পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী বেলা ১২.০০ মিনিটে আমির ভাই ফোন দিয়ে বলল 'ভাই আপনি কি আসছেন, আমি অলরেডী বুকিত বিনতাং আছি'। আমি তখন মাত্র শেভ করতে যাব। বললাম ভাই অনদা ওয়ে আছি, আধা ঘন্টার মধ্যে পৌছে যাব। তাড়াতাড়ি গোষলটা সেরেই দিলাম দৌড়। বেলা ১২.৪০ মিনিটের মধ্যেই পৌছে গেলাম প্যাভিলিয়নের সামনে। সেখান থেকে আমির ভাইয়ের সাথে জাফরানে গিয়ে বসলাম, হিসেব মত তখনো আরো ৫ জন ব্লগারের আসা বাকী। কি করব, ভাবলাম একটা ড্রিংসের অর্ডার দিই, তখনি ইকরাম ভায়ের ফোন, উনি জানালেন তিনি সুঙাই ওয়ান প্লাজার সামনে আছেন, আমরা দুজন ছুটলাম তাকে রিসিভ করে আনতে। গিয়ে দেখি সুঙাই ওয়ান প্লাজার সামনে কোন সুদর্শন বালক নেই। আবার ফোন দিলাম, বললেন উনি সুঙাই ওয়ানের সামনেই আছেন, কারন তিনি বড় সাইনবোর্ডে সুঙাই ওয়ান লেখা পরিষ্কার পড়তে পারছেন, তবে সাইনবোর্ডের পাশে কার পার্কিঙের রাস্তা রয়েছে। বুঝতে পারলাম তিনি প্লাজার পেছনের বড় সাইনবোর্ডের নিচে আছেন। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করা হল। পরে ভাবলাম বারে বারে ব্লগারদের পেছনের সাইনবোর্ডের নিচ থেকে উদ্ধার করার চেয়ে বাকী ব্লগাররা আসা পর্যন্ত প্লাজার সামনেই অপেক্ষা করি। কিছুক্ষন পর একসাথে তিনজন ব্লগার জনাব ইয়াকুব, নাবিল, আর সোনা ভাবীর জামাই ওরফে ১১স্টার ওরফে আরিফ ভাই। সবাইকে নিয়ে জাফরান রেস্টুরেন্টে গিয়ে আসন গ্রহন করলাম। ততক্ষনে সবার পেটের বারোটা বাজিয়ে আরো আড়াইঘন্টা চলে গেছে, মানে বেলা ২.৩০। কিন্তু পেটের পীড়া সহ্য করেও নিরুপায় ছিলাম, কারন গতকাল 'ব্লগডে আমি আসছি, আপনি আসছেনতো' পোষ্ট দিয়ে সবাইকে নেমন্তন করা ব্লগার জাহীদ ফারুকী সাহেব এখনো এসে পৌছান নাই। তাই সবাই ড্রিংসের অর্ডার দিলাম। কিছুপর ফারুকী সাহেবের ফোন এল, তিনি স্টেশনে আছেন, উনাকে দৌড়ে গিয়ে রিসিভ করলাম।আমাদের নির্ধারিত ভেন্যুর ফটকের পাশেই বেশ কিছু লুল ফেলার পাত্র দেখতে পাই। সোনা ভাবীর জামাই দেখি মূল ভেন্যু ছেড়ে ফটকের কাছে দাড়িয়ে আছে। ফারুকী সাহেব কে কৌতুহলবসত জানতে চাইলাম লুল ফেলবেন নাকি, উনি জানালেন তার অপারগতার কথা, কারন উনার এখন তিশা আছেন। তবে হঠাৎ করেই সোনা ভাবীর জামাইকে উৎফুল্ল দেখা গেল, কারন পেছনের লালজামা পরা এক পাত্র ইঙিত করে যদিও বলেছিলেন ওটা ফারুকী সাহেবের জন্য ভাল হয়, তবে আমরা কিছুটা আন্দাজ করেছি ওটা ঠিক কার পছন্দ

।
এবার এক এক করে ব্লগাররা নিজেদের পরিচয় দেয়া শুরু করল, পরিচয় পর্ব শেষ হল, সবার পেটে খিদে, তবুও শুধু পরিচয় পর্ব সেরেই খাওয়া শুরু? কেমন যেন দেখায়, এটাতো বিয়ে বাড়ীর অনুষ্ঠান নয়, তাই সবাই নিরসমুখে অনিচ্ছাস্বত্তেও এই ব্লগদিবস পালনের এজেন্ডা কি জানতে চাইলেন। অনিচ্ছাকৃত কিছু আলোচনা হল, তারপর খাবারের অর্ডার হল। তখন ৩টার মত বাজে। কাচ্চি বিরিয়ানীর অর্ডার দেয়া হল। ড্রিংসের অর্ডার দিতে গিয়ে কিছু ব্লগার কিছুটা ঝামেলা বাধাবার চেষ্টা করেছিল, সেটা অন্যান্য ব্লগারদের কারনে সফল হতে পারলেন না। সোনা ভাই বাড়ী থেকে পণ করে এসেছিলেন কোন ছাগু পেলে আস্ত গিলে খাবেন, কিন্তু গিয়ে যখন কোন ছাগু পাননি, তাই বিরানীর খাসীর হাড়ের রস পর্যন্ত পাইপ দিয়ে টেনে খেয়ে ফেললেন।
উদরপূর্তি শেষে বেশ কিছু গ্যানগর্ভ আলোচনা হল। বাংলা ব্লগিং, সামু, সামুর ট্যাকনিকাল সমস্যা, এসব সমস্যা সমাধানে করনীয় এসব নিয়ে আলোচনা করলেন টেকটিউন এবং সামুর ব্লগার এবং আইটি বিশ্লেষক ইয়াকুব ভাই, নাবিল ভাই। পরে ফারুকী সাহেব ইয়াকুব ভাই আমীর ভাই সহ অন্যান্যরা দেশ, জাতি, জাতীর ভবিষ্যত, আর্থসামাজিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনায় অংশ নেয়। (টেকটিউনের হিট ব্লগার নাবিলকে দেখলাম অবশ্য কিছুটা চুপচাপ আর লজ্জাবতী সেজে বসে আছে, কারনটা অবশ্য পরে জেনেছিলাম, তিনি নতুন বিবাহিত, আর বুঝলাম, শ্বশুর বাড়ীর নতুন জামাইয়ের ধকলটা এখনো কাটেনি।)

আলোচনা গভীর থেকে গভীরতর হতে লাগল, এক সময় দেশ জাতীর এই দুঃসময়ে কে আমাদের আশা দেবে, কে ভরষা দেবে এসব চিন্তা সিরাজুদ্দৌলার চেয়ে ব্লগারদের মাঝে দেখা দিল। আলোচনা হার্ডলাইনে চলে যাওয়ার আগেই ওয়েটার এসে বলে গেল ' ভাই আপনারা একটু আস্তে কথা বলুন'

। আলোচনার মাঝে অযাচিত ওয়েটারের কথায় কেউ ভ্রুক্ষেপ না করে আবার আলোচনা চলতে লাগল। একসময়ে ইকরাম ভাইয়ের ফোন আসায় আলোচনার স্বিদ্ধান্তহীন অবস্থায় শেষ হল।
কি পেলাম:
আসলে আমরা ব্লগ ডে উদযাপন করতে পারিনি, কারন ১৯ তারিখের ব্লগডে ২৩ তারিখ উদযাপিত হতে পারেনা, কিন্তু ব্লগডে কে উপলক্ষ করে বেশ কয়েকজন ব্লগার মিলিত হতে পারে। কিছুটা সময় আনন্দ করতে পারে। হাসাহাসি কিংবা মজা করতে পারে। এটা যদি ব্লগডে উদযাপন করা হয়, তবে আমরা সফলভাবেই উদযাপন করেছি। আর যদি তা না হয়, তবে ব্লগডে কে পূজি করে কিছু ব্লগার আনন্দ করতে পেরেছে, এটাই বা কম কি? আমি ব্যাক্তিগত ভাবে সামুকে অনেক ধন্যবাদ দিই, কারন এতগুলে সুন্দর মনের ব্রিলিয়ান্ট মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য। সব ব্লগারদের মধ্যে দেশপ্রেম প্রবল দেখতে পেলাম। সবাই চায় দেশের উন্নতি হোক, নোংরা রাজনিতীর অবসান ঘটুক, কারন আমাদের সূর্যসন্তানদের কোন অভাব না থাকা স্বত্তেও আমরা এতটা পিছিয়ে কেন?
সবশেষে আমরা পরবর্তী ১-২ মাসের মধ্যে আবার একসাথে কোথাও আড্ডা দেয়ার পরিকল্পনা জানিয়ে বিদায় নিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:২৩