মনে পড়ে অনেকদিন আগের একটা স্মৃতি। আমার বয়স তখন হয়ত দশ কি বার বছর। আম্মার এক হিন্দু বস ছিলো, নাম কানু লাল শীল। আম্মা তাকে কানু দাদা ডাকত, সেই সুবাদে আমরাও সবাই কানু দাদা ডাকতাম। এক সকালে অফিশিয়াল কোন এক সমস্যার কারনে সাহায্যের জন্য আম্মা তার বাড়ীতে দেখা করতে গেলেন। সাথে দশ বছরের আমাকেও নিয়ে গেলেন। চিড়া মুড়ী খই নারিকেল সব একসাথে মাখিয়ে খুব সুস্বাদু একটা খাবার বানিয়ে দিলেন কানুদাদার বউ। আমি খাচ্ছিলাম। আম্মা কথা বলছিলেন। ড্রইংরুমে বসাই ছিলাম আমরা। হঠাৎ পাশের বাড়ীতে মনে হয় কোন মন্ত্র বা প্রাতঃকালীন পূজা দেওয়া হচ্ছিলো বা ভজন গাওয়া হচ্ছিলো মনে হয়। রামো রামো হরে রামো এই ধরনের কিছু।
আমি ভজন শুনে খুব খুশী হয়ে চিৎকার দিয়ে বললাম হরে কৃষ্ন হরে রাম, খ্যাতার তলের মালতীর আম। হঠাৎ সব নিস্তব্ধ। কানুলাল আর তার স্ত্রী একে অপরের দিকে চোখাচোখী করছে, আম্মা আমার দিকে কটমটিয়ে তাকালেন।
সেদিন সত্যিকার অর্থে আম্মার চোখ রাঙানো বুঝতে পারিনাই।
তবে আজ যখন হেফাজতের কর্মীরা ধর্মানুভূতিতে আঘাতের শাস্তি মৃত্যুদন্ড করার দাবী তুলছে তখন মনে পড়ে গেল, সেদিনের দশ বছরের আমি কানুলালের ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিয়ে যে অপরাধ করেছিলাম, সেটার শাস্তি কি মৃত্যদন্ড ছিলো?
ধর্মানুভূতি শুধুমাত্র মুসলমানদের একার না। সব ধর্মেরই ধর্মানুভূতি থাকে। প্রতিনিয়ত হিন্দুদের আমরা যে মালাউন বলে গালি দিচ্ছি, বৌদ্ধদের বাড়ীঘর পুড়িয়ে দিচ্ছি। মূর্তি ভেন্গে দিচ্ছি। হেফাজতের ভাইদের কাছে প্রশ্ন, সেসব কি কারো ধর্মানুভূতিতে আঘাতের পর্যায়ে পড়ে না? যদি পড়ে, তবে বিশ বছর পর বাঙলাদেশে মানুষ খুজে পাওয়া যাবেনা। কারন সব ধর্মের মানুষই মনে করে তার ধর্ম ব্যাতীত অন্য সকল ধর্ম নিকৃষ্ট। অন্যের স্থান হবে জাহান্নাম অথবা নরকে। সে হিসেবে সব ধর্মের লোকেরাও অন্য ধর্মের লোকদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিয়েই যাচ্ছে।
পবিত্র কোরান মজীদে কি কোথাও ধর্মানুভূতিতে আঘাতের শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেয়ার কথা লেখা আছে? পবিত্র সহীহ সিত্তা হাদীসে কি লেখা আছে? আপনারা বলবেন না। বরং পবিত্র কোরানের সূরা নিসায় পরিষ্কার লেখা আছে
" তোমরা যদি কোথাও কাউকে ইসলামের বিরুদ্ধে কুৎসা/অপবাদ বা গালিগালাজ করতে দেখো, তবে তার প্রতিবাদ করো, যদি এতেও সে ক্ষান্ত না হয়, তবে সেস্থান ত্যাগ করো।"