চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের দেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। এবন্দরের সঠিক এবং পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার হলে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরো ত্বরান্বিত হতো কোন সন্দেহ নেই। আর এই বিশ্বায়নের যুগে এরকম গুরুত্বপূর্ণ একটি বন্দর কেবল নিজেদের কাছে কুক্ষিগত না রেখে একে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উন্মুক্ত করে দিলেই কেবল বন্দর থেকে অর্থনৈতিক এই সম্ভাবনা আহরণ করা সম্ভব।
সুতরাং আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত যদি আমাদের বন্দর ব্যবহার করে এবং তার বিনিময়ে আমাদের বিপুল আর্থিক সমৃদ্ধি আসে তাহলে তার সমর্থন করা উচিত। আমাদের সবার সমর্থন করা উচিত। দলমত নির্বিশেষে সমর্থন করা উচিত।
কিন্তু তা আমরা করছি না। তার পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে। প্রধানতম হচ্ছে- ভারতকে আমরা একটি বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে গ্রহণ করতে পারছি না। ভারত যেভাবে আমাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সংস্কৃতিক্ষেত্রে আগ্রাসন চালাচ্ছে তাতে ভারতকে বন্ধু হিসেবে নিতে হলে বিবেক বিসর্জন দিতে হবে। এছাড়া প্রতিনিয়ত সীমান্তে আমাদের জনগণকে হত্যা করে দেশটি প্রমাণ করছে যে সুযোগ পেলে সে আমাদের সবাইকে বন্দুকের সামনে দাড় করিয়ে দেবে।
এহেন একটি রাষ্ট্রের কাছে দেশের হৃদপিণ্ডকে বন্ধক দিতে হলে ক্রিস্টফার মার্লোর ড. ফস্টাস চরিত্রের মতো নিজেদের মনকে শয়তানের কাছে বিক্রি করে তবেই তা করা যেতে পারে।
ভারত কখনো একটি সৎ প্রতিবেশী হবে না তা নয় হয়তো। তবে এখন তার আচরণ কিছুতেই বন্ধুসুলভ নয়, বরং প্রভূসুলভ। দেশটি আমাদের সহযোগিতা করতে চায় না, নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। তাই আমাদের সকল ন্যায্য দাবিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নানা অন্যায় আচরণ করে যাচ্ছে।
এরকম অবস্থায় আমরা আমাদের বন্দরকে ভারতের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারিনা। অতীতে ভারত অনেকবার আামাদের বন্দর ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছে। আমাদের অনুরোধ করেছে। কোন সরকার দেয়নি। দেয়ার সাহস করেনি। কারণ বেশীরভাগ জনগণ ভারতকে এই সুবিধা দিতে রাজি নয়। বিশেষত চট্টগ্রামের মানুষ।
কিন্তু এবার সম্পূর্ণ এক ভিন্ন ধরনের পরিস্থিতি তৈরী করা হয়েছে। এবং সেটা ভারতের কূটকৌশলে আর বর্তমান সরকারের সদিচ্ছায়। কয়েকদিন আগে ভারতের কেমন গোছের একজন মন্ত্রী বোধহয় মনী শংকর টাইপের নাম- বাংলাদেশে সফরে এসে আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে বেশ কিছু মন্তব্য করে গেছেন। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠী থেকে শুরু করে এদেশের পাবলিক টয়লেট নিয়ে মন্তব্য করা ভারতের রাষ্ট্রদূত আর মন্ত্রীদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সেই নিয়ে অবশ্য আমাদের বুদ্ধিজীবী মহলে তেমন কোন খেদ চোখে পড়ছে না। বোধকরি ভারতের হাতে নিজেদের অপদস্থ হতে দেখলে তাদের কোন প্রতিক্রিয়া হয় না।
যাই হোক, মনিবাবু যা বললেন, তার মর্ম হচ্ছে- বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থা খুবই নাজুক। খুবই অনুন্নত। এতো অনুন্নত বন্দর নিয়ে ভারতের কোন আগ্রহ নেই। তবে যদি বাংলাদেশ অনুরোধ করে (!!) তবে ভারত চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে সহায়তা করার বিষয়টি ভেবে দেখবে। তখন হয়তো বন্দর ব্যবহারের বিষয়টিও তারা বিবেচনা করবে।
মতলুব আনাম সহ আরো বেশ কিছু ব্যবসায়ী নেতা আর আমাদের সুশীল সমাজ, আমলা, সাংবাদিকরা সবাই সহাস্যবদনে মনিবাবুর কথা শুনলেন। বোধকরি শীঘ্রই বাংলাদেশ ভারতকে আমাদের বন্দর উদ্ধার করার গুরু দায়িত্ব নেয়ার মহত্ত্ব প্রদর্শণ করার অনুরোধ জানাবেন।
কী চমৎকারভাবেই আমাদের দেশের মানুষের মগজ ধোলাইয়ের কাজটি করছে তারা!! যেখানে আমরা তাদের বন্দর ব্যবহার করার অনুমতিই দিতে চাই না, সেখানে এমন অবস্থা তৈরী করা হচ্ছে, যাতে আমাদের বন্দর ব্যবহার করার জন্য তাদের অনুরোধ করি।
এমনভাবে নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে যে অচিরেই আমাদের বন্দর রক্ষার জন্য ভারতের সহযোগিতা চেয়ে পত্রিকায় বিক্ষোভ বিবৃত্তির খবর আসাটাও বিচিত্র নয়। সেই শেষ কৌতুকটি দেখার অপেক্ষায় আছি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




