somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি তোমা বিনে ঘোর সংকটে..!!!

২১ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ সকাল ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে ইরাকের আল-যায়েদীর ছুঁড়ে দেয়া জুতা বিশ্ব জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। স্বাভাবিক ভাবে বাংলাদেশের মানুষের মাঝেও তা ব্যাপক আলোচনা ও কৌতুহলের জন্ম দেয়। পরিচিতজনেরা দেশ থেকে যোগাযোগ করে জানতে চান খোদ যুক্তরাষ্ট্রে ঘটনাটির প্রতিক্রিয়া কেমন!!


বেশ কিছু পত্রপত্রিকা ও বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত প্রতিক্রিয়া অন্য এক আমেরিকার পরিচয় তুলে ধরে, বিশ্বের বিশেষ করে আমাদের দেশের মানসিকতার সাথে যা সম্পূর্ণ বিপরীত। পড়ে খুব ভালো লাগে, মুগ্ধ হই। তবে হোঁচট খেলাম আমাদের বাংলা ভাষাভাষির বিশেষত বাংলাদেশিদের ব্লগে এসে!!!!!!
-আল-যায়েদী ও জর্জবুশের পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে নিজেদের মাঝে শুরু হয়ে গেছে কাঁদা ছুঁড়াছুঁড়ি, আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ!!! একে অপরের প্রতি হামলে পড়ছেন, অশ্লীল অশ্রাব্য সব ভাষার অস্ত্র নিয়ে!! কে কাকে কতো খানি নির্মম ভাবে আঘাত করে কথা বলতে পারেন. সেই প্রতিযোগিতা যেন!!! আর ঘটনাটি ঘটেছে আমাদের মহান বিজয় দিবস, ১৬ ই ডিসেম্বর!!

যে ইরাকে এই ঘটনা, সেখানে ঘটনার সমর্থন ও বিরোধিতা করে দুটো পক্ষ সৃষ্টি হলেও সংঘর্ষ নয় বরং এক ধরনের ঐক্যের সূচনা হয়েছে বলে নে করেন। খোদ মার্কিন সংবাদ পত্রে কোথাও কাউকে আক্রমণ করে, আঘাত করে কোন বক্তব্য চোখে পড়েনি, বরং সেখানে নিজেদের আত্মসমালোচনা কিছু পড়েছি। বিভিন্ন মিডিয়ায় কৌতুক আর মজার আলোচনা..... আর আমরা?

কি অদ্ভুত জাতি আমরা! কোথাকার আল-যায়েদী আর বুশ... আমার দেশের মানুষ যখন অনাহারে দিন কাটায়, তাঁদের দেশের মানুষের মাঝে এতোটুকু বিকার ঘটেনা। বন্যা সাইক্লোন আর ঘূর্ণীঝড়ে আমরা যখন মাটির সাথে মিশে যাই, তারা কেউ ফিরেও তাকায়না। শীতবস্ত্রের অভাবে আমরা যখন মানবেতর জীবন যাপন করি, কেউ একটি কম্বল পাঠিয়ে আমাদের উষ্ঞতা এনে দেবার চেষ্টা করেনা। আজ আমরা যারা লড়াই করছি, আক্রমণ পাল্টাআক্রমণ করে একজন অপর জনকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছি, এই আমাদের দুজনের বাবা, মা ভাই বোন কষ্ট করে, অভুক্ত থাকে; বিপন্ন হয় আমাদেরই আত্মীয় পরিবার পরিজন আর বন্ধবান্ধবের জীবন!!!!

মুক্তি যুদ্ধের পক্ষে বড় বড় কথা বলে পরক্ষণেই হামলে পড়ি আরেকজন বাংলাদেশির উপর। বাকসর্বস্ব দেশ প্রেম আমাদের... একবার হিসেব করে দেখিনা দেশের জন্য নিজে কতোখানি করেছি, কি করেছি। ভাবখানা এমন যেন, যে যতো জোড়ালো ভাষায় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পারে, তার দেশপ্রেম ততো বড়। অতি সহজেই কারনে অকারনে আমরা নিজেরা একজন আরেকজনকে ভারতের দালাল পাকিস্তারে দালাল বলে গালাগাল করি!! কি অদ্ভুত! ভারত পাকিস্তানের সম্পর্কে যে এমন টানাপোড়ন, তাঁরাও বোধহয় নিজেদের এভাবে আক্রমণ করেনা!!!


নিজের ভাই, নিজের দেশবাসীকে আক্রমন করতে আমরা এতোটাই অন্ধ হয়ে পড়ি যে ভারতের বাবরী মসজিদ ভাঙ্গলে আঘাত আসে আমাদের দেশের কোন দেশেপ্রেমী হিন্দুর উপর, ডেনমার্কে মহানবী(সাঃ) কে ব্যঙ্গ করে কার্টুন আঁকা হলে জআলিয়ে দেয়া হয় বাংলাদেশের কোন ধার্মিক মুসলিমের গাড়ি। নিজেদের বোধ বুদ্ধি সব বিসর্জন দিয়ে "আক্রমণ" হয়ে উঠে আমাদের মূল মন্ত্র।


কথায় কথায় সাধ্যমতো ধারালো ভাষার অস্ত্র দিয়ে ঘায়েল করার চেষ্টাই যেন আমাদের প্রধান ব্রত। কখনো স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ নিয়ে, কখনো ধর্মের পক্ষ নিয়ে আবার কখনো মানবতার দোহাই তুলে অবিশ্বাসের গান গেয়ে।


বড় বড় কথা আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে কি-বোর্ডে ঝড় তোলার মাঝে আমাদের অধিকাংশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সীমাবদ্ধ, আর তাই দেখা যায়.. যখন আন্তর্জলে কথার ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে আমরা একেকজন (!)মহাবীর বনে যাই সেসময় আমাদের খুব কাছেই ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে স্মৃতিসৌধে দাঁড়িয়ে আত্মহননের চেষ্টা করেন দারিদ্র পীড়িত অনাহারে থাকা এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। খুব জানতে ইচ্ছে করে, কীবোর্ড যোদ্ধারা কেউ কি গিয়েছিলেন সেখানে অভুক্ত এই বীরের কাছে দুটো অন্ন নিয়ে, একবেলার খাবার নিয়ে তাঁর অভুক্ত পরিবারের জন্য? দ্বীনের ধ্বজাধারী ভাইয়েরা কেউ গিয়েছিলেন মহান আল্লাহ্'র এই অভুক্ত বান্দার মুখে দুটো অন্ন তুলে দিতে?



মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমরা বড় বড় কথা বলবো, দেশ নিয়ে জ্বালাময়ী ভাষণ দিবো, ধর্ম নিয়ে আলোচনা করে একদিনেই সবাইকে হেদায়েত করে দিবো, মানবতার কথা বলে এক ফুৎকারে ধর্মের অস্তিত্ব উড়িয়ে দিবো....শুধু কার্যত যখন মাঠে নেমে মানুষের পাশে দাঁড়াবার সময়, তখন আমরা নির্বাক হয়ে পড়ি, হঠাৎ করে ব্যস্ততা গ্রাস করে! আমরা কিছু দেখিনা, শুনতে পাইনা... তাই সমস্যা গুলো আর সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়না।

নিজেদের মাঝে কথায় কথায় হানাহানি আর আঘাত প্রতিঘাতেই আমাদের যতো আনন্দ। আর সেকারনে নিজেদের অজান্তেই আমরা নিষ্পেষিত হয়ে আসছি গত ৩৭ বছর ধরে। দেশ নয়, বরং ব্যক্তি ও দল আমাদের কাছে প্রথান হয়ে উঠে বলেই আমরা দল ও দলনেতাদের প্রেমে অন্ধ হয়ে পড়ি, তাঁদের সম্পর্কে এতোটুকু নেতিবাচক কথা সইতে পারিনা, তা যতো বড় সত্য হোক। আমরা বুঝতেও পারিনা এই অন্ধত্ব আমাদের জন্য কতোবড় অভিশাপ হয়ে উঠেছে। শুধু রাজনৈতিক নেতা নেত্রী নয়, দেখা যায় ছোটখাটো সামাজিক পরিসরেও আমার পছন্দের বা পরিচিত ব্যক্তির স্বার্থে অন্ধ হয়ে পড়ি। নিজের বিবেকবোধ, রুচী বিসর্জন দিয়ে আক্রমনাত্মক হয়ে অন্যকে আঘাত করতে উদ্যত হই।

রাজনৈতিক দল বা নেতানেত্রীর সমর্থনে আমাদের মতো এমন উগ্রতা, এমন অন্ধত্ব আর কোন জাতির মাঝে চোখে পড়েনি। এমনকি প্রতিবেশি দেশ ভারত, যেখানে সামাজিক সমস্যা আমাদের চেয়ে ঢের গুন বেশি.. তাঁরাও রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দকে পাশ কাটিয়ে শুধু মাত্র দেশপ্রেমের মন্ত্রবলে ছূটে চলেছে বলেই আজ হাজারো সমস্যার ভীড়ে নিজের দেশকে বিশ্বের দরবারে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছে।

আমাদের মাঝে দেশ প্রেমের এমনই ঘাটতি.. বিরোধী দলের দুর্নিতীবাজ, সন্ত্রাসীদের নিয়ে আমরা পোস্টের পর পোস্ট দিয়ে প্রচারে ক্লান্তি নেই তবে নিজের সমর্থিত দলের খুনি, ধর্ষক, দুর্নিতিবাজ, সন্ত্রাসীদের সমালোচনা করে পোস্ট দেবার মতো সৎসাহস দেখাতে পারিনা!!! পছন্দের রাজনৈতিক দল ও নেতানেত্রীদের কাছে নিজের বিবেক, চেতনা, দেশাত্ববোধ সব বিকিয়ে বসে আছি!


দেশাত্মবোধের বড় বেশি অভাব আমাদের। আর তাই, দেশ, দেশের স্বার্থ আর মানুষকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে আমরা দলীয় স্বার্থটিকে বড় করে দেখি। খুব সহজেই , জঘণ্য ভাবে আক্রমন করি আমারই দেশের মানুষ, আমার ভাইবোন কে.. শুধুমাত্র সামান্য কিছু মত পার্থক্যের কারনে।

আমরা ভুলে যাই, দেশ মানে শুধু আকাশ, বাতাস, মাটি নয়.... দেশ মানে একটি বড় অংশ জুড়েই দেশের মানুষকে বুঝায়। সেই মানুষের সাথা হানহানি করে দেশ প্রেম দেখানো সম্ভব নয়। দেশকে ভালোবাসলে অবশ্যই দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। মতের পার্থক্য, ভাবনার পার্থক্য থাকবেই,.. তা মানতে না পারলে শুধু নিজের দুর্বলতাই প্রকট হয়ে উঠে। সামন্য একটি দ্বিমত পোষন থেকে যদি আমরা এমন আক্রমনাত্মক হয়ে উঠি নিজ দেশের মানুষের প্রতি, তাহলে আর যাই হোক, নিজেকে দেশ প্রেমিক বাংলাদেশি হিসেবে ভাবা যায়না।


আমরা আত্মপ্রচার, রাজনৈতিক প্রচার আর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বার্থে নিজেদের মাঝে এতো বেশি হানহানি করি যে অনুধাবনে অক্ষম হয়ে উঠেছি আমরা কতোখানি দেশপ্রেম বর্জিত! নিজেদের এই ক্ষুদ্রতা, সীমাবদ্ধতা গত সাইত্রিশ বছর ধরে দেশটিকে যেন একটি সাঁড়াশি দিয়ে নীচে টেনে নিয়ে চলেছে, যা একসময় হয়তো গ্র‌্যান্ড ক্যানিয়নের তলদেশকেও ছাড়িয়ে যাবে, যদি আমরা এখনই সচেতন হয়ে নিজেদের সংশোধন না করি!!


আঘাত প্রতিঘাতে ব্যস্ত আমরা বুঝতেও পারছিনা, আমাদের মাঝে প্রকৃত দেশপ্রেমের অভাবে দেশমাতৃকা আজ বড় সংকটে!!!



সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১:৪৫
৬৬টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=স্মৃতির মায়ায় জড়িয়ে আছে মন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০৯


ঘাস লতা পাতা আমার গাঁয়ের মেঠো পথ, ধানের ক্ষেত
জংলী গাছ জড়ানো লতাবতী - আহা নিউরণে পাই স্মৃতির সংকেত,
রান্নাবাটির খেলাঘরে ফুলের পাপড়িতে তরকারী রান্না
এখন স্মৃতিগুলো পড়লে মনে, বুক ফুঁড়ে বেরোয় কান্না।

ফিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×