়ে নতুন একজনকে নিয়োগ দিতে চায় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ ফায়দা লোটার জন্য এটি করছে এ অভিযোগে এতে শিবির আপত্তি জানায়। মিটিংয়ে এই নিয়ে ছাত্রলীগ ও শিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে বহিরাগত ছাত্রলীগের এক কর্মী এক শিবির কর্মীকে ছুড়িকাহত করে। এখবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত শিবির কর্মীরা প্রভোষ্টোর রুমে ছাত্রলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, ছাত্র উপদেষ্টা মেহের আলী ও ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট তৌফিক এলাহিসহ কয়েকজন সাংবাদিককে আটকে রাখে। এসময় লালন শাহ হলের সামনে ব্যাপকভাবে ছাত্রশিবির ও ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ শিবিরের নেতাকর্মীরা শেখপাড়া বাজারের ক্রসিং গেটে অবস্থন নেয় এবং আবাসিক হলগুলোর নিয়ন্ত্রন নেয়।এতে হলে অবস্থানরত সাধারণ ছাত্ররাও শিবিরের সঙ্গে যোগ দেয়।
পরে ছাত্রলীগ ব্যাপক সংখ্যক বহিরাগত নিয়ে শেখপাড়া বাজারস্থ ক্রসিং গেটে শিবিরের উপর হামলা করে। শিবিরও সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। শিবিরের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে এবং সকল হল গেটে অবস্থান নেয়, ছাত্রলীগ অবস্থান নেয় ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া বাজারে এবং লালন শাহ হলের পেছনের মেথর পট্ট্রির ক্রসিং গেটের বিপরীতে । এই ক্রসিং গেটের দুই ঘন্টা ব্যাপি সংঘর্ষে চলে। এসময় শেখপাড়া বাজার থেকে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা টিয়ারশেল গ্যাস নিক্ষেপ করে। এসময় প্রায় ৩০ রাউন্ড গুলির ও ১০-১২ টি ককটেল বোমার বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এসময় পুলিশের হেলমেট পড়ে এক ছাত্রলীগ ক্যাডারকে পুলিশের সামনেই শিবিরকে ল্ক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। সংঘর্ষে ইট-পাথরের আঘাতে উভয় দলের ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়।
বিকাল সাড়ে ৫টার এসময় লালনশাহ হলে তল্লাশি করে একটি চাপাতি উদ্ধার করে পুলিশ। ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে আতংক ও ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা সন্ধ্যা ৭ টায় আলোচনায় বসেছে।
গত রমজান মাসে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির সংঘর্ষের পর প্রশাসনের সহায়তায় দু'টি হল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় ছাত্রলীগ । এর পর তারা শুরু করে লুটপাট। শিবির কর্মীদের বিভিন্ন রুমসহ সাধারণ ছাত্রদের রুমের তালা ভেঙে ব্যাপক লুটপাট করে তারা। বিভিন্ন হলের প্রায় এককোটি টাকার সম্পদ লুট হয়েছে। এক তথ্যে জানা যায়, ২ হল থেকে ৮০টি কম্পিউটার(ডেস্কটপ), ১৯টি ল্যাপটপ, কয়েকশত শার্ট-প্যান্ট, কয়েক হাজার বই-কিতাব, এমনকি পুরাতন আন্ডারওয়্যার নিয়ে গছে তারা। শেখপাড়া, শান্তিডাঙ্গা ও দুলাল পুরের বিভিন্ন ভ্যান বোঝাঁই করে করে প্রশাসনের সামনে দিয়ে তারা এগুলো নিয়ে গেছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই প্রথম এ ধরনের লুটপাটের ঘটনা ঘটলো এবং তা ছাত্রলীগের দ্বারা।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস এবং বাস্তবতায় এখন সাধারণ ছাত্ররা বিশেষত হলে অবস্থানরত সাধারণ ছাত্ররা উপলব্ধি করছে ঝিনাইদহ শহর থেকে ২২ কিঃমিঃ ও কুষ্টিয়া শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে চরমপন্থী অধ্যষুত নিভৃত পল্লীতে অবস্থিত এক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের আধিপত্য ছাড়া তাদের জান ও মালের কোন নিরাপত্তা নেই।
হল চলে যাবে চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে। রুমে রুমে বসবে মদের আড্ডা। র্যাগিং আর ঈভটিজিং হবে দৈনন্দিন বিষয়। থাকবে না পড়াশুনার পরিবেশ। ছাত্রীদের ধরে নিয়ে গিয়ে হলের পাশেই ঝোপঝাড়ে করা হবে ধষর্ণ । হবে না কোন প্রতিবাদ, প্রতিরোধ। অচিরেই ক্যাম্পাস হয়ে উঠবে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। গত দু'বছরের ছাত্রলীগের বেপরোয়া দষ্কর্ম তারই ঈঙ্গিত দিচ্ছে বারংবার।
এ কঠিন সত্য আজ উপলব্ধি করছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক , কর্মকর্তা ও সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা।
তাই নিজেদের রক্ষার তাগিদেই আজ সাধারণ ছাত্ররা যোগ দিয়েছে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে শুধু ছাত্রলীগকে রুখতে।
আসুন আমরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের রক্ষায় তাদের পাশে দাড়াই।