হরতালের ডামাডোল আবার শুরু হয়ে গেলো। সকালে অফিসে গেলাম খুব আরামে। রাস্তায় গাড়ি কম, একটু অপেক্ষার পর পেয়ে গেলাম মহাখালিগামি চারচাকার টেম্পু। যাত্রী ভরে যাওয়া মাত্র তুফান বেগে ছুটতে শুরু করলো। মিরপুর ১ থেকে মহাখালি আস্তে সময় নিলো আনুমানিক ১৫মিনিট। সেখানে মিনিট পাঁচেক অপেক্ষার পর আরেকটা চার চাকা। গুলশান ২। হিসাব করে দেখলাম, মিরপুর ১ থেকে গুলশান ২ পর্যন্ত আসতে সময় লাগলো ৩০মিনিটের মতো। আর কি নির্মল পরিবেশ, ধোঁয়া নেই, শব্দ নেই। টেম্পুর হেল্পারের শুধু চিৎকার "আগে বাড়া, আগে বাড়া"। পিকেটারদের ভয়!
অফিসের পরিবেশ নিরিবিলি। বস লেভেলের লোকজন কম। আমরা কামলা শ্রেনী পুরোপুরি উপস্থিত! তবে অলসতার ষোলকলা পূর্ণ করে! কেউ ১০টায়, কেউ ১১টায় একজন দেখি ১২টায় আসলো!
রুটিন কাজে মন দিলাম। হঠাত পেছন থেকে চিৎকার "এই... ঢাকা শহরের নেক্সট মেয়র পেয়ে গেছি!"ব্যাপারটা বোঝার জন্য ঘুরতে হলো। দেখি বিডি নিউজে জয়নাল আবেদিন ফারুকের ছবি। খালি গায়ের আমাদের এক ন্যতা! চিতকাত হয়ে নানান ভঙ্গিমায় তোলা ছবি। ঘাড়ে হাল্কা রক্তও দেখা যাচ্ছে! কলিগ বলে যাচ্ছিলেন "খোকার না মাথা ফাটাইছিলো এইরকম? তার পর না সে মেয়র হইছিলো?" আমি মাথা নাড়লাম "নাহ, এরা গরুর রক্ত জোগাড় করতে পারে নাই।" পত্রিকায় ছাপানো সাদেক হোসেন খোকার সেই ছবি এখনো মনে আছে। রক্তে ভেসে যাওয়া একজন মানুষের ছবি। আমি জানিনা কোন যাদুবলে খোকা সেদিন দাঁড়িয়ে ছিলেন! দুষ্ট লোকেরা বলেছিলো ওইগুলা নাকি গরুর রক্ত ছিলো! সত্যমিথ্যা আল্লাহ জানে!
বাসায় এসে বিভিন্ন পত্রিকা পড়লাম। যা জানলাম, নতুন কিছু পেলাম বলে মনে হলোনা। শুধু আরেকজন অশালিন নেতাকে দেখলাম ভালো করে। আমাদের ন্যতাগনের শালীনতা নিয়ে কিছু বলা মুশকিল। কিন্তু রাজপথে গায়ের গেঞ্জি খুলে পুলিশকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ কোন নেতা করেছিলেন কিনা জানিনা!! নাসিম, মতিয়া চৌধুরি এবং আরো অনেকে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে ছিলেন। বিএনপি বা আম্লিগ কোন দলই বিপরিত পক্ষের কাউকে দয়া দেখায়নি। কিন্তু এই ন্যতা সম্পূর্ণ অন্য রকম! টান মেরে গায়ের গেঞ্জি খুলে ফেললেন। তারপর তার মাতৃভাষায় কথোপকথন শুরু করলেন! অশ্লিল ন্যতা, অশ্লিল রাজনীতি আর অশ্লিল হরতাল!
ফারুক সাহেব কি ত্যগি কোন রাজনীতিবিদ? অন্তত মতিয়া চৌধুরি বা ডেডিকেটেড কোন রাজনীতিবিদের সাথে তার তুলনা করা যায়? হরতাল ডেকে ক্লান্ত নেত্রী রাজপথে দলীয় কর্মকাণ্ড না দেখে ক্ষুব্দ হয়েছিলেন! মনে হয় ফারুক সাহেব নেত্রীর ক্ষোভকে খুব সিরিয়াস্লি নিয়েছিলেন! ভোর ৬টায় একশনে নাম্লেন তাই সংসদ ভবন এলাকায়। রোদ তেতে গেলে রাস্তায় থাকেন কিভাবে? আহা, সোনার শরীর! আবার ক্ষমতায় গেলেই আর চিন্তা নেই, আজকের ডেডিকেশন আর ঘর্মাক্ত শরীরের মূল্য কি আর দল দিবেনা?
হরতালে কারা রাজনীতিবিদদের পেটায়? বি এন পি আমলে ছিলেন এক কোহিনুর! বি এন পির "কোহিনুর"। ওলের বদলে বাঘা তেঁতুল নিয়ে এখন লীগ নেমেছে রাজপথে। পুলিশ বাহিনিতে ছাত্রলিগের সোনার ছেলেরা! ফারুক সাহেবের মতো অশ্লিল কিছু লোক ন্যতা হওয়ার গুনে তাদের মাসল দেখান রাজপথে!
আজকের হরতালে দেশ বা জাতি কী পেলো জানিনা। তবে ঢাকাবাসি মনে হয় তাদের একজন মেয়র পেয়েই গেলো!
আবেদিন সাহেব, নেত্রী আপনার ডেডিকেশন দেখেছেন। আপনাকে হাস্পাতাল পর্যন্ত "নিতে" হয়েছে সেটা মিডিয়াতে এসেছে! দয়া করে ওই নোংরা শরীর টা ঢাকুন! আশেপাশে মহিলা সাংসদ দের সামনে খালি গা হতে আপনার লজ্জা করেনি এতে আমরা আরো মূগ্ধ! দেশ এবং জাতির প্রতি আপনার এই ভালোবাসা আমাদের মনে থাকবে!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




