বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কোনটা তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, দেশের আয়তনে সবচেয়ে বড় পাহাড় কোনটা—তা নিয়ে তেমন দ্বিধা নেই। প্রায় ৮,১৬৭ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত গারো পাহাড়কে সবাই একবাক্যে স্বীকৃতি দেয়। এই বিশাল পাহাড় বাংলাদেশের শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা ছাড়াও ভারতের মেঘালয় পর্যন্ত বিস্তৃত।
এই গারো পাহাড়েই রয়েছে একটি সীমান্তবর্তী গ্রাম—হারিয়াকোনা, যাকে বলা হয় গারো পাহাড়ের শেষ গ্রাম। এই গ্রামে গিয়েই আমি খুঁজে পেয়েছি গারো সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার রঙিন গল্প, অদ্ভুত কিছু প্রাকৃতিক বিস্ময় আর এক টুকরো ভিন্ন সংস্কৃতির ছোঁয়া।
গারো সম্প্রদায়ের বিশেষত্ব
গারোরা মূলত নিজেদের বলে আ’চিক। তাদের সামাজিক কাঠামো মাতৃতান্ত্রিক—অর্থাৎ সম্পত্তি ও উত্তরাধিকার নারীর মাধ্যমে চলে। বিয়েতে ছেলেরা চলে যায় মেয়ের বাড়িতে জামাই হয়ে। আবার এক মাহারীর (গোত্রের) মধ্যে বিয়ে করা তাদের কাছে নিষিদ্ধ।
আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো—খেলাধুলার সময় স্বামী-স্ত্রী দাঁড়ায় আলাদা দলে। এক মাহারীর লোকজন অন্য মাহারীর বিপরীতে প্রতিযোগিতা করে। ফলে খেলাধুলায় স্বামী-স্ত্রীও হয়ে ওঠে প্রতিপক্ষ!
প্রাকৃতিক বিস্ময় – অটোমেটিক টিউবওয়েল
এই পাহাড়ে দেখা যায় এক অদ্ভুত প্রাকৃতিক ঘটনা। কিছু নলকূপে নিজে নিজে পানি ওঠে—কোনো চাপ ছাড়াই। ঠাণ্ডা সেই পানি যেন মুহূর্তেই ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়।
আমার যাত্রা
হারিয়াকোনা গ্রামে যাওয়ার পথে চোখে পড়েছে রাবার বাগান, ঘোড়ার গাড়ি, ঝিরি আর কাঠের ব্রিজ। গ্রামের নারীদের কঠোর পরিশ্রম, মাটির তৈরি বাড়িঘর—সবকিছু মিলিয়ে মনে হয়েছে বইয়ের পাতায় পড়া গারো জীবনযাত্রা হঠাৎ করে যেন বাস্তব হয়ে উঠেছে।
সবশেষে পৌঁছে যাই সীমান্তের কাছে শেষ বাড়িতে। বাড়িটি পার হলেই ভারতের মেঘালয়। সেখানকার নীরবতা, পাহাড়ি প্রকৃতির শান্ত সৌন্দর্য আর মানুষের আন্তরিকতা আমাকে অভিভূত করেছে।
এই ভ্রমণের প্রতিটি মুহূর্ত আমি ধারণ করেছি ক্যামেরায়। আপনাদের জন্য তুলে এনেছি গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য, গারো সম্প্রদায়ের ব্যতিক্রমী জীবনযাত্রা আর সেই সীমান্তবর্তী শেষ গ্রাম হারিয়াকোনার অভিজ্ঞতা।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


