somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খুনসুটি

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জানুয়ারী ২, ২০১৩, সুমন আর তিন্নির বেকায়দা ভালবাসা র ৬ষ্ঠ বর্ষ পূর্তি আর ৭ম বর্ষে পদার্পন। দেখতে দেখতে কেটে গেছে বহু দিন, বহু বছর। ভালবাসা কমেনি লেশমাত্র, বেকায়দাও আছে ঠিক আগের মতই।

সুমন আগের মতই লেট লতিফ আছে, তিন্নি আছে আগের মতই উচ্ছল। ছয় বছরের পথচলা শেষে দুইজন দুইজনকেই সমানভাবে বুঝতে পারে। সমস্যা একটা আছে, সেটা সুমনের। তিন্নির রাগ করার ব্যাপারটা সে এখনও ঠিক ধরতে পারে না। মাঝে মাঝে আন্দাজ করতে পারলেও সেই রাগের কারণটা বুঝতে পারে না কখনোই। আর তিন্নির রাগ করার মানেই হল ইয়া বড় বড় চোখগুলো মূহুর্তে পানিতে ভরে ওঠা। এটা হল আরেকটা কঠিন বেকায়দা।

যাহোক, জানুয়ারীর ৩ তারিখে ঠিক এমনই এক বেকায়দার শিকার হয়েছিল সুমন। সেই অবস্থায় আবার রাগের কারণ জিজ্ঞাসা করায় তিন্নির রাগ বেড়ে দ্বিগুন হয়ে গিয়েছিল। সে এক বিরাট বেকায়দা সিচুয়েশন।

আজ সন্ধ্যায় সুমন আর তিন্নি বসে ছিল ক্যাফে গুনগুন রেস্টুরেন্টে। ৩ তারিখের ঘটনা নিয়ে সুমন-তিন্নির আলাপচারিতাই আজকের গল্পঃ

সুমনঃ ঐ...

তিন্নিঃ কি?

সুমনঃ ঐ তুই কি রাগ করছিস?

তিন্নিঃ না!

সুমনঃ ঐ তুই কি কেঁদে দিবি?

তিন্নিঃ ক্যান?

সুমনঃ না, এমনিতেই। আগেভাগে জিজ্ঞাসা করে নিচ্ছি আর কি!

তিন্নিঃ কান্নার কাজ করলে অবশ্যই কাঁদব। কিচ্ছু বুঝিস না ক্যান তুই?

সুমনঃ তোর যেসব কারণ, ঐডা বুঝতে পারার ক্ষমতা আমার নাই রে...

তিন্নিঃ নাই ক্যান? তুই আসলেই একটা... গরর

সুমনঃ তোরে একটা গল্প বলি শোন! এইটা শুনলে তুই বুঝতে পারবি যে আমি ক্যান তোর রাগের কারণ ধরতে পারি না।

তিন্নিঃ তোর একেকটা যা গল্প! আচ্ছা বল দেখি কি গল্প বলবি।

সুমনঃ মনে কর তুই আর আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। এখন আমরা একটা রিক্সায় উঠব, ঠিক আছে?

তিন্নিঃ আচ্ছা, তারপর?

সুমনঃ তারপর আমি একটা রিক্সা ডাকলাম। এখন সেই রিক্সায় উঠতে গিয়ে তুই একটু হোঁচট খাইলি। আমি এইটা দেখে একটু হেসে দিলাম।

তিন্নিঃ ঐ শালা! হোঁচট খাইলাম মানে? রিক্সায় উঠতে গেলে কেউ হোঁচট খায়? আর সেইটা দেখে তুই হেসে দিলি ক্যান বল।

সুমনঃ আরে ধুর! হোঁচট মানে হইল যে পড়ে যাওয়ার মত ভাব হইছিল কিন্তু পড়িসনাই, উঠে পড়ছিস রিক্সায়। আর এইডা তো একটা গল্প, হাসলে সমস্যা কি?

তিন্নিঃ কি গল্প ফাঁদছিস কে জানে! যাই হোক আগে বল, উলটাপালটা কিছু বানাইলে আজকে খবর আছে তোর।

সুমনঃ আচ্ছা করিস খবর। তো, রিক্সা কিছুদূর যাওয়ার পরে আমি খেয়াল করলাম যে তোর মুড অফ। আমার মনে হল যে তুই মনেহয় রিক্সায় উঠতে গিয়ে ব্যাথা পাইছিস। আমি তোরে জিজ্ঞাসা করলাম, 'কি রে ব্যাথা পাইছিস?' তুই তো কোন কথা বলিস না, রাগ হলে তুই রেগুলার যেটা করিস...

তিন্নিঃ খালি আমার দোষ ধরিস! গল্প বলতেছিস গল্প বল।

সুমনঃ তো এইবার আমার মনে হইল যে মনেহয় আমি কিছু করছি তাই তোর রাগ হইছে। খুঁজতে খুঁজতে আমার মনে পড়ল আমার হেসে দেওয়ার কথা। তাই এবার আমি বললাম, 'আমি হাসছি তাই তুই রাগ করছিস?' এই কথা শুনে যথারীতি তোর কান্না শুরু হয়ে গেল। এই অবস্থায় আমি কি করব কিছুই বুঝতে পারতেছিনা। তাই জিজ্ঞাসা করলাম, 'তুই কান্না করতেছিস ক্যান?'। এইবার হইল আরও সর্বনাশ! কান্না দেখি আরও বেড়ে গেল এইবার।

তিন্নিঃ তাহলে আমি কান্না করতেছিলান ক্যান?

সুমনঃ আমারও তো প্রশ্ন সেইটাই। আমিও তো সেইটা বুঝতে পারতেছিনা।

(ওয়েটার দুই কাপ কফি দিয়ে গেল, সেকারণে কিছুক্ষণ নীরবতা)

তিন্নিঃ কি রে! বল আমি কাঁদতেছিলাম ক্যান?

সুমনঃ উঁহু। এত তাড়াতাড়ি তো না। তুই কি কারণটা সাথে সাথে বলিস?

তিন্নিঃ কান্না শেষ হলে তো বলি! বল এইবার!

সুমনঃ কান্না থামার পরে তুই যেইটা বললি সেইটা হল, তুই হোঁচট খাওয়ার পরে রিক্সাওয়ালাও হেসে দিছিল। তাই তোর রাগ হইছে। আমি জানতে চাইলাম এইখানে কান্না করার কি হইল? তুই বললি যে, 'আমি ঐটা ভুলে থাকার চেষ্টা করতেছিলাম, কিন্তু তুই বারবার আমাকে সেইটা মনে করায় দিচ্ছিলি। ব্যাথা পাইছি নাকি, ক্যান রাগ করছি এইসব জিজ্ঞাসা করতেছিলি, তাই আমার কান্না পাইছে'। এখন তুই আমাকে বল, আমি ক্যামনে এইটা বুঝব?

(মিটিমিটি হাসে তিন্নি)

তিন্নিঃ ঠিকই তো! জিজ্ঞাস করবি ক্যান তুই?

সুমনঃ জিজ্ঞাসা করব না?

তিন্নিঃ ঐ রিক্সাওয়ালারে ডাকবি ক্যান তুই?

সুমনঃ মানে?

তিন্নিঃ মানে বুঝিস না? বলছি না তুই আসলে কিচ্ছু বুঝিস না। বুঝিস না ক্যান তুই? ক্যান? ক্যান?

সুমন চুপ। আবারও বেকায়দা!



৭ই জানুয়ারী, ২০১৩, খুলনা।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×