যেথায় ঘুমান প্রিয় নবী (সা.)
লেখাঃমাওলানা বায়েজীদ হোসাইন সালেহ
মদিনা একটি অতীব পবিত্র ও বরকতময়
নাম। প্রেমময় ও ভক্তিমূলক নাম।
আশেকদের ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু
মদিনা। এ নাম শুনলেই নবী প্রেমিকদের
হৃদয়ের গহিনে আলাদা অনুভূতি, অন্যরকম
শিহরণ খেলে যায়। জীবনে শুধু এক পলক
মদিনার ওই সবুজ মিনার দেখে অশান্ত
হৃদয়কে শান্ত করার জন্য নবী প্রেমিকরা
থাকেন ব্যাকুল। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম বরকতময়
শহর মদিনা। হেদায়েত আর জ্ঞানের
আলোয় উদ্ভাসিত এ শহর। বিশ্বনবীর
পবিত্র চরণধূলিতে এ শহর হয়ে উঠেছে
মহাবরকতময়। মদিনার রয়েছে অসংখ্য
গুণবাচক নাম। আল্লামা সামহুদি (রহ.)
'অফাউল অফা' নামক গ্রন্থে মদিনা
মোনাওয়ারার ৯৪টি নাম উল্লেখ করেছেন।
বহুল আলোচিত ক'টি নাম হচ্ছে; ১. মদিনা
২. তাইয়্যেবাহ ৩. তাবা ৪. দার ৫.
ইয়াসরেব।
পবিত্র মদিনার সবচেয়ে বড় গৌরব ও
ফজিলতের বিষয় হচ্ছে, প্রিয়নবী (সা.)
একে কেয়ামত পর্যন্ত আপন ঠিকানা
হিসেবে কবুল করেছেন। এই একটি কারণেই
মদিনার যত ফজিলত ও বরকত। আনাস (রা.)
থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী (সা.) বলেন, 'হে
আল্লাহ! আপনি মক্কার দ্বিগুণ বরকত
মদিনায় দান করেন।' (বোখারি ও মুসলিম)।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী
(সা.) এরশাদ করেন, 'নিশ্চয় ঈমান মদিনার
দিকে এমনভাবে গুটিয়ে আসবে, যেমন সাপ
গর্তের দিকে গুটিয়ে আসে।' মদিনার
অলৌকিক ক্ষমতা সম্পর্কে নবী করিম
(সা.) এরশাদ করেছেন, 'মদিনা হচ্ছে
পবিত্র, এটা পাপকে ছুড়ে ফেলে, যেমন
আগুন রুপা থেকে খাদকে দূর করে
দেয়।' (মুসলিম)। হজরত ইবনে ওমর (রা.)
থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) এরশাদ করেন,
'যার সামর্থ্য হয় সে যেন মদিনায় মৃত্যুবরণ
করে। কেননা যে ব্যক্তি মদিনায় মৃত্যুবরণ
করবে আমি তার জন্য সুপারিশ
করব।' (তিরমিজি)। এ কারণেই ওমর ইবনুল
খাত্তাব (রা.) সর্বদা দোয়া করতেন, হে
আল্লাহ! তোমার রাস্তায় আমাকে
শাহাদাত নসিব করো এবং তোমার রাসুল
(সা.) এর শহরে আমার মৃত্যু দাও। ইমাম
মালেক (রহ.) মদিনাকে মক্কার চেয়ে
বেশি বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ মনে করতেন।
এজন্য তিনি রাসুল (সা.) এর এ শহরে জুতা
পায়ে হাঁটতেন না এবং এখানে মৃত্যুবরণ
করার আশায় ৩০ বছর মদিনার বাইরে
কোথাও যাননি।
মুসলিম শরিফে বর্ণিত হয়েছে যে, কেউ
অসুস্থ হলে অথবা আহত হলে প্রিয়নবী (সা.)
এরূপ করতেন। আল্লামা জুরকানি (রহ.)
উপযুক্ত দলিল-প্রমাণসহ সেসব ব্যক্তির
অবস্থা উল্লেখ করেছেন, যাদের শ্বেত
রোগ ছিল এবং মদিনার মাটির বরকতে
তারা আরোগ্য লাভ করেছেন। আল্লামা
কোসতালানি (রহ.) একথাও লিখেছেন যে,
মদিনার মাটি সব রোগেরই মহৌষধ।
আল্লামা কাজি ইয়াজ (রহ.) এবং কাজি
আবু সায়েদ (রহ.) বলেছেন, বায়তুল্লাহর পর
পৃথিবীতে মদিনা শরিফই সর্বোত্তম
স্থান। কোনো কোনো ইমাম জমিনকে
আসমানের চেয়ে উত্তম এজন্য বলেছেন যে,
জমিনে প্রিয়নবী (সা.) এর দেহ মোবারক
বর্তমান রয়েছে। একজন কবির একটি
মর্মস্পর্শী পঙ্ক্তি বিশেষভাবে
উল্লেখযোগ্য, 'যে স্থানে আপনার (সা.) এর
দেহ মোবারক শায়িত রয়েছে, সে স্থানটি
সর্বোত্তম। তাঁর সুগন্ধিতে আকাশ-বাতাস,
পাহাড়-পর্বত মোহিত হয়ে
উঠেছে।' (তারিখে হারামাইন)।
বোখারিতে বর্ণিত আছে, মদিনার
পবিত্রতা পাপাচারের অপবিত্রতাকে
এভাবে দূরীভূত করে, যেভাবে স্বর্ণকারের
ভাটি রৌপ্যের ময়লাকে দূরীভূত করে।
খলিফা ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) যখন
মদিনায় প্রবেশ করেন, তখন বলেছিলেন,
আমার ভয় হয়, আমি যেন সেসব লোকের
অন্তর্ভুক্ত না হই, যাদের মদিনা থেকে
বের করে দেয়। পবিত্র মদিনার এ
বৈশিষ্ট্যটি বিশেষভাবে তখন প্রকাশিত
হবে, যখন শেষ জামানায় দাজ্জাল বের
হবে, তখন দাজ্জালকে মদিনা
মোনাওয়ারায় প্রবেশ করতে দেয়া হবে
না। আর তখন মদিনা থেকে মন্দ লোকদের
বের করে দেয়া হবে। আবু হুরায়রা (রা.)
বলেন, প্রিয়নবী (সা.) বলেন, 'কেয়ামতের
সময় পৃথিবীর ধ্বংসলীলা চলাকালে
মদিনা পরে ধ্বংস হবে।' (তিরমিজি)।